আগের পর্ব ...............…........
মনে পড়ে, বিকেল নামলে পুকুরপাড়ে বসে দুজন মিলে বাদাম খেতাম যখন, ফোন এলে আলতো ছুঁতে এই দুচোখে---মুঠোফোনের দেয়ালটাতে, পাসওয়ার্ডে, …সবখানে তো আমিই ছিলাম! আমি আর আমরা মিলে মেমোরিটা ভর্তি ছিল, মনে আছে? ওসব ছবি নেই তো এখন, ফেলে দিয়েছ, তাই না, বলো? স্মৃতিকে রাখার দায় ফুরানোর পর, স্মৃতিটাকে তো ফেলেই দিতে হয়!
ল্যাপটপের পেছনটাতে কাকে রেখেছ? আমার ধেড়ে গলায় ‘এই বাবু...এই!’ রিংটোনটা, জানি, মুছে ফেলেছ; অডিয়ো ফাইলটাও ফেলে দিয়ো, কেমন? নাকি সেই কবেই দিয়েছ ফেলে? আমার কথা আসে এখনও কোনও আড্ডায়? কেউ যদি একটু করেও বলে, ‘ইসস্ কী হ্যান্ডসাম!’ মাথায় তখন রাগ ধরে যায় খুউব... এক উটকো লোক, কোথাকার জানি, ওকে নিয়ে এত কথা কেন? এমনই ভাব, জানি!
আচ্ছা, আমার প্রোফাইলে ঢুকে পড়ো কখনও? ভুল করেও? এই থ্যাবড়া মুখের দিকে অপলক চোখে তাকিয়ে থাকো আগের মতো, লুকিয়ে হলেও? কল না এলে, বার বারই, অভিমানী চোখদুটো ফোনের দিকে যেত। যায় এখনও? স্ক্রিনের লকটা খুলে দেখে নিতে একটাও কল মিস হল কি না, এখন তো আর হয় না অমন! বেঁচেই গেছ! কললিস্টের কলরেকর্ডে হাঁটো এখনও, কাউকে ছুঁতে? মেসেঞ্জারে কখন থাকি, থাকি না কখন, সে খোঁজ রাখার দায় ফুরোলো; বেঁচে-যাওয়া সময়টাতে কাকে রাখো?...দ্যাখো কাণ্ড, আমার মতন মানুষটাও ঈর্ষা করতে শিখেই গেল!
আচ্ছা, সে-ও কি তোমায় দেখতে চেয়ে জ্বালিয়ে মারে? সেলফি খোঁজে? না পাঠালে রাগ করে খুউব? গালের ওই টোলের কথা সে-ও বলে? নাকি খেয়ালই করেনি? ঝগড়াটগড়া হয়? আমার সাথে খুব তো হতো! এখনও কি রাগ হলে ফোন না ধরে ফেলে রাখো? তখন তো ফোন ধরতে তৃতীয় বারে, এখনও ধরো অমন করে? নাকি রাগ বেড়েছে আরও একটু, সংখ্যাটা তাই তিন ছেড়েছে?
নিচের ঠোঁটটা উলটে কাঁদো আগের মতো? ফোনে চুমু খেলে কি মাতাল লাগে? নাকি ওটা হয়নি এখনও? খেয়েছ কি না, খোঁজ রাখে কে? নাকি ঠিক খেয়ে নাও খোঁজ না নিলেও? স্নানঘরে সন্ধেবেলায় ঢুকলে কি কেউ রাগ করে আর? খেয়ে নিয়ো, ভুলে যেয়ো না, দুপুর হলে কাউকে বলো? কে সকালে ঘুমটা ভাঙায়? প্রথম ক্লাসে হয় না তো দেরি? চুলটা বোধ হয় ইচ্ছে হলেই কেটে ফেলো যখন তখন! চুল কাটলে কেউ বকে কি? চুলের ঘ্রাণটা বুকের ভেতর কে টেনে নেয়? তোমার চোখে চোখ ছুঁয়ে দেয় এখনও কি কেউ? নীল শাড়িটা পরো কখনও? কার জন্য? কপালে কেউ লালটিপটা পরতে বলে? নাকের ডগায় চশমা এনে কাকে দেখে নাও? এখনও কি টিশার্ট কেনা হয় কখনও? ওর জন্যেও স্কাইব্লু…তা-ই রেখেছ? তোমার যত মিথ্যে নালিশ, কে শোনে আজ ধৈর্য ধরে?
যখন রাগ উঠে যায় আগের মতো, ঝাড়তে এখন কাকে লাগে? রাঙাবৌদি বকলে এখন কাঁদো না তো? যখন দুপুর পিছলে বিকেল নামে, জানালা দিয়ে রাস্তা দেখো উদাস চোখে? তোমার জড়ানো গলায় রবীন্দ্রনাথ...এই বায়নাটা করে সে-ও? কবিতা লিখো আগের মতো? তালছন্দ কে দেখে দেয়? নাকি এখন ছন্দ মিলে আপনা থেকেই? গল্প করে রাত ফুরিয়ে ভোর করে দেয়…সে-ও? গুনগুনিয়ে গানও শোনায়? আছাড় মারতে ফোন কেড়ে নাও…তারও?
চিঠিগুলি আজ ছোটে কোন ঠিকানায়? চিঠি পড়লে জলের দাগটা ধরে ফেলে ঠিক…সে-ও? বিয়ে থা করে চুটিয়ে যেদিন ঘর করবে আরেক ঘরে, অনুভূতিও এ-হাত ছেড়ে ও-হাতে যাবে, সেদিনও এসব চুপটি করে দেখতে হবে! পারবে তুমি? তোমার মনখারাপের ব্যামো ছিল না? সেরে গেছে, না? সারিয়েছে কে? যা-কিছু আমার লাগত ভালো---গান, কবিতা, সুরের খেলা... ওসব শুনলে এখন তোমার মেজাজ চড়ে, তাই না, বলো? সে-ও কি তোমার আঁকা দেখে তারিফ করে?
এত সহজেই সমীকরণ সবই মিলিয়ে নিলে! ঠোঁট ফুলিয়ে চোখ ফুঁপিয়ে কাঁদলে সে কি আদর করে আমার মতো?...এসব জানার, এসব ভাবার কোনও মানে নেই, জানি, বুঝি। তবু জেনেবুঝেই মানে খুঁজি! হাসছ তো, না? হাসলে হাসো, গালের টোলটা দেখতে দারুণ লাগে! এ দুনিয়ায় সবাই কি আর কাঁদতে আসে?
পরের পর্ব .......................
কী করছ? খেয়েছ দুপুরে? চুলগুলি কি খোলাই রাখো, হুঁ? কথার মাঝে এখনও কি চোখদুটোকে নামিয়ে ফেলো, পিটপিটিয়ে? হাসতে গেলে, এখনও কি টোল পড়ে যায়, ওর সামনেও? পড়লে পড়ুক! আর যা-ই করো, আমার দেওয়া নামটি ধরে আর কাউকে ডাকতে দিয়ো না, কেমন? ও যে শুধুই আমার, প্রিয়!
জানি, কোনও উত্তর তুমি দেবে না ভুলেও, সিন করে ফেলে রাখবে ঠিক! রাখলে রাখো! আমার কী? আচ্ছা, আমাকে ব্লক করে দাও না কেন? ভালো তো বাসোই না, ঠিক আছে। তো, সেটা আমাকেও ভাবতে দিচ্ছ না কেন? কী মানে আছে এসবের?
রান্নাঘরে ইলিশমাছ ভাজা হচ্ছে, ঘ্রাণ পাচ্ছি। ভীষণ সুন্দর একটা গন্ধ! ভাবছি, রান্না হওয়ার আগেই গোটাকয়েক খেয়ে ফেলব। আচ্ছা, ঠিক কয়টা ইলিশমাছ-ভাজি পর পর খেয়ে ফেললে মন ভালো হয়ে যাবে, বলতে পারো? সাড়ে সাতটা খেলে হবে না? ওই বাকি অর্ধেকটা বেড়ালকে দিয়ে দেব। ও তোমার চেয়ে অনেক ভালো, এখনও ছেড়ে যায়নি।
মানুষটাকে এখন কম ভাবি, কম দেখি, কম ঘাঁটি, কম মনে আনি...কিছুতেই তবু ভুলতে পারি না।