স্পর্শ ও ছোঁয়া

"ডার্টি পিকচার" মুভিতে আব্রাহাম সিল্ককে একটু কাছে ঘেঁষে প্রশ্ন করেছিলেন, 'কিতনি লোগোনে তুমহে টাচ কিয়া হ্যায়?'
সিল্ক মৃদু হেসে চোখে চোখ রেখে বিষাদভরা ভঙ্গিতে উত্তর দেন, 'টাচ তো বহোতোনে কিয়া হ্যায়, পার ছোঁয়া কিসিনে নেহি।'




"গাঙ্গুবাই কাঠিয়াওয়াড়ি" মুভির "মেরি জান" গানের শেষ দিকের দৃশ্য আমরা খেয়াল করেছি। দৃশ্যে শান্তনু আলিয়ার শরীর স্পর্শের জন্য মরিয়া, আর ওদিকে আলিয়া শান্তনুর হাতটি নিয়ে নিজের কপালে আর মাথায় বুলিয়ে নিচ্ছে পরম তৃপ্তিতে, আর তার উদাস দুটি চোখ ফেটে বের হচ্ছে কারও স্নেহ-না-পাবার একরাশ অতৃপ্তি, কারও কাছ থেকে স্পর্শ নয়, একটু ছোঁয়া পাবার জন্য হাজার বছর ধরে জমানো বুকফাটা তৃষ্ণা।




মেয়েদের জীবনে ওদের বুক-পিঠ-নিতম্ব-ঊরু-তলপেট স্পর্শ করার জন্য না চাইতেই এবং না চাওয়া সত্ত্বেও অনেকেই, কখনোবা জোর করেও, জুটে যায়; অথচ পরম মমতায় মাথায় হাতটি রাখার একটিও মানুষ হয়তো সারাজীবন অপেক্ষা করেও ওরা পায় না। এ এক আমৃত্যু খোঁজ---একটুখানি তৃপ্তির!




চাইলেই কারও শরীরের সবখানেই হাত দিয়ে ফেলা যায়, চাইলেই ঠোঁটের উপর ঠোঁট বসিয়ে সাধ মিটিয়ে চুমু খেয়ে ফেলা যায়। হ্যাঁ, একটু চাইলেই কাউকে স্পর্শ করে ফেলা যায়, কিন্তু শত চাইলেও তাকে ছোঁয়া যায় না।




বোতাম-আঁটা ফিটফাট শার্টের নিচে একটা সুঠাম দেহের চাইতে মেয়েরা বরং আলুথালু শার্টের ভেতর একজন স্নেহপুরুষ চায়, যে পুরুষ তাকে কেবল স্পর্শই করবে না, নিবিড়ভাবে ছোঁবে যখন তার হৃদয় পুড়বে। মেয়েদের দেহ যতটা পোড়ে, মনটা পোড়ে তার চাইতে অনেক বেশি।




ওরা সেই হাতটি চায়, যে হাত এক-শো এক ডিগ্রি জ্বরে-ভোগা কপালে হাত বুলিয়ে দিয়ে বলবে, 'ভেবো না, জ্বর সেরে যাবে।' যখন ওদের খুব মন খারাপ হবে, তখন মাথাটা বুকে টেনে নিয়ে যে হাতটি বলবে পরম আস্থায়, 'এইখানে মাথা রেখে ইচ্ছেমতো কাঁদো। ভয় নেই, আমি তো আছি!'




ব্যস্‌, এতটুকুই! এটুক পাওয়াতেও একটা মানুষ চুপচাপ সুখে মরে যেতে পারে। বেশি কিছু নয়, কেবল এটুক পাবার জন্য মানুষ তৃষ্ণার্ত হয়ে বসে থাকে!




যে রূপোপজীবিনীকে দিনে দশ পুরুষে স্পর্শ করে, সে-ও রাতে ঘুমোতে গিয়ে বিনা কুণ্ঠায় বলতে পারে, 'আজ অবধি কেউই কোনোদিন আমায় ছোঁয়নি!'




এমনকী, যে পুরুষ সুযোগ পেলেই নতুন নতুন নারীসঙ্গে ডুবে যায় আকণ্ঠ, সে-ও কোনও এক বৃষ্টিভেজা রাতে আকাশের দিকে নির্বিকার দৃষ্টি ছুড়ে দিয়ে ভাবতে পারে, 'আজ অবধি কেউই কোনোদিন আমায় ছোঁয়নি!'




মানুষ আসলে বেড়াল-কুকুরের মতোই; স্নেহ আর ছোঁয়া পেলে মোমের মতন গলে যায়, ভালোবাসার ঘ্রাণ পেলেই ঘনঘন শ্বাস নিতে নিতে সুখে মরে যেতে চায়।




পুরুষ হোক, কিংবা নারী, সবাই-ই স্পর্শ আর ছোঁয়ার পার্থক্য বুঝতে পারে। আর বোঝে বলেই স্নেহের চিহ্ন আর ছোঁয়ার আভাস পেলেই চিপসের প্যাকেটের মতো চট্‌ করে নিজের হৃদয়টাকে খুলে তার হাতেই সমপর্ণ করে দেয়, যার কাছে সে হিসেববিহীন একরাশ স্নেহ পায়, গভীর ছোঁয়া পায়।




আবারও বলছি, মাত্র একটু চাইলেই কাউকে স্পর্শ করে ফেলা যায়, কিন্তু খুব করে চাইলেও কাউকে ঠিক ছোঁয়া যায় না। স্পর্শ করতে শুধুই দেহ লাগে, আর ছুঁতে চাইলে সঙ্গে মনটাও লাগে।