ভাবনার বনসাই: সাতচল্লিশ

(মহাভারত-কৃষ্ণ-রুক্মিণী-রাধা-মীরা’কে নিয়ে)



১. এ পৃথিবী কেবল নিখাদ ভালোবাসাকেই মনে রাখে,
তাই তো কৃষ্ণের পাশে রুক্মিণী নয়, রাধাই থাকে।


২. হে পৃথিবী, তুমি রাধাকেই রেখেছ স্মরণ প্রেমের দাবিতে,
শ্যামরুক্মিণী কেবল উপেক্ষিতাই রাধাকৃষ্ণের যুগল-চকিতে!


৩. মীরাও চিনল রাধাকে, রাখল ভজনে দারুণ যতনে!
রুক্মিণীকে চিনলই-বা কে মহাভারতের চক্র-দরশনে!


৪. রুক্মিণী-রাধা’র নিয়তি, সে যে একই তানে বাঁধা!
গিরিধারীর জীবনে থেকেও রুক্মিণী পেল না পূজা;
মুরলীধরের পাশে থেকেও ঘরনি তবু হলো না রাধা!


৫. সহধর্মিণী পায় কেবলই ধর্মাধর্মের সব অধিকার,
প্রেমে কিংবা প্রতীক্ষায় নীরবে কারও জয়জয়কার,
রাধা-মীরা কৃষ্ণপ্রিয়া, তবু এক রুক্মিণীই দ্বারকার!


৬. কৃষ্ণ নেয় যদিও কেবলই রাধা রাধা নাম,
জগত দেখে তবু, এক রুক্মিণীই তার ধাম!


৭. রাধার অশ্রু, রুক্মিণীর সিঁদুর,
কৃষ্ণেরই টানে মীরাও বিধুর!


৮. এত কাঁদছ কেন? তোমার দুঃখই-বা কতটা?
কৃষ্ণকে রাধা পেয়েছে কি তত, কাঁদল যতটা?


৯. কানাই যদি হয়ই বন্ধু, বন্ধুপত্নী রুক্মিণী;
প্রেমে বাঁধেন রাধা-মীরা, কুরুক্ষেত্রে তিনি!


১০. আহা, হৃদয়মথিত পত্রসুধা যখন পৌঁছে দ্বারকার দ্বারে,
রুক্মিণীর যেন প্রাণ যায় যায়, তারে কৃষ্ণ যদি ছাড়ে!


১১. রাধা কি রুক্মিণী, ছুটল তো দুই-ই পাবার আশায়,
সহজিয়া মীরার কৃষ্ণপ্রেমে ভজন-সৃজন অশ্রু-ভাষায়!


১২. সত্যি ভালোবাসে যে, সাতপাকে বাঁধা পড়ে কবে সে!
রুক্মিণী হয় যার ঘরনি, যায় তাকে রাধা ভালোবেসে!


১৩. কেবল একটা চিঠি, তা দিয়েই কৃষ্ণের গৃহে!
পুরো একটা জীবন, তা দিয়েও কৃষ্ণ-বিরহে!


১৪. এত ভাবনা কীসের? এই জীবনে আমি তোমার হই বা না হই,
তুমি নাহয় হলে রাধাই, কিংবা মীরা; রুক্মিণীর মূল্যই-বা কই!


১৫. কৃষ্ণের মুখে রাধা রাধা নামে
রুক্মিণী ভাবে, ওতে এমন কি আছে?
কৃষ্ণের কথামতো, রাধা দরশনে
বুঝল পরে, তন্ত্রী কেন রাধারই কাছে!


১৬. যাকে ভেবে মনে শান্তি আসে,
তার সঙ্গে বলো হয় কি থাকা?
রুক্মিণীই জীবনসঙ্গিনী যদিও,
না থাকলে রাধা, হৃদয়ই যে ফাঁকা!


১৭. যার কথা ভেবেই সমাহিত মন হয় চঞ্চল,
সে অন্য কারুর, তাই মীরার কণ্ঠে গরল!


১৮. কৃষ্ণবিরহে চোখে জল আনে রাধা,
কৃষ্ণমিলনে রুক্মিণী পেল তাকে আধা,
কৃষ্ণপ্রেমে মীরা শুধু মানভঞ্জনে বাঁধা,
কৃষ্ণ সত্যি যে কার, এ বড়োই ধাঁধা!


১৯. নিঃস্বার্থ প্রেম বলে কাকে, জানতে চাইলে দেখো মীরাকে,
জীবনে পেল না যাকে, তার প্রেয়সীকেও প্রার্থনায় রাখে!


২০. বিচ্ছেদেই আছে নিহিত প্রেমের সেই বাঁশরিসুর,
দূরে থেকেও রাধা-মীরা, থাকে না কখনও দূর!


২১. মীরা যদিও হয়নি রাধা,
তবু প্রেম তাতেও পড়েছে কি বাঁধা?
রাধা যদিও রুক্মিণী নয়,
কৃষ্ণের স্বস্তি মনে, যখন তারই উদয়!


২২. সত্যি ভালোবাসো যদি,
শক্তি দিয়ো রুক্মিণী হয়ে,
প্রেম দিয়ো রাধিকা রয়ে,
মীরা হয়েই থেকো নিরবধি।


২৩. মন্দিরের সেই প্রদীপ হয়ে জ্বোলো,
যা যায় না নিভে শত ঝড়েও;
রুক্মিণী যেমনি প্রেরণাশিখা হলো,
কৃষ্ণের দু-চোখে রাধাকে পড়েও!


২৪. ভালো যে বাসতে জানে, সে শান্তি খুঁজে পায়।
রাধা ও গোবিন্দ বাঁচে দেখা হবার অপেক্ষায়,
রুক্মিণী ও কৃষ্ণ পরিতৃপ্ত দ্বারকার জীবনচর্যায়,
মীরা ও মুরলীধর নিষ্কাম প্রেমে স্বস্তিই বাড়ায়!


২৫. যে কৃষ্ণকে পেলে পুরো সংসারজগতই ধন্য,
সে-ই কিনা বিরহকাতর শুধুই রাধার জন্য!


২৬. না পেয়েও তোমায়
পড়েছি এক তোমাতেই বাঁধা,
রুক্মিণী ছিল ঘরনি
ভালোবাসা ছিল শুধুই রাধা।


২৭. রাধার প্রেম,
রুক্মিণীর মায়া,
মীরার হেম,
কৃষ্ণের ছায়া।


২৮. তুমিই কৃষ্ণ, তুমিই অর্জুন, তুমিই কুরুক্ষেত্রসেনা,
তোমার যে মহাভারত, তা করো তুমিই রচনা।


২৯. কখনও বাঁশরি, কখনওবা সুদর্শন,
কখনও বিসর্জন, কখনওবা জীবন!


৩০. যুদ্ধে যদি চাও জিততে, হও সঠিক গুরুর অর্থী,
অর্জুন হয় সে-ই তো কেবল, কৃষ্ণ যার সারথি!


৩১. যাবে তুমি তারই পথে, বন্ধু বানালে যাকে,
অর্জুনের সখা কৃষ্ণ হলে চিন্তা কি আর থাকে!


৩২. যুদ্ধে না নেমেই জয়ী হতে চাও?
কৃষ্ণ তো তুমি নও!
ভাবনা তোমার, কে নেবে ভার?
অর্জুন তো আগে হও!


৩৩. জিততে চাইলে যে হেরে যেতে হয়,
দ্যাখো কৃষ্ণের খেল,
চেষ্টায় জিততে সবাই-ই তো পারে,
হারাতেই আসল ভেল!


৩৪. যদি না হও কৃষ্ণ, হয়ো না রথী,
অর্জুন না হলে, চেয়ো না সারথি।


৩৫. যা করতেই হবে, তা করতে গিয়ে হয়ও যদি ক্ষতি,
মনে সংশয়, বুকে শুধু ভয়, গীতার কৃষ্ণই তখন গতি!


৩৬. যখন সারথি কৃষ্ণ, তখন হতে অর্জুন অত কীসের বাহাদুরি?
রেখে মৃত্যুকে হাতে, হতে যদি অভিমন্যু, সম্ভ্রম করতে চুরি!


৩৭. অতিনিশ্চয়ই, গুরুকে সামনে রেখে জীবনযুদ্ধে নামো;
কৃষ্ণ বাদে বলবে কে আর, ‘অর্জুন, এখানে থামো!’


৩৮. কৃষ্ণ কি রাধার অশ্রু, না কি যমুনার জল?
রুক্মিণীর প্রেম, না কি মীরার পায়ের মল?


৩৯. কৃষ্ণপ্রেমে মজলে, সবাই কি আর রুক্মিণী হয়?
ভাগ্যে না থাকলে লেখা, সে রাধাই তো রয়!
একবার ভাবো, কেউবা মীরা হয়েও সব সয়!


৪০. রাধা অতীত,
রুক্মিণী বর্তমান,
মীরা চিরন্তন!


৪১. তুমি রাধা যদি হও, আমি রুক্মিণীর কৃষ্ণ হ'ব।
তুমি মীরা যদি হও, আমি আজীবন তোমারই র’ব!