ভাবনার বনসাই: ছেচল্লিশ

(রাধা-কৃষ্ণ-মীরা’কে নিয়ে)


১. কৃষ্ণের দিকে তাকিয়ে শেখো।
যে তোমার হৃদয় অমন ব্যাকুল করে,
জীবন থেকে সে সবার আগেই সরে!


২. ছুতোই তো কেবল রাধাকৃষ্ণের মহৎ সে মিলন,
পৃথিবীকে নিঃস্বার্থ প্রেম শেখানোই প্রকৃত কারণ!


৩. কৃষ্ণের বাঁশি তো বাজবেই!
রাধার মনে প্রেম জাগবেই!
বাঁশি তো কৃষ্ণ বাজায় সুখেই,
সেই সুখ যদি প্রেমই জাগায়,
বাঁশির তাতে দোষটা কোথায়?


৪. রাধাকৃষ্ণের মহিমা যখন হৃদয় ধরে,
ভালোবাসা নিজেই তখন খুশিতে মরে!


৫. গায়ের রঙে কী এসে যায়?
কার যে কাকে ভালো লেগে যায়, এক প্রেমই বোঝায়!
নইলে কি রাধা কৃষ্ণেই ধায়?


৬. যার মনের চোখ দেখতে যে পায়,
তার কাছে অনুক্ষণ সে-ই ছুটে যায়;
যেমনি রাধা সব ছেড়েছুড়ে,
এক গোবিন্দেই ফেরে ঘুরে!


৭. প্রেম যে জানে না ঐশ্বর্যের মোহ, ধনের অহংকার;
রাধাকে দেখো, পুরো পৃথিবী ভুলে কৃষ্ণেই একাকার!


৮. বিরহ দু-চোখে জল আনে না, কেবল প্রেমই আনে,
রাধিকার চোখ জলে কেন ভরা, কানাই-ই তা জানে!


৯. প্রেম, সে যে কেবল বিরহেই বাড়ে!
দূরে থেকেও কানাই রাধিকাকে কাড়ে!


১০. প্রেমে যারা পড়ে, ওদের দুইটা আত্মাই এক!
রাধাকৃষ্ণ এক হলো না, তবু দুইটা কোথায়, দ্যাখ!


১১. ভালোবাসা নিতে জানে না যারা, কৃষ্ণকে দ্যাখো!
ভালোবাসা দিতে জানে না যারা, রাধার কাছে শেখো!


১২. পথে বাধা এলে হয়ই যদি প্রেম বিগত,
রাধা ও কৃষ্ণ এক হয়ে কি রাধাকৃষ্ণ হতো?


১৩. ভালোবাসা কেবল খুঁজত যদি পাবারই আয়োজন,
রাধাকৃষ্ণের প্রেমমহিমায় হতো কি তবে পূজা প্রয়োজন?


১৪. রাধার প্রেম যে নিখাদ ছিল, ওতে ছিল না স্বার্থের ধাম,
তাই তো জগত চিরকাল নেয় কৃষ্ণের আগেই রাধার নাম!


১৫. রাধার চিঠিতে আবেগের নদী, ছিল না কোনও বাধা!
তাতে সুখের অশ্রুতে ভেসে কৃষ্ণের উত্তর শুধুই রাধা রাধা!


১৬. বাঁশিতে যার অমনই তীব্র টান,
তারও কাছে কীসের মান-অভিমান?


১৭. ভালোবাসা যদি বুঝতেই হয়, মীরার দিকে তাকাও!
কখনও কণ্ঠে গরলের স্রোত, কখনওবা অশ্রু লুকাও!


১৮. ভালোবাসা বড়ো আজব বিচার!
মীরা নিল বিষ কৃষ্ণের টানে,
অথচ পৃথিবী রাধাকেই মানে!


১৯. কোনোদিন যদি ভালোবাসা বোঝো,
তুমি সেদিন হবে মীরা,
পুরো পৃথিবীর সাথে লড়ে যাবে একা,
লোকে বলবে অধীরা!


২০. সে যে কৃষ্ণ, তাকে হতেই হয় জগতের আশ্রয়,
সে যে মীরা, তার জীবনটা তাই কৃষ্ণেই পড়ে রয়!


২১. বাবার কাছে ধৈর্য শেখো,
ভালোবাসা মায়ের কাছে;
রাধার কাছে প্রেম শেখো,
অপেক্ষা মীরারই আছে!


২২. রাধা যদি হও,
তুমি প্রেম নাও বুকে টেনে।
মীরা যদি হও,
প্রেম তোমাকেই নেয় জেনে!


২৩. রাত বাড়ে, প্রেম ঝরে।
রাধা কৃষ্ণের নেশায় মরে!
মীরা কৃষ্ণের প্রণয়বিষে ছিন্ন।
সেই কৃষ্ণের‌ই রানি হয় ভিন্ন!


২৪. লোকে ভালোবাসে আর নিন্দার ভয়ে মরে!
ওদিকে মীরা প্রেমে মজে কলঙ্কের ঘুঙুর পরে!


২৫. যদি মীরাকেই না চেনো,
তবে কৃষ্ণ অচেনা, জেনো!


২৬. কৃষ্ণকে ডাকলে আসে না বুঝি?
মীরাকে বুঝি, আর কৃষ্ণকে খুঁজি!


২৭. ঘনশ্যামের দেখা কভু পেয়েছে কি মীরা?
এক মীরা বাদে তবু পেয়েছে কে সে হিরা?


২৮. ভালোবাসে যে, সে হায় অপবাদই পায়!
রাধাই আসে আগে, মীরা উপেক্ষাতে যায়!


২৯. শুদ্ধ প্রেমের রঙে যে রাঙায় ভুবন,
সে যে মীরার প্রতিমা, ব্যাকুল সে মন!


৩০. পাবে না জেনেও তবু ভালোবাসে, আহা!
কৃষ্ণের রাধা কি মীরা, বাঁধে তারে যাহা!