লিপি ধূসরিত: ছয়

৭৬।
বছর ঘুরে আবার এসেছে ফিরে তোমার মৃত্যুদিন, হায়!
সেদিনের পর আজ‌ও আছি বেঁচে, বিস্ময় বলতে তা-ই!




৭৭।
তারায় ভরা আকাশতলে
শেষদৃষ্টির কবর খোলে।
বাঁচছি সুখে, মরব হেসে,
জীবনকে ভালোবেসে।
কবিতা লিখো কবরগায়,
প্রেম যদি দেয় সত্য সায়,
সাগরফেরা নাবিক যেমনে
সাগরপ্রেমে কাঁদে আনমনে।




৭৮।
বিদায়ের ক্ষণে ছিল না অশ্রু,
ঠোঁট ছিল চুপ…বেদনা নিবিড়ে। 
নামে দু-দিন পরেই শোকবৃষ্টি,
ব্যথামেঘ ভেঙে রোদন অঝোরে।




৭৯।
কথা ছিল, মিলন হবে,
বাধ সাধল মরণ!
ঘর বাঁধার বেকার খড়ে
স্মৃতির অবতরণ!




৮০।
হারিয়েছি, তাই
আর ভুলি নাই।




৮১।
বন্ধুরে শুইয়ে দিয়ে কবরে, আমি ফিরি ঘরে;
হায়, বন্ধু রয়েছে এ-ঘরে, আমার ঘর কবরে।




৮২।
স্মৃতি থেকে নাওনি বিদায়,
এসেছ হৃদয়ের আরও কাছে;
ভগবানের ঘরে নিয়েছ ঠাঁই,
তোমার আত্মা এখানে আছে!




৮৩।
মৃত্যু যেখানে শুকিয়ে যায়,
জীবন সেখানে ভোলে শূন্যতা।
আত্মা যেখানে ঘরটুকু পায়,
আয়ু সেখানে খোঁজে পূর্ণতা।




৮৪।
ক্ষমা করো, যারা ফেলে নয়নের জল,
শোকে বিধুর যারা চিরবিদায়ের ক্ষণে;
ক্ষমা করো, বেঁধে রাখবার করে ছল,
যারা পথ রোধে যেতে সুর নিকেতনে।




৮৫।
মৃত্যু কি আর সেই আত্মায় দেখাতে পারে ভয়,
ভগবান নিজেই চৈতন্যরূপে যার হৃদয়মাঝে রয়?




৮৬।
তখন আমি কলেজে পড়ি, বয়সে তরুণ;
বুকে এসে বিঁধল মরণ-তীর!
প্রিয় বন্ধু, কান্না থামাও; যাইনি অসময়ে,
অদৃষ্টে ছিল এটুক আয়ুই স্থির।




৮৭।
সমুদ্র-গভীরে অন্ধকার ঘরে,
কত-না রত্ন রয়েছে অগোচরে!
কত স্বর্গের ফুল, নাম-না-জানা,
বিলায়ে গন্ধ, যায় ঝরে অচেনা।




৮৮।
একমুঠো বিস্মৃত ধূলি পড়ে রবে পথে, জীবনশেষের পর্বে,
জগতের সার হায় এটুক‌ই; ওতেই কিনা চলেছি এত গর্বে!




৮৯।
একান্ত বন্ধু বাদে আর কারও চোখে জল
পড়বে নাকো যখন তুমি ছাড়বে ধরাতল।
কাঁদবে অনেকেই, চলে গেলে কাঁদাই যে ধর্ম,
কোন কান্না কীসের কারণ, বলবে সব‌ই কর্ম।




৯০।
জীবনে তুমি ছিলে এগিয়ে, পারিনি কখনও ছুঁতে।
মরণ আমায় দিল এগিয়ে, বাঁচার কষ্ট‌ গেল টুটে।