লিপি ধূসরিত: পাঁচ

৬১।
তোমায় যারা বেসেছে ভালো ভুলেও জীবনে কখনো,
ভুলতে ওরা পারবেই না, যদি তোমায় নেয় মরণও!




৬২।
হঠাৎ‌ই মনের ভুলে, তোমার নামটি ধরে ডাকি,
পাই না সাড়া, ফ্রেমের ভেতর হাসে দুটি আঁখি।




৬৩।
হবে না আর স‌ইতে যাতনা, বিরক্তিটুক,
সোনামণি আজ ঘুমের ঘোরে শান্ত খুব।
ছোট্ট শরীরের দস্যিপনা আজ থামল,
সারাদিনের সকল অস্থিরতা দিল ডুব।




৬৪।
ছেলেকে ভেবে দিনরাত কেঁদে
এই যে এমন হচ্ছ অন্ধ, এর কী কারণ?
ছেলে তোমার দেবতার মতন,
এ পৃথিবীতে তাই বেশিদিন থাকা বারণ!




৬৫।
তুলে নিয়ে গেলে আমার প্রাণের পাখিটারে;
জানি যদিও, এ ধন চিরকালই তোমার!
যদি ফিরিয়েই নেবে, তবে কেন দিলে তারে?
এমন নিঠুর নাটকের ছিল কী দরকার?




৬৬।
মা, আমায় ঘুম পাড়াতে কত যে কাহিল হতে!
আজ শুধু ঘুমিয়েই কাটাই, এসে যদি দেখতে!
আমি মরিনি গো, মা; গভীরে ঘুমিয়ে রয়েছি,
সময় হলেই দেখতে পাবে, ঠিক পাশে আছি!




৬৭।
বাবা, কেন হলি এভাবে ভগবানের প্রিয় অর্ঘ্য?
যাবিই যদি, তবে কেন এসেছিলি দেখাতে স্বর্গ?




৬৮।
আজ বলো না মুখে কিছুই,
বলে চলো অবিরাম তবু সবই!
আজ দেখো না চোখে কিছুই,
তাকিয়ে থেকে দেখাও তবু সব‌ই!




৬৯।
অদৃষ্টের ভাঙা স্তম্ভে গড়া যে হয়েছে ঘর,
তা বুঝব কীভাবে, আপন না হলে পর?




৭০।
আপনার মৃত্যুর চেয়েও বড়ো সান্ত্বনা এ জীবনে কে পায়?
সন্তানের মৃত্যুর চেয়েও বড়ো যন্ত্রণা এ জীবনে কে পায়?




৭১।
পুত্রশোকে পাথর পিতা পুত্রের নাম খোদাই করেন প্রস্তরে,
হারানোর কী ব্যথা, তা দেখাবে কেমনে শিলালেখ মন্দিরে?




৭২।
গভীর বিষাদে হলো সমবেত শোকাকুল পরিবার,
বিলাপ করে কাঁদছে সকলে, যায় মূর্ছা বারেবার।
স্মৃতির এ আঘাত কে-বা স‌ইতে পারে বিরহের উত্তাপে,
দুই ছেলে যার নিয়েছে বিদায়, সে সান্ত্বনা কোথা পাবে?




৭৩।
বলতে ভীষণ ইচ্ছে করে, ফিরে এসো একবার!
ভাবি পরক্ষণেই, এসে কী পাবে দুঃখ ছাড়া আর!
বরং এই তো ভালো, বিনা পাপেই সে স্বর্গে গেছে!
বাঁচলে পরে কষ্ট বাদে কী-বা আর নেবার আছে?




৭৪।
হায়, সোনামুখ ছেড়ে গেছে চলে!
আদুরে গলা নীরব হঠাৎ চিরতরে!
তার স্থানটি চিরশূন্য‌ই রবে ঘরে,
মায়ের বুকে তুষের আগুন জ্বলে!




৭৫।
প্রিয়, কেন কাঁদছ আমার জন্য?
যেখানে আছি, সে যে নয় ঘর অন্য!
ঘরের ছেলে ফিরেছি ঘরে, চিন্তা কী?
ফিরবে তুমিও, অপেক্ষাতে প্রদীপ দি!