লিপি ধূসরিত: সাত

৯১।
জীবনের যত ফুল, সব‌ই তো পড়ে ঝরে,
পার্থিব যা সুখ, হারায় একদিন অনাদরে,
আকাশের যে-তারা জ্বলে আলোয় মিশে,
সে-ও পড়ে খসে; যত দর্প, হারায় নিমিষে।




৯২।
নিভল না শোক, কমল না ব্যথা,
এরই মাঝে শমনের পদধ্বনি,
শোকে হতবিহ্বল ব্যথাতুর বাবা
শুলেন ছেলের পাশেই তখনি।




৯৩।
বড়ো মধুর হাজারো স্মৃতির মালা, এ যায় কি ছিঁড়ে কখনো?
ভালোবাসা যাকে পারেনি বাঁচাতে, ভালোবাসি তাকে এখনো।




৯৪।
স্মৃতিসঞ্চয়…এ যে মহামূল্য,
একে পারে না মুছতে মরণ‌ও!
ভালোবেসে তাকে পেলাম যতটা বেদনা,
মোছে না তা, যদি সে করে মৃত্যুবরণ‌ও!




৯৫।
যখন মুক্তিদাতা দাঁড়িয়ে ঠিক শিয়রে,
অন্ধ তখন পায় দেখতে,
বধির তখন পায় শুনতে,
বোবা তখন পারে ক‌ইতে,
খোঁড়া তখন পারে চলতে,
পিছে ফেলে সব‌ই হয় ছুটতে দুয়ারে।




৯৬।
কেঁদো না দেখে সমাধি-পাথর,
হয়তো ঘুমোয় সেখানে ক্লান্ত-নিথর!
পাপে না মেতেও শাস্তি যে পায়,
ভগবান‌ নিজেই তাকে মরণে বাঁচায়।




৯৭।
এমন কী কথা আছে,
যা যায় না কখনও জলে?
বৃষ্টির পর কিছু তারা
জ্বলে, যেমনি হীরা জ্বলে।




৯৮।
অতীতের যত কাহিনি, স্মৃতি সতত রাখে ধরে,
সময় যায় বয়ে, স্মৃতিতে স্মৃতিরই রেশ পড়ে।




৯৯।
ভোলা কি তোমায় যায়? ভোলার নেই তো মনে সাধ!
তোমায় রাখব মনে যতনে, বিধি সাধলে সাধুক বাধ!
তুমি আজ চোখের আড়াল হলে, তাই ভুলতেই পারে ওরা,
হৃদয় তোমায় ভুলবে কেমন করে? এ যে তুমি দিয়েই গড়া!




১০০।
দুটি নয়ন যখন অশ্রু দিয়ে ঢাকা,
বেদনায় মাথা নত;
সকল রোদন শুনে যান প্রভু একা,
দূর হতে অবিরত।




১০১।
জীবন-শেকল মৃত্যুই ভেঙে দিল,
আত্মা তখন সহজেই মুক্তি নিল।




১০২।
ঈশ্বরই আমি, আমিই ঈশ্বর।
তবে কি মৃত্যুবেশে দিলেন তিনি বর?




১০৩।
আসে মৃত্যু, আসে শান্তির ঢেউ…
সব বুঝেও মরতে কি চায় কেউ?




১০৪।
সত্য ভেবে আস্থা রাখি অদৃষ্টের রায়ে,
করি অনুভব, মনের শক্তি বাড়ে ঘায়ে।
সবচেয়ে ভালো ভালোবেসে দেওয়া যেতে,
ভালো যাকে বাসো, চেয়ো না তাকে পেতে।




১০৫।
আজ তুমি নেই, চলে গেছ দূরদেশে,
নীরবতা ঠিক‌ই কোলাহলে গিয়ে মেশে।
বৃষ্টি কখনো হাওয়ায় আসে ভেসে, ওঠে কখনো রোদ্দুর;
তোমায় না পেয়ে কোথাও শুধোই আয়ুকে, আর কদ্দূর?