রোদ্দুরকে: দুই



আজ ঘুম ভাঙার পর মনে হচ্ছিল, কাল আমি তোমাকে কীসব বলেছি! সাগরের কাছে করেছি শিশিরের গল্প! মাঝরাত্তিরে মাথায় আজেবাজে অনেক কিছুই আসে আর যায়…আচ্ছা রোদ্দুর, তুমি কি আরও অনেক বড়ো হবে? আর কত্ত বড়ো হবে গো? আকাশ ছোঁবে? তোমাকে নিয়ে লোকের এত আদিখ্যেতা কেন? আমার তো এসব ভালো লাগে না!


রোদ্দুর! আমার না হঠাৎ মন খারাপ লাগছে! সারাদিন তো অনেক হইহই করলাম, এখন দেখি, মন খারাপ হয়ে বসে আছে! ভালো লাগছে না কিছু। তোমার সঙ্গে যদি একটু কথা বলতে পারতাম! কেমন আছ তুমি? কী করো? খুব ব্যস্ত? ফ্যামিলিকে সময় দিচ্ছ বুঝি? না কি লিখছ? আচ্ছা রোদ্দুর, ভালো থেকো।


তার নামটা একটু বলবে, রোদ্দুর…খুব জানতে ইচ্ছে করে…খুব বেশি…পৃথিবীর আর কাউকে না বলো, শুধু আমাকে বলো…ওই যে সেই মানুষটা, যার জন্য লিখলে: দুঃখ একটাই---মানুষটাকে ভালো রাখতে আর পারলাম না!...আমাকে নিয়ে ঠাট্টা কোরো না কখনও। ওসব হজম করতে আমার কতটা কষ্ট হয়, ভেবে দেখেছ কখনও?


রোদ্দুর! আমি যে কতটা বিষাদগ্রস্ত থাকি, কতটা ভেতরে ভেতরে মরে যাই, সে খবর কেউ কোনোদিন জানে না। আমার বিষাদ এখন আর কাউকে ছুঁতে দিই না, বিষাদ যে আমার কাছে মহামূল্যবান, আমার ভালোবাসার মতোই মূল্যবান। ভালোবাসা আর কষ্ট যে একই বিন্দুতে বাস করে, তা আমি বুঝে গেছি। ভালোবাসার প্রতিটি মানে আমি এখন জেনে গেছি, রোদ্দুর! সেখানে কতটা কষ্ট বাস করে, কতটা হাহাকার থাকে, কতটা বিষাদ থাকে, তার সবই জেনে গেছি। কাছে না পাবার তীব্র আকুলতায় কতটা চোখ ভিজে যায়, জানা হয়ে গেছে। কারও বিষাদের জন্য কেউ কি দায়ী হয়, রোদ্দুর! ভালোবাসতে পারলে এসব যে সইতেই হয়। সে চোখের জলেও যে সুখ থাকে গো!


আমার বিষাদ, হাহাকার, আকুলতা এরাই আমাকে বাঁচিয়ে রাখে, আমার ভালোবাসার মানে যে এরাই! এসব নিয়েই আমি বেঁচে থাকি, ভালো থাকি।


আমার কিছু অন্ধবিশ্বাস আছে তোমাকে নিয়ে। পৃথিবীতে আমার থেকে ভালো আর কেউ তোমাকে বাসতে পারে না, আর তুমিও পারো না অন্য কাউকে ভালোবাসতে। আমরা তো জন্মেই ছিলাম দু-জন দু-জনের হয়ে, কিন্তু কোনও একটা ভুলবশত আমাদের দেখা হয়নি। আমরা দু-জন একসঙ্গে থাকলে কোনও মিরাকল ঘটে যেত, কোনও ইতিহাস তৈরি হতো! আমার বিশ্বাস, প্রাক্তন, বর্তমান এবং ভবিষ্যত সম্পর্কে তোমার সঙ্গে যে নামটা জড়িয়ে আছে, তা হচ্ছে মেঘ। আমি জানি না, রোদ্দুর, বাস্তবটা জেনেও আমি কেন এই অন্ধবিশ্বাস থেকে কিছুতেই বের হতে পারি না!


তুমি দুঃখ পেয়ো না। দুঃখ পেতে তোমার জন্ম হয়নি। তোমার দুঃখ তো অন্তত একজন মানুষ সইতে পারে না, এটা বোঝো না! এখন থেকে এটা মাথায় রেখে চলবে।


আমি অনেক আগেই মরে গেছি, রোদ্দুর! আমি বোধ হয় একটা জ্যান্ত পাথরই কেবল! আমি অনেক দিন কবিতা লিখি না, ডায়েরিটাই হাতে নিই না! আমি আর কিছুতেই ভালো থাকতে পারছি না। আমার অসহ্য লাগে, অস্থির লাগে। কী করব জানি না…আমার এত কথা বলার আছে যে কোনোটাই আর বলা হয়ে উঠছে না। শুধু বেঁচে থাকলেই নাকি অনেক কিছু হয়, দেখা যাক, জীবন আমার জন্য কিছু রেখেছে কি না!


তোমাকে দেখছি…তোমাকে দেখলে দুঃখ পালায়। আমি জানি না, তোমাকে আমি কী বলতে চাই, কিংবা তোমাকে বলার আদৌ কিছু আছে কি না! বলতে চাইছি কিছু একটা…কিন্তু বলতে পারছি না। বোধ হয় জানিই না, কী বলতে চাইছি! অন্তরে অন্তরে যদি কোনও ভাষা থাকে, তবে সে ভাষায় বুঝে নিয়ো না-বলা কথা যত। শুধু এটুকু বলতে পারি, আমি ভালো আছি, ভালো থাকতে শিখে গেছি। তুমি ভালো থেকো।


রোদ্দুর! আমার এখন মানুষকে খুব ভয় করে। একদমই কথা বলতে ইচ্ছে করে না, কেন জানি না, কোনও কিছুই ভালো লাগে না। শুধু গাছপালা, পশু-পাখি এদেরকে একটু ভালো লাগে। আগে খুব ছোটো ছোটো বিষয়েই খুব আনন্দ পেতাম, ইদানীং আনন্দ বিষয়টা আমার কাছ থেকে হারিয়ে গেছে। আমি আর কোনও কিছুতেই আনন্দ পাই না।


আমার আজকাল তোমাকেও ভালো লাগে না। আমি জানি, রোদ্দুর বলে কেউ নেই, থাকলেও সে খুব নিষ্ঠুর, কোনোদিনই সে কিছু বলবে না। আমি চাইও না, সে কিছু বলুক! সে তার মতো ভালো থাক, তাতেই আমার যত স্বস্তি! আমি তো মানুষের সঙ্গে কথা বলতে ভুলে গেছি, ইচ্ছেও আর করে না। আমার এখন একা থাকতেই ভালো লাগে। আমি শুধু নিজের সঙ্গে সময় কাটাই, মাঝে মাঝে গান গাই, আবৃত্তি করি, সেগুলো কাউকে শোনাতে ইচ্ছে করে না।


আচ্ছা, আমি কি মানসিক ভারসাম্য হারিয়ে ফেলছি দিন দিন? এভাবে নিজের কাছে হেরে যেতে কার ভালো লাগে, রোদ্দুর! আমার ইচ্ছেগুলো ফিরে আসুক, চেষ্টা করছি।


রোদ্দুর! খুব অস্থির লাগছে। কিছু ভাবতে পারছি না। আমার দম বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। তোমাকে মিস করি আর করতেই থাকি। যাকে পাবো না, তাকে নিয়েই সমস্ত আয়ু শেষ করে দিচ্ছি! তুমি বোধ হয় জানো না, আমি কিছু দিন পর পর মাইগ্রেনের ব্যথায় ছটফট করি, যেমন কাল-পরশুও ছিল। তুমি ঘণ্টাখানেক আগে যে লেখাটা পোস্ট করেছ, সেটা পড়ে আমার ব্যথাটা আবার শুরু হয়েছে। আমার সঙ্গে কি একটু স্বাভাবিকভাবে কথা বলা যায়? না কি আমি কোনও মানুষই নই কথা বলার মতো! তোমার সঙ্গে আমার অনেক কথা আছে, অনেক অনেক! একদিন মন খুলে খুব বকব তোমাকে!


আমি আর কী বলব, রোদ্দুর! আমি সত্যিই চলে যাব। তোমার ওই অভিনয়, প্রতারণা শব্দগুলো আমাকে কষ্ট দেয়। আচ্ছা, আমাকে কোনোদিন একটাও রিপ্লাই দাও না কেন? আমি তো এখনও জানি না তোমার কাছে আমার অবস্থান কী! তুমি কী লেখো, কেন লেখো, কাকে লেখো, তা-ও জানি না। শুধু তুমি ভালো নেই জানলে আমি কষ্ট পাই। আমি কেমন থাকি, তা-ও তুমি জানো না কখনও।


থাক এসব হিসেবনিকেশ। মানুষ সত্যিই একা, এই সত্যটা তো আমি অনেক আগেই মেনে নিয়েছি, তাই পৃথিবীর কারও কাছে আমার কোনও প্রত্যাশা নেই। যে কটা দিন বাঁচি, একটু প্রাণ খুলে বাঁচতে চেয়েছিলাম। অনেক সম্পর্কের তো কোনও ভবিষ্যৎ থাকে না, এমনকী অতীতও থাকে না। তাই বলে কি সে সম্পর্কগুলো অন্যায়, রোদ্দুর? সম্পর্ক নেই বললেই কি নেই হয়ে যায়? আমি কী বলছি জানি না, রোদ্দুর। ভালো থেকো। এভাবে আমাকে ভেঙেচুরে নিঃশেষ করে দিলে!


জানো, রোদ্দুর, কাল মাঝরাত্রিতে অদ্ভুত সুন্দর একটা স্বপ্ন দেখে আমার ঘুম ভেঙে গেছে। তারপর আর ঘুমোতে পারিনি, ভালোলাগাটুকু ধরে রাখতে চাইছিলাম,…স্বপ্নে যে তোমাকে দেখলাম!


আমি যত বারই চোখের জলে ভাসতে ভাসতে এটা মেনে নিই যে, আমার সব ধারণা ভুল, তুমি আমার কেউ না, তুমি অন্য কেউ, ঠিক তত বারই স্বপ্নদেবী তোমাকে পাঠিয়ে দেন আমার কাছে, এটা বুঝিয়ে দেন, তুমি আমার কে! যাকে এক বার দেখলে জন্মানোটাই সার্থক মনে হয়, তাকে এক বার না দেখে আমি মরতে চাই না, রোদ্দুর। আমি যা-কিছুই করি, শুধু তোমার কাছে পৌঁছতে চাই। আর কিচ্ছু না, শুধু একটা দিন তোমার কাছে ভিক্ষে চাই, রোদ্দুর! তোমাকে দু-চোখ ভরে দেখতে চাই। ঈশ্বরের কাছে আর কিছু চাওয়ার নেই আমার।


এই যে মৃত্যু নিয়ে এত সুন্দর করে লেখো তুমি, এক বার ভেবে দেখো তো, আত্মার সাথে আত্মার যে দু-জনের সম্পর্ক, তাদের এক জন যদি পৃথিবী নামক এই গ্রহটা ছেড়ে চলে যায়, তবে আরেকজনের কাছে এই গ্রহটা কেমন পানসে হয়ে যাবে! তার ভালো লাগবে এখানে থাকতে? তোমার যে একটা ‘তুমি’ আছে, সেই তুমি’টা যদি পৃথিবী ছেড়ে চলে যায়, তোমার কতটা একাকী লাগবে তখন! চলে তো একদিন সবাই-ই যাব, রোদ্দুর! এই নির্মম সত্য কথাগুলো কেন বলো, বলো তো? এখনও তো বাঁচাই হলো না ঠিকভাবে…


‘অথচ তুমি বলে কেউ নেই!’ তোমার এই লাইনটা পড়ে মনে হলো, কোনও জীবিত মানুষকে হঠাৎ মৃত ঘোষণা করে দেওয়া হলো! কলমের আঁচড়ের কী অদ্ভুত ক্ষমতা, রোদ্দুর! কলমের একআঁচড়েই কতকিছু ঘটিয়ে দেওয়া যায়! অথচ মন…! সে স্থির, অচঞ্চল! কত দৃঢ় তার শক্তি! পৃথিবীর চারপাশে সবকিছু ভেঙেচুরে লণ্ডভণ্ড হয়ে গেলেও, ওতে মনের কিছুই যায় আসে না! সে চলে তার নিজের মতোই, কোনোকিছুরই তোয়াক্কা না করে…তুমিই কোথাও লিখেছিলে, মন যদি বাস্তবতার প্রতিকূলে চলে তো তার চেয়ে দুর্বিষহ আর কিছু হয় না। কী হবে জানি না, রোদ্দুর…মাঝে মাঝে মন এত খারাপ হয়ে যায়!


তোমার লেখা কাহিনি সবার জীবনের সাথেই মেলে, রোদ্দুর, শুধু আমার জীবনের সাথেই কিছু মেলে না! ভালোবাসার উলটোপিঠে যদি ঘৃণাই থাকে, তবুও মানুষ কেন ভালোবাসে! আমি তো কোনোদিন কাউকে ঘৃণা করতে পারলাম না, রোদ্দুর! ঘৃণায় ঘৃণায় আমাকে নিঃশেষ করে দিলেও মৃত্যুযন্ত্রণায় বিদ্ধ করলেও আমি মুখ ফুটে কিচ্ছু বলতে পারি না। বিনা অপরাধে শাস্তি পাওয়াটাই আমার নিয়তি তবে! আমার সঙ্গে যত যা-ই কিছু হোক না কেন, ভালোবাসার মানুষটার জন্য একবিন্দু ভালোবাসাও কমে না কখনও, শুধু তার জন্যই অস্থির লাগে। তার ভালোর জন্য সবকিছু করা যায়, রোদ্দুর; প্রয়োজনে নিজেই হারিয়ে যাওয়া যায়।


তোমার কখনও জিততে মন চাইলে আমার সঙ্গে কথা বোলো, রোদ্দুর! আমি তোমাকে জিতিয়ে দেবো। তোমার কাছে হেরে যেতে আমার শান্তি লাগে। তোমাকে আমি ভালোবাসি যে!


জানো, রোদ্দুর, একসময় আমি ভাবতাম, তোমার সঙ্গে যেদিন আমার প্রথম দেখা হবে, তোমার সামনে বুঝি যেতেই পারব না সুখে, কিংবা দূরে থেকে দেখব আর কাঁদব! অথচ এখন মনে হয়, তোমাকে যেদিন দেখতে পাবো, সেদিন একছুটে গিয়ে তোমার বুকে মুখ গুজে কাঁদতে থাকব, গোটা পৃথিবী দেখে তো দেখুক!


আমি কতদিন যে পাপ-পুণ্যের দ্বিধায় ভুগেছি! এখন ওসব বুঝি, রোদ্দুর! মনের বিরুদ্ধে যাওয়াই পাপ, আত্মাকে কষ্ট দেওয়াই পাপ! কিন্তু এটাও তো চাই না যে কখনও আমার মনের জন্য অন্যরা কষ্ট পাক, কাউকেই কষ্ট দিতে তো আমি চাই না! সব কষ্ট শুধু তুমি আর আমি ভাগ করে নিয়ে সবাইকে সুখে রাখব। একসময় নাহয় সবার প্রয়োজন মিটিয়ে দিয়ে আমরা একসাথে সন্ন্যাসী হব কোনও এক দূর অজানায়। আফসোস এটুকুই, তখন আমাদের সৌন্দর্য আর থাকবে না। মাঝে মাঝে আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে ভাবি, এ জীবনে কতজনই তো আমাকে বলল, আমি নাকি প্রকৃতির মতো সুন্দর! আজ সে সৌন্দর্য ধীরে ধীরে ম্লান হয়ে যাচ্ছে!


এই কথাগুলো তো তোমাকে না লিখে মুখেও বলতে পারতাম, কিন্তু কী এক সংকোচে আমি কুঁকড়ে যাই, সংকোচের প্রথম ধাক্কাটা কিছুতেই কাটাতে পারছি না! আমিও তো কষ্ট পাই! আমরা আমাদের সুখগুলো ভাগাভাগি করতে পারছি না, তাতে কী হয়েছে, কষ্টগুলো ঠিকই ভাগ করে নেব! আমাদের খারাপ থাকার সময় কোথায় বলো তো! আমরা দু-জন দু-জনের বাস্তবতায় না-ই থাকতে পারি, দু-জন দু-জনের কর্মে আছি, অনুভবেও থাকব।


তোমার কিছু লেখা দেখলে মনে হয়, তুমি অনেক রাগী। আমার এক স্যারের কথা মনে পড়ে, যেমন ব্যক্তিত্ব তেমনই রাগ। উনি যখন আমাদের স্কুলে আসেন, তখন ইয়াং ছিলেন, সদ্য বিয়ে করেছিলেন, দেখতেও হ্যান্ডসাম ছিলেন। একবার ক্লাস টেনের কোনও এক মেয়েকে উনি এমন মারটাই না মেরেছিলেন তাঁর ব্যক্তিগত বিষয়ে কথা বলার জন্য! সে ঘটনাটা নিয়ে খুব আলোচনা হয়েছিল, আমরাও শুনতাম, ওই নতুন স্যারটার খুব রাগ। আমরা তখন প্রাইমারিতে পড়ি।


একটা ঘটনা বলি তোমাকে। হাইস্কুলে ওঠার পর আমি ওই স্যারের খুব প্রিয় হয়ে উঠেছিলাম, কারণ ইংরেজিতে যারাই ভালো, স্যার তাদের সবাইকেই ভালোবাসতেন, আর প্রতি একজামে ইংরেজিতে আমার নাইনটি-প্লাস নম্বর থাকত। স্যার নিজেই বাবাকে বললেন, আমি মেঘকে পড়াব, ওকে এইটে বৃত্তিটা আমি পাওয়াবই।


তো স্যারের কাছে আমি প্রাইভেট পড়ি। বৃত্তিও পেয়েছিলাম। কিন্তু স্যার প্রাইভেটের টাকা নেন না। এত জোরাজুরিতে যখন টাকা নেন না, তখন প্রতি পুজোয় স্যারকে শার্ট-প্যান্ট গিফট করা হতো। বাড়িতে নিমন্ত্রণ থাক বা না থাক, যে-কোনও অনুষ্ঠানে উনি এসে খেতেন, আমার দিদিদের সাথেও স্যারের ভালো সম্পর্ক ছিল, এখনও আছে।


এই স্যারের সামনে আমি ফ্রক পরে বড়ো হয়েছি, স্যারের বাসায় গিয়ে স্যারের ছেলের সাথেও খেলেছি। এসএসসি তে ভালো রেজাল্ট করতে পারিনি, সায়েন্সের সব সাবজেক্টে খারাপ করেছি, এই স্যারের পরামর্শেই গ্রুপ চেইঞ্জ করে আর্টসে এসেছি। স্যার প্রায়ই বলতেন, আমি খুব ভালো কিছু করতে পারব। সবসময় আমার খোঁজখবর রাখতেন।


তো যখন ইন্টার ফার্স্ট ইয়ারে পড়ি, তখন উনি একদিন হঠাৎ আমাকে জড়িয়ে ধরে কিস করলেন, গায়ে হাত দিলেন। স্যারকে এত সম্মান করতাম, এত ভয় পেতাম, আমি আর কিছুতেই ওঁকে ক্ষমা করতে পারলাম না। আর কোনোদিন স্যারের সাথে কথা বলিনি। চার-পাঁচ বছর আগে স্যার খুব অল্প বয়সেই স্ট্রোক করে প্যারালাইজড হয়ে গেছেন। আমার পরিবারের সবাই স্যারের সঙ্গে দেখা করেছে, আমি করিনি।


ইদানীং মনে হয়, স্যারকে আমি ক্ষমা করে দিয়েছি। মাঝে মাঝে এ-ও মনে হয়, স্যারের অভিশাপেই বোধ হয় আমি এ জীবনে ভালো কিছু করতে পারলাম না। ওইদিন যা ঘটেছে, তা নেহায়েতই একটা তুচ্ছ ঘটনাই ছিল, তার জন্য আমার প্রতি স্যারের স্নেহটা মিথ্যে হয়ে যায় না। স্যার আমার সঙ্গে ওরকম করার পর আমার জ্বর এসেছিল বিতৃষ্ণায় আর ঘৃণায়। যাকে এতটা ঘৃণা করি, তার জন্যই অপরাধবোধে ডুবে মরি! কী এক বন্দিত্ব!


নিজেকে প্রায়ই খুব তুচ্ছ-ক্ষুদ্র মনে হয়! ভালো ভালো মানুষদের দেখলে আরও বেশি মনে হয়। দীর্ঘশ্বাস ছাড়ি! এর চেয়ে বেশি আর কীই-বা করতে পারি আমি!


আচ্ছা রোদ্দুর, খুব ছোটোবেলায় আমি যখন পাখিদের সাথে, পাতাদের সাথে একা একা কথা বলতাম, বাগানে একা একাই অনেকটা সময় কাটিয়ে দিতাম, তখন কেউ একজনকে তো অনুভব করতাম নিশ্চয়ই! সেটা কি তুমি ছিলে? খুব ভোরবেলায় উঠে যে আমি আঁচলভরে শিউলি কুড়োতাম আর ভাবতাম, একজন রাজপুত্র তো আসবে এই ফুলগুলো নেবার জন্য; দিনশেষে আমার ফুলগুলো বিবর্ণ হয়ে যেত, তবু তুমি তখনও আসতে না কেন? পুজোর সময় অঞ্জলি দিয়ে সবাই হইহই রইরই করত, আর আমি চুপটি করে ঘরে এসে তোমাকেই খুঁজতাম আমার পড়ার টেবিলে। আমার কেমন জানি সবার ভিড়ে একাকী লাগত, তুমি তখন কী করতে? দশমীতে সবাইকে বিজয়ার শুভেচ্ছা দিতে দিতে ক্লান্ত হয়ে মনে হতো, কাকে যেন শুভেচ্ছা দেওয়াই হলো না, সে কোথায় ছিল তখন? চৈত্রের মাতাল উদাসী হাওয়ায় আমি যে শিমুল ফুলগুলো কুড়িয়ে আনতাম, তুমি সেগুলো নিতে না কেন? ক্লান্তদুপুরে কোনও গল্পের বই পড়তে পড়তে যখন বুকের উপর বইটা খোলা রেখেই ঘুমিয়ে পড়তাম, তখনও তো তোমার কথাই ভাবতাম!


তুমি কি আমার সেই পূর্ণতা? এতদিন কোথায় ছিলে? দেখা যদি হলোই, তবে তা কেন এত অবেলায়?
তোমার নাগাল কিছুতেই পাই না, পাই না খুঁজে তল।
দেখা পেলে বলেই দিতাম আমি তোমার সেই অশ্রুজল!
রোদ্দুর গো, তুমি সবখানেতেই কাব্য খোঁজো, তাই মানুষটাকে খুঁজে আর পাও না! কাব্যেও তুমি আনন্দ পাও, বিষাদও তোমার কাছে সুখের, আর আমি কিনা কাব্য লিখি রক্তলেখায়! যাও, লিখবই না আর কিছু!


রোদ্দুর, ভয়ংকর রকমের একটা খারাপ স্বপ্ন দেখে ঘুম থেকে জেগে উঠেছি। স্বপ্নে দেখলাম, আমার মৃত্যুকাল উপস্থিত। সেটা জেনে কে যেন ঘরের লাইট অফ করে দিয়েছে। সঙ্গে সঙ্গেই এত অন্ধকার হয়ে গেল ঘরটা! আমি বলার চেষ্টা করছি, আলোটা জ্বালিয়ে দাও, আমি কিছু কথা বলতে চাই। কিন্তু আমার গলা দিয়ে কোনও কথাই বেরোচ্ছে না। চিৎকার করে বলার চেষ্টা করছি আর খুব কাঁদছি। আমার সামনে কে যেন একজন আমার সব কথা শুনছেন, কিন্তু কোনও সাহায্য করছেন না, বরং বিশ্রীভাবে মুখ টিপে টিপে হাসছেন। আমি ভয়ে তখন শুধু হরে কৃষ্ণ বলার চেষ্টা করছি, আর চোখের সামনের লোকটাকে সরিয়ে কৃষ্ণকে দেখার চেষ্টা করছি। এরপর আমি প্রচণ্ড ভয় পেয়ে জেগে উঠলাম! ভয়টা এখনও কাটছে না, এখন ঘুমোতেও ভয় লাগছে।


তোমার লেখাগুলোয় ডুবে যেতে পারলে বাস্তবতায় চলে আসতাম। কীসব লেখো, মানেই বুঝতে পারি না! চরম বাস্তব জগতের কথা লেখো তুমি, আর আমি থাকি এক ঘোরের জগতে! জানো রোদ্দুর, মৃত্যু এমনই একটা বাস্তব শব্দ, যার সাথে এই জগতের রাগ, দুঃখ, অভিমান, সুখ, কষ্ট কোনও কিছুরই কোনও সম্পর্ক নেই, এমনকী প্রেমেরও না! সেই ঘোরের জগতটাই কি বেশি বাস্তব, রোদ্দুর? আমরা তাহলে কোন জগতে বাস করি? যত মহাত্মা ব্যক্তি পৃথিবী ছেড়ে গেছেন, তাঁরা এখন কোথায়? বিরক্ত হয়ো না। সকাল হলেই ঠিক হয়ে যাবে। তখন আর জ্বালাব না। মেঘ এখন ভয়ের খাঁচায় বন্দি, রোদ্দুর!


আমার কিছু ভালো লাগে না, রোদ্দুর! কারও সঙ্গে কথা বলতেও ইচ্ছে করে না। তোমাকে কিছু বলতে গেলে আমার নিজস্ব কিছু সময়ের দরকার হয়, রোদ্দুর। আমি অনেক দিন সেই সুযোগটুকু পাই না। হঠাৎ হঠাৎ কী এক কষ্টে ছটফট করি, মাঝরাতে ঘুম ভেঙে গেলে আর ঘুমোতে পারি না। কত কথা জমে আছে বলার! জীবন মানেই বুঝি দ্বিধা-দ্বন্দ্ব আর রহস্যে ক্রমাগত ঘুরপাক খাওয়া।


এই কয়েক দিন আমার বেশি কষ্ট হচ্ছিল এটা ভেবে যে, আমি যার সুখের কারণ হতে চেয়েছিলাম, কীভাবে যেন তারই সবচেয়ে বড়ো কষ্টের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছি! তাহলে কি পৃথিবীতে শুদ্ধতম বলে কিছু নেই? ভালোবাসার মতো এত পবিত্র একটা অনুভূতির ফলও শেষ পর্যন্ত বিষাদ আর কষ্ট! এই পৃথিবীটাই বুঝি একটা নরক!


তোমার চোখের বিষণ্ণতা আমাকে অস্থির করে দেয়! বিষণ্ণতা তোমাকে মানায় না, রোদ্দুর। তোমার জন্য অনেক আলোর পথ আছে, তুমি সেখানে থাকো, আলোর পথে হাঁটো! আমি কোথাও হাঁটতে চাই না, আমি মৃত মানুষ। মৃত মানুষের সাথে সখ্য গড়ে তুলো না, রোদ্দুর! মাঝে মাঝে তুমি যখন বকাঝকা করো খুব বাজেভাবে, আমার কিন্তু কষ্ট হয়, নিজেকে খুব ছোটো মনে হয়, কেঁদে ফেলি। আমি একটু একটু করে আরও মরে যাই।


আমি বুঝতে পারি, ভেতরের সবকিছু জানানো উচিত, কিন্তু জানাতে পারি না। ভেতরে ভেতরে ছটফট করি, একসময় সব ছেড়ে দিই হাতের মুঠো খুলে দিয়ে, আর মনে মনে ভাবি, বুঝে নেবার হলে বুঝে নেবে! নিজেকে আর কত ব্যাখ্যা করা যায় বলো? আর পারি না, আমি ক্লান্ত! তোমাকে চিনতে আমার সমস্যা হয় না, কারণ আমরা দু-জন যে এক; ভাবনা এক, রাগ-দুঃখ-ভালোবাসা সবই এক। আমি তোমার ভেতরের তুমি’টাকে দেখতে পাই। শুধু তফাত এটুকুই, তুমি বেঁচে আছ, আর আমি মরে গেছি। আমার সাথে থেকো না, রোদ্দুর! মৃত মানুষের উপর প্রত্যাশা বেড়ে গেলে সেই মৃত মানুষটার খুব কষ্ট হয়!


আমার মতন একটা তুচ্ছ মানুষেরও বেঁচে থাকাটা খুব অর্থবহ আর সার্থক হতে পারত, কিন্তু কী এক ভয়াবহ অভিমানে বেঁচে থাকাটা আমি বিসর্জন দিয়েছি জানি না। নিজের উপর অনেক অভিমান, ভালোবাসার উপর অনেক অভিমান। আমার সমস্ত ভালো থাকাটা তো একজনের উপর নির্ভর করতে পারত, অথচ তাকে আমি খুঁজেই পেলাম না! নিজেকে আমার অসুস্থ মনে হয়, যার জন্য একটা গোটা পৃথিবী বিসর্জন দিয়েছি, তাকে কোনোদিন তা বুঝতেই দিইনি! এখন আর কিছু চাওয়ার নেই কারও কাছ থেকে। এখন শুধু চাওয়া, পৃথিবীর সব প্রাণী ভালো থাক, আমার জন্য কেউ কষ্ট না পাক।


এই যে লিখে লিখে অনুভূতি বোঝানো, এ বড়ো যন্ত্রণা গো, রোদ্দুর! তোমার কতটা কষ্ট হয় বুঝি। আর কোনও উপায় নেই অনুভূতি শেয়ার করার? শেয়ার না করলেই-বা কী হবে! আমরা কথা বলতে পারলে কত ছোটো ছোটো সুখ, হাসি, ভালোলাগা তৈরি হতে পারত! আমি তো আজ কথা বলতেও ভুলে গেছি! এত কষ্ট করে তোমাকে এত কিছু লিখতে হয়, এসব আবার তোমাকে পড়তেও হয়…তোমাকে এ থেকে মুক্ত করতে ইচ্ছে করে। এমন একটা ভালোবাসা হয় না, রোদ্দুর, যা পুরোপুরিই বাধ্যতাশূন্য, দ্বিধাহীন, ভারমুক্ত? সেখানে নেই কোনও দায় কিংবা প্রত্যাশা; সমস্ত ইগোর ঊর্ধ্বে, একান্ত নিজের মতো শান্ত, সৌম্য, স্নিগ্ধ খুব ব্যক্তিগত এক ভালোবাসা…হয় না? আর তো কিছু পারব না, তোমার কষ্টগুলো আমার কাছে জমিয়ে রেখো, আমি খুব যত্নে ওদের রেখে দেবো। আর তোমার সঙ্গে একদিন দু-কদম হাঁটতে চাই, আমার এই ইচ্ছেটুকু পূরণ কোরো, কেমন? এই বুড়ো-বয়সে প্রেমপত্র লিখতে লজ্জা করে, রোদ্দুর। কথা হচ্ছে, তুমি অমন আর লিখবে না। হাজার হাজার মেয়ে তোমার প্রেমে পড়ে যাচ্ছে, ব্যাপারটা আমি সহ্য করতে পারছি না। এবার কিন্তু তোমাকে সত্যিই সবাই পাগল ভাববে!


জানো রোদ্দুর, আমার মা খুব দজ্জাল টাইপের মা ছিলেন। মানুষের সামনে কখনওই মেয়েদের প্রশংসা তো করতেনই না, উপরন্তু অপমান করতেন। পাড়াপ্রতিবেশীরা যখন বলত, এত লক্ষ্মী মেয়ে…মা সঙ্গে সঙ্গেই রেগে বলতেন, লক্ষ্মী, না ছাই! পুরোই এক-একটা অকর্মার ঢেঁকি! প্রতিদিন গীতাপাঠ করা বাধ্যতামূলক করে দিয়েছিলেন, না করলে বকুনির অন্ত থাকত না। আমি সেই ছোট্ট মেয়েটা তখন মাঝেমধ্যে কাঁদতে কাঁদতে গীতাপাঠ করতাম। সেই ছোটো থেকে একই শব্দগুলো বার বার আওড়াতে আওড়াতে হয়তো আমার নিজের অজান্তেই সেগুলো আমার মস্তিষ্কে ঢুকে গেছে। কীভাবে যেন একটা বৈরাগ্য ভাব চলে এসেছে নিজের মধ্যে!


আমি সবকিছু উপভোগ করতে চাই, কিন্তু কীভাবে যেন সবই ত্যাগ করে ফেলি! তোমার পাগলামি ও প্রেম আমার মনে পুলক জাগায়, তোমাকে আঁকড়ে ধরতে খুব ইচ্ছে করে, একমুহূর্তের জন্য আমি চঞ্চল হয়ে যাই, কিন্তু পরক্ষণেই কোথা থেকে এক ভয়, উদাসীনতা, নির্লিপ্ততা এসে আমার মধ্যে ভর করে!


মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, একছুটে চলে যাই! মন চায়, পাগলামি করি, ভালো থাকি ও ভালো রাখি। হঠাৎ ফোন করতে খুব ইচ্ছে করে, সেই ছোট্টবেলার চঞ্চলতাটা ফিরে আসতে চায় শুধু তোমার জন্য। তারপর…তার আর পর হয় না! আমরা না দু-জনেই বুড়ো হয়ে গেছি! বাচ্চা ছেলেমেয়েদের মতো প্রেম আমাদের মানায় না, মিস্টার! তোমাকে তো একদমই মানায় না!


আমাকে একটু সময় দাও। আমি আসব ঠিকই! ঘুরে-ফিরে এক তুমি বাদে আমার বাঁচার জায়গাই-বা কোথায়! মন খুব অস্থির হয়ে আছে, ধাক্কাটা একটু সামলে নিতে দাও। তুমিও স্থির হও, প্লিজ! তোমার জন্য শুধু ভালোবাসা আর ভালোবাসা! তোমার অস্থিরতা দেখলে আমি কষ্ট পাই, রোদ্দুর। আমার জন্য হলেও ভালো থাকো। আর কোনও রকম কষ্টের কথা লিখবে না, প্লিজ! আমার মন ভীষণ খারাপ, রোদ্দুর!


কথা ছিল, একদিন রাজকন্যা রাজপুত্রের দেখা হবে কোনও এক শেষ গোধূলিবেলায়। রাজকন্যার পরনে কালোপেড়ে লাল শাড়ি, হাতভর্তি রেশমি চুড়ি, টুংটাং শব্দ তুলে তার উৎসুক দু-চোখ থাকে অপেক্ষায়! ঘোড়ার খুরে খুরে ধুলো উড়িয়ে আবছা আলোয় ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয় রাজপুত্র! সমস্ত শৌর্যবীর্য-সৌন্দর্য তার দু-পায়! তার হাসিতে যেন বিদ্যুৎ খেলা করে! তার চোখের দৃষ্টিতে শান্ত হয়ে যায় নদী। রাজকন্যা অবাকচোখে তাকিয়ে ভাবে, স্বর্গ থেকে নেমে এসেছে রাজপুত্র, এখন কোথায় বসতে দেবে তাকে? একটু পরেই চমকে ওঠে দৃপ্ত এক মৃদুকণ্ঠে! লাল শাড়িটা ঠিক হয়নি, তুমি আজ পরতে নাহয় সবুজ! সবুজে সবুজে খেলা করে যেত আকাশ-পৃথিবী-পাতাল! তুমি তো স্নিগ্ধ সবুজ আকাশে উড়ে-চলা একঝাঁক টিয়াপাখির মতন! তোমার ওই ঠোঁটদুটো টকটকে লাল আগুন ঝরায় যেন! রাজকন্যা লজ্জারাঙা মুখে নীরবশান্ত চোখে নিজেকে লুকোয়। কোত্থেকে এক রংধনু এসে দেয় সাতটা রং ছড়িয়ে! রঙের আভায় রাজকন্যা যেন আরও রাঙা হয়ে ওঠে! রাজপুত্র তখন একপশলা বৃষ্টি হয়ে ঠিক ছুঁয়ে দেয় রাজকন্যার ঠোঁট-গাল-চোখ! এত আলো! এত রং! এত মধুরতা! নতমুখে সব সৌন্দর্য যেন হার মেনে যায় রাজকন্যা-রাজপুত্রের একান্ত সেই মিলনমেলায়!


আমি কোনও কাজই সময়মতো করতে পারি না। আমাকে শাস্তি দিয়ো না, প্লিজ! কেন জানি না, খুব অস্থির লাগছে! আমি বোধ হয় মানসিকভাবে অসুস্থ একজন মানুষ। সবকিছুর বিনিময়ে হলেও তুমি ভালো থাকো। আমি আর কখনও তোমার লেখা পড়ব না। পড়লে আমার খুব কষ্ট হবে, তোমাকে ফোন করতে ইচ্ছে করবে। When you fuck, life smiles. When life fucks, you cry. But when life fucks, I just enjoy it, though it hurts terribly!


ভেবেছিলাম, আজকে থেকে জীবনে নতুন একটা অধ্যায়ের শুরু হবে। সকাল থেকে খুব অস্থির লাগছিল, কথা বলার জন্য খুব ব্যাকুল হয়েছিলাম। তোমাকে তো দেবতার মতন ভয় পাই, তাই কথাগুলো গুছিয়ে নিয়েছিলাম। ঠিক যখন ফোনটা হাতে নিলাম, পাশের বাসার ভাবি বাচ্চাকে নিয়ে এল। ভাবির সামনেই তোমার লেখাটা পড়লাম। তখন মনের মধ্যে চলছে উথাল-পাথাল ঝড়! কোনও রকমে ভাবিকে বিদায় দিয়ে তোমাকে ডায়াল করে দেখি, আমার নম্বর তোমার ব্ল্যাকলিস্টে! আমি জানি, রোদ্দুর বাইরে যতটা কাঠিন্য দেখায়, ভেতরে সে ততটাই নরম। যতটা প্র‍্যাকটিকাল তাকে দেখায়, তার থেকে হাজারগুণ বেশি ইমোশনাল সে। তার ক্ষতগুলো আমি সারাতে পারলাম না। আমি যেখানেই থাকি, আমার শুভপ্রার্থনা তার সাথে থাকবে।


এই যে কেষ্টঠাকুর! সংসারে তো আমারও কিছু কাজকর্ম আছে, না কি? আপনি এভাবে বাঁশি বাজালে সংসারে তো মন থাকে না! রাধাকে এত যন্ত্রণা দিয়ে কৃষ্ণ কি সুখটা পেত? কৃষ্ণ কি কখনও জানত, সংসারের সব কাজ ফেলে যমুনার তীরে ছুটে যেতে রাধাকে কতটা দুর্ভোগ পোহাতে হতো! সেই তো শেষ পর্যন্ত রাধার স্থান হয়েছিল আয়ানের গোয়ালঘরে, সারাপৃথিবী চিনত তাকে কলঙ্কিনী হিসেবে! এখন নাহয় রাধাকে ছাড়া কৃষ্ণের পুজো হয় না, রাধার নাম ছাড়া কৃষ্ণের নাম উচ্চারিত হয় না, কিন্তু রাধার তাতে কী এসে যাচ্ছে? সে তো যা যন্ত্রণা সহ্য করার করেই গেছে! আজকালকার যুগে কেউ আর এত বোকা নয়, রাধা হতে সবার বয়েই গেছে, যত সম্মান ও স্বীকৃতি, সবই তো এক রুক্মিণীরই! আর কেষ্টঠাকুরও তো সব ভুলে রাজকার্যে মন দিয়েছিলেন, আপনিও অমন রাজকার্য চালান না কেন? এখন তো আর রাধা নেই!


তোমার আমি’টা আমার কাছে আছে। এসে ফেরত নিয়ে যাও তো! তোমার একটু আগের লেখাটা তো আমার লেখার কথা ছিল…রোদ্দুর! আমি মাঝে মাঝে ভীষণ বিষণ্ণতায় ভুগি। আমি জানি না, সত্যিটা কী, বাস্তবটা কী, ভবিষ্যতেই-বা কী হবে? প্রায়ই আমি দুষ্টুমি দিয়ে কান্না লুকিয়ে ফেলি। আমি জানি, কোথাও কেউ নেই, তারপরও আমি মনেপ্রাণে বিশ্বাস করার চেষ্টা করি…আছে সে, তাকে থাকতেই হবে! একসময় অকারণেই আমি নাস্তিক হয়ে গিয়েছিলাম, এখন অকারণেই খুব বেশি আস্তিক হয়ে গেছি! পরকালে খুব বিশ্বাস জন্মে গেছে, হয়তো এই জন্মের কিছু অপূর্ণতার তীব্র তৃষ্ণায়! ইদানীং মনে হয়, হাতে বোধ হয় খুব বেশি সময় নেই। যাবার আগে কিছু সৌন্দর্যসৃষ্টি করে যেতে চাই। আচ্ছা রোদ্দুর! তুমি আমার সঙ্গে মাত্র যে দু-একটা কথা বলো, তা-ও এত রুক্ষস্বরে বলো কেন? যেদিন অভিমান করে সত্যি অনেক দূরে চলে যাব, সেদিন আর কোথাও খুঁজে পাবে না, দেখো!


রোদ্দুর, আমার অ্যাকাউন্টটা ডিঅ্যাক্টিভেট করে দিতে খুব ইচ্ছে করছে। কিন্তু আমি তা-ও পারব না, অনেক প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে আর…শেষ পর্যন্ত তোমাকে না দেখে থাকতেও আর পারব না। আমি একজন অযোগ্য মানুষ। অনেক যোগ্য মানুষ তোমার জীবনে আছে, তারা তোমাকে ভালো রাখবে। বিদায় বলতে আমার একটুও কষ্ট হচ্ছে না…