রোদ্দুরকে: এক



রোদ্দুর, আমি জানি না, আমি কী করব। খুব কষ্ট হচ্ছে। মাঝে মাঝে আমার নিজেকে সাইকোপ্যাথ মনে হয়। বলো তো, আমি কি পাগল? হই যদি, তবে এমন পাগল কি আমি আগেও ছিলাম?


আজ নেত্রকোনা গিয়েছিলাম। জানো তো, আমি যে সময়টাতে জার্নি করি, তার পুরো সময়টা শুধু তোমাকেই ভাবি। কত সুন্দর সুন্দর ভাবনা যে ভাবি আর শুধু মনে হয়, ইস্‌! যদি তার সাথে এই মুহূর্তটা শেয়ার করতে পারতাম!


এদিকটা যে কী সুন্দর! রাস্তার দু-ধারে শুধু মাঠের পর মাঠ, বসতি অনেক কম, এত ফাঁকা ফাঁকা সবকিছু…কেমন জানি একটা অন্যরকম ভালো-লাগা কাজ করে। এর সাথে ব্যস্ত কোনও শহরের কথা মনে এলেও খুব বিরক্ত লাগে। আচ্ছা, আর বকবক না করি, বাড়ি গিয়ে তোমাকে ফোন করব। (এই ভাবনাটা আমি বোধ হয় এক কোটি বার ভেবেছি, কিন্তু কোনোদিনই করতে পারিনি। তবে এবার বোধ হয় পারব, কারণ আগে একটা ভয় ছিল, এখন ভয়টা আর নেই।) ‘তুমি কেমন আছ’ সেটা খুব জানতে ইচ্ছে করে, কিন্তু কী আর করব বলো, এতটা ভাগ্য তো আমার নেই!


অ্যাই! আজ কী দিবস গো? প্রমিজ ডে? চলো না, আমরাও কিছু প্রমিজ করি। ‘যা-ই হয়ে যাক না কেন, আমরা কখনওই কেউ কাউকে হারিয়ে ফেলব না। যত কিছুই ঘটুক আর যত দূরত্বই বাড়ুক, যত বিচ্ছিন্নতাই আসুক না কেন, আমরা মনের কাছাকাছি থাকব, কখনও ভুল বুঝব না। পৃথিবীর সবাই বিপরীত কথা বললেও তোমার-আমার বিশ্বাস আমাদের মধ্যে অটুট থাকবে।’ আমি প্রমিজ করলাম। তুমি করবে?


আজ তো জড়িয়ে-ধরা দিবস। আজ কিছু বলব না।


রোদ্দুর! আমার ভেতরটা না হঠাৎ বরফের মতো জমে গেছে! ইচ্ছে করছে হাউমাউ করে কেঁদে কেঁদে ভেতরের কষ্টগুলো সবাইকে জানিয়ে দিই। এই পৃথিবীর আর কেউ না বুঝুক, তুমি তো আমাকে একটু বোঝো! কী করব আমি! না পারি তোমার সাথে বাঁচতে, না পারি তোমাকে ছাড়া বাঁচতে। এত কথা বলা আমাকে মানায় না, আমার চুপ হয়ে যাওয়া উচিত। বিশ্বাস করো, এখানে আমার কোনও ঔদ্ধত্য নেই, আমি যে কতটা অসহায়, সেটা কীভাবে বোঝাব! জানো তো, হাজারটা কষ্ট বুকে রেখে আমি ঘুরে দাঁড়ানোর চেষ্টা করছি। পাশে থেকো। তুমি পাশে থাকলে একদিন আমি সবই পারব।


আমার কিছু স্টুপিডিটির কথা বলি। আমার প্রচণ্ড ইচ্ছে তোমার সাথে একটু ফোনে কথা বলার। আজকে সারাদিন অনেক চেষ্টা করেছি তোমাকে ফোন করে ভ্যালেনটাইন্স উইশ করার। (তুমি রিসিভ করবে কি করবে না, সে হিসেব তো পরে!) ফোনটা রিসিভ হলে আমার গলা দিয়ে আর কথা বেরোবে না জানি। আমার গলা শুকিয়ে যায়, বুক ধরফর করে। কেন বলো তো? এতটাও তো আনস্মার্ট আমি নই! আমি নিজের উপর চরম বিরক্ত, রোদ্দুর! আমার কোনও কথা বলা মানায় না। আমি সিদ্ধান্ত নিয়েছি, আমি আর জ্বালাব না তোমাকে। তার উপর আমার মনটা সবসময় এত খারাপ থাকে যে কথা বলার জন্য যে উচ্ছ্বাস দরকার, তা-ও হারিয়ে ফেলেছি। তুমি জানো না, আমি কতটা চুপচাপ হয়ে গেছি!


অনেক বিরক্ত করেছি তোমায়। ভালো থেকো, তুমি ভালো থাকলে আমিও ভালো থাকব। খারাপ-থাকা আমি ভুলে গেছি, এখন আমি সবসময় ভালো থাকি আমার ব্যক্তিগত কিছু কষ্টকে সঙ্গে নিয়ে। রোদ্দুর! একটা জিনিস চাইব। দেবে? যদি কোনোদিন কোনও সময় তোমার খুব অসহ্য লাগে, ভীষণ কষ্ট হয়, তোমার কোনও একাকী মুহূর্তে আমাকে একটা ফোন করবে? সুখে থাকলে মনে নাই-বা করলে, কখনও দুঃখে পড়লে আমাকে মনে করবে একদিন?


ভালোবাসা দিবসের শুভেচ্ছা নিয়ো। তোমাকে দেখতে পাই না বলে আমি খুব কষ্টে আছি। এমনিতে আমার আর কোনও কষ্ট নেই।


আমার প্রচণ্ড রকমের একটা রোমান্টিক গান শুনতে ইচ্ছে করছে। ইচ্ছে করছে, অষ্টাদশী কোনও মেয়ের মতো করে ভালোলাগায় ভিজতে ভিজতে নেচে বেড়াই। রোদ্দুর, আমার এখন, যা মন চায়, তা-ই তোমাকে বলতে ইচ্ছে করে। তোমাকে সত্যিই সামনে পেলে আমি যে কতটা বকবক করব, তা আমি নিজেও জানি না। সেদিন একজীবনের সব কথা বোধ হয় বলে ফেলব, যা কাউকে কখনও বলা হয়নি।


এই যে লিখছি, আমার চোখে জল এসে গেছে। আমি কি পাগল হয়ে যাচ্ছি, রোদ্দুর? খুব ভালো লাগতে লাগতেই খুব কষ্ট হয়, আর খুব কাঁদতে ইচ্ছে করে। ইচ্ছে করে, পৃথিবীটাকে ফেঁড়ে-ফুঁড়ে তোমাকে সামনে নিয়ে আসি। স্বপ্নগুলো অবাস্তব, এই ভাবনাটা যতটা কষ্ট দেয়, তার থেকে হাজারগুণ বেশি যন্ত্রণা দেয় এটা ভেবে যে স্বপ্নগুলো সত্যি ছিল, অথচ আমি কখনও তা বুঝতেই পারিনি!


তুমি আর কবিতা লিখো না। আমার ভেতরটা পুড়ে যায়! একরাশ মন খারাপ নিয়ে ঘুমোতে যাচ্ছি।


রোদ্দুর! আজ খুব একটা সুস্থ ছিলাম না, তবুও একটা অনুষ্ঠানে গিয়েছিলাম, বোনের ছেলের জন্মদিনে। সারাদিন মাথাব্যথা নিয়ে চুপ হয়ে ছিলাম। কাল বাড়িতে মঙ্গলচণ্ডী পুজো আছে, ব্যস্ত থাকব অনেক। বলো তো, এটা কীভাবে সম্ভব যে দুইপ্রান্তের দুটো মানুষ কোনও ধরনের যোগাযোগ ছাড়াই মনের এত কাছাকাছি থাকে! তুমি মনে করো কি না জানি না, তবে এটা সত্যিই কোনও ঐশ্বরিক আশীর্বাদ। এখানে চরম কষ্টের মধ্যেও একটা পরমসুখ আছে। কী যেন মনে হয় আর হতেই থাকে! আমার যা ঐশ্বর্য আছে, তা আর কারও নেই, আমার একটা ব্যক্তিগত তুমি আছে, একটা আত্মা আছে। না থাক যোগাযোগ, তবুও তো আমরা আছি একে অপরের জন্য। আমি আর কষ্টকে প্রশ্রয় দিতে চাই না। আমার এত ঐশ্বর্য থাকতে কেন আমি কষ্টকে প্রশ্রয় দিচ্ছি! একদিন দেখো, খুব সুখের দিন আসবে। যত ফোঁটা চোখের জল পড়েছে, তার দ্বিগুণ সুখ আসবে।


প্রেমের মতো পবিত্র কিছু আর কী আছে বলো? ভালোবাসা ঠিক ততটাই কষ্টদায়ক, যতটা সুখ এতে আছে। তুমি ভালো থেকো। আমি ভালো আছি।


কেমন আছি…যদি সত্যিই বলতে পারতাম! তুমি যে কেমন থাকো, তা-ও তো জানতে পারি না। সবসময় ভেবে নিই, ভালোই আছ হয়তো। প্রার্থনা করি, সবসময় ভালো থাকো।


আমি আসলে ভালো নেই। বড়ো হওয়া ভালো নয়, রোদ্দুর। বড়ো হলে একটাসময় বোঝা যায়, পৃথিবীতে কেউ আপন নয়, তখন ভীষণ কষ্ট হয়। ছোটোরা এসব বোঝে না। বোঝে না বলেই সবাইকে আপন ভেবে অমন হাসিখুশি থাকতে পারে। আমার তো না থাকার মাঝেও তুমি আছ, তাই আমার কষ্ট নেই। সে অনেক কথা…


মাঝে মাঝে ইচ্ছে করে, সব কষ্ট এক এক করে বলে ফেলি, তোমাকে বলেই দিই সবটা! পৃথিবীতে কিছু মানুষের কখনও মন খারাপ হয় না, ওরা কখনও দুঃখ পায় না। ওরা দুঃখের সাগরেই বেঁচে থাকে, তাই আলাদা করে দুঃখটাকে আর ছুঁয়ে দেখতে হয় না। সব মানুষ সুখ বেছে নিতে পারে না, কেউ কেউ জেনে-বুঝেই কাঁটার পথটাও তো বেছে নেয়, তাই না? মাঝে মাঝে সুখী মানুষদের দেখলে খুব ঈর্ষা হয়, আবার কীরকম হাসিও পায়! সবকিছু হারিয়ে ফেলা মানুষ কিছু বলতে পারে না। তাদের দৃষ্টি নির্লিপ্ত, আত্মা নির্বিকার।


মন আজ খুব বেশি খারাপ। তোমাকে কিছু বলতে চাইছিলাম, বলতে পারছিলাম না কিছুতেই! কথাগুলো কেমন জানি কবিতা হয়ে যাচ্ছে। হঠাৎ হাত লেগে কথাগুলো দূরে চলে গেল। আমিও সংবিৎ ফিরে পেলাম।


ভালো থেকো। কিছু মনে কোরো না। কিছু ঝামেলার মধ্যে আছি। আমি যেটা বলতে চাই, কখনওই সেটা বলতে পারি না। উলটাপালটা কথা বলার জন্য ক্ষমা চাইছি।


আজকের চাঁদটার মধ্যে কেমন যেন একটা মায়া আছে। অনেক দিন চাঁদ দেখি না। হঠাৎ চোখে পড়ল, আর অমনিই কী যেন একটা ভালোলাগায় আচ্ছন্ন হয়ে অনেকক্ষণ চেয়ে দেখলাম। আচ্ছা, ঠিক এই চাঁদটা তোমার ওখানেও আছে? আমার খুব খুশি খুশি লাগছে! কী করি বলো তো? এক বাড়ি মেরে তোমার মাথাটা দু-ভাগ করে দিই? জানো, একটু ভালোলাগাতেও মনের ভেতরটা কেমন ঝলমলে হয়ে যায়!


অ্যাই ছেলে! তুমি যা-ই করো আর যেমনই করো, আমি রোজ তোমাকে ফোন করেই যাব। আর কিচ্ছু লিখব না, যা বলার মুখেই বলব। আমার যে মাথা খারাপ, এইটা বোধ হয় তুমি জানো না। আর যেদিনই তোমাকে ফোন করি, সেদিনই দেখি শুক্র- অথবা শনিবার। ছুটির দিনগুলোয় তোমাকে বিরক্ত করতে চাই না। যা-ই হোক, ভালো থাকো। লিখো বেশি বেশি। কাল একটা কবিতা লিখেছিলাম খুব কষ্ট নিয়ে, আজ ওটা আর পড়তে হবে না। তার চেয়ে বরং গান শোনো…


ঘুম না আসার তো অনেক কষ্ট! আমি রাত জাগতে পারি না। কাঁদতে কাঁদতেও ঠিকই ঘুমিয়ে পড়ি। আজ হাসতে হাসতেও ঘুম আসছে না। পাগলের মতো কেন জানি হেসেই যাচ্ছি, হেসেই যাচ্ছি। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমি মৃত্যুর খুব কাছাকাছি চলে যাচ্ছি। এই শোনো, আমার হাত থেকে কিন্তু তোমার নিস্তার নেই। মরে গেলেও ভূত হয়ে জ্বালাব। তুমি সাবধানে থেকো! ভালোবাসার আরেক নাম মৃত্যুযন্ত্রণা, তিলে তিলে শেষ হয়ে যাওয়া।


আর শোনো, আমি প্রতিদিন ফোন করব; তোমাকে কথা বলতেই হবে, বলতেই হবে, বলতেই হবে। সত্যি করে বলো তো, আমার এমন নির্লজ্জতায় লজ্জা পাও তুমি? আসলে তোমাকে নির্লজ্জের মতো কী কী সব বলে ফেলি, পরে নিজেই মুখ লুকাই। এই কয়েক দিন আমার খাতাটা খুলিনি। তুমি চুপ হয়ে আছ আর আমি পুরো এলোমেলো হয়ে গেছি। আমার এই খাতায় তোমাকে নিয়ে কতশত লেখা, কত টুকটাক কবিতা…


রোদ্দুর, কী আর বলব! এটুকু তো বুঝেছি, এবার আমার সত্যিই থামা উচিত! আমার জন্য কখনও অস্বস্তিতে পোড়ো না। রোদ্দুর শুধুই আমার কল্পনা, আমার ভালোবাসা, বাস্তবে কেউ রোদ্দুর নেই গো! আর হ্যাঁ, শেষ বলে তো কিছু হয় না। যেদিন মানুষের নিঃশ্বাস থেমে যায়, ‘শেষ’ শব্দটা আসলে সেদিনই প্রযোজ্য, এর আগে কিছুতেই নয়! জীবনের নৌকাগুলো হেলেদুলে পাল তুলে চলতেই থাকুক…জীবনকে থামিয়ে দেওয়া বড়ো পাপ। তোমাকে আমার অনুভূতিগুলো নির্দ্বিধায় বলে গেছি, আমার সমস্যাগুলো কখনও বলা হয়নি। হাসিমুখে জীবনকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়াই তো ধর্ম, বলো…? ভালো থাকুক সবাই।


একটা প্রার্থনা আছে, যদি কোনোদিন তোমার খুব ক্লান্ত লাগে, তবে তুমি চলে এসো মেঘের কাছে। মেঘ তোমার অপেক্ষায় থাকবে অনন্তকাল।


সত্যিই জানো তো রোদ্দুর, আমার ভীষণ হারিয়ে যেতে ইচ্ছে করে! ইচ্ছে করে, একদম নেই হয়ে যাই, যেন আমাকে আর খুঁজে না পাও কোথাও! এত অভিমান, এত অভিযোগ নিয়ে থাকিই-বা কেমন করে! অভিমানটা কোথায়, জানো? তুমি একটাও স্পষ্ট কথা বলোনি কখনও! তোমার একটা স্পষ্ট উচ্চারণের আশায় বসে ছিলাম অনন্ত যুগ। আমাকে ছোটো ভেবে অবহেলাটা করেই গেলে, কিংবা হয়তো অন্যকিছু। আর অপমান…সে-ও তুমি করো আমার ভালোবাসাকে! এত সন্দেহ, এত সত্যি-মিথ্যে, এত হিসেবনিকেশ!


অথচ দেখো, আমি তো শুধুই ভালোবাসি। একদিন যদি দেখো, সব সন্দেহ ভুল ছিল, তোমার বিশ্বাসটাই ঠিক ছিল, তবে সেদিন কি কষ্ট হবে না বলো? কষ্ট পেতে তোমায় আর দিই কীভাবে! তাই হাজারটা অভিনয়ের মধ্য দিয়ে প্রমাণ করে দেবো, ভালো আমি বাসি না তোমায়!


জীবনটা অনেক ছোটো, রোদ্দুর! এত মান-অভিমান দুঃখ পুষে রেখে কীই-বা হবে! এটা তো সত্যি, একটা মুহূর্তের জন্যও তুমি মাথা থেকে যাও না! ঈশ্বর কেন এমনটা করছেন, কে জানে! কিছুতেই কেন ভুলে থাকা যায় না? চেষ্টা করে লাভ নেই, তার থেকে ভালো, নিজেকে ছেড়ে দেওয়া। ভাবনারা ভাবুক তো, দেখি, কত পারে! দুটো মানুষ যখন এক হবারই নয়, তখন উটকো অনুভূতি কেন এত যন্ত্রণা দিচ্ছে?


আচ্ছা, থাক এসব কথা। অনেক বার বলা হয়ে গেছে, আবার চক্রাকারে ফিরে ফিরে আসা! তোমার কোনও কথাতেই আমি কষ্ট পাই না, বরং তোমার জন্য কিছু করতে না পারার কষ্টে ভুগি।


আজ আমার কথা বলতে ইচ্ছে করছে না,
মনে মনে সারাটাক্ষণ আমার সাথেই আছ!
তোমার দেওয়া অবহেলাটাই আমার ভীষণ প্রিয়,
ভালোবাসার মিষ্টি কথা…ওসবে পোষায় না তো!


জানো, এই পৃথিবীর সবচাইতে বড়ো একাকিত্বটির নাম পরিবার। পারিবারিক কষ্ট যে কী, যে এর মধ্য দিয়ে যায়নি, সে তা কিছুতেই কল্পনাও করতে পারবে না। কেউ নেই, তাই একা, এটা মানা যায়। কিন্তু কেউ আছে, তাই একা, এটা মানা খুব কঠিন! প্রায়ই নিজেকে ভীষণ একা মনে হয়, খুব একাকিত্ব এসে গ্রাস করে নেয়। আমি তখন চুপচাপ দূরের গাছগুলোর দিকে তাকিয়ে থাকি। কাছের মানুষগুলোর শুধু প্রত্যাশা বাড়ে, ভালোবাসা কখনও বাড়ে না। কেউ ভালোবাসে না আমাকে।


মনে হয়, যে মানুষটা আমার সব অভিমান বুঝতে পারত, আমাকে বুঝতে পারত, আমি কখনও সেই মানুষটার কাছে পৌঁছতেই পারিনি! একটা ভালোবাসার মানুষের কাছাকাছি থাকতে পারার, দিনশেষে সেই মানুষটাকে জড়িয়ে ঘুমোতে যেতে পারার সৌভাগ্য মনে হয় স্বর্গে থাকার সৌভাগ্যের সমান।


আজ দিনটা খুব খারাপ গেছে। এই যে এসব বললাম, এর কোনও অর্থ আছে, বলো? কবে একদিন বলেছিলে দুঃখের ফেরি না করতে, দুঃখের ফেরি আর করিও না। আক্ষেপ, ক্ষোভ, কষ্ট, প্রত্যাশা কোনোকিছুই আর করতে ইচ্ছে করে না। মাঝে মাঝে শেয়ার করতে ইচ্ছে করে। বছরের বাকি দিনগুলো ভালো কাটুক, সুস্থভাবে যেন বেঁচে থাকতে পারি। এর চেয়ে বেশি আর কীই-বা চাইব!


তোমার লেখাগুলোর দিকে অনেকক্ষণ ধরে চেয়ে আছি…কাকে লিখেছ এত কঠিন কথাগুলো? আমিও তো অশান্তিতে রাখি তোমায়! একদিন সবাইকে মুক্তি দিয়ে দেবো, নিজেও মুক্ত হব। খুব ক্লান্ত লাগছে…


সেদিন মনটা খুব খারাপ ছিল। আমার কেন জানি হঠাৎ মনে হচ্ছিল, আমি মেয়েকে নিয়ে পরিচিত সবার আড়ালে দূরে কোথাও চলে যাব। কিন্তু কোথায় যাব, কীভাবে বাঁচব, এইসব ভাবতে ভাবতে মনে হচ্ছিল, যদি তোমার কাছেই একটু আশ্রয় চাই, শুধু একটু মাথা গোঁজার ঠাঁই, আর কিছু না, তুমি হয়তো দিয়েই দেবে। ঠিক এই কঠিন কথাটা যখন বলতে যাচ্ছিলাম তোমাকে, সাইকো-প্রেমিকা নিয়ে তোমার লেখাটা তখনই দেখলাম, আর অমনিই কেমন যেন অসহায় লাগছিল, নিজেকেই সাইকো মনে হচ্ছিল! সব কষ্ট কেমন যেন স্থির হয়ে গেল!


তারপর থেকে কেমন জানি আমার আর কোনও অনুভূতি কাজ করে না; মনে হয়, পৃথিবীর সবকিছুই স্বাভাবিক। এই যে ছেড়ে গেলাম বা কাছে আছি, এগুলো আসলে কিছু না। যা হবার তা-ই হয়। আমার মনটা খুব বিক্ষিপ্ত হয়ে আছে। খুব কষ্ট হচ্ছে। কেমন জানি পাগল পাগল লাগছে। আমার রোদ্দুরটা সত্যিই কি কোথাও নেই!


রোদ্দুর! তোমার সঙ্গে আমার অনেক বোঝাপড়া আছে। তোমাকে মন খুলে কিছু বলা যায় না, একটু এদিক-সেদিন হলেই প্রচণ্ড রেগে যাও। সেদিন কী একটু বললাম, তুমি বললে, ‘বিরক্ত না করে কিছু করতে পারো না, বাল?’ বুঝলাম, আমরা দু-জন দুইমেরুর মানুষ। আমি বাজে শব্দ একদমই সহ্য করতে পারি না, তা-ও তুমি বলেই রিঅ্যাক্ট করিনি। কিন্তু ভেতরে ভেতরে তো রিঅ্যাকশন হয়েইছে! আমি বুঝি গিয়েছিলাম, তোমার কাছে আমার কোনও দাম নেই। নীরবে সরে যেতে চেয়েছি। আমি তো সত্যিই বুঝি না তোমাকে, কাছাকাছি থাকলে বুঝতে পারতাম।


আচ্ছা, এসব থাক, আমি ঝগড়া করতে চাই না। এসব শুনে রেগে যাচ্ছ নাকি, তা-ও বুঝতে পারছি না। কথা দিয়ে তো খুব চাবুক মারো! আমি কিন্তু খুব জলি মুডেই কথাগুলো বললাম, আবার চাবুক-টাবুক মেরে বোসো না যেন!


তোমার কাছাকাছি থাকার সৌভাগ্য যখন হয়নি, তখন তোমাকে বুঝতে চাওয়ার আশা করাটাও বৃথা। বাইরে অনেক জ্যোৎস্না। ইচ্ছে হলে ছুঁয়ে দেখতে পারো। অনেক মানুষ হয়তো এই জ্যোৎস্নায় গা ভেজাচ্ছে। কোথাও কেউ একজন জ্যোৎস্না ছুঁয়ে দিচ্ছে তোমাকে ভেবে ভেবে…অনুভব করতে পারছ, রোদ্দুর?


তোমাকে কিছু কথা বলার আছে, রোদ্দুর। সেগুলো বলার মতো মানসিক পরিস্থিতিতে এখন নেই। আমি অসুস্থ। সবই বলব তোমায়। তুমি ভালো থেকো। এত এত বিক্ষিপ্ত ভাবনার মধ্যে কোনটা রেখে কোনটা বলি, তুমি তো বোঝো সবই!…আমার যত অভিমান, অভিযোগ, ব্যর্থতা আছে, তোমার কাছে একদিন সময় করে সব বলব।


আজ কিছু চাই তোমার কাছে। রোদ্দুর! একটা ঘর বানাবে আমার জন্য? প্রকৃতির কোলঘেঁষে একটা ছোট্ট নিরিবিলি ঘর। সেই ঘরের একটা দেয়ালজুড়ে শুধু বই থাকবে, আর বাকি তিনটা দেয়াল জুড়ে শুধু তুমি থাকবে। একদিন আমি সব ছেড়ে ছুড়ে সেই ঘরটাতে চলে যাব…একটুকরো স্বর্গ এনে সেই ঘরটা সাজিয়ে নেব, সেইদিনটা শুধু আমার হবে, সেদিন একটা কথাও বলতে দেবো না তোমাকে। সেইদিন আমি শুধু তোমার ক্লান্তি মুছে দেবো…


লোভ জিনিসটা আমার কম হয়, আর লোভনীয় জিনিসটা না পাবার জন্য কষ্ট তেমন একটা হয় না, কিন্তু তোমার বইগুলি দেখে খুব লোভ হয়, রোদ্দুর, কষ্টও হয় কখনও কখনও। তোমার কিছু বই পেলে আমি গোগ্রাসে গিলে ফেলতাম। ইতিহাস আর দর্শন আমার খুব ভালোলাগার দুটো বিষয়। বইকেনার নেশা আমার নেই, সামর্থ্যও নেই, কিন্তু কোথাও বই পেলে সেটা গিলে ফেলি। মাঝে মাঝে তোমার বইয়ের পোস্ট দেখে কেমন যেন একটা কষ্ট হয়, রোদ্দুর! তখন বুঝতে পারি, আমার কতটা অভাব, কত গরীব আমি!


যা-ই হোক, এইসব লোভ করে আর কষ্ট পেয়ে তো লাভ নেই! আরেকটা কথা, তোমার আর আমার তফাতটা আমি বুঝে গেছি, রোদ্দুর। কোথায় তুমি আর কোথায় আমি! এইজন্যই হয়তো তুমি আমায় রিপ্লাই করো না কখনও। আমি না বুঝেই তোমাকে কত বিরক্ত করে গেছি!


কালকে তোমার রিপ্লাইটা আমার কাছে একটা সারপ্রাইজের মতো ছিল। আমি এত আনন্দিত হয়েছি! তারপর অভিমান হয়েছে, তারপর লজ্জা পেয়েছি---এভাবে উপহার চাইলাম! কয়েক দিন ধরে টানা মাথাব্যথার জন্য আমার মধ্যে একটা মৃত্যুভয় এসে গেছে, আমার মনে হচ্ছিল, আমার হাতে সময় বেশি নেই।


এই এক তোমার কাছে সেই কবে থেকে আমি একটু একটু করে আমার সব ভয়, দ্বিধা, সংকোচ, লজ্জা, অভিমান সব জয় করে ফেলেছি! তুমি যদি কিছু দাও, সেটা আমার জন্যে পরম-পাওয়া। তোমার কিছু চিহ্ন যদি আমার কাছে থাকে, তবে তা আমি খুব যত্নে রেখে দেবো গো! আমায় দু-একটা বই পাঠাবে?


রোদ্দুর! পৃথিবীতে ভাষা এত কম কেন! শব্দ এত অল্প কেন! অভিমান প্রকাশ করার ভাষা পৃথিবীতে কেন নেই! অভিমান ধীরে ধীরে মৃত্যুর রাস্তাটাই খুঁজে পায়, তবু ভাষা আর খুঁজে পায় না…


তোমার কবিতা আমার ভেতরের ঠিক কোন জায়গাটায় যেন গিয়ে বিঁধে! আমি বুঝি না, এমনটা কি অনেকেরই হয়, না কি শুধু আমিই অনুভব করি এই যন্ত্রণা! কোনও অবয়ব, কোনও সৌন্দর্য, কোনও ব্যক্তিত্ব, কোনোকিছুর তোয়াক্কা না করে সেই মনটাকে আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ধরি আমি, কেঁদে কেঁদে শুদ্ধ করি সবকিছু। সে শুধুই আমার। কাঁদতে কাঁদতে, শুদ্ধ হতে হতে নিঃশেষ হয়ে যাচ্ছি, তবু সেই মনটাকে কোনোদিন বলা হবে না, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচতে পারছি না, আমার সামনে শুধুই মৃত্যুরা নৃত্য করে, তুমি আমাকে বাঁচাও…! ও মন! তুমি কি সত্যিই আছ?


ফোনটা বার বার হাতে নিয়েও শেষ পর্যন্ত কলটা দিতে পারলাম না। আচ্ছা, যাকে এত ভালোবাসি, তার সঙ্গে কথা বলতে এত ভয় কীসের! আমি নিজেই অবাক হই, কীই-বা হবে! বিরক্ত হলেও কতটুকুই-বা হবে! না কি আমার ভয়টা অন্য কোথাও! যদি আমি বুঝে ফেলি, রোদ্দুর বলে কেউ নেই! আমি রোদ্দুরকে নয়, বরং তোমাকে বিরক্ত করছি! আমার ভালোবাসাকে হারিয়ে ফেললে বাঁচব কীভাবে! সে আছে, এটুকু শক্তি নিয়েই তো বেঁচে আছি! নিজেকে আমার অনেক ভয়!


অনেক অনেক কথা বলার আছে, যত কষ্ট জমিয়ে রেখেছি, সব হিসেব দেবার আছে। কোনও এক তীব্র জ্যোৎস্নার রাতে হুট করে ফোন দিয়ে বলব, রোদ্দুর, আমি মেঘ বলছি। (সেইদিন যেন বলে বোসো না, কে তুমি?) তারপর মেঘের সাথে রোদের প্রতিদিন কথা হবে, বেঁচে থাকার মানেটা নতুনভাবে জানা হবে। তখন খুব শিগ্‌গিরই তাদের দু-জনের দেখা হবে। অনেক অনেক অনেক সুন্দর ঝরবে চারিদিকে! মানুষ অবাক বিস্ময়ে দেখবে দু-জনের অমন সৃষ্টি! ভাববে, এত সুন্দর, এত সুন্দর!


এসব ভেবে আমি ভালো থাকি। আমার মন বলে, এসব সত্যি হবে, সত্যিই হবে! আমাদের প্রেম ইতিহাস হয়ে থাকবে।


জীবনের জটিলতাগুলো এড়িয়ে একটা সুন্দর মসৃণ পথে হাঁটতে যদি পারতাম! কিন্তু জীবন তো এটাই আমার, এর কাছ থেকে পালিয়ে আর কোথায় যাব! একেই বোধ হয় বেঁচে-থাকা বলে। শুধু এই এত বড়ো পৃথিবীতে আমার একটা মানুষ থাক, যেন চলতে চলতে কখনও মনে না হয় আমি খুব একা! যখন সবাই আমাকে আঘাত করবে, তখন যেন আমি নিজেকে বলতে পারি, এই আঘাত আমার লাগছে না, আমি অসহায় নই, আমি একা নই!


রোদ্দুর! আমার প্রচণ্ড ইচ্ছে করে, তোমার কাছ থেকে একটু সুখ নিয়ে দেখি, কতটা সুন্দর ওটা! তোমার সুখগুলো কাউকে দিয়েই তো দিয়েছ, কষ্টগুলো হয়তো দিতে পারোনি আজও! আমাকে তোমার কষ্টগুলো একটু দিতে পারবে! আমি সেগুলো আদরে-যত্নে রাখতে রাখতে সুখ বানিয়ে তোমার কাছে ফেরত দিতাম…তোমার কবিতা আমাকে কতটা কষ্ট দিচ্ছে কীভাবে বোঝাব! কীভাবে বলি তোমায়, আমি ভালো নেই! তুমি অন্তত ভালো থাকো!


তোমাকে অনেক দিন লিখি না। কেন লিখি না, তা ব্যাখ্যা করার ভাষা আমার নেই। আচ্ছা রোদ্দুর, শেষের কবিতার লাবণ্য অমিতের কাছে কেন যায়নি, বলো তো? লাবণ্য হয়তো চায়নি, অমিতের কোথাও এতটুকুও অসম্মান হোক, তাদের দু-জনের স্ট্যাটাস তো একরকম ছিল না, তাই হয়তো। অমিত তো পারত লাবণ্যকে জোর করে বিয়ে করতে; সে-ও পারেনি, বাস্তবতার কাছে সবাই হার মেনেছে! মানুষ মুখে যত যা-ই বলুক না কেন, বাস্তবতার কাছেই শেষমেশ সে হার মানে!


রাধা যখন দ্বারকায় কৃষ্ণের কাছে যায়, তখন রাধা বুঝে গিয়েছিল, কৃষ্ণ এখন দ্বারকাধিপতি, সে এখন আর গোয়ালা কৃষ্ণ নেই। তাই রাধা রাজপ্রাসাদের বিলাসী জীবন গ্রহণ করেনি, স্বেচ্ছায় রান্নাঘরে থাকত দাসীদের সাথে। রাধা-কৃষ্ণের প্রেমটা সত্যিই অদ্ভুত ছিল! রুক্মিণী রাধাকে বলেছিল, তুমি কৃষ্ণের সখি, কিন্তু কৃষ্ণ আমাকে বিয়ে করেছে, অবশ্যই আমি বিশেষ কেউ! অথচ সত্যভামা, জাম্বুবতী আসার পর রুক্মিণী তার ভুলটা বুঝতে পারে, একসময় চলেও যায়। রাধা কিন্তু চলে যায়নি। কৃষ্ণের প্রতিটি সংকটের মুহূর্তে রাধা প্রেম দিয়ে কৃষ্ণকে জিতিয়ে দিয়েছে, কৃষ্ণকে বুঝতে পারত এক রাধাই! মূলত রাধা-কৃষ্ণ ছিল অবিচ্ছেদ্য!


স্বয়ং অবতারপুরুষ হয়েও কৃষ্ণ কতটা কষ্টের জীবন বেছে নিয়েছিলেন! প্রথমে কৃষ্ণকে দোষী মনে হলেও পরে বুঝেছি, রাধা তার কাছে কতটা বিশেষ কেউ ছিল!


আমি এসব কী লিখছি, রোদ্দুর! যাও, আর লিখব না…একটা সিক্রেট বলার ছিল, কাল বলব।


মনটা অস্বাভাবিক রকমের খারাপ। মন খারাপ শরীরের মধ্যেও চলে এসেছে। খুব মিস করছি আমার রোদ্দুরকে, যে একদিন এ সমস্ত কিছু থেকে মুক্ত করে আমাকে নিয়ে যাবে। মানুষের জন্মদিনে কী সুন্দর গিফট দাও! আমার জন্মদিনে একটা উইশও করো না! উইশ করার মতো তোমার কাছের কেউ নই, তাই না? বই নিতে চাইলাম, তা-ও দিলে না, তখন তো আমার জন্মদিন ছিল! আমি কোথাকার কে যে তুমি আমায় মনে রাখবে! গিফট পাওয়ার তো একটা ন্যূনতম যোগ্যতা লাগে!


দু-ঠোঁট উলটে উলটে তোমাকে অনেক কিছু বলতে ইচ্ছে করে। অভিমানগুলো বলব কি বলব না, কী ভাববে না ভাববে, তা নিয়েই অনেকক্ষণ দ্বিধায় কাটিয়ে দিই। অন্য সব কথা প্রাণ খুলে বলা গেলেও, অভিমান বলতে গেলে কোথায় যেন একটু অধিকারের প্রয়োজন হয়। সে অধিকার আমার কোথায়!


সেদিন একটা সিক্রেট বলতে চেয়েছিলাম না? সেটা হলো, তুমি যদি কখনও প্রচণ্ড রেগে গিয়ে আমাকে মূর্খ, বেয়াদব, এবং আরও যা ইচ্ছে বলে দাও, ওসব আমার একটুও গায়ে লাগে না। মনে হয়, রাগ পড়লেই ঠিক হয়ে যাবে। শুধু কখনওবা চোখের মধ্যে কিছু বিষণ্ণতা এসে জমে যায়…আমি ভাবি, মানুষটা এত এত কবিতা লেখে, কত আবেগী কত কথা লেখে, আর আমাকে একটা উত্তর দিতে গেলে কেমন রোবট রোবট টাইপ কথা বলে! আচ্ছা, এখানে কি শব্দ ফুরিয়ে যায়? না কি আমার জন্য শব্দ খরচে তোমার শুধুই কিপটেমি আসে!


তোমাকে যখন দেখি, তখন ভাবি, আচ্ছা, মানুষটাকে চোখের সামনে দেখলে আর কতটা ভালো লাগবে! পৃথিবীতে আছে এতটা ভালোলাগা, যতটা ভালোলাগা স্বপ্নে থাকে! আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, আমার মতো তুমিও আজ ভালো নেই। তোমার শরীরটা ঠিক আছে তো?


জানো, রোদ্দুর, যে মেয়েটা রোজই বোকার মতো তোমায় মনের কথা লিখে যায়, সে মাঝে মাঝে কতটা মন খারাপ নিয়ে, দু-চোখ ভরা জল নিয়ে তোমাকে লেখে, তা তুমি জানবেও না কোনোদিন! তাকেও যে কত মানুষের কত কথা সহ্য করতে হয়, কত অপমান, কত কটুকথা সে মুখ বুজে সয়ে নেয়, এসব তুমি ভাবতেও পারবে না! যখন চারপাশে সব অচেনা মানুষ সে দেখতে পায়, তখন তার তোমাকে ভীষণ মনে পড়ে। তার মন তোমার মনকে অনেক কথা বলে দেয়, মনের তো বয়স হয় না, তাই হয়তো; কিন্তু তার ঠোঁট তোমার কানে কোনও কথা কিছুতেই পৌঁছাতে পারে না, আর ওদিকে শরীরের বয়স যে শুধু বেড়েই যাচ্ছে!


আচ্ছা রোদ্দুর, পাপ মানুষের শরীরে থাকে, না মনে থাকে? সে বোকা মেয়েটা পাপ-পুণ্যের হিসেবটাই জানে না। না পেতে পেতে, পাবার আনন্দ কেমন সে জানে না, আনন্দ চাইতেও পারে না, কীভাবে চাইতে হয়, সে জানে না তা-ও! তার কোনও প্রত্যাশা নেই, দুঃখ নেই, সুখ নেই। সে বাঁচতে ভুলে যাচ্ছে ক্রমশ; তাকে একটু বাঁচতে শেখাবে, রোদ্দুর? রোদ্দুরের জন্য তার প্রচণ্ড বাঁচতে ইচ্ছে করে!


তোমাকে আমি ভাবি কী, আর তুমি আসলে কী! তুমি কোথায়, আর আমি কোথায়! কী আর বলব! রোদ্দুর রে, তোমাকে আমি আর এইসব বলব না, কিছুই বলব না। আমি একটা বদ্ধপাগল! ‘অযোগ্য হলে পরে হারানোই যে নিয়তি কেবল…’ তোমাকে আর কোনোদিনই বলতে যাব না, আমার কতটা মন খারাপ হয়, কতটা কষ্ট হয়!


কী যে অসহ্য লাগে, রোদ্দুর…! মানুষের সহ্যক্ষমতারও একটা সীমা থাকে। আমার ভেতর কী চলছে, আমি নিজেই বুঝি না, শুধু কষ্ট হয় খুউব! থাক এসব, কথা হচ্ছে, আমি সত্যিই ভীষণ রাগ করেছিলাম তোমার উপর। কত কত স্বপ্ন পূরণ করার বাকি এখনও, আর আমি কিনা এক রোদ্দুরের জন্য প্রতি মুহূর্তেই মরে যাচ্ছি!


গ্রামে আছি, প্রকৃতির মধ্যে আছি; কখনও আকাশ দেখে, বাতাস ছুঁয়ে, বৃষ্টি মেখে, অবসরে, বিষণ্ণতায়, অস্থিরতায়, নির্লিপ্ততায়, চোখে জল ঠোঁটে হাসি নিয়ে চুপচাপ দিনগুলো কেটেই যাচ্ছে! আর শোনো, বেশি বই পোড়ো না তো…বেশি বই পড়লে রোমান্টিকতা কমে যায়!


যখন ছোটো ছিলাম, তখন ধর্মের ছোটো-বড়ো হিসেব করতাম। এখন আমার কাছে ধর্মের দর্শন বদলে গেছে। আমার কাছে এখন সব ধর্মকেই ঠিক মনে হয়। যে যেটা করছে, তাতেই তার মুক্তি। এখানে বিশ্বাসটাই মূল। তবে গীতা পড়ে এটুকু বুঝেছি, মানুষ মাত্রই পরমাত্মার অংশ, প্রতিটি মানুষই স্বয়ং ঈশ্বর, তাঁকে জানার জন্য নিজেকেই জানতে হয়।


আমি জানি, তুমি অনেক জানো, অনেক বোঝো, আমার কথায় আবার হেসো না কিন্তু! এসব কেবলই আমার উপলব্ধি, কেউ বলেনি আমাকে। আচ্ছা রোদ্দুর, কর্মযোগ, জ্ঞানযোগ বা ভক্তিযোগ, কোনটা শ্রেষ্ঠ তোমার কাছে? একটা মানুষের মধ্যে কি সবকিছুর সংমিশ্রণ সম্ভব? আইনস্টাইন বা রবীন্দ্রনাথ, এঁরা কি জ্ঞানযোগী? আছা, তাঁরা তো আলাদা করে ধর্ম পালন করতে পারেননি, তবে কি তাঁদের ঈশ্বরপ্রাপ্তি হয়নি? তাঁরা এখন কোথায় আছেন? স্বর্গে? না কি নরকে? ঈশ্বর কি সত্যি সত্যিই অতটা রাগী, যতটা তাঁকে আমরা সবাই মিলে বানিয়ে রেখেছি? এসব একান্তই আমার মনের কথা, এসব শেয়ার করারও মানুষ পাই না। আমার তো আছ তুমি একজনই!


আমাকে একটু বলবে রোদ্দুর, তোমার কাছে ধর্ম কী? জীবন কী? জগত কী? প্রেম কী? আমরা যদি কাউকে ভালোবাসি, তবে আমরা আসলে কাকে ভালোবাসি? সেই মানুষটাকে? না কি নিজেকেই? অন্য কারও মধ্যে নিজের মনের মতো কিছু জিনিস পাই বলেই তো ভালোটা বাসি, নইলে কে ভালোবাসত? তবে কি পৃথিবীর সব প্রেমই মূলত নিজেকে ভালোবাসা নয়?


থাক, এই মাঝরাত্তিরে আর তোমাকে বিরক্ত না করি! একটা কথা বলে গুডনাইট দিই। আমার মনে হয়, জগতে একমাত্র সত্যি, একমাত্র পবিত্র, একমাত্র রহস্যময়, একমাত্র দুর্লভ বস্তু হলো প্রেম।