যখন ডেটে যাচ্ছ…

 কারও সঙ্গে ডেট করার আগে কিছু বিষয় মাথায় রেখো।
  
 প্রত্যেকেরই ভালোবাসা প্রকাশের ও গ্রহণের আলাদা আলাদা ভাষা আছে। কাউকে যেভাবে ভালোবাসো, সে যদি তোমাকে তোমার গ্রামারে ভালো না-ও বাসে, তবু এটা নিয়ে মন খারাপ কোরো না। শুধু মাথায় রাখো বা বোঝার চেষ্টা করো, সে তোমাকে ভালোবাসে কি না। প্রকাশের ধরন নিয়ে বেশি ঘাঁটাঘাঁটি কোরো না। মানুষ বিরক্ত হয়, যদি কেউ তার কাছ থেকে নির্দিষ্ট কোনও উপায়ে ওরকম ভালোবাসা আদায় করার চেষ্টা করে। ভালোবাসা কোনও টাকাপয়সা-ধার নয় যে আদায় করার চেষ্টা করতে হবে।
  
 সপ্তাহে তিন-চার দিন ডেটে যাচ্ছ, সারাক্ষণই ঘুরে বেড়াচ্ছ, মুভি দেখতে যাচ্ছ, রেস্টুরেন্টে ঘণ্টার পর ঘণ্টা কাটাচ্ছ, রঙিন রঙিন স্বপ্ন দেখছ, সব ঠিক আছে। একইসঙ্গে তোমার সেই বেস্ট ফ্রেন্ডটির কথাও মাথায় রেখো, কোনও কারণে ব্রেকআপ হয়ে গেলে, যাকে জড়িয়ে ধরে কান্নাকাটির কাজটা তোমাকে সারতে হবে। মাঝে মাঝে ওকে ফোন কোরো, ওর সঙ্গে দেখা কোরো। এ জীবনে ভালোবাসার চেয়ে বন্ধুত্ব বড়ো জিনিস। ভালোবাসার মানুষকে সব বলা যায় না, বন্ধুকে বলা যায়। তোমার বন্ধুরা যদি তোমাকে মিস করে, কিছু সময় ওদেরও দিয়ো। কিছু মানুষ প্রেমে পড়লে বন্ধুদের ভাশুর বানিয়ে বসে থাকে, সহজে ওদের সামনেই পড়ে না!
  
 মাথায় রেখো, সম্পর্ক যতটা সুখ দেয়, কষ্ট দেয় যখন, তখন তার পরিমাণ সেই সুখের চাইতে হাজার গুণ বেশি। হৃদয় তোমারটাও ভাঙতে পারে, তারটাও ভাঙতে পারে। তুমি খেয়াল করলে দেখবে, ওরকম হৃদয় ভাঙলে মানুষ চোখ বুজে যেভাবে তার ভালোবাসার মানুষটার দোষ দিয়ে দেয় এবং দিতেই থাকে, প্রায় সময়ই, আসল ঘটনা অন্য জায়গায়। মানে, সম্পর্কের ক্ষেত্রে যে কষ্টটা মানুষ পায়, তার উৎস এমন কোথাও, যা কিনা মানুষের চোখেই পড়ে না! পড়বে কোত্থেকে? মানুষ তো তার পার্টনারের দিকে সমস্ত অভিযোগ কাদার মতো ছুড়তে থাকে! ভালোবাসা বদলে গিয়ে কাদামাটি হতে তখন আর সময় লাগে না!
  
 দুঃখ নেবার শক্তি না থাকলে সিঙ্গেল থাকো, সেটাই ভালো। এ জগতে দুঃখ বাদে কোনও সুখ নেই। একটাও নেই, খুঁজে দেখো। প্রেম এমনই এক জিনিস, কারও সঙ্গে শত্রুতা থাকলে, তাকে কৌশলে প্রেমে ফেলে দাও, এরপর বসে বসে মজা দ্যাখো!
  
 রিলেশনশিপে যাবার আগে সব কিছু স্বপ্ন স্বপ্ন লাগে, যাবার কিছু সময় পর পর্যন্তও ওরকমই লাগে, তার পরেই শুরু হয় আসল কাহিনি। বাস্তব দুনিয়া অত সোজা না। ভালোবাসা তোমার অনলাইন পরীক্ষা না যে পরীক্ষায় বসলেই অটোপাশ করে ফেলবে, কিংবা এসএসসি-এইচএসসি পরীক্ষা না যে কেউ তোমার কানের কাছে এসে 'পাশ করবি কি না বল!' বলে-টলে পরীক্ষা ছাড়াই কলার ধরে জোর করে অটোপাশ করিয়ে দেবে!
  
 ভালোবাসায় যত্ন নিতে হয়, অনেক আন্তরিকভাবে চেষ্টা করতে হয়। এসব করার পরও ভালোবাসা চড়ুইয়ের মতো ফুড়ুৎ করে উড়ে চলে যেতে পারে! তুমি মাথার সব চুল ছিঁড়েও বুঝতে পারবে না, এখানে তোমার ভুলটা কোথায় ছিল! মানুষ বড়ো আজব প্রাণী। দুঃখ পায়, তবু দুঃখ পাবার পথগুলি খোলা রেখে দেয়। মানুষ একেবারে কাঙালের মতো ভালোবাসার দিকে চেয়ে থাকে। ফকিররা তো তবু থালাহাতে রাস্তায় বসলে কিছু পয়সা হলেও পায়, আর মানুষ পায় শুধুই দুঃখ! মানুষ দুঃখবিলাসী প্রাণী।
  
 আরেকটা কথা। ভালোবাসার মানুষের মধ্যে নিখুঁত কিছু খুঁজতে যেয়ো না। ফাজলামো কম করো, তুমি নিজেও তো নিখুঁত না! যে তোমাকে নিখুঁত হিসেবে দেখতে চায়, বুঝে নিয়ো, তার সমস্যা আছে। দেরি হয়ে যাবার আগেই তাকে গুডবাই বলে দাও। নইলে দেখবে, পরে কাঁদতে কাঁদতে দু-চোখ অন্ধ করে বসে আছ। ভালোবাসা পারফেকশন দেখে হয় না, যাকে মানুষ ভালোবাসে, তাকে সে পারফেক্টই দেখে। ভুল থাকবে, খুঁত থাকবে, ভয় থাকবে, পাগলাটে ব্যাপার-স্যাপার থাকবে, সবচাইতে বড়ো কথা, একধরনের মায়া থাকবে। এই মায়াই বড়ো জিনিস। এটা জন্মানোর আগ পর্যন্ত ভালোবাসা জন্মায় না। যার প্রতি তোমার মায়া নেই, তার প্রতি তোমার ভালোবাসাও নেই; খুব সহজ কথা, মনে রেখো।
  
 ভালোবাসার মানুষ যদি আইসক্রিমের সঙ্গে চিকেনফ্রাই খায়, তাহলে ওটা দেখে হাসাহাসি করে কী লাভ? সে তো ওরকমই খায়! তুমি যে এদিকে ভুনা খিচুড়ির সঙ্গে চমচম খাও, সেটা নিয়ে তো সে কিছু বলে না। তোমার এত কীসের অসুবিধে? তোমার যা যা ভালো লাগে, ওকে বলো। ওর যা যা ভালো লাগে, তোমাকে বলতে বলো। তুমি গ্রহণ করলে কি করলে না, সে গ্রহণ করল কি করল না, এইসব পরের কথা; আগে দু-জনের মধ্যে ওই অনুভূতি ভাগাভাগির জায়গাটা তৈরি করো। দু-জনের ভালোলাগাগুলি ধীরে ধীরে কখন যে মিলে যাবে কিংবা খুবই সহনীয় হয়ে উঠবে, তোমরা নিজেরাই টের পাবে না! সময় যেতে যেতে দেখবে, ভালোবাসা বড়ো আজব চিড়িয়া, নিজেও সব খায়, তোমাদের দু-জনকেও ধরে সব খাইয়ে দিচ্ছে!
  
 ভালো কথা, এই লেখার শুরুর বাক্যে 'ডেট করা'র মানে আমি ভালোবেসে ডেট করার কথা বুঝিয়েছি। ভালোবাসা না থাকলে ক্যাজুয়াল-ডেটিংয়ে এত কিছু লাগে না; ইন ফ্যাক্ট, কিছু সহবতজ্ঞান ও পারস্পরিক সম্মতি বাদে আর তেমন কিছুই লাগে না ওখানে।