মৃত্যুর চৌকাঠে দাঁড়িয়ে



কতদিন হয়ে গেল আকাশ দেখি না! হাসপাতালে কোনও আকাশ নেই, হাওয়া নেই, আলো নেই। আচ্ছা, যদি সেরে উঠতে না পারি সত্যি সত্যি? এখানে আলো আসে না, এখানে শুধুই অন্ধকার। এখানে বাতাস ছোটে না, জায়গাটা সবসময়ই গুমোট হয়ে থাকে। আকাশের নীলটা কেমন নীল, আমি মনে করতে পারছি না। চেষ্টা করে চলেছি, কোনও কাজ হচ্ছে না। আমার খুব খারাপ লাগছে। ইদানীং আমি মানুষের চোখের দিকে তাকালে যমদূতের ছায়া দেখতে পাই। বেঁচে থাকতে আমার বড্ড ভয় হয়।


বাসার ব্যালকনির টবের গাছগুলোতে নতুন কুঁড়ি এসেছে। ওদের খুব ছুঁতে ইচ্ছে করছে। কুঁড়িরা খুব মিষ্টিস্বরে হ্যালো বলতে পারে। কী যে স্নিগ্ধ ওরা! আমি বোধ হয় কুঁড়িগুলোর ফুল হয়ে ফোটাটা দেখতে আর দেখতে পাবো না। ফুলগুলো ভালো থাকুক। এখানে ফুল নেই। আমার কিছু ফুল লাগবে। আমি খুব সম্ভবত দ্রুতই কিছু ধবধবে সাদা ফুলের স্পর্শ পেতে যাচ্ছি!


গলির মোড়ে একটা ছোট্ট ছেলে রোজ ভিক্ষে করে। সেবার ওকে বলেছিলাম, ‘এবার বেতন পেলে তোমার মায়ের চোখের অপারেশনটা করিয়ে দেবো।’ এরপর আমি টিউশনির বেতন পেয়েছি কয়েক বারই, তবু ওকে দেওয়া কথাটা আর রাখা হয়নি। এমন নয়, ভুলে গিয়েছিলাম। হাতে পয়সা ছিল না, তা-ও নয়। তবু কেন রাখলাম না কথা? হয়তো ওইসময়ের আবেগটা আর ছিল না। আবেগ কমে গেলে বা চলে গেলে আমরা মানুষকে ভুলে যাই। ভিখারি ছেলেকে চাইলেই মহত্ত্ব দেখিয়ে মিথ্যে প্রতিশ্রুতি দিয়ে দেওয়া যায়। যারা আমাদের প্রতিশ্রুতি দিয়ে তা ভেঙে ফেলে, ওরা নিশ্চয়ই আমাদের ভিখারি ভাবে, তাই না?


ছেলেটা কি আজও অপেক্ষা করে আছে? না কি ওর অপেক্ষা করবার প্রয়োজনই আজ ফুরিয়ে গেছে? কথা ভেঙে ফেলবার পাপটা কেন তখনই কাঁদায়, যখন কথা রাখবার আর কোনও পথই খোলা থাকে না? মরে যদি যাই, তবে এই যে মৃত্যুর আগমুহূর্তে ছেলেটাকে দেওয়া কথাটা নিয়ে ভাবছি, তা তো সে কখনও জানতেই পারবে না, তাই না? সে ভাববে, আমি তাকে ফাঁকি দিয়েছি। অভিশাপও দেবে নাকি? অনর্জিত সৌভাগ্য থেকে বঞ্চিত হলেও কি অভিশাপ দেওয়া যায়? দিলেও কি কাজ হয় ওতে? আচ্ছা, ওরা কি সত্যিই এত কিছু ভাবে? না কি ওরা প্রতিশ্রুতি ভেঙে যাওয়া দেখতে দেখতে অভ্যস্ত? ওদের দেওয়া কথা কতজনই-বা রাখে? বেশিরভাগ মানুষই তো কথা রাখতে ভুলে যায় কিংবা রাখে না। আমিও কি তবে ওই বেশিরভাগ মানুষেরই দলে? আমাদের যারা ভুল বোঝে, কখনও কখনও, আমরাই তাদের ভুলটা বোঝাই!


আমাকে দাফন করবার ঠিক কতক্ষণ পর পোকারা এসে আমাকে ছিঁড়তে শুরু করবে? লাশের কাছে আসতে ওরা কত সময় নেয়? পুরো পৃথিবীই আমাকে অপেক্ষায় রেখে দিয়েছে দিনের পর দিন। একটা চাকরির জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম, পাইনি। প্রিয় মানুষটা ফিরে আসার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম, আসেনি। প্রাণ খুলে হাসবার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম, হাসতে আজও পারিনি। আমার বাবার কাছ থেকে দুটো দয়ার্দ্র কথা শুনবার জন্য অপেক্ষা করে ছিলাম, বলেনি। বাবা আমার সঙ্গে কথা বলে না। আচ্ছা, আজ কি বাবা কাঁদছে আমার জন্য? নিজের সন্তান যখন মৃত্যুশয্যায়, তখনও কি বাবাদের রাগটা থেকে যায়? এতটাই ব্যর্থ আমি! মরে যাচ্ছি, তবু বাবার অভিমান ভাঙছে না! না কি ওরা আমার কাছে কাউকে আসতে দেয় না বলেই বাবা এখানে আসতে পারছে না? না কি বাবা সত্যি সত্যিই…


পোকাদের জন্য অপেক্ষা করতে হয় না। ওরা চলে আসে। আচ্ছা, আসবার পর আমার শরীরের কোন অংশটা ওরা আগে খেতে শুরু করবে? চোখ? বুকের মাংস? হাত-পা? না কি ছড়িয়ে ছিটিয়ে সব একসাথেই? কী এক আনন্দের ভোজ হয়ে যাবে ওদের! ওরা সবাই কত আয়েশ করে আমাকে খেতে থাকবে, ঠিক যেমনি করে আমি একদিন খুব তৃপ্তিভরে খেতাম চিকেন-ফ্রাই, রোস্ট, রেজালা, কোর্মা-কালিয়া! ওদের একটুও কি দয়া হবে না আমার জন্য? এত যত্নের শরীর আমার, আর সেটাই কিনা ওরা অমন মহা-আনন্দে কিলবিল করে কাড়াকাড়ি করে খাবে! আমার লাশের উপর এতটাই অধিকার হয়ে যাবে ওদের? আর সব দেখেও আমি কিছুই বলতে পারব না? হায়, মরে যাবার পর নিজের বলতে নিজের শরীরটাও আর থাকে না! সারাজীবন ধরে আমি এত কিছু পেতে চাইলাম কেন তবে?


প্রকৃতি বুঝি এভাবেই সব সুদে-আসলে ফেরত দেয়! কত আদরে এই শরীরটাকে আগলে রাখলাম, আর তা-ই কিনা মহাউৎসাহে খেয়ে নেবে ওই বিচ্ছিরি সব পোকার দল! আমি যেমনি চেটেপুটে খেয়েছি, আমাকেও ঠিক তেমনি চেটেপুটে খাবে! আমি তো আজীবনই দাম মিটিয়ে খেয়ে এসেছি। তবে আমার শরীরের ভাগটা ওরা কীসের দামে পাবে? না কি যাদের মনে কষ্ট দিয়েছি জেনেই কিংবা না-জেনে, সেই কষ্টের না-চোকানো দামেই ওরা আমাকে পাবে? জীবনের সমস্ত হিসেব মৃত্যুতে হলেও ঠিকই মিলে যায়!


আমি কী চেয়েছি, কী চাইনি, তার কিছুই আজ আমার মনে আসছে না। আমি শুধুই ভাবছি, আজ আমার বাঁচতে খুব ইচ্ছে করছে। বেঁচে থাকবার সময়ে আমাদের মাথাতেই আসে না, বেঁচে থাকবার ইচ্ছেটাও একধরনের ইচ্ছে! এই জায়গায় না এলে জানতেই পারতাম না, এর চাইতে তীব্র ইচ্ছে আর একটাও নেই। মানুষের আয়ু যদি কয়েকটা মৃত্যুতে বিভক্ত হতো, তবে জীবনযাপন ব্যাপারটা আরও অনেক সুন্দর হয়ে উঠত।


যে কয়েকটা চড়ুই প্রতিদিন বিকেলে আমার বাসার বারান্দায় আসে বিকেলবেলায়, ওরা কি আমাকে মিস করছে না এই কয়েক দিন? ওদের কি কেউ খাবার দিচ্ছে আমার হয়ে? আমি চলে গেলে ওরা কি বুঝতে পারবে? পাখিরা কি মানুষের চলে-যাওয়া বুঝে নিতে পারে? কাঁদবে ওরা আমার জন্য? ওদের বাচ্চাদের ওরা কি কখনও বলেছে আমার কথা? ওদের সঙ্গে গল্প করবার সময় ওরা কি সবার মতো ধরে ফেলতে পারত আমি যে তেমন কথা বলতে পারি না? পাখিদের সমাজেও কি আমার মতন প্রায়-বোবারা তাচ্ছিল্যের পাত্র? পাখিরাও কি উপেক্ষা করতে জানে মানুষের মতোই? পাখিরাও কি সব ভুলে ছেড়ে চলে যেতে পারে?


কোভিড বাড়ছে। মানুষের আর্তনাদ বাড়ছে। কোথাও বেড খালি পাওয়া যাচ্ছে না। আমি আরেকজন মুমূর্ষু মানুষের বেডটা অহেতুকই দখল করে আছি। আমি মরে না যাওয়া পর্যন্ত আরেকজন মরার সুযোগটা পাচ্ছে না। আমি অন্য কারুর মৃত্যুকে আটকে রাখছি। আমার জন্যই আরেকজন মানুষ মৃত্যুযন্ত্রণায় ছটফট করছে। এই মুহূর্তে যে পুণ্য কাজটা আমি করতে পারি, তা হচ্ছে, খুব শিগ্‌গিরই মরে গিয়ে অন্য কাউকে মৃত্যুর সুযোগটা করে দেওয়া। আধুনিক মানুষকে মৃত্যুর আগে ডেথবেড পর্যন্ত আসতে হয়। যদি চলে যাওয়াই হয় নিয়তি, তবে থেকে গিয়ে কারুর জায়গা দখল করে রাখবার কোনও মানে নেই। যাকে ছাড়া বাঁচব না ভাবতাম, সে তো আমাকে ছেড়ে গেছে সেই কবেই! বাঁচব না ভাবতাম বলেই এতদিন বেঁচে ছিলাম। আর এখন মরব না ভাবছি বলেই সত্যি সত্যি মরে যাব, এ আমি নিশ্চিত জানি! ওদের মুখে শুনেছি, অক্সিজেনের ঘাটতি সব জায়গাতেই। আমি মরে গেলে আরেকজন মৃত্যুর আগে কিছুসময়ের জন্য হলেও অক্সিজেন পাবে। নাহ্‌, সিটটা এবার ছেড়েই দেবো! হাসপাতালের বাইরের অক্সিজেন দারুণভাবে জীবন টানে, হাসপাতালের ভেতরের অক্সিজেন কোনোমতে মৃত্যু ঠেলে! একই অক্সিজেন, অথচ দু-রকমের চেহারা!


বেঁচে ফিরতে পারব না বুঝতে পেরেই আজ আমার বড্ড বাঁচতে ইচ্ছে করছে। এ এক বড়ো অসহায় ইচ্ছে! এতটা অসহায়ত্বের মধ্যে বেঁচে থেকেও-বা কী হয়? এক নার্স এসে জিজ্ঞেস করে গেল, আমার কী খেতে ইচ্ছে করে। আমি জানিয়েছি, মায়ের হাতের কই মাছের ঝোল দিয়ে কাঁচামরিচ মেখে গরম ভাত খেতে ইচ্ছে করছে। মেয়েটা বড্ড ভালো, নরম মনের। আমার কথা শুনে বেচারি আমার দিকে ফ্যালফ্যাল করে তাকিয়ে ছিল। ওরা বাইরের খাবার কেবিনে ঢোকাতে দেয় না। ডায়েটিশিয়ানের কথার বাইরে ওরা আমাদের বাড়তি এক গ্লাস জলও খেতে দেয় না। প্রতিদিনই মাছের কিংবা মাংসের ঝোল, সাথে একটু পেঁপে- বা লাউসেদ্ধ, একটু পাতলা ডাল। সকালে লেক্সাস বিস্কিট, সাথে ডিমের সাদা অংশ। বিকেলেও তা-ই। সব খাবারই পরিমাণে খুব অল্প, ওসবে লবণ দেয় কি না আমি জানি না। গরম দুধ দেওয়ার কথা বলতে ওরা পছন্দ করে, কিন্তু দুধটা দিতে পছন্দ করতে ওদের আজ অবধি দেখিনি। খাবারের মান ও পরিমাণ দুই-ই বেশ বাজে। এ নিয়ে কথা বলেও কোনও লাভ নেই। ডায়েটিশিয়ানের কথার বাইরে ওরা কখনওই যায় না। আমি ওদের সচেতনতা ও যত্ন দেখতে দেখতে মরে যাচ্ছি! আচ্ছা, যে মানুষটা মরেই যাবে, সে মানুষটা তার নিজের পছন্দের দু-একটা খাবার খেয়ে মরলে ওদের ডায়েটিশিয়ানের সার্টিফিকেটের ভারটা কি একটু কমে যাবে?


ডাক্তারসাহেবেরা বড়ো ভালোমানুষ। আমাকে বলেন, আপনি দ্রুতই বাড়ি ফিরে যেতে পারবেন। শুনে আমি হাসি। মৃত্যুপথযাত্রী মানুষের কাছ থেকে কেউ কান্না দেখতে চায় না, আমি তাই ওদের কাউকেই নিরাশ করি না। বাড়ি-ফেরার মানে যে আমি জেনে গিয়েছি, তা ওরা কেউ জানে না। ডিউটি-নার্সদের মধ্যে একজন, মানে ওই মেয়েটা, যে আমাকে মাঝে মাঝে জিজ্ঞেস করে, আমার কী খেতে ইচ্ছে করে, সে কখনও কখনও, লুকিয়ে লুকিয়ে আমার জন্য আমড়া, পেয়ারা, খেজুর নিয়ে আসে। বলে, কেউ জানতে পারলে নাকি ওর চাকরি থাকবে না। চাকরি থাকবে না জেনেও কেন সে এসব নিয়ে আসে? আমি তার কে হই? এখানে আসবার আগে তো আমাদের কখনও কোথাও দেখা হয়নি। মেয়েটার মাথায় কি তবে বুদ্ধি কম? না কি হৃদয়ে ভালোবাসা বেশি? এ ভালোবাসার প্রতিদানে সে কী পাবে আমার কাছ থেকে? আমি তো চলেই যাচ্ছি! যার জন্য আমি প্রার্থনা করার সুযোগটাও আর পাবো না, সে-ও কেন আমার জন্য এতটা করবে? মেয়েটাকে আমি কাঁদতে পর্যন্ত দেখেছি! এরপর আমি নিজেকে বুঝিয়ে ফেলেছি, মানুষের কিছু অশ্রুর কোনও অর্থ হয় না। আমাদের স্বল্প বুদ্ধিতে যে অশ্রুর কোনও অর্থই আমরা খুঁজে পাই না, তার চাইতে দামি সম্পদ পৃথিবীতে আর একটাও নেই। কথা বলতে খুব কষ্ট হয় বলে আমি প্রায়ই ইশারায় ওর সঙ্গে গল্প করি। ওকে দেখলে মনে হয়, বোকারা আজও এ পৃথিবীতে আছে বলেই পৃথিবীটা এত সুন্দর!


পোকাদের কথা মাথায় এলেই মরতে আমার আর ইচ্ছে করছে না। আবার বাঁচতে গিয়ে যে অদ্ভুত রকমের কষ্টটা হচ্ছে, তা ভেবে বাঁচতেও আর ইচ্ছে করছে না। আমি কোনদিকে যাব? আমার আসলে কোনও দিকে যাবার ক্ষমতা নেই। নিয়তি আমাকে যেদিকে নিয়ে যায়, আমাকে সেদিকেই যেতে হবে। আজ আমার জীবনের সেই দিনটা এসে গেছে, যখন আমি, আমার সমস্ত ইচ্ছে ও সামর্থ্য এক করেও, যেখানে আমার যেতে ইচ্ছে করে, সেখানে চলে যেতে পারি না; যেখানে আমার থাকতে ইচ্ছে করে, সেখানে থেকে যেতে পারি না। হাসপাতাল আর জেলখানা জীবনকে খুব কাছ থেকে চেনায়। এই দুই জায়গায় যে কখনও যায়নি, জীবনের অনেক পাঠই তার এখনও নেওয়া বাকি।


আমার অ্যাজমার সমস্যা, বৃষ্টিতে ভেজা বারণ। যদি ওরা আমাকে শেষ ইচ্ছে বলবার সুযোগ দিত, তবে আমি বৃষ্টিতে ভিজতে চাইতাম। যে মরেই যাচ্ছে, সে বৃষ্টিতে ভিজে আর কতটুকুই-বা অসুস্থ হবে? আগে ভাবতাম, অ্যাজমার শ্বাসকষ্টের চাইতে যন্ত্রণার আর কিছু নেই। আজ ভাবি, কোভিড আমার ভাবনা দেখে হেসে লুটোপুটি খেত বোধ হয়। যদি বেঁচে যাই কোনও অলৌকিক কারণে, তবে টানা তিন দিন বাসার ছাদে শুয়ে থেকে খুব করে বৃষ্টিতে ভিজব। সারাজীবন বৃষ্টির দিকে তাকিয়েই থেকেছি শুধু, মায়ের বকুনির ভয়ে ভিজতে কখনও পারিনি। ঈশ্বরের কাছে দু-হাত পেতে চাইলে, বৃষ্টিতে ভিজবার জন্য হলেও ছোট্ট করে একটা জীবন পাবো না?


বাবা কি আজও ওরকম অভিমানীই আছে? বাবার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজতে চাইলে বাবা কি খুব রেগে যাবে? বাবা কি আজও রেগে যেতে পারে? বাবাকে কোনোদিনই জড়িয়ে ধরিনি, ভয়ে আর সংকোচে। জড়িয়ে ধরিনি বলেই কি আমার সঙ্গে দেখা না করেই বাবা চলে গেল অমন করে? আমার ছয় কেবিন পরের কেবিনটাতে বাবা নেই, আমি জানি। আমরা দু-জন একসাথে এখানে এসেছি, তবে আমার আগেই বাবা এখান থেকে রিলিজ পেয়ে গেছে। বাবার সঙ্গে আমার দেখা হবে। আমার হাতে সময় অল্প, আমি বাবার কাছে যাচ্ছি। বাবাকে এবার একদৌড়ে গিয়ে শক্ত করে জড়িয়ে ধরব। বাবার হাত ধরে বৃষ্টিতে ভিজব। বাবা আমার সঙ্গে অনেক গল্প করবে, আমি জানি। ওখানে তো মা নেই, শিখাও নেই। বাবার সঙ্গে তো শুধু আমিই থাকব। গল্প করবার জন্য আমাকে ছাড়া বাবা আর কাকে পাবে ওখানে? মৃতদের কোনও রাগ নেই, অভিমান নেই, ভয় নেই, সংকোচ নেই। জীবনই কেবল দূরে রাখতে শেখায়, দূরে থাকতে শেখায়; আর মৃত্যু সবই এক করে দেয়। জীবনের সমস্ত ফাঁকি ও হিসেব মৃত্যু একতুড়িতেই উড়িয়ে দেয়!