প্রেমিকের জন্মদিনে

 আমি বাইশ বছরের এক তরুণী, কিন্তু আমার জীবনটা তরুণীদের মতন নয়। আমি অন্য মেয়েদের মতন টক খাই না, ঝাল পছন্দ করি না, আর সবচেয়ে বড়ো কথা, আমি ফুচকা খাই না। আমি শুধুই কড়া লিকারের দুধ-চা খাই।
  
 আমার কোনও বান্ধবী নেই, আগেও ছিল না আসলে। ছোটোবেলায় যাদের আমরা বন্ধু বলি, বড়োবেলায় এসে তাদের ধরে রাখতে পারি আর কই? আমার এক-শো মতের বিরুদ্ধে এক-শো বারই যুক্তি দাঁড় করিয়ে দেওয়া মানুষটির মতের প্রতিও শ্রদ্ধা রাখা যায়, তার বন্ধু হওয়া যায়, এসব তো এমনিতেও কোনও প্রতিষ্ঠান আমাদের শেখায় না, আর আমরা নিজেরাও শিখি না।
  
 আমার আশেপাশে অনেক মানুষ আছে, কিন্তু ওদের কেউই আমার বন্ধু নয়। আগে এটা নিয়ে খুব আফসোস হতো, এখন আর হয় না। বন্ধু খুঁজে পাবার চেয়ে একজন বন্ধু হয়ে ওঠাই এখন আমার কাছে যুক্তিসংগত মনে হয়।
  
 আমি না খুব এলোমেলো ধাঁচের মেয়ে! একটু উদাহরণ দিয়ে বলি। তার আগে চা’টা নিয়ে আসি। আহা, কী সুন্দর চায়ের রং! ইসস্, নিজের হাতের চায়ের প্রশংসা নিজেকেই করতে হয়!
 তো যেখানে ছিলাম। আমি ঘুম থেকে উঠি বেলা বারোটার পর থেকে নিয়ে বিকেল পাঁচটার মধ্যে। মানে বারোটার আগে কখনও উঠি না, আর পাঁচটা হচ্ছে শেষ সময়, এর পরেও না উঠলে মা খুব বকে।
  
 ইদানীং অবশ্য একটা-দেড়টার মধ্যে উঠি। উঠে কিছুক্ষণ বসে থাকি। চা বানিয়ে একটা গল্পের বইতে হাত দিই। চা আর গল্প, এক অসাধারণ কম্বিনেশন! চা শেষ করে কিছুক্ষণ ফোন চেক করি। চেকই বলা যায় ওটাকে, ফেইসবুকিং না। কেন জানি আর সহ্যই হয় না ওই ‘ফেইসলেস’-বুক’টাকে!
  
 যারা বেলা করে ঘুম থেকে ওঠে, তাদের নাকি কোনও স্বপ্ন থাকে না। এ একদমই বাজে কথা! আমার আছে, আমার চোখভর্তি শুধুই স্বপ্ন। বলি এক এক করে? ও, না না, স্বপ্ন নাকি কাউকে বলতে হয় না, ভুলেই গিয়েছিলাম। ঠিক আছে, একটা একটা করে পূরণ হবে যখন, সব্বাইকে জানাব। আচ্ছা, কী যেন বলছিলাম? হা হা হা…এ-ই হচ্ছি আমি!
  
 আমার কথার কোনও ঠিক নেই। খুব কথাপ্রিয় মানুষ ছিলাম একসময়। এখনও কথাপ্রিয়ই, তবে বলতে আর পারি না, শুনতে পারি।
  
 হ্যাঁ, মনে পড়েছে। আমার প্রেমিকের আজ জন্মদিন। ওকে উইশ করতে পারব না, সেই দুঃখ কমাতে লিখতে বসেছি। ওকে ফেইসবুক, হোয়াটসঅ্যাপ সব জায়গা থেকেই ব্লক করেছি। অথচ একটা সময় ছিল, এই একটা দিনকে কেন্দ্র করে আমি কী কী সব নতুন নতুন আইডিয়া মাথায় রাখতাম! সময় বদলে যায়।
  
 বড়ো হয়ে যাবার মানেই হয়তো সব বদল মেনে নিতে শেখা। আমার এত পরিবর্তন দেখলে আমি নিজেই অবাক হই। বদলেছি, ঠিক আছে; তাই বলে এতটাই বদলে যাব? আমি বোধ হয় একটু বেশিই সাহসী!
  
 জীবন সাহসী হতে শেখায়। সাহসী হতে না জানলে অহেতুক দুঃখ পেতে হয়। দুঃখ পেতে আমার আপত্তি নেই, আবার দুঃখ কমাতেও আপত্তি নেই।