সাফল্যের চেয়েও বড়ো

 যে মানুষটা প্রতিনিয়ত সবার মন ভালো রাখার চেষ্টা করে যায়, হয়তো সে নিজে একজন দুঃখী মানুষ!
  
 হ্যাঁ, এটাই সত্য। বাইরে থেকে দেখে তো আমরা কারও ভেতরটা বুঝতে পারি না! যার সব কিছুই আছে নিজেকে ভালো রাখার, সে-ও অনেক ধরনের দুঃখ নিয়ে বাঁচে।
  
 পৃথিবীতে পুরোপুরি সুখী মানুষ বলতে কেউ নেই। সবাই তার নিজ নিজ জায়গা থেকে কোনো-না-কোনো দিক দিয়ে অসুখী। আমরা সবাই, যারা সফল মানুষ, তাদেরকেই চিনি; ব্যর্থ মানুষের দিকে আমরা কখনো ফিরেও তাকাই না। যে বা যারা একটা ভালো জায়গায় যেতে পেরেছে এবং যাচ্ছে, আমরা শুধু তাদেরই চিনি, জানি।
  
 অথচ আমরা অনেকেই হয়তো এটা মাথায় আনতে পারি না বা আনি না, প্রতিটা সফলতার সূচনা ঘটে ব্যর্থতার একটা অধ্যায়ের পরিসমাপ্তি দিয়ে। খারাপ সময়গুলোর মুখোমুখি হয়ে কঠোর পরিশ্রম দ্বারা আমরা একটাসময় নিজেদের সফলতায় পৌঁছতে পারি৷ কিন্তু সেই জায়গায় গেলেই কি তখন সব দুঃখ-কষ্ট চলে যায়? আর কি কখনো আমরা ব্যর্থ হই না?
  
 হই, নিশ্চয়ই হই! হ্যাঁ, হতে পারে সেই ব্যর্থতা তখন কেউ দেখতে পায় না কিংবা বুঝতে পারে না, তাই বলে কি ওই মানুষটা আসলেই তার সফলতা নিয়ে গোটা জীবনটা সুখে কাটিয়ে দিয়েছে বা দিচ্ছে? মানুষ যতই উঁচু সীমানায় যাক না কেন, ব্যর্থতা কখনো নিঃশেষ হয়ে যায় না।
 আর সেই সফলতার পাবার পরেও মানুষকে যে ব্যর্থতাটা সঙ্গে নিয়েই বাঁচতে হয়, তা হলো ভালোবাসার ব্যর্থতা।
  
 সফলতার আগে তার পরিধিটা ছিল একরকম, আর সফল হবার পর তার পরিধিটা অন্যরকম। দুইটাই সমান কষ্টদায়ক। সব কিছু পাবার পরেও কত হাজার হাজার মানুষ গোটা জীবনটা মনের মধ্যে দুঃখ নিয়েই কাটিয়ে দেয়, শুধু ভালোবাসা না পাবার কারণে। আবার যাদের ভালোবাসা আছে, হয়তো আর কিছুই নেই, তারাও গোটা জীবন দুঃখে পার করে দেয়।
  
 আসলে কেউই নিজ নিজ জায়গা থেকে পুরোপুরি ভালো থাকতে পারে না। আর এই ভালো না থাকার মূল কারণগুলিই হয়তো ভালোবাসার অভাব কিংবা মনের মতো ভালোবাসার অভাব।
  
 সফল মানুষের ভালো না থাকার কারণ হচ্ছে, তার মনের মতো ভালোবাসা না পাওয়া, এককথায় ভালোবাসার টানা-পোড়েন। আর ব্যর্থ মানুষের সুখী না হবার পেছনে ভালোবাসার সাথে আরও কিছু কারণও থাকে। তাই সফলই হোক আর ব্যর্থই হোক, মানুষের অসুখী থাকার কারণগুলো প্রায় সবারই একই থাকে।
  
 আমরা কি সবার সঙ্গে গভীরে গিয়ে কথা বলি? না, বলি না। আপনি নিজেও আপনার ভালোবাসার মানুষদের সঙ্গে কথা বলার সময় ঠিক যতটা গভীরতা নিয়ে কথা বলেন, অন্যদের সঙ্গে সেইরকমভাবে বলতে পারবেন না।
 আর এটাই হয়তো ভালোবাসার মানুষ আর ভালোবাসা ছাড়া মানুষের মধ্যে পার্থক্য।
 যাকে আমরা সত্যিই খুব ভালোবাসি, তার সাথে কথা বলার জন্য কোনো উদ্দেশ্য, ইচ্ছে, আগ্রহ, ভাষা এইসবের প্রয়োজন পড়ে না, এমনিতেই হয়ে যায়, ভেতর থেকেই চলে আসে। তার সাথে কথা বলার সময় কোনো কিছু আগে থেকে ভেবে বলতে হয় না, যখন যা মনে আসে, যাকে তা বললে ভালো লাগে, তাকে তা-ই বলে দেওয়া যায়।
  
 আমাদের জীবনের প্রধান সফলতা হচ্ছে, মনের মতো ভালোবাসা পাওয়া। এই ভালোবাসা না থাকলে বাকি সব কিছু আমরা পেয়ে গেলেও দিনশেষে মনের অসুখটা থেকেই যায়, আর সেই অসুখের ওষুধ যেহেতু নেই, তাই আমাদের আজীবন ভুগে ভুগেই মরতে হয় ওষুধবিহীনভাবে।
  
 আর যারা ভালোবাসা নিয়ে আছে, তাদের হয়তো অন্য অনেক দিকই নেই, তবুও ওরা কিছু হলেও মনের দিক দিয়ে শান্তি নিয়ে বাঁচতে পারে। মানুষ ভাতে মরে না, মরে না শরীরের যন্ত্রণায়ও, বরং মনের যন্ত্রণায় আধমরা হয়ে অনেকেই মরেও বেঁচে থাকে শুধু কিছু দায়বদ্ধতার কারণে আর আয়ুর জোরে।
  
 সবসময় জেনে এসেছি, অভাব থাকলে নাকি ভালোবাসা জানালা দিয়ে পালিয়ে যায়! মানলাম, হয়তো কথাটা ঠিক, তবে কথাটা যে পুরোপুরি ঠিক, তা আমি কখনো মানতে পারি না। সব শক্তির বড়ো শক্তি হলো ভালোবাসা, সেটা হোক যে কারও প্রতি আমাদের ভালোবাসা। অভাব থাকলে মানলাম ভালোবাসা থাকে না, তবে এত শত-শত, লক্ষ-লক্ষ মানুষের যে অভাব নেই, তারা কেন ভালো রাখতে পারে না নিজেদের?
  
 নিশ্চয়ই সেটা ভালোবাসার জন্য, আর তো কোনো কারণ আমার বিবেকে আসে না।
 অভাবে কষ্ট বয়ে আনে বা পরিস্থিতি খারাপ করে, তা ঠিক, কিন্তু ভালোবাসাকে কখনো হারিয়ে দিয়ে যায় না অভাব, যদি তা প্রকৃত ভালোবাসা হয়ে থাকে।
 সত্য ভালোবাসা আজীবন সত্যই থাকে। এই ভালোবাসা অভাবের কাছে হার মানে না কখনোই! পৃথিবীর সব মানুষ যেন তাদের ভালোবাসা নিয়ে জীবন কাটাতে পারে।