প্রকৃতির শোধবোধ

: আমি আমার প্রাক্তনকে তুই করে ডাকতাম।
: আমিও!
: কিন্তু তোমার মানুষটা তো এখনও প্রাক্তন হয়নি।
: হবে কীভাবে? সে তো আমার বর্তমান‌ও নয়!
: মানে?
: মানে হলো, সে আমাকে বেছে নিয়েছিল একটা উইন্ডো পিরিয়ড কাটানোর জন্য। কাটানো শেষ, তাই তার জীবনে আমার প্রয়োজন‌ও শেষ। হিসেব সহজ!
: খুব ঝগড়া করতে ইচ্ছে করছে তোমার সাথে। অথচ তুমি আমার কেউ হ‌ও না। অদ্ভুত!
: স্বাভাবিক। যাদের সঙ্গে আমরা অনেক আবেগ খরচ করে ঝগড়া করি, তাদের বেশিরভাগই আমাদের কেউ হয় না।
: তবে কি তুমি মানুষটার সঙ্গে একধরনের ভালোবাসাহীন স্পর্শের মধ্য দিয়ে যাচ্ছ?
: যাচ্ছি না, যাচ্ছিলাম। সে তো এখন আমার ফোন‌ই ধরে না। পাঁচ-ছয় দিন পর পর হঠাৎ কথা হয়। আমার সমস্ত মেসেজ মানুষটার ইনবক্সে আনসিন পড়ে থাকে। আমার আবেগগুলি এখন তার কাছে আনসিন এপিসোডের একটা উপলক্ষ্য মাত্র!
: তবু বলছি, ভালোবাসাহীন স্পর্শের মধ্য দিয়ে যেতে ভালো লেগেছে? সত্যিই?
: ওর স্পর্শে ভালোবাসা ছিল না, জানতাম না। আমার স্পর্শে ভালোবাসা ছিল, জানতাম। নিজের মনের কাছে আমি পুরোপুরি সৎ। এটাই বড়ো কথা!
: এরকমই হয়, বুঝলে? এই পৃথিবীর বেশিরভাগ স্পর্শই এক পক্ষ কিংবা দুই পক্ষ থেকেই ভালোবাসাহীন।
: দ্যাখো, স্পর্শ না করেও ভালোবেসেছি আমি বহু মানুষকেই।
: সবাই-ই তো বাসে! আমি নিজেও বহু বার স্পর্শহীন ভালোবাসায় ডুবে ছিলাম জীবনের নানান পর্যায়ে। আবার এমনও হয়েছে, স্পর্শ করেও ভালোবাসিনি আমি। এই অভিজ্ঞতাও "নিতে হয়েছে"।
: নিতে হয়েছে? ভালোই বলেছ। বাঁচার লোভে এ জীবনে কতকিছুই তো নিতে হলো, তাই না?
: তবে আমার যাদের সঙ্গে প্রেম ছিল আগে, তাদের সঙ্গে বন্ধুত্বটাই বেশি প্রাধান্য পেত। তখন স্পর্শ বা ওরকম কিছু মাথায়ও আসত না কার‌ও। একজন আরেকজনের সঙ্গে সময় কাটাতে আর কাজ করতেই বেশি আনন্দ পেতাম। বলতে পারো, আমার দৈনন্দিন জীবনের সঙ্গী ছিল ওরা।
: কয়টা প্রেম করেছ এখন অবধি?
: এ প্রশ্নটা তুমি আগেও করেছ। আমি এটা নিয়ে কথা বলতে চাই না আসলে।
: কেন‌ই-বা বলবে! আমি তো তোমার কেউ হ‌ই না।
: তা নয়। আমি যা ফেলে আসি, সেদিকে আর ফিরে তাকাই না। তাই পুরনো প্রসঙ্গ আর টেনে আনি না; বলতে পারো, আনতে চাই না। কী আর করা যাবে...আমি এমন‌ই!
: চলো, আমরা দু-জন পরস্পরের আয়না হ‌ই, পরস্পরকে সবকিছুই বলি। ঝগড়া করি, রাগ ঝাড়ি, আবার আদর করি।
: ওরকম তো আমরা করিই সময়ে অসময়ে।
: তুমি তো শুধুই ঝগড়া করো, রাগ ঝাড়ো!
: আদর করার মানুষ পাওয়া সহজ, কিন্তু রাগ ঝাড়ার মানুষ তেমন পাবে না। কার‌ও প্রতি টান না থাকলে মানুষ তার উপর রাগ ঝাড়তে পারে, বলো? এই যেমন ধরো, যে মানুষটা আমার জীবনে এখন আছে, মানে কেবলই আমার দিক থেকে, তার উপর আমি ভুলেও কখনও রাগ ঝাড়ি না---যদি চলে যায়, সে ভয়ে! টানটা কেবলই এক দিক থেকে, তাই সেই টানের চেহারাটা ভয়েই প্রকাশিত!
: সে কি আছে আদৌ? নেই তো!
: ছিল না, নেই, থাকবেও না। তবু তাকেই আমার সবকিছু মনে হয়। আমার জীবনে এখন কেবল তা-ই আছে, যা আদৌ নেই!
: ...ঠিক যেমনটা আমার তোমাকে মনে হয়! এ কি তবে প্রকৃতির শোধবোধ!?
: প্রতিটি মানুষের জীবনেই বোধ হয় এমন একজন থাকে, যে মানুষটা কখনোই প্রাক্তন হয়ে যায় না। যে মানুষ কখনও বর্তমানই হয় না, সে আবার প্রাক্তন হবে কী করে!