পাই বা না পাই, ভালোবাসি!

পৃথিবীতে আপনি যখন কাউকে দেখে ভাববেন, তাকে ছাড়া আমি বাঁচব না, তাকে ছাড়া আমি মরে যাব, এটার থেকে ভুয়া কথা পৃথিবীর ইতিহাসে আর একটিও নেই! হিসেব দিয়ে ব্যাবসা হয়, ভালোবাসা কখনও হয় না! ভালোবাসা বরাবরই এক বেহিসেবি হিসেব!




কেউ যদি আপনাকে পাত্তা না দেয়, তবে ওখানেই থেমে যান। জোর করে কারও পাত্তা পাওয়া যায় না---এটা সবসময়ই মনে রাখবেন। পৃথিবীতে সৃষ্টিকর্তা আমাদেরকে মানুষ করে পাঠিয়েছেন, কুকুর করে পাঠাননি। কুকুরকে পাত্তা না দিলেও কুকুর দৌড়ে দৌড়ে চলে আসে। আবার আমি এমনও দেখছি, কুকুরকে বেশি পাত্তা না দিলে কুকুর তখন রাগ করে আর আসেই না। কিছু মানুষের সামান্য এই রাগটাও নেই। অদ্ভুত ব্যাপার!




হ্যাঁ, কিছু কিছু মানুষ আছে, যারা মানুষ কুকুর সবকিছুর স্টেজ পার করে ফেলছে! তাদেরকে পাত্তা দিন বা না দিন, তারা বার বার আসে আর বার বার‌ই আসে। আমি জানি না, ওরাও কি মানুষ! ওরা কুকুরও না! মানুষও না! কুকুর-মানবও না! মানব-কুকুরও না! ওরা আসলে কী! ওরা চিড়িয়া!




তো এই যে মানুষটা আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না, বুঝতে হবে, সে মানুষটার প্রায়োরিটির মধ্যে আপনি নেই। সে মানুষটার প্রায়োরিটি দূরে থাক, মানুষটার পছন্দের যে বিষয়গুলো, সেই বিষয়গুলোই আপনার মধ্যে সে দেখতে পায় না! এখন আপনিই বলুন, এমন একটা মানুষকেও কি জোর করে ভালোবাসতে হবে!




ভালোবাসা কখনও, ওই...ভালোবাসা দিবি কি না বল...টাইপের কিছু নয়। আর এই পৃথিবীতে আপনি যখন কাউকে দেখে ভাববেন, তাকে ছেড়ে বাঁচতে আমি পারব না, তাকে ছাড়া আমি মরে যাব---এটার থেকে ভুয়া কথা পৃথিবীর ইতিহাসে আর দ্বিতীয়টি নেই! আমরা যখন কাউকে বলি, তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না, তখন...পৃথিবীতে এ পর্যন্ত যতগুলো মিথ্যা কথা বলা হয়েছে, এটার থেকে বড়ো কোনও মিথ্যা বলা হয়নি কখনও। কেননা এতগুলি মানুষ যে বলে, 'তোমাকে ছাড়া আমি বাঁচব না!', যদি এর প্রত্যেকটাই সত্য হতো, তাহলে তো পৃথিবীর জন্য ভালোই হতো! পৃথিবীর জনসংখ্যা কমে দুম করে এক-তৃতীয়াংশে নেমে আসত, পৃথিবীর ভারটাও একটু কমত। মানে এ পৃথিবীর মানুষ দুই-তৃতীয়াংশ‌ই কমে যেত, যদি সত্যিই ওদের কেউ না বাঁচত! এজন্যই, 'আমি তোমাকে ছাড়া বাঁচব না!', এটা একটা ফালতু কথা।




তো যে মানুষটা আপনাকে পাত্তা দিচ্ছে না, সে মানুষটার পাত্তা পাবার জন্য আপনি এত মুখিয়ে আছেন কেন?! সে মানুষটার সঙ্গে যদি আপনার বিয়েও হয়, আপনি কি সত্যিই ভালো থাকবেন? সে মানুষটা তো সবসময়‌ই আপনাকে অবহেলা করবে, তাই না? আপনাকে ছোটো করবে, তাচ্ছিল্য করবে! আপনাকে হিউমিলিয়েট করে করে কথা বলবে সবসময়ই!




মনে রাখবেন, যার সংস্পর্শে থাকলে আপনার লো ফিল হয়, সে মানুষটা আপনার জন্য ভালো মানুষ না। সে মানুষটা আপনার জন্য পারফেক্ট মানুষ না। আমি আবারও বলছি, যদি কারও সংস্পর্শে থাকলে আপনার লো ফিল হয়, তবে সেই মানুষটা আপনার জন্য পারফেক্ট মানুষ না। যে মানুষটার সংস্পর্শে থাকলে, আপনার মধ্যে গুড-ফিলিং কাজ করে, ভালো অনুভূতি কাজ করে, সেই মানুষটাই হচ্ছে আপনার জন্য ভালো মানুষ। শুধু এই ছোট্ট একটা জিনিস যদি আপনি চেক করতে পারেন যে, কারও সংস্পর্শে থাকলে আপনার কি ভালো ফিল হচ্ছে, না কি খারাপ ফিল হচ্ছে, তাহলেই হয়ে যায়! যদি ভালো ফিল হয়, তবে সে মানুষটা ঠিক আছে আপনার জন্য। আর যদি খারাপ ফিল হয়, তবে সে মানুষটা আপনার জন্য কোনোভাবেই ঠিক নেই। এই ছোট্ট জিনিসটা চেক করতে পারলে আপনি অনেকগুলো কনফিউশন থেকে মুক্ত হতে পারবেন।




যে আপনাকে পাত্তা দেয় না, জীবনে কখনও তার পাত্তা পাবার চেষ্টা করবেন না। আপনার একটা আত্মসম্মানবোধ আছে না, ভাই! আপনি চেষ্টা করুন! আপনি দেখুন! দেখার পরে, একসময় আপনি নিজেই বুঝতে পারবেন, আসলে দুনিয়াতে সে আপনার জন্য আসেইনি! আপনিও তার জন্য আসেননি! যে আপনার জন্য আসেনি, তাকে না পেয়েও তাকে ভালোবেসে অন্য কারও সঙ্গে জীবনটা দিব্যি হেসেখেলে কাটিয়ে দেওয়া যায়। অনেকেই এভাবে বেঁচে আছে। এইটুকু মেনে নিলে তো কোনও অসুবিধে নেই।




সবচাইতে বড়ো কথা, সে যদি আপনার লাইফে না-ও আসে, আপনি যদি তার লাইফে না-ও যান, সেক্ষেত্রেও তো তাকে ভালোবাসতে কোনও অসুবিধে হবার কথা নয়। ভালোবাসা তো কোনও কন্ডিশন নয়। ভালোবাসা হচ্ছে একটা মেন্টাল স্টেট। একটা মানসিক অবস্থা। একটা মানসিক ইচ্ছা। একটা মানসিক ভালোলাগা। এটাই হচ্ছে ভালোবাসা ব্যাপারটা। এখানে তো এমন কোনও শর্ত কাজ করে না যে তাকে পেলে ভালোবাসবো, না পেলে ভালোবাসবো না! এরকম কোনও বিষয়‌ই তো আসলে নেই।




বরং ওরকম করে যারা ভাবে, তাদের ভালোবাসায় ভেজাল আছে। তাদের ভালোবাসাটা শর্তনির্ভর। আমি যাকে ভালোবাসি, তাকে পেলেও আমি ভালোবাসব, না পেলেও ভালোবাসব। এই কথাগুলো বিশ্বাস থেকে বলছি আমি। আমি লাইফে যাকে পেতে চেয়েছি, তাকে পাইনি। তো এখন আমি যে তাকে পাইনি, তাতে আমি কি মারা গেলাম? শেষ হয়ে গেলাম? জীবনটা এত ঠুনকো নয়। জীবন বড্ড বেহায়া, সবকিছুর পরও ঠিক‌ই টিকে থাকে।




আমার পছন্দের মানুষটি আমাকে পাত্তা না-ই দিতে পারে! বরং আরও ভালো হয় কী, যাকে আমি পছন্দ করি, তার কাছাকাছিই না যাওয়া। কেননা আমি তাকে পছন্দ করি ঠিক আছে, কিন্তু সে তো আমাকে পছন্দ না-ও করতে পারে। সেজন্য তার কাছাকাছি না গেলেই ভালো। দেখা যাবে কী, তার কোনও একটা কাজ, তার কোনও একটা আচরণ আমাকে এত কষ্ট দিচ্ছে যে তখন আমার বাঁচতেই খুব কষ্ট হচ্ছে। তার থেকে বেটার হচ্ছে তার ধারে-কাছেও না যাওয়া। তাই কেউ যদি আমাকে পাত্তা না দেয়, তবে তাতেও তার প্রতি আমার পছন্দ কমে যায় না। কার‌ও মনোযোগ না পেয়েও তাকে নীরবে নিভৃতে মন দেওয়া যায়। পছন্দের মানুষের কাছে গিয়ে কষ্ট পাবার চাইতে দূরে সরে থেকে পছন্দ বাঁচিয়ে রাখা অনেক বেশি স্বস্তির।




ভালোবাসার ব্যাপারটা আসলে কী? এখানে কোনও যোগ্যতার বিষয় নেই, যোগ্যতার কোনও প্রশ্নই নেই। এখানে পুরো ব্যাপারটা হচ্ছে মনের। কে কাকে পছন্দ করছে কিংবা করছে না, এই পুরো ব্যাপারটাই হচ্ছে মনের। এখানে কোনও সমীকরণ নেই, কোনও হিসেব নেই। হিসেব দিয়ে ব্যাবসা হয়, ভালোবাসা কখনও হয় না। এ কারণেই কেউ পাত্তা না দিলেও, তার কাছে বার বার যাওয়া, আত্মসম্মান বিকিয়ে দিয়ে যাওয়া---এসবের কোনও দরকার নেই। এটা ঠিক নয়। এর একদমই কোনও দরকার নেই। ভালোবেসে কাউকে বিরক্ত করার চাইতে ঘৃণা করে হলেও তাকে বিরক্ত না করা ঢের ভালো। আপনি একটু নিজেকে নিয়ে ভাবুন, নিজের দিকে তাকান। হৃদয় উজাড় করে ভালোবাসুন, আত্মসম্মানবোধ উজাড় করে নয়। এই আর কি!