নিজের মতো বাঁচা

তোমাকে যে যা-ই ভাবুক, কখনোই ভুলে যেয়ো না, তুমি আসলে কে। তোমাকে অনেকে অনেক পরিচয়ে চেনে। তোমার নাম একেক মানুষের কাছে হয়তো একেকটা। হতেই পারে এমন। তবু সবকিছুর পরও, তুমি নিজে কিন্তু ঠিকই জানো, তুমি আদৌ কে। প্রতিটি মানুষের ভেতরেই একটা মানুষ থাকে, যে সবসময়ই ধ্রুব।

যখন একলা ঘরে বসে থাকো, রাতের আকাশের দিকে তাকিয়ে তারা দেখো বিছানায় শুয়ে, হেমন্তের বিকেলে রৌদ্র পোহাও চিলেকোঠায় বসে, যখন তোমার সাথে এক তুমি বাদে থাকে না আর কেউই, তখন তোমার ঠিকই মনে পড়ে, তুমি কে। তখন তুমি বুঝতে পারো, প্রতিদিনই তোমাকে পালিয়ে ও লুকিয়ে বাঁচতে হয়। এই বাধ্যতার কাছে তুমি বড়ো অসহায়।

নিজেকে এমন চেহারায় সামনে আনতে হয়, যা দেখতে লোকে পছন্দ করে। নিজের ভেতরেরটা এমন পোশাকের আড়ালে ঢেকে রাখতে হয়, যা নিজেকে সামাজিক ও আর্থিকভাবে নিরাপদ রাখে। মুখে ভিন্ন বয়ান দিলেও এই কাজটা সবাইকেই করতে হয়। করতে জানে না যে, সে খুব বিশ্রীভাবে ছিটকে পড়ে।

তবু, কখনও কখনও, নিজের মতো করে বাঁচতে ইচ্ছে করে। তখন ওটুকু আয়ু পেতে ফিরতে হয় সেই আমি'টার কাছে, যাকে আমরা ঢেকে রাখি নেহায়েতই বাধ্য হয়ে, অনিচ্ছেয়। যদি মাঝে মাঝে সেই ভেতরের আমি'র সাথে যোগাযোগটুকুও না রাখি, তবে প্রয়োজনের সময় ডাকলে সে সাড়া দেবেই-বা কেন? তাই পুরো পৃথিবী হারিয়ে যায় তো যাক, নিজেকে কখনও হারিয়ে ফেলতে নেই। নিজের সাথে কথা বলতে শেখেনি যে, সে আসলে কথা বলতেই শেখেনি।