ধার নেওয়া

সাহায্য এবং ধার এক জিনিস নয়। যদি কারও কাছ থেকে টাকা ধার নেন, তবে তা অবশ্যই ফেরত দেবেন। ফেরত দিতে দেরি হলে তা জানাবেন। তাঁর মেসেজ সিন করে ফেলে রাখবেন না। তাঁর ফোনটা ধরে অন্তত জানাবেন, আপনি কখন টাকাটা ফেরত দেবেন। যদি ফেরত দিতে না পারেন, তবে মাফ চেয়ে নেবেন। যদি তিনি মাফ করে না দেন, তবে আপনি আল্লাহর কাছেও মাফ পাবেন না। বান্দার হক নষ্ট করার গুনাহ স্বয়ং আল্লাহও মাফ করেন না।

ফেরত দেওয়ার ইচ্ছে বা সামর্থ্য না থাকলে টাকাটা ধার হিসেবে নেবেন না, সাহায্য হিসেবে নেবেন। ধার হিসেবে নিলে এবং পরবর্তীতে ফেরত না দিলে বা দিতে গড়িমসি করলে তাঁর বিশ্বাসের প্রতি অশ্রদ্ধা দেখানো হয়। তিনি তো আপনাকে বিশ্বাস করেই টাকাটা ধার দিয়েছিলেন আপনার প্রয়োজনের সময়ে, তাই না? কোন অধিকারে বা যুক্তিতে আপনি আপনাদের মধ্যকার সম্পর্কের অবনতি ঘটালেন? আপনার লজ্জা করে না? যত টাকার জন্য সম্পর্কের অবনতি ঘটালেন, আপনার মূল্য অত কম? আপনি এখনও বেঁচে আছেন কোন মুখে? ছিঃ ছিঃ!

এ পৃথিবীতে কেউই নিজেকে প্রতারিত দেখতে চায় না। সাহায্য হিসেবে দিলে সেই টাকার উপর আর কোনও অধিকার কিংবা প্রত্যাশা থাকে না। আপনি অসংখ্য ভালো কাজ করলেও বান্দার হক আত্মসাৎ করার কারণে নিশ্চয়ই বেহেশতে প্রবেশ করতে পারবেন না, কেননা বান্দার হক তাওবা কবুলের প্রধান অন্তরায়।

যদি আল্লাহকে ভয় করেন, যদি সত্যিই ধার্মিক হন, যদি পরকালে বিশ্বাস করেন, তবে ধার হিসেবে নেওয়া টাকা নির্ধারিত সময়ের মধ্যেই ফেরত দিন। এখন ফেরত দিতে না পারলে সময় চেয়ে নিন, নীরব থাকবেন না কিংবা পালিয়ে বেড়াবেন না। যদি ন্যূনতম‌ও আত্মসম্মানবোধ থাকে, তবে বার বার সময় বদলাবেন না। পাওনাদার টাকা ফেরত চাইলে তাঁর সাথে খারাপ আচরণ করবেন না কিংবা তাঁর প্রতি তাচ্ছিল্য দেখাবেন না। তাঁকে ইগনোর করার কোনও অধিকার‌ই তো আপনার নেই! আপনার বিপদের সময়ে পাশে দাঁড়িয়ে তিনি কোনও পাপ তো করেননি, তাই না? যদি কখনোই ফেরত দিতে না চান কিংবা না পারেন, তবে পাওনাদারের কাছে মাফ চেয়ে নিন। যদি তিনি মাফ না করেন, তবে আল্লাহ‌ও মাফ করবেন না। টাকা মেরে খাওয়ার চাইতে ভিক্ষা করে খাওয়া অধিক সম্মানের।

পুনশ্চ। মনে মনে ভাবতে পারেন, এত কথা যে লিখলাম, আমার কি কোনও পাওনাদার নেই?

উত্তর: নেই; এক জন‌ও নেই। প্রথমত, আমি পারতপক্ষে ধার নিই না। যদি আমার কাছ থেকে কেউ কোন‌ও কারণে টাকা পায়, তবে আমি সে টাকা তাকে বুঝিয়ে দেবার জন্য ফোন করে করে রীতিমতো বিরক্ত করে ফেলি। জোর করে হলেও টাকা বুঝিয়ে দিয়ে হাঁফ ছেড়ে বাঁচি। এ বিষয়ে আমি অতিঅবিশ্বাস্য রকমের স্বচ্ছ।

ওপেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিই। যদি কেউ প্রমাণ করতে পারেন যে আপনি আমার কাছ থেকে টাকা পান, তবে যত টাকা পান, তার এক-শো গুণ টাকা আমি আপনাকে ফেরত দেবো।

এভাবে কথা বলতে চাইলে বুকের মধ্যে অনেক জোর লাগে। আমার টাকা যাঁরা ধার নিয়ে ফেরত দেননি এখন পর্যন্ত, তাঁদের সেই জোর নেই, যদিও তাঁদের অনেকেই বেশ বিত্তশালী। (দু-একজন নিয়মিত হজে যান, দেশ-বিদেশ ঘুরে বেড়ান।)

পরের টাকা নিজের পকেটে রেখে মানুষ শান্তিতে ঘুমায় কী সুখে, আমার মাথায় আসে না। পাওনা টাকা শোধ করতে না পারলে কিংবা না করলে তো লজ্জায় কুঁকড়ে যাওয়ার কথা, খাওয়া-ঘুম হারাম হয়ে যাওয়ার কথা! ওরা কি সত্যিই মানুষ? এতটা নির্লজ্জ মানুষ হয় কীভাবে?!

আমার যদি আজকেই মৃত্যু হয়, তবে আমার মৃত্যুর পর আমার পরিবারের কাউকেই কার‌ও কাছে মাথানত করে হিসেব দিতে হবে না। এ আমার অনেক বড়ো একটা স্বস্তির জায়গা।

টাকা ফেরত দিতে ভুলে গেছেন? লজ্জা করল না কথাটা বলতে? ফাজলামো করেন? সে-ই সত্যিকারের ভুলোমনা, যে পাওনা টাকা চাইতে ভুলে যায়, দেনা শোধ করতে নয়।