তোমাকে ভেবে

 তুমি চলে গেছ, এই মুহূর্তে তুমি পাশে নেই, এইসব মেনে নিয়ে বেঁচে থাকতে ভালো লাগছে না। যন্ত্রণা যা হয়, তাকে মেনে নিয়েও বেঁচে থাকা যে যায়, তা যখন শিখে নিয়েছিলাম, তখনই তোমার সঙ্গে দেখা। পুরনো সব যন্ত্রণার প্রত্যেকটিকেই তখন আমি চিনি। হ্যাঁ, আমার জীবনে তুমি সেসময়ই এসেছ। দেখলাম, পুরনো সুখগুলির পাশে আরেকটি নতুন সুখ বসে গেছে, যা ছিল তোমাকে পাবার সুখ।
  
 ওইটুকু পর্যন্ত ঠিক ছিল। মাত্র সেদিনই তো তোমার সঙ্গে দেখা হলো। কয়দিন হবে? পাঁচ-ছয় দিন? অথচ দেখো, আমার মনে হচ্ছে, পাঁচ-ছয় যুগ কেটে গেছে তোমাকে দেখার পর! আমার মাথায় এক বারও আসছে না যে, মাত্রই তোমার সঙ্গে আমার দেখা হয়েছে! শুধুই আসছে, আমাদের আবার কবে দেখা হবে? তোমাকে আবার কবে দেখব?
  
 এ কী যন্ত্রণা! এই যন্ত্রণার সঙ্গে তো কখনও দেখা হয়নি এর আগে! তুমি এলে, নতুন একটা সুখের পাশাপাশি নতুন একটা যন্ত্রণা এল! যেহেতু নতুন সুখটাকে আমি কিছুতেই হারাতে পারব না, সেহেতু নতুন যন্ত্রণাকে সহ্য করা শিখতেই হবে!
  
 তুমি জানো না, যে কফিশপে আমাদের দেখা হয়েছিল, গত পাঁচ-ছয় দিনে সেখানে আমি বহু বার ঢুকেছি। ঢুকেই সেই টেবিলে বসেছি, যেখানে আমরা দু-জন বসেছিলাম। নিজেকে আমি বার বার বোঝানোর চেষ্টা করে যাচ্ছি, খুব শিগ্‌গিরই আমাদের আবার দেখা হবে। আমি সত্যিই জানি না, এই সহজ ব্যাপারটা বুঝতে আমার এত সময় কেন লাগছে! এর চাইতে অনেক কঠিন কঠিন সূত্র মুখস্থ করে পরীক্ষায় বড়ো বড়ো অঙ্ক করে ফেলেছি, কিন্তু এইক্ষেত্রে আমি চরমভাবে ব্যর্থ হচ্ছি প্রতি বারই!
 আমার শুধুই মনে হচ্ছে, তোমাকে দেখেছিলাম---ওই সত্যটা, তোমাকে দেখতে ইচ্ছে করছে---এই সত্যের সামনে কিছুই নয়! নিজের সঙ্গে ক্রমাগত কথা বলছিই তো বলছি! তোমাকে দেখার আগে, আমার মধ্যে শুধুই আমি ছিলাম। তোমাকে দেখার পর, আমার মধ্যে শুধুই তুমি আছ! এর নামই বোধ হয় প্রেম!
  
 বৃষ্টি নেমেছে। ঠান্ডা ঠান্ডা হাওয়ার সাথে জলের ছাট। মনে হচ্ছে, ওখানেও তুমি! আগে তো কখনও ছিলে না, আজ এলে কী করে? এরকম প্রতিটি অনুভূতিতেই যদি তুমি এতটা জড়িয়ে যাও, তাহলে আমি স্বাভাবিক থাকব কীভাবে? আর তোমাকে যদি বার বার এসব বলি আর বলতেই থাকি, তাহলে তো তুমিও একসময় বিরক্তবোধ করবে, তাই না? আমাকে নিয়ে তুমি আমার মতো করে না-ও তো ভাবতে পারো! বৃষ্টি ছুঁয়ে দিচ্ছে, আর আমি ভাবছি, এই বিন্দুগুলি তুমি! বৃষ্টি গেল, তুমি এলে!
  
 কীরকম জানি একটা অনুভূতি! একা একা লাগছে, আবার তোমাকে কল্পনায় এনে সেই একাকিত্ব চলেও যাচ্ছে! আমার মনে হচ্ছে, আমি হয়তো খুব দ্রুতই একা থাকতে ভুলে যাব। বাঁচতে আমার তোমাকে লাগবেই!
  
 মাত্রই তোমার টেক্সট এল! মনে হচ্ছে, হঠাৎ আমার প্রাণটা বুঝি উড়েই গেল! রীতিমতো হৃৎকম্প বন্ধ হবার উপক্রম! যার টেক্সট এলেই আমার এমন লাগছে, সে নিজে এলে আমার কেমন লাগবে! মনে হচ্ছে, তোমার জন্য আরও অনেক দিন চোখ বন্ধ করে বেঁচে থাকা যাবে!
  
 আমি খুব করে চাইছি যেন তুমিও আমার মতো এরকম একাকিত্বে ছটফট করো, যাতে খুব দ্রুতই তোমার আমাকে দেখতে ইচ্ছে করে! বিশ্বাস করো, তুমি যদি আমার হয়ে যাও, তবে আমি আমার জীবনের সব কিছু তোমাকে দিয়ে দেবো। আমার অস্তিত্ব, আমার সময়, এবং আমার আরও যা-কিছু আছে। তুমি আমার সঙ্গে ভালো থাকবে, আমি তোমাকে ভালো রাখব।
 বৃষ্টির সময় সমুদ্রের তীরে দৌড়েছ কখনও? দারুণ লাগে কিন্তু! আমার হাত ধরে দৌড়োবে একদিন?
 আমার ঘরেই এসো, কেমন? অন্য ঘরে এতটা আদর পাবে না, লিখে রাখো। এতটা ভালো আর কেউ বাসবে না কোনোদিনই, লিখে রাখো। জীবনে ভালোবাসা ছাড়া আর কী কী লাগবে তোমার, একটু লিখে দাও তো! আমি ওসবও ঠিক জোগাড় করে ফেলব।
  
 আমি তুমি দু-জন মিলে ঘাসের উপর শুয়ে থাকব। দেখব, আকাশের গায়ে হেলান দিয়ে গাছেরা কীভাবে ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে! আকাশের বিস্তীর্ণ ক্যানভাসে পাখিরা কীভাবে মুহূর্তেই রংতুলি হয়ে যায়! তোমার জন্য ফুল এনে দেবো, শিশির ছুঁইয়ে দেবো, দু-জন মিলে সারাগায়ে আলো মাখিয়ে নেব। তুমি পাশে থাকলেই সব হবে।
  
 আমরা দু-জন একসঙ্গে থাকলে দু-জন মিলে পৃথিবী জয় করে ফেলব। এসব শুধুই কথার কথা নয়। এসব আমার বিশ্বাস। আজ পর্যন্ত জীবনে যা-কিছু পেয়েছি, তার সবই পেয়েছি বিশ্বাসের জোরে। আমি তাই বিশ্বাস করতে ভালোবাসি। অবিশ্বাস করে ঠকার চাইতে বরং বিশ্বাস করে জেতাই তো ভালো!
  
 আমাদের দেখা হবার আগে তোমার কাছ থেকে যে চিঠিটা পেয়েছি, ওটা এত যে সুন্দর, এত যে সুন্দর! তোমার হাতের লেখা, তোমার শব্দের ব্যবহার, তোমার গায়ের ঘ্রাণ, সব কিছুই সুন্দর! চিঠিটা পাবার পর আমি ওটার উত্তর দেবো কী, আনন্দে পাগলই হয়ে গিয়েছিলাম যেন! চিঠিটা আমি কয়েক হাজার বার পড়েছি ও অবিরাম চুমু খেয়েছি!
  
 তোমাকে আমি দেখতে পাচ্ছি না, শুনতে পাচ্ছি না, কিন্তু অনুভব করতে পারছি। আমাকে ফেলে আর কোত্থাও যেয়ো না, হুঁ?
  
 তোমাকে দেখতে না পারার ব্যর্থতায় আমি মোটামুটি সারাদিনই হাসতে থাকি। আমার কান্না পায় না, হাসি পায়। এর কারণটা কী, আমি জানি না। তোমার সঙ্গে আপনমনে গল্প করা বাদে আমার যেন আর কোনও কাজই নেই। পাগলামিটা মাথায় বেশি চেপে বসলে আমি লিখতে শুরু করে দিই ভয়ে! কীসের ভয়? খুব বেশি ধরে রাখতে গিয়ে যদি আবার হারিয়ে ফেলি!
  
 যে মুহূর্তটাতে তোমাকে বেশি ভাবতে পারি, সে মুহূর্তটাই আমার কাছে সবচাইতে সুন্দর। আগে আমি একা ছিলাম, এখন আমি তোমার সঙ্গে আছি। এই দুইয়ের মধ্যে পুরো একজন্মের পার্থক্য! তুমি এসে যেন আমাকে আরও একবার এই পৃথিবীতে আসার সুযোগ করে দিলে!
  
 তোমাকে ভেবে ভেবে যা লিখেছি, তার একটাও লেখা নয়, ওসব তুমি নিজেই! আগে আমি কাগজে লিখতাম, আর এখন আমি সেখানে তোমাকে রাখি। আমার সামনে চারিদিকে তুমি ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছ! এমন একটা কিছুও চোখের সামনে দেখছি না, যেখানে তুমি নেই!
  
 তোমার শরীরের যে-কোনও কিছুতে আমাকে ভেবে আলতো করে একটা চুমু খাবে? হোক তা তোমার চুল, হাতের আঙুল, বাহু কিংবা অন্য যে-কোনও কিছু যেমন তোমার ইচ্ছে। আমাদের দু-জনের মাঝখানের জায়গাটাতে যেটুক হাওয়া ধরে, শুধুই সেটুক দিয়ে আমি আমৃত্যু আমার নিঃশ্বাস মাপতে চাই!
  
 আচ্ছা, তোমাকে আবার কবে দেখব?