তাচ্ছিল্য

: কেমন আছ, মৌনী?
: সরি...ডাক নামে ডেকো না। আমার নাম নিবেদিতা দাশগুপ্ত।
: আমাকেও এখন নতুন করে নিবেদিতা বলে ডাকতে হবে?
: "আমাকেও" বলতে তুমি আসলে কী মিন করছ... বুঝতে পারছি না। এমা...ফ্রেঞ্চফ্রাইগুলো তো ঠান্ডা হয়ে যাচ্ছে! নাও নাও! দ্যাখো, এত অল্প মেয়োনিজ কেউ দেয়?
: আমি ডাকছি। ওয়েটার...আমাদের এক্সট্রা মেয়োনিজ লাগবে।
: জয়, আমারটা আমিই তো বলতে পারতাম।
: আমি বলাতে কি খুব...
: আচ্ছা, ওসব বাদ দাও। মূলকথায় আসা যাক। এত দিন বাদে কেন ডেকেছ?
: তুমি জানো না?
: আমি তোমার প্রেমিকা নই যে তোমার মন পড়তে পারব।
: একদিন তো ছিলে...যখন...
: ওয়েটার, আমাদের মিল্কশেক?
: এত তাড়াহুড়ো করছ কেন?
: যেতে হবে। বইমেলার সিজন, জানোই তো কত ব্যস্ততা। তা ছাড়া একটা নাটকের গানের জন্য লিরিকও লিখতে হচ্ছে। দম নেবার সময় নেই...
: মৌনী, একটা কথা অন্তত আমার দিকে তাকিয়ে বলো, প্লিজ! একটা বার তাকাও!
: এই নাও, তাকালাম।
: ভালোবাসো?
: কাউকে ঘৃণা করিনি জীবনে।
: আমাকে তো করো।
: অত সময় নেই যে...
: আমার অপরাধ?
: আমাকে ঠিক সময়ে ঠিক জায়গায় লাথি মেরেছ, এটাকে আগে আমি অপরাধ ভাবতাম, এখন সৌভাগ্য ভাবি।
: বইটা আমাকে উৎসর্গ করেছ যে?
: ভবিষ্যতেও যা-কিছু লিখব, সব তোমাকেই উৎসর্গ করব।
: কেন?
: তুমিই তো দিনের পর দিন অবহেলা করে, তাচ্ছিল্য করে শিল্পী বানালে আমাকে। সেই তাচ্ছিল্যই তো একটু একটু করে ছোট্ট মৌনীকে নিবেদিতা বানিয়ে ছাড়ল।
: এখনও এত অভিমান?
: উহুঁ, কৃতজ্ঞতা।
অ্যাই, এখন কিন্তু আমাকে উঠতে হবে।
: তুমি তো আমাকে একটা কথাও শেষ করতে দিলে না...
: আমি যাই, বাই।
: একটু জড়িয়ে ধরি?
: হা হা...সময় হবে!?
আচ্ছা, ধরো।
: অবশ্য এটা তো পাবলিক প্লেস...
: আই ডোন্ট কেয়ার...
ধরলে ধরো, নইলে যাচ্ছি।
: মৌনী, তোমার শরীরের এই ঘ্রাণটা আমি আর কোথাও পাই না...তোমাকে মাঝে মাঝে দেখতে ইচ্ছে...
: শোনো, জীবনে যে নারীই আসুক, তাকে চট করেই তাচ্ছিল্য করতে শুরু করবে না। যে-কেউই কি আর তাচ্ছিল্য হজম করে লেখক নিবেদিতা দাশগুপ্ত হয়ে উঠতে পারবে!? হা হা...
যাই।