কিছু অবগাহন

আজ জল গেয়েছে পুরোনো গান,
...দেখিনি তোমায় শতাব্দীর জন্মলগ্নেও...
আমিও যদি যাই হারিয়ে?
লিখবে শেষে প্রহসনে, হৃদয়ে গেঁথেছিল বিষের বাণ?




আজ শুকনো পাতারা দলিত হয়নি---
সবুজের সর্বশেষ বিন্দু আঁকড়ে, শুধু একটা কবিতা লেখার অপেক্ষায়, দীর্ঘপথ পেরিয়ে এসেছে!
ওরা বলতে চায়...বলতে চায়, তুমি ফেরোনি!
ফেরোনি আমার কবিতায়!




আজ তৃণলতায় ঘর বাঁধেনি বাবুইটাও,
ছিন্নমূল জলের ফোঁটায় ভিজেছে অষ্টপ্রহর!
ছানাদুটো বিষাদ ছুঁয়ে ডানায় পরেছে স্বাধীনতার শেকল!
ভালোবাসার শেষ গন্ধটুকু মোড়কে জড়িয়ে
পৌঁছে দেবার ব্যাকুলতায়, পাড়ি দিয়েছে তোমার ওই প্রশ্নসাগর!




আজ অরুণ রাঙেনি তার পরিচিত দ্রোহে,
নেয়নি শুষে যমুনার বুক থেকে একটিও জলবিন্দু;
মেঘশূন্য আকাশ, যেন সদ্যবিধবা কোনও নারী!
প্রাণহীন নীলাঙ্কিত এক শূন্য মরুভূমি!
ওরা সবাই আত্মার মৃত্যুপথযাত্রী,
শেষ পদচিহ্নে এঁকে দিয়ে গেছে একদিগন্ত হাহাকার!
তা-ই দেখে তুমি কবি হয়েছিলে, বলেছিলে, আহা! কী চমৎকার...কী চমৎকার!




জোনাকিরা সেদিন জ্বালেনি আলো;
তুমি বলেছিলে, আঁধারের গায়ে তারা শত শত!
মুঠোভর্তি আলো জোনাকিরা তাই আমার নামেই পাঠিয়ে দিল!
অত আলো দিয়ে, কী করব আমি, বলো?




হ্যাঁ গো, এত অবেহেলা দিয়ে, তুমি কী করে কবিতা লেখো?
আমায় বলবে, চোখ ঝলসানো আলো কেন বিরহ মাখে?
আমায় বলবে, দুঃখপুকুর কেন অমন হাসি লুকিয়ে রাখে?
বলবে, রবি ঠাকুরের সুভা নীরবেই কেন সুখ কুড়িয়ে আনে?
প্রতাপ কি তবে শব্দ নিয়েও খেলতে জানে?
কিংবা অপু... গল্পের পাতায় ভর দিয়ে অপর্ণার ছবি আঁকে!
না.. না... ও তো ভ্রম অপর্ণার!
অপূর্ব রায় গল্পের পাতায় শুধু পুলুর নামটাই তো লেখে! 




মনে পড়ে, ওই যে আমাদের শান্তিনিকেতনের হৈমন্তী...
যার মৃত্যুতেই ছিল ভালোবাসার পূর্ণতা!
আরও এক বার বিয়ের সানাই বেজে ওঠার প্রতীক্ষা!
কিংবা অসহায় ডাক্তার শম্ভুনাথের মেয়ে কল্যাণী?
অনুশোচনায়-ভরা পাণ্ডুলিপিই ছিল যার ভালোবাসার স্বীকারোক্তি!
মনে পড়ে, পদ্মাপাড়ের বউ মালাকে?
সারাগায়ে হলুদ মেখে কুবেরের মনে ঢেউ তুলে স্নান করতে...যে মালা অক্ষম ছিল!
যে জানত না, বেগুনি রঙের শাড়ি পরে কী করে কপিলা হতে হয়!
যে বুঝত না, ভালোবাসা মানেই অস্থিরতা, স্থির হয়ে ঘরের কোণে পড়ে থাকা নয়!




শেষে এবং সবশেষে,
মনে পড়ে কি আমায়? আলোর দিকে পিঠ রেখে চলা 
তমসাচ্ছন্ন এক ফুলবালিকা!
যার শরীর থেকে ক্রমাগত মৃত্যুর গন্ধ ছড়ায়!
তুমি দূর থেকে ক'টি পয়সা ছুড়ে বলেছিলে,
গোলাপের দোকানে চলছে বড্ড আকাল!
কিছু মনে কোরো না, সময় নেই...
আমি যে দু-পয়সার রাখাল!




ওগো, একটা গোলাপ কেনো,
এক বার চিঠির খামটা খোলো,
আবার আমায় নাম ধরে ডাকো,
শুধু এক বার, আমায় নাম ধরে ডাকো...!