জীবনে উপেক্ষিতা (শেষ অংশ)

জানো প্রিয়, আমার জমজ বাচ্চার অনেক শখ। দুইবার জমজ হোক, ওতেও আপত্তি নেই। অনেক বাচ্চা থাকবে আমার। ওরা সবাই মিলে আমার সারাঘর সারাক্ষণ মাতিয়ে রাখবে। তোমাকে কাছে পাওয়ার পর থেকে আমার মধ্যে হঠাৎ করে স্বামী, সন্তান, ঘর এসবের সাধ আর স্বপ্ন জেগে ওঠে। প্রিয়, আমাদের একটা সুখের সংসার হতো। তুমি হতে দিচ্ছ না! চল না প্রিয় আমরা সুন্দর গোছানো একটা সংসার করি! আমরা দুজন একসাথে বৃষ্টিতে ভিজবো, রোদ্দুরে স্নান করবো, শীতের রাতে সোয়েটার পরে বারান্দায় বসে-বসে কফি খাবো, শরতের আকাশে তারা গুনবো, বসন্তের বিকেলে মিষ্টি রোদে পার্কে হাঁটবো। অনেক সুন্দর হবে সবকিছু। জানো, আমি না আমাদের বেবিদের নামও রেখে দিয়েছি; তবে গোপনে। কাকে কী বানাবো, সেটার খসড়া সিদ্ধান্তও নিয়ে রেখেছি। আমি চাই, আমাদের মাত্র ৪টা ছেলে আর ১টা মেয়ে হোক। মেয়ের নাম হবে সংঘমিত্রা, ডাকনাম মিত্রা। আমার স্বপ্ন, আমাদের সব বেবি তোমার মতো মেধাবী আর আমার মতো সুন্দর হবে। আমি দেখতে কি খারাপ, বলো? সত্যি বলছি, তুমি ছাড়া সবাই আমাকে সুন্দর বলে। বান্ধবীরা বলে, আমার চুল আর চামড়াটা পেলে নাকি ওরা ঈশ্বরের কাছে আর কিছুই চাইতো না। প্রিয়, তুমি জানো, তোমার সাথে আমার অনেক মিল আছে। তোমার আর আমার গায়ের রঙ হুবহু এক। আমাদের দুজনের মনও অনেক ভাল। আমি তোমার মতন মেধাবী না হলেও একেবারে খারাপও না। বিয়ের পর আমি চাকরিবাকরি করবো না। ‘শান্তা পরিবার’ এর শান্তার মতো সারাদিন ঘরদোর সামলাবো। আমার বাচ্চারা অনেক দুষ্টু হবে তো! আমি চাকরি করলে ওদের সামলাবে কে? ওরা বড় হয়ে অনেক মেধাবী হবে তো, তাই ওরা ছোটবেলায় খুব দুষ্টু হবে। মেধাবীরা নাকি ছোটবেলায় ভীষণ দুষ্টু হয়? আচ্ছা, তুমিও কি ছোটবেলায় খুব দুষ্টু ছিলে? তুমি তো অফিসে ব্যস্ত থাকবে। আমি ওদের নিয়ে থাকবো সারাদিন। আমি দেখবো ওরা কীকরে হাঁটতে শেখে, কীকরে কথা বলতে শেখে, একটা শব্দ শিখতে ওদের কত সময় লাগে। বাচ্চারা নাকি প্রথমেই মা ডাকতে শেখে। আচ্ছা, আমার বেবিরা প্রথমে বাবা ডাকতে শিখলে তুমি খুব খুশি হবে? ঠিক আছে, আমি ওদেরকে সেটাই শেখাব। আমার কী মনে হয় জানো, আমাদের বেবি হলে ওরা দেখতে অনেক সুন্দর ফুটফুটে হবে। অনেক মেধাবী হবে, আর অনেক ভালমানুষ হবে। একদম তোমার মতো হবে ওরা। আমার ধারণা, তোমাকে সারা বাংলাদেশ আর আমার ছেলেদের সারা পৃথিবী চিনবে। আমার মেয়েটাও অনেক লক্ষ্মী হবে, দেখো!

তোমার সাথে কিন্তু আমার একটা অদ্ভুত মিল আছে। সেটা হল, তুমি অনেক বই পড়েছ, আর আমি কখনোই পাঠ্য বইয়ের বাইরে একটাও বই পড়িনি। বই দূরে থাক, একটা বাড়তি গল্পও কখনো পড়িনি। মজার না? আমি তোমাকে প্রথম দেখেছিলাম স্বপ্নে। বিশ্বাস হয়? হ্যাঁ, সত্যিই তুমি আমার স্বপ্নে এসেছিলে ২০১০ সালের অক্টোবর মাসের শেষ সপ্তাহে। তখনো আমি তোমার সম্পর্কে কিছুই শুনিনি, এমনকি তোমার নামটাও শুনিনি, তবু আবছা আলোয় শুধু তোমার মুখটা দেখেছিলাম। এক ডাক্তারের সাথে আমার বিয়ের কথা চলছিলো। আমার বাবা তো অনেকটা বিনা চিকিৎসায়ই মারা যান, তাই বাবার মৃত্যুর পর থেকেই মায়ের স্বপ্ন ছিল, আমরা ভাইবোনদের মধ্যে কেউ যেন ডাক্তার হই। কেউ তো আর হতে পারলাম না, তাই ডাক্তার জামাতা মায়ের বিশেষ পছন্দ ছিল। তোমাকে স্বপ্নে দেখার পর আমি প্রায় মাস তিনেক উদাসীন অবস্থায় ছিলাম। খেতে পারতাম না, পড়াশোনা করতে পারতাম না, কারো সাথে গল্প করতে ভাল লাগত না, ভাল কথা শুনলেও অসহ্য লাগত। একথা কোনো বান্ধবীকেও কখনো বলতে পারিনি লজ্জায়। কেন? কারণ, স্বপ্নে এমন একটা ছেলের প্রেমে পড়েছি, যে অন্য ধর্মের। ও যদি আমাকে কথা শোনায়? আমি স্পষ্ট শুনেছি, কেউ যেন আমায় বলে দিচ্ছিল, “ওকে তুই মনে রাখিস না। ও কখনোই তোর হবে না। ওর ঈশ্বর আরেকজন!” আমি হেসে বলেছিলাম, “জীবনে যদি ওকে না পাই, তবে কষ্ট ছাড়া আর কিছুই যেন এ জীবনে কখনো না আসে!” Heart proposes, Religion disposes. কিন্তু কী-ই বা করা যাবে! তুমি তো জানো, আমাদের সমাজে হৃদয়ের দাবির চাইতে ধর্মের দাবি বড়, মানুষের চাইতে প্রথা বড়। তার উপর সেসময় অন্য একজনের সাথে আমার বিয়ের কথা চলছে। এমন সময় এমন পরিস্থতিতে প্রেমে পড়াটা যে মহা অপরাধ! বিশ্বাস কর প্রিয়, আমি তখন ভেতরে-ভেতরে জ্বলে যাচ্ছিলাম! এরপর ঘুরিয়েপেঁচিয়ে তোমার কথা এক বান্ধবীকে একটু করে বললাম। ও বলেছিল, যার কোনো বাস্তব অস্তিত্ব নেই, তাকে ভেবে কী হবে? অতএব, এমন অস্তিত্বহীন মানুষকে ভুলে যাওয়াই উত্তম। কিন্তু ভুলে যাওয়া কী অতো সহজ, বলো? যার সাথে এমন হয় না, সে আমার মনের অবস্থাটা বুঝবে কীকরে? সে তো লেকচার দিয়েই খালাস! আমি খুব মনে রাখতে পারি, এতোটাই মনে রাখতে পারি যে, অনেকসময় চাইলেও কোনোকিছু সহজে ভুলে যেতে পারি না। স্মৃতি বড় কষ্ট দেয়! আমি সত্যিই খুব কষ্টে দিন কাটিয়েছি।

এখনো মনে আছে, অনেক চেষ্টা করে আমি স্বাভাবিক হয়েছিলাম। কিন্তু মাঝে-মাঝে যখনই মনে পড়ত, আমি অস্থির হয়ে যেতাম। উদাস হয়ে থাকতাম ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তন্ময় হয়ে স্বপ্নের কথা ভাবতাম। কী দুঃসহ সময় কেটেছে আমার! সেই সময়টাই আমি আর মনে করতে চাই না। অনেক বিরহ, অনেক যন্ত্রণা! কষ্টগুলি শুধু মনে পড়ে, সুখগুলি কোথায় যেন লুকিয়ে থাকে। কষ্টরা পাশে থেকে যায়, সুখরা দূরে সরে যায়। সুখ আর জীবনে আসে না, কখনো হয়তো বড়োজোর কষ্টকষ্ট সুখ এসে জীবনে কড়া নাড়ে। জীবনটা এমন কেন? পরে সেই জায়গাতেও আমার বিয়ে হয়নি। আমাকে ওদের অনেক পছন্দ ছিল, কারণ আমি কখনোই ক্যারিয়ারিস্ট ছিলাম না। ওরা চাইছিল ঘরে থাকবে, ঘর সামলে রাখবে, সবার সেবা করবে, এমন একটা মেয়ে। কিন্তু ওই যে বললাম, তুমি স্বপ্নে এসেছিলে! আমি যেরকম একটা মানুষকে আমার জীবনে কল্পনা করতাম সবসময়ই, ঠিক সেরকম কেউ যেন আমার স্বপ্নে এলো। এসে আমাকে এলোমেলো করে দিয়ে চলে গেলো! আমি স্বপ্নে তার অবয়ব দেখিনি, কিন্তু আমার মধ্যে কেন জানি একটা দৃঢ় প্রত্যয় জন্মে গেলো, আমি আমার মনের মানুষটির দেখা পাবোই পাবো। না পেলে সে কেনই বা আমার স্বপ্নে আসবে? জানোই তো, আমার চুল হাঁটুর নিচ অবধি যায়! রেশমের মতো ঘন কালো চুলের ফাঁদে অনেককেই বিভোর হয়ে হারিয়েছে। আমি কখনো হারাইনি, ধরা দিইনি কারো কাছেই। আমি নিজেকে সবসময়ই ধরে রেখেছি, নিজের সম্মানটুকু বাঁচিয়ে চলেছি। আমার তো বাবা নেই, তাই আমাকে নিয়ে বাজে কথা বলতে না পারলে সমাজের অনেকেরই অস্বস্তি হয়। মা আমাকে ছোটবেলা থেকে শিখিয়েছেন, কীকরে আত্মসম্মান নিয়ে চলতে হয়। যে চুলের জন্য আমার এতো কদর, আমি সেটাকে শেষ করে দিলাম শুধু আমার স্বপ্নের মানুষটির কথা ভেবে। দ্য গিফট্‌ অব দ্য ম্যাজাই গল্পে জিমের জন্য ডেলা তার চুল কেটে ফেলেছিল। যেদিন ওরা আমাকে দেখতে এলো, সেদিন আমিও তোমার জন্য আমার মাথা ন্যাড়া করে ফেললাম! আমাকে ওদের সামনে যেতে দেয়া হয়নি। আমি ঘরের ভেতর থেকে সমানে চেঁচাচ্ছিলাম যাতে ওরা আমাকে পাগল ভেবে সম্বন্ধটা ভেঙে দেয়। হয়েছিলোও তা-ই। বিয়েটা হলো না। ভালোই হয়েছে। বিয়ে হয়ে গেলে তোমার ভালোবাসা পেতাম কীকরে? আর ভালোবাসা না পেলে তোমার বিরহটাও তো বুঝতে পারতাম না। তোমাকে ভালোবেসে যে সুখ পেয়েছি, তার প্রতিদানে কয়েক জন্মও কাঁদা যায়, প্রিয়। এমন করে সুখ-দুঃখের যুগল কে কবে অনুভব করতে পেরেছে? এই যে এখন এতো কাঁদাচ্ছ, এও অনেক বড় প্রাপ্তি মনে হয়। কয়জনের ভাগ্যে জোটে তোমার কাছ থেকে দুঃখ পাওয়ার? সত্যি বলছি প্রিয়, আমাকে দুঃখ দেয়া অতো সহজ নয়, আমি যে দুঃখের মধ্যেই বড় হয়েছি। তুমি আমায় দুঃখ দিতে পেরেছ। তুমি কিছুতেই সামান্য মানুষ নও। তুমি আমার জীবনে আসার ৬ মাস আগেও আরো একবার তোমার উপস্থিতি আমি স্বপ্নে টের পেয়েছি। আমি যেমন করে ভাবতাম, যেমন করে আমার স্বপ্নে সেই অচেনা অদ্ভুত মানুষটি এসে আমাকে এলোমেলো করে দিয়ে যেত, যে মানুষটিকে আমি শয়নে স্বপনে জাগরণে সর্বক্ষণ নিবিড়ভাবে অনুভব করেছি, যার অস্তিত্ব আমার জীবনে ধ্রুব প্রকট স্পষ্ট, তুমি সত্যিই তেমন একজন মানুষ। তোমাকে আমি বলে বোঝাতে পারবো না প্রিয়, তিন বছর আগে স্বপ্নেদেখা রহস্যময় মানুষ জীবনে বাস্তব হয়ে আসার অনুভূতি যে কত মধুর! এই রোমাঞ্চ, এই শিহরণ, এই যাদু কাউকে বলে অনুভব করানো যাবে না।

আচ্ছা প্রিয়, তোমার কাছে সন্ধ্যা ভাল লাগে? নাকি ভোর? জানো, আমি ভাবি, যদি এমন হতো, বৃষ্টিভেজা সন্ধ্যা, কোনো এক পাহাড়ের কোলে ছোট্ট একটা কুটির, আকাশভরা তারা মিটমিট করছে, অদূরে ঝিঁঝিঁ পোকার ক্লান্তিহীন ডাক, আমাদের ঘরের চারিদিকে আগুনেপোকার ঝিকিমিকি, মেঘেঢাকা চাঁদ, ঝিরিঝিরি অবিশ্রান্ত বৃষ্টি, হিমশীতল হাওয়ার আলতো পরশ, দূর থেকে ভেসেআসা মন্দিরের ঘণ্টাধ্বনি। সাদা পাঞ্জাবি পরে তুমি সামনের দিকে একটু ঝুঁকে দুই হাতের দশটি আঙুলের পরস্পরের আলিঙ্গনে খোলা জানালা দিয়ে দূরের আকাশের দিকে উদাস দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছ। তোমার পাশে এককাপ কফি হাতে আমি দাঁড়িয়ে। উষ্ণ ধোঁয়া ভেদ করে তোমার চোখে আমি চোখ রেখেছি, বিস্ময়ে ভাবছি, এ কি সত্যি, নাকি কল্পনা? তোমার ডান কাঁধে আমার বামহাতটা। আচ্ছা, তুমি যখন অমন করে দূরে তাকিয়ে ভাবছ, তখন আমি তোমার কাঁধে হাত রেখে পাশে দাঁড়িয়ে থাকলে কি খুব রাগ হবে তোমার? বকবে আমাকে? নাকি ভাববে, আমি ভীষণ ছেলেমানুষ? হোক না এমনকিছু! আমার এই স্বপ্নটা সত্যি করে দিলে তোমার জীবনের কি খুব ক্ষতি হয়ে যাবে, প্রিয়? আমি সারাজীবন নির্বোধ হয়ে থাকতে চাই। আমি তোমার চোখ দিয়ে আমার পৃথিবীকে দেখতে চাই। আমার সূর্যের অতো আলো ভাল লাগে না, তুমি আমার চোখের আলো হয়ে থাকো। আমি তোমাকে ভালোবেসে সারা পৃথিবী ভুলতে চাই। আমি তোমার হাতে আমার পৃথিবীটাকে সমর্পণ করে মুক্ত হতে চাই। যেদিন আমাদের প্রথম দেখা, সেদিন তুমি আমার মনের মতো হয়েই ছিলে। আমরা যখন লিফটে উঠছিলাম, তখন আমি মনে-মনে তোমার কাছ থেকে একটা চুমু আশা করতেই তুমি মিষ্টি হেসে আমার চোখে একটা চুমু এঁকে দিয়েছিলে। আমি সত্যিই খুব অবাক হয়ে গিয়েছিলাম। তোমার দেয়া প্রতিটি স্পর্শ আমার কাছে খুব পবিত্র, অমলিন। জানো, রাতে যদি তোমাকে ওয়েটিং-এ দেখি, তখন মনে হতে থাকে, তুমি বুঝি অন্য কারো সাথে আদর করে কথা বলছ। এতো কষ্ট হয় আমার! ইচ্ছে করে, নিজেকে শেষ করে দিই। পুরোরাত কষ্টে জেগে থাকি। তুমি কখনোই কলব্যাক কর না। অনেক যন্ত্রণা হয়।

প্রিয়, নভেম্বরের ২ তারিখ তোমার জন্মদিন। আমারটা ১১ ডিসেম্বর। তোমার আমার জন্মদিনের মধ্যে অদ্ভুত কিছু মিল আছে। আমরা দুইজনই জন্মেছি রবিবার। তোমার জন্মতারিখ ২, আর এই ২-কে ভাঙলে তুমি পাবে ১+১! মানে দুটো ১! মানে, আমার জন্মতারিখ! এর অর্থ হলো, তোমাকে ভাঙলে আমাকে পাওয়া যায়। আমাকে আর আমার সত্তাকে যোগ করলে তুমি এসে যাও! তোমার জন্মমাস ১১, আর জন্মতারিখ ১১! আমার জন্মমাস ১২। এখানে ২ হলো তোমার জন্মতারিখ! আমার জন্মমাসের ১ আর ২ মিলে হয় ৩। তোমার জন্মমাসের ১ আর ১ মিলে হয় ২। ৩ থেকে ২ বাদ গেলে হয় ১। এই ১-এর মানে বোঝো? এর মানে, যখন আমি তোমাকে আমার করে পাবো, তখন আমার ভেতর থেকে তোমাকে পাওয়ার কল্পনা বিয়োগ হয়ে তুমি আমার জীবনে বাস্তব হয়ে যাবে, আর তুমি আর আমি মিলে এক হয়ে যাবো! এক হয়ে গেলে কী হবে? তখন তুমি আর আমি যোগ হবো। যোগ করে দেখো, কী হয়। আমার ৩, আর তোমার ২, মিলে হয় ৫; এর মানে, আমাদের ৫টা বাবু হবে! আমি তো ঠিক করেই রেখেছি, তাদের মধ্যে ৪টা ছেলে আর ১টা মেয়ে! কী? হিসেব মিলে গেলো তো? আমি বোকা হলেও কিন্তু বুদ্ধিমতী, ঠিক না, বলো? হাহাহাহা……..

অ্যাই চল না, আমরা একদিন দেখা করি! প্লিজ ‘না’ বোলো না। আমি তোমার সাথে দেখা করবো, কথা বলবো, অনেকগুলি কথা বলবো। তুমি যখন ‘আমার সাথে তোমার কীসের কথা’ বলে ফোন কেটে দাও, তখন খুব খারাপ লাগে, নিজেকে ভীষণ অসহায় মনে হয়। তোমার সাথে আমার অনেক কথা। কয়েক জন্ম কথা বললেও তোমার আমার কথা ফুরোবে না। জেনে রেখো, আমার মতো করে কেউই কোনোদিন তোমাকে বিশ্বাস করবে না, কেউ নিজেকে তোমার কাছে এতোটা সমর্পণও করবে না কখনোই। আর ত্যাগ? ওটা সবাই করতে পারে না। আমি যখন মায়ের পেটে, তখন আমার বাবা কী এক অসুখে যৌনক্ষমতা পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেন। আমার মায়ের বয়স তখন ২২। সে ঘটনার পর আমার বাবা আরো ১৬ বছর বেঁচে ছিলেন। আমার মাকে আমি কোনোদিনই এটা নিয়ে আফসোস করতে দেখিনি, বরং আমার মায়ের চোখে আমার বাবা পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মানুষ। বাবার মৃত্যুর পর মা আমাদের পিঠাপিঠি তিন ভাইবোনকে অনেক কষ্ট আর ত্যাগ স্বীকার করে মানুষ করেছেন। প্রিয়, আমি যে সে মায়েরই সন্তান! ত্যাগ কী, আমি জীবন থেকে শিখেছি। শুধু তুমি পাশে থাকলে আমার আর কিছুই লাগবে না। তোমার চাকরি, সামাজিক অবস্থান, টাকাপয়সা, আভিজাত্য এর কিছুই আমি চাই না। আমি শুধু তোমাকে চাই। এই চিঠিটা আমি লিখে যাচ্ছি লিখেই যাচ্ছি, কিন্তু একবারও রিভিশন দেবো না। এই পুরো চিঠিতে আমি কী কী লিখেছি, আমার তা মনেও নেই। বানানে ভুল আছে, লেখা সুন্দর হয়নি, এতে কোনো কথার গাঁথুনি নেই। অনেক ভুল পাবে চিঠিতে। মিনতি করে বলছি আমার ভুলগুলির দিকে খেয়াল কোরো না, শুধু আমার আবেগটুকু দেখ, ভালোবাসাটুকু খুঁজে নাও।

আজকে তোমাকে নিয়ে একটা খারাপ স্বপ্ন দেখেছি। খুব দুশ্চিন্তা হচ্ছে তোমার জন্য। ভীষণ মায়া লাগছে তোমার কথা ভেবে। প্রিয়, আমার সবগুলো ব্লক তুমি ছেড়ে দাও না! তোমাকে একটু দেখতে ইচ্ছে করে, তোমার কণ্ঠস্বরটা শুনতে ইচ্ছে করে। আমার ১৪৯টা ফেসবুক আইডি তোমার ব্লকলিস্টে, আমার ৬৭টা নাম্বার তুমি কলব্লকের অনন্ত আঁধারে ছুঁড়ে ফেলেছ। তুমি কোথায় আছ, কী করছ, আমার সারাক্ষণই জানতে ইচ্ছে করে। ৪টা আইডি থেকে তোমাকে ফলো করি, কখনোই নক করি না, যদি আবার ব্লক করে দাও, এই ভয়ে! ফেসবুক আইডি খুলতে নাহয় পয়সা লাগে না, কিন্তু সিম কিনতে তো পয়সা লাগে। আমি আর কত সিম কিনতে পারি, বলো? আমি যে কিছুই করি না। শরীরের রক্ত বেচে সিম কেনার টাকা যোগাড় করেছি, শুধু তোমার একটা ‘হ্যালো’ শুনবো বলে। আর কত যন্ত্রণা পেলে তোমাকে ভালোবাসার প্রায়শ্চিত্ত হয়ে যাবে, বলতে পারো? আর যে পারি না, প্রিয়! আমার এক বান্ধবী তোমার ফ্রেন্ডলিস্টে আছে। তার কাছ থেকে শুনেছি, তুমি নাকি আজকাল খুব রাত জাগো। অনেক রাত অবধি তোমাকে অনলাইনে পাওয়া যায়। কী কর অতো রাত জেগে? পড়? লিখ? গান শোনো? মুভি দেখো? নাকি, মেয়েদের সাথে চ্যাটিং? এতো রাত জেগো না, প্রিয়। অসুস্থ হয়ে পড়বে তো! তোমার যে ব্যাকপেইনের সমস্যাটা ছিল, ওটা কি এখনো আছে? নিজের দিকে একটু খেয়াল রেখো, প্লিজ। তুমি তো আমাকে বিয়ে করতে চাও না। আচ্ছা ঠিক আছে, কোরো না আমাকে বিয়ে। কিন্তু তুমি যে আমায় কথা দিয়েছিলে, সারাজীবনই আমার সাথে সম্পর্ক রাখবে, সেটা কি ভুলে গেলে? তুমি অনেক বড় মানুষ, অনেক বড় বড় অবস্থানের মেয়েরা তোমায় পছন্দ করে, আমি সবই জানি, সবই বুঝি। ঠিক আছে, ওদের মধ্যে যে তোমাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে, তাকেই তুমি তোমার জীবনের সঙ্গী করে নিয়ো। যাকে তুমি তোমার সুখদুঃখের সাথী হওয়ার যোগ্য মনে করবে, তাকেই তোমার জীবনে জায়গা দিয়ো। কথা দিচ্ছি, আমি তোমার চলার পথে বাধা হয়ে দাঁড়াবো না কখনোই। শুধু ভালোবাসতে দিয়ো, তোমার কাছে এর চাইতে বেশি আর কিছুই চাই না। একদিন আদর করে বলেছিলে, “সেদিন তোমায় ভালোবেসেছি, যদি সুযোগ দাও, আজো বাসবো, আর বারণ করলে কালও বাসবো।” শুনে আমি খুব হেসেছিলাম। বলেছিলাম, “পাগল আমার!” মনে নেই, না? তুমি আর আমার ‘পাগল’ নেই, অন্যকারো হয়ে গেছ, না? কী সহজে ভুলে গেছো সেসব কথা, যেগুলিকে ধারণ করে আমি আমার জীবনটাকে সাজিয়েছি, কিংবা এলোমেলো করেছি। আমাকে একটু ভুলে যাওয়াটা শিখিয়ে দাও না! আমি যে কোনোভাবেই ভুলতে পারি না!

জানো প্রিয়, তোমার ব্যক্তিত্বের একটা দিক আমায় দারুণ টানে। তুমি রিকশায়, রেস্টুরেন্টে নোংরামি করা একদমই পছন্দ কর না। তোমার রুচি, তোমার আভিজাত্য, তোমার স্বচ্ছ চিন্তাভাবনা তোমার ব্যক্তিত্বকে আরো সুন্দর করেছে। আচ্ছা, তুমি কি তোমার এই ব্যক্তিত্ব ধরে রাখতে পেরেছ? আমি কিন্তু আমার আবেগ আর অনুভূতি একমাত্র তুমি ছাড়া আর কারো সাথেই ভাগ করিনি। এ দেহে প্রাণ থাকতে আর কখনো করবোও না। তুমি আমার সোহাগের ভাগ আর কাউকে দাওনি তো? তুমিই একমাত্র পুরুষ যে আমাকে স্পর্শ করেছে। অন্য কেউ ওটা করবেই বা কেন? তুমি ছাড়া আমার আর কে আছে, বলো? আমরা দুজন তো কাছাকাছি থাকি না। তুমি আমাকে সুখ না দিলে আমি কার কাছে যাবো? কোথায় খুঁজবো সুখের পরশ? আমার সুখের একমাত্র সঙ্গী যে তুমি। আচ্ছা, তোমার নিঃশ্বাসের উত্তাপ আর কেউ কখনো পায়নি তো? যদি পায়, তবে তা হবে আমার সাথে চরম প্রতারণা। কেন তুমি অন্য কারো কাছে সুখের খোঁজে যাবে? আমি তো আছিই! কোথাও যাইনি তো! আর যাবোই বা কোথায়, বলো? কখনোই যাবো না। অনেকদূরে থেকেও আমি তোমার সবচাইতে কাছে থাকবো। আমি পোশাক বদলাতে শিখেছি, মানুষ বদলাতে কখনো শিখিনি। মানুষ বড় মায়ার জিনিস, আদরের জিনিস। আমি মানুষকে অনেক যত্নে রাখতে জানি। অনেক আদর দিয়ে ভালোবাসতে জানি। আর যে মানুষটার অস্তিত্ব আমার প্রতিটি নিঃশ্বাসেই ধ্রুব, সে মানুষটাকে বদলানোর মানেই তো মৃত্যু! আচ্ছা, তুমি কখনো এমন করে ভাবো, প্রিয়?

এই চিঠির সাথে যে গিফটটা পাঠাচ্ছি, সেটা পাঠাতে অনেক ঝামেলা হয়েছে। কোনো ক্যুরিয়ারই এটা নিতে চায়নি। কারণ, ফটোফ্রেম নাকি ভেঙে যায়। আমি অনেক সুন্দর একটা কাঁচের বড় ফ্রেম কিনেছিলাম। তোমার বাসায় রাখলে খুব মানাত। এতো করে অনুরোধ করলাম, কিন্তু ওরা সেটা রিসিভ করলোই না। পরে কাঠ আর প্লাস্টিকের এ দুটো ফ্রেম কিনে পাঠালাম। ছবি দুটো দেখেছ তো? দেখ না, আমাদের দুজনকে পাশাপাশি কত সুন্দর মানিয়েছে! আমাদের বিয়ে হলে আমরা হতাম পৃথিবীর সবচাইতে সুন্দর যুগল। আমাদের বেবিরাও অনেক সুন্দর হতো। ওরা বড় হয়ে আমাদের এমন যুগল ছবি হাতে নিয়ে দেখবে, আর বলবে, ওরা আমাদের বাবা-মা। এমন সুখ আর কীসে মেলে, বলো? আমার সাদাকালো জীবনটাকে একটু রাঙিয়ে দাও না! আমি তোমার বউ হবো। কী? আমায় নেবে না? তোমার ঘরে যাবো। কত স্বপ্ন আমার! বুঝলে না প্রিয়, বুঝলে না। তোমার অফিসের ঠিকানায় ক্যুরিয়ার করেছি। প্যাকেটটা খুলে আমাকে অনেক অনেকবার ফালতু বলেছ, বাজে মেয়ে ভেবেছ, না? রাস্তার মেয়েও নিশ্চয়ই বলে ফেলেছ। প্রিয়, বিশ্বাস করো, তোমার মা যেমনি তোমাকে রাস্তায় জন্ম দেননি, তেমনি আমার মাও আমাকে রাস্তায় জন্ম দেননি। তোমায় ভালোবেসে অপরাধ করলে আমি করেছি, যা খুশি আমায় বলো। আমার মা তো তোমার কাছে কোনো অপরাধ করেননি। কেন আমার দুঃখিনী মাকে অপমান কর? তিনি যদি কোনো অপরাধ করে থাকেন, তা হলো, তিনি আমায় মানুষকে ভালোবাসতে শিখিয়েছেন। তিনি আমায় বলেন, “কখনোই কাউকে ছোট চোখে দেখবি না। মানুষ বড় আদরের ধন রে, মা। হারিয়ে গেলে বুঝবি।” প্রিয়, তোমার কণ্ঠ অপূর্ব। আমাকে তুমি রেকর্ড করে যে গানগুলি পাঠিয়েছিলে, সেগুলির প্রত্যেকটাই আমার কাছে আছে। আমি তোমার গান শুনি, মাকেও শোনাই। তোমার ‘এই আছি বেশ’ গানটা যে কত হাজারবার শুনে ফেলেছি! মা বলেন, এই গানটাতে তোমার সাথে নাকি মান্না দে’র কণ্ঠ হুবহু মেলে। তুমি তো কখনো গান শেখোনি, শিখলে অনেক ভাল করতে! তোমার পছন্দের যে গানগুলি তুমি তোমার টাইমলাইনে শেয়ার কর, সেগুলি আমি ডাউনলোড করে আমার মেমরি কার্ডে রেখে দিয়েছি। গানগুলি বারবার শুনি, আর মনে হয়, তুমি আমায় গান গেয়ে শোনাচ্ছ। আমারও পছন্দের কিছু গান আছে। তুমি সেগুলি শুনলে আমার খুব ভাল লাগবে। আমার যাকিছু ভাল লাগে, তাকিছু যদি তোমারও ভাল লাগত, আমি অনেক খুশি হতাম! বল না, আমি যে এমন পাগলামি করি, এটা দেখে তোমার মনে-মনে খুব ভাল লাগে না? বল না সত্যি করে!

তোমাকে খুশি করা আর সুখী রাখা আমার জীবনের সবচাইতে বড় ইবাদত। তোমাকে শুধুই দেখতে ইচ্ছে করে, সারাক্ষণ তোমার পাশে থাকতে ইচ্ছে করে, তুমি কী করছ জানতে ইচ্ছে করে। সত্যি প্রিয়, তোমাকে অনেক ভালোবাসি। তোমায় এতোটা ভালো না কেউ কখনো বেসেছে, না কেউ কোনোদিন বাসবে। সেদিন তোমার কণ্ঠস্বর শুনতে ভীষণ ইচ্ছে করছিলো। পুরোই পাগল-পাগল লাগছিলো। মনে হচ্ছিলো, তোমার সাথে কথা বলতে না পারলে আমি সত্যিই পাগল হয়ে যাবো! পপুলারে গিয়েছিলাম একটা ব্লাডটেস্ট করাতে। ডাক্তার করাতে বলেছে। টেস্ট না করিয়ে দুটো সিম কিনলাম তোমার সাথে কথা বলার জন্য। তোমাকে এটা বলতেই ‘হাস্যকর’ বলেই লাইনটা কেটে দিলে, আমার ওই নাম্বারটাও ব্লক করে দিলে। আরেকটা নাম্বার থেকে কল দিলাম। ‘বেহায়া কোথাকার’ বলেই কেটে দিলে। ওটাও ব্লকড্‌! সবসময়ই আমার বেহায়াপনাটাই দেখ, ভালোবাসাটা কখনো দেখতে পাও না। আমার হাতে আর টাকা নেই, কিন্তু তোমার সাথে কথা বলতে ইচ্ছে করে। বলে দাও না, আমি কী করবো! আমার এক বান্ধবী তোমার সাথে প্রায়ই চ্যাট করতো। তোমাদের মধ্যে বোঝাপড়া ভালোই। ওর কাছ থেকে তোমার খোঁজখবর জানতে পারতাম। সেদিন আমার শেখানো বুদ্ধিমতো ও তোমার সাথে খোলামেলা কথা বলতে চাইলো। তুমি কিছু না বলে ওকে ব্লক করে দিলে। তাহলে তুমি তো খারাপ নও, তুমি তো ভাল। আমি সত্যিই তোমাকে মেলাতে পারি না। তোমাকে খারাপ ভাবতে ইচ্ছে করে না। কেউ তোমাকে নিয়ে বাজে কথা বললে ওকে খুন করে ফেলতে ইচ্ছে করে। যদি একটিবারের জন্য দেখতে পেতাম তোমার মনে কী আছে! তুমি কী ভাবো, যা বলো তা ভাবো কিনা, যদি জানতে পারতাম! মেয়েদের মন বোঝা নাকি স্রষ্টারও সাধ্যাতীত! কারা বলে এই কথা? লেখকরাই তো? বলবেই, স্বাভাবিক! ওরা যে সবাই ছেলে! মেয়েরা কি কখনো লিখেছে এই কথা? কোনো মেয়ে তোমাকে নিয়ে লিখুক না দেখি! ও কী লেখে, আমি একটু দেখতে চাই! ছেলেদের মন বোঝা আর গাছের ভাষা বোঝা একই রকমের কঠিন। তাও গাছের ভাষা নিজের মতো করে একটা ধরে নিলে, কোনো ক্ষতি নেই। আর ছেলেদের মন নিজের মতো করে ধরে নিলে মৃত্যু অনিবার্য!

প্রিয়, তুমি আমার ন্যূনতম খবর নেয়াও ছেড়ে দিয়েছ। হয়তো আমাকে নিয়ে ভাববার সময়টুকুও হয় না তোমার। তোমার জীবনে আমার প্রয়োজন ফুরিয়ে গেছে, না? আমার জীবনে তোমার প্রয়োজন ছিল, আছে, আমৃত্যু থাকবে। তোমাকে যে ভালোবাসি! সত্যিই বাসি। অনেক বেশিই বাসি! জানো, আমি ভীষণ অসুস্থ। পড়াতে যেতে পারি না। একটা টিউশনি চলে গেছে। আরেকটাতে এই মাসের বেতন দিয়েছে মাত্র ৫৫০ টাকা। আমি যে অনেকদিন যেতে পারিনি, তাই বেতন কেটে রেখেছে। ঠিকমতো ডাক্তার দেখাতে পারি না, ওষুধ কিনতে পারি না, টেস্ট করাতে পারি না। খুব দুর্বল লাগে, হাঁটতেও কষ্ট হয়, প্রায়ই মাথাঘুরে পড়ে যাই। কাশতে গেলে রক্ত বের হয়। রাতে ঘুম হয় না। আমার কী যেন হয়েছে। তাও কোনো কষ্ট লাগত না যদি তুমি আমার সাথে একটু ভাল ব্যবহার করতে, তোমার সাথে আমি একটু কথা বলতে পারতাম। আচ্ছা, আমি যদি মরেও যাই, তবুও তো তুমি জানতে পারবে না, তাই না? কোনোদিন মনেও পড়বে না। কারো কাছ থেকে খবর নেয়ার চেষ্টা করবে না। আমার কোনো স্মৃতিই তোমার জীবনে রাখবে না। অবশ্য, রাখবেই বা কেন? আমি কে তোমার? আমি তো ছিলাম স্রেফ তোমার হাতের পুতুল, তাই না? আচ্ছা প্রিয়, তুমি তো চাইলেই যেকোনো মেয়েকে পুতুলের মতো নাচাতে পারো। আমার মতো শত-শত মেয়ে তোমার জীবনে আসলেই বা কী, আর চলে গেলেই বা কী? বাঁচলেই বা কী, আর মরলেই বা কী? তুমি কতজনকেই বা মনে রাখবে? তোমার আর দোষ কী, বলো? সবই জানি, সবই বুঝি। সব জেনেবুঝেও তোমাকেই ভালোবাসি। শুধু তোমাকে ভালোবাসি। তোমার যাকিছু ভাল, তাকিছুকে ভালোবাসি। তোমার যাকিছু খারাপ, তাকিছুকেও ভালোবাসি। তুমি যখন ভাল, তখনকার ‘তুমি’টাকে ভালোবাসি। তুমি যখন খারাপ, তখনকার ‘তুমি’টাকেও ভালোবাসি। তোমাকে ভালোবাসি, সে তুমি যেমনই হও না কেন! তুমি ভাল বলে তোমায় ভালোবাসি, তুমি খারাপ জেনেও তোমায় ভালোবাসি। তোমায় ভালোবাসি তাই তোমার সবকিছুকেই আমি ভালোবাসি। চিৎকার করে বলতে পারবো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। সবার সামনে লাজলজ্জা ভয়ডর সংস্কার সকল কিছুর বাঁধ ভেঙে দৌড়ে এসে তোমাকে জড়িয়ে ধরে চিৎকার করে বলবো, বলেই যাবো………. ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি! ভালোবাসি!

চিৎকার করতে-করতে আমার গলা দিয়ে রক্ত বের হবে, বুকের ভেতর থেকে আর কোনো শব্দই বের হবে না, আমার সব দম ফুরিয়ে যাবে, তোমাকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে রাখবো, একসময় নিঃশ্বাসটুকুও আর নিতে পারবো না, পুরো শরীর কাঁপতে-কাঁপতে নিথর হয়ে আসবে, এই চোখদুটো ছাড়া আর কিছুই নাড়াতে পারবো না; তবু আমার চোখের শেষ হাসিটা মিলিয়ে যাওয়ার সময়ও আমার চোখ, আমার আত্মা বলে যাবে, প্রিয়, তোমায় ভালোবাসি। আমার শেষ মুহূর্তটিতে আমায় তোমার বুকে একটু মাথা রাখতে দেবে না, প্রিয়?

চিঠিতে একটা হৃদয়ের ছবি আঁকা দেখছ না? তোমায় আর কী ভালোবাসার উপহার দেবো, বলো? আমার যে কিছুই নেই দেবার। অনেককিছু কিনে দিতে ইচ্ছে করে, কিনতে পারি না। আমার হাতে অতো টাকা নেই। তোমাকে অনেক যত্ন করে সাজিয়ে রাখতে ইচ্ছে করে, তাও পারি না। কিছুই পারি না আমি! চিঠির ওই হৃদয়টায় রক্তক্ষরণ টের পাও, প্রিয়? আমার ক্ষতবিক্ষত হৃদয়ের সবটুকু ভালোবাসা শুধু তোমার জন্য। ছবিটা এঁকেছি আমার বাম হাতের তর্জনীর তাজা রক্ত দিয়ে। বিশ্বাস হচ্ছে না, এইতো? কোনো ল্যাবে পরীক্ষা করে নিয়ো, প্রিয়। আমাকে পাগলী ভাবছ? সবার জীবনেই একবার এমন মাতালকরা ভালোবাসা আসে। এই ভালোবাসা কেবল একজন মানুষের জন্য। এমন ভালোবাসায় নিজেকে তুচ্ছ করতে-করতে, নিচে নামাতে-নামাতে একেবারে পথের ধুলোর সাথে মিশিয়ে দিতেও খারাপ লাগে না। ভালোবাসার মানুষটির কাছে হেরে গিয়ে, ছোট হয়ে অনেক শান্তি পাওয়া যায়। তোমার কাছে আমার নিজেকে সবচেয়ে নির্লজ্জভাবে প্রকাশ করতে একটুও খারাপ লাগেনি। একবারও মনে হয়নি, আমি আমার সব মানসম্মান বিসর্জন দিয়ে দিচ্ছি। তুমি আমায় যতোই অপমান অবহেলা অসম্মান তাচ্ছিল্য কর না কেন, আমার একটুও গায়ে লাগে না। আমাকে অপমান করা এমনিতেই অনেক কঠিন। আর সেটা যদি তুমি কর, তবে তো আমি অপমানিত হওয়ার প্রশ্নই আসে না! বিশ্বাস করবে কিনা জানি না, পুরো পৃথিবীর কাছে আমি অনেকবেশি অধরা, ব্যক্তিত্বশালী, অবগুণ্ঠিত। একমাত্র তোমার কাছেই আমি অসহায়, পরাস্ত, নির্লজ্জ। হোক ওরকম! তাতে কী? তুমিই তো! তুমি একজনই তো! আমার কাছে ‘এক’ শব্দটা অনেক দামি। তুমি তো আমার! তোমার সামনে আবার কীসের গরিমা, প্রিয়? বরং তুমি আমার পাশে থাকলে আমি সারাজীবনই সুন্দর হয়ে বাঁচতে পারবো। তুমি আমার অহংকার, অলংকার, মর্যাদা। জানো প্রিয়, ব্যক্তিত্ব দিয়ে আর যা-ই হোক, ভালোবাসা হয় না। হৃদয় যখন কারো হৃদয়ে গিয়ে মেশে, তখন সকল জ্ঞান, বুদ্ধি, বোধ লোপ পায়। ভালোবাসার মানুষটির কাছে নিজের ব্যক্তিত্বকে ধরে রাখা যায় না। আমি জানি, আমার এমনটাই হয়েছে। এতেও আমার বিন্দুমাত্রও দুঃখ নেই, আফসোস নেই। একমাত্র আমিই জানি, আমি কী রত্ন পেয়েছি। অন্যরা তার খোঁজ জানবে কীকরে?

আমার কিছু ছবি এই প্যাকেটে আছে। জানি, আমার ছবি তুমি রাখবে না, এমনকি ফটোফ্রেম থেকেও খুলে ফেলে দেবে। অবশ্য, যার কোনো অস্তিত্বই তোমার জীবনে নেই, তাকে ফ্রেমবন্দি করেই বা কী হবে? আমি ইচ্ছে করেই তোমাদের ৪টা পারিবারিক ছবি প্রিন্ট করে আমার ছবিগুলোর সাথে দিয়ে দিয়েছি। ফ্রেম থেকে আমার ছবিটা ফেলে দিয়ে ওখানে পছন্দমতো তোমাদের একটা ফ্যামিলি পিকচার সেট করে দিয়ো। তোমাদের কিছু পারিবারিক ছবি অনেকদিন ধরেই মনে-মনে চাইছিলাম। কিছুতেই খুঁজে পাচ্ছিলাম না। অবশেষে সৃষ্টিকর্তা মিলিয়ে দিলেন। তুমি কী মনে করে যেন তোমাদের অনেকগুলি পারিবারিক ছবি আপলোড করলে। তোমার ছোটবেলার সবগুলি ছবি আমি প্রিন্ট করিয়েছি। রোজ রাতে ওগুলোকে বালিশের পাশে রেখে ঘুমাতে যাই। একটু পরপরই আমার ছোট্ট প্রিয়কে চুমু খাই, শাড়ির আঁচল দিয়ে মুছে দিই। কী যে ভাল লাগে, তা বলে বোঝাতে পারবো না! তোমার সবকিছুকেই আমার অনেক মায়া লাগে। তোমার আপনজনদেরকেও অনেকবেশি আপন মনে হয়। ওদের জন্যও প্রার্থনা করি। আমার একটা চিঠিও তুমি নাওনি। অনেকগুলিই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে। আমার কাছে যেগুলি ফেরত এসেছে, তার ১৪টি এই প্যাকেটে দিয়ে দিলাম। পড়ো, কেমন? কী লিখেছিলাম, খুলেও আর দেখিনি। যা লিখেছিলাম, তা-ই পাঠিয়ে দিলাম। আমাকে অনেক ফালতু বেহায়া বাজে ভাবছ তো, তাই না? একদিন তোমার পাশে তোমাকে ভালোবাসার কাউকে পাবে না। সেদিন হয়তো এই রাস্তার মেয়েটার কথা, তার পাগলামি, তার ভালোবাসার কাজগুলি তোমাকে একধরনের যন্ত্রণাদায়ক সুখ দেবে। মনে আছে, তোমার কাছ থেকে আমি তোমার ব্যবহৃত একটা টিশার্ট চেয়েছিলাম? তুমি ‘পাগলী’ বলে হেসে তোমার গায়ের হলুদ টিশার্টটাই খুলে দিয়েছিলে। ওটা এখনো আছে আমার কাছে। ওটা মাথার পাশে রেখে ঘুমাই। তোমার ঘামের মিষ্টি গন্ধ ওতে মিশে আছে। আমি ওটা গালে ছোঁয়াই, ওটার ঘ্রাণ নিই। তখন কেমন যে লাগে, বলে বোঝাতে পারবো না। মনে হতে থাকে, তুমিই আমায় জড়িয়ে ধরেছ! ওটার স্পর্শ পেলে পর্যন্ত আমার মাতাল-মাতাল লাগে। আমি ওটা কখনো ধোবো না। আমার জীবনে পাওয়া শ্রেষ্ঠ উপহার এ হলুদ টিশার্ট। হয়তো তোমার কাছ থেকে এর চাইতে বেশিকিছু পাওয়ার যোগ্য আমি নই।

তোমাকে আমার চাইতে বেশি ভালো আরো অনেকেই বাসে—এটাও নাহয় মেনে নিলাম। কিন্তু আমার ভালোবাসা তো শুধু আমিই দিতে পারবো, তাই না? তুমি যে পুরো পৃথিবীর আর কারো কাছ থেকেই আমার ভালোবাসা পাবে না। আর কেউ না জানুক, আমি তো জানি, আমার ভালোবাসা কতটা নিষ্পাপ, নির্মল, পবিত্র। চিঠিটা পেলে আমাকে দয়া করে একবার জানিয়ো। না জানালে অনেক টেনশনে থাকব। এই পার্সেলে অনেকগুলো জিনিস আছে তো, তাই। তোমার ৪টা চুল আমার কাছে আছে। আমি সেগুলি একটা কৌটোয় রেখে দিয়েছি। কখনো-কখনো কৌটো খুলে ওগুলো ছুঁয়ে দেখি, চুমু খাই, চোখে ছোঁয়াই। ওগুলো ধরলে আমি তোমার অস্তিত্ব টের পাই। ওই অনুভূতির যে কী সুখ, তা আমি তোমাকে ভাষায় প্রকাশ করতে পারবো না। চুলগুলি কখন নিয়েছি, খেয়াল করেছিলে, প্রিয়?

আরো অনেককিছু বলার আছে। অনেক অনেক কথা। সব বলতে পারিনি। অতৃপ্তি রয়ে গেছে মনে। যদি আমার ঈশ্বর আমাকে সুযোগ দিয়ে বলতেন, “তুই তোর জীবনের শেষ মুহূর্ত পর্যন্ত ওকে নিয়ে লিখে যাবি।” তবুও কোনোদিনই আমার কলম থামত না। তোমায় আমি এতো অনুভব করি, এতোটাই অনুভব করি, তোমায় নিয়ে লেখার জন্য মাত্র একটা জন্ম বড় কম সময় মনে হয়। যতদিন কলম ধরতে পারবো, তোমাকে নিয়ে আমি ততদিনই অবিরাম লিখে যেতে পারবো। একটুও ক্লান্তি আসবে না আমার শরীরে। মনের অনন্ত তৃষ্ণা শরীরের সমস্ত ক্লান্তি ভুলিয়ে রাখবে। প্যাকেটে একটা মোমবাতি আর দিয়াশলাই আছে। আমার ছবিগুলি পুড়ে ফেলো। তোমার ভালোবাসায় আমার জীবনটা এমনিতেই জ্বলেপুড়ে ছাই হয়ে গেছে। যদি ছবি পুড়তে না পারো, তবে বুঝবো তুমি আমাকে করুণা করছ; আর পুড়তে পারলে বুঝবো, তুমি আমাকে ভালোবাসো।

ভাল থেকো।

ইতি—

তোমার টিকটিকি

আর শোনো, তোমাকে সাদা পোশাকে অনেক শুভ্র লাগে। মেরুন পাঞ্জাবিতে অনেক মানায়। আমার প্রিয় রঙ হলুদ আর সবুজ। একটা হলুদ পাঞ্জাবি পরবে? শুধু আমার জন্য? তোমার জন্য দুটো হলুদ পাঞ্জাবি সেলাই করেছি। খুব যত্ন করে সুতোয় নকশা তুলেছি। আবার পাঠাই? ফেরাবে নাতো? তোমার মুখে খোঁচাখোঁচা দাড়িগোঁফ অনেক দারুণ লাগে। ওরকম একটা পার্মানেন্ট লুক বানাও না! দেখবে, তোমাকে অনেক অভিজাত দেখাবে।

ঋভুকে মনে পড়ছে। সত্যিই, ভালো না বাসলেই ভাল…… বড় কষ্ট ভালোবাসায়।