জীবনে উপেক্ষিতা (২য় অংশ)

আসলে, এসবকিছুই মনের ভ্রম। এছাড়া আর কিছুই নয়। আমি চাই না, এমন ধারণা আমার মনে আসুক। জানো, মাঝে-মাঝে প্রিয় মানুষের জন্য নিজেকে ভুল প্রমাণ করতে অনেক শান্তি লাগে। মনের কিছু ধারণা মিথ্যেই হোক। যাকিছু সত্য হলে বেঁচে থাকাটা বড় কষ্টের হয়ে দাঁড়ায়, তাকিছু মিথ্যে হয়েই থাক। জীবনে কখনো-কখনো নিজেকে পরাজিত দেখতেও খুব ভাল লাগে, যদি সে পরাজয় হয় প্রিয় মানুষের জন্য। আচ্ছা প্রিয়, আমার সাথে এতো খারাপ ব্যবহার করতে তোমার বিবেক তোমাকে তাড়ায় না? তুমি যখন আমাকে বল, “তোমার সাথে আমার কী?” তখন আমার খুব কষ্ট হয়। মনে হয়, পৃথিবীর সবচাইতে খারাপ মেয়েটি হলাম আমি। কিন্তু আমি তো কোনো খারাপ মেয়ে নই। অন্যায় যদি কিছু করে থাকি, তবে তা হল, আমি তোমাকে ভালোবাসি। তোমার সুখের আর দুঃখের বিশ্বস্ত সঙ্গী হতে চাই। পৃথিবীর সবচাইতে দুর্ভাগ্য সে দুজন মানব-মানবীর, যাদের একই বিছানায় পাশাপাশি থাকতে হয়, অথচ যাদের মধ্যে কোনো সুন্দর সম্পর্ক নেই। তবে আমরা কি তেমন কিছু, প্রিয়? না না, আমরা দুজন তো এমন নই। আমরা তো খারাপ নই। তবে আমরা কেন এমন করি? প্রিয়, তুমি ফোনে অন্য মেয়ের কাছে সুখ খুঁজে বেড়াও নাতো? তোমাকে বড় ভাল ভাবতে ইচ্ছে করে। কিন্তু কত ভাবনা যে মাথায় আসে! প্রিয়, তোমার মনে আছে, এমন কোনো রাত ছিল না যে রাতে তুমি আমাকে আদর করনি, যে রাতে আমাকে চুমু না খেয়ে তুমি ঘুমিয়ে পড়েছ। সেই তোমার এখন আর আমাকে লাগে না। আমার সাথে দেখা করার পর আমাদের সবকিছু কীভাবে যে এলোমেলো হয়ে গেল! আমাদের দেখা হলো, আমরা পরস্পরকে অনুভব করলাম, এরপর আমরা অচেনা হয়ে গেলাম। আমাকে তোমার প্রয়োজন নেই, কিন্তু তোমাকে যে আমার বড় প্রয়োজন! প্রতিটি মুহূর্তে তোমাকে অনুভব করি আমি, তোমাকে কাছে চাই। তুমি ছাড়া আর কারো কাছে আমার কিছুই চাইবার নেই। আর কারো প্রতি বিন্দুমাত্রও আকর্ষণ নেই আমার। আর কারো কথা মাথায় এলে কোনো অনুভূতি জাগে না আমার। কেউ আমার সাথে ভাব জমাতে চাইলে চরমভাবে অপমান করি। তুমি যদি কখনো ‘তুমি’ না হয়ে অন্যকেউ হয়ে আমার সাথে কথা বলতে চাইতে, তবে বুঝতে পারতে, আমি কেমন। আমার ফেসবুক আর ফোনের ব্লকলিস্টও কিন্তু খুব ছোট নয়। আচ্ছা, তোমাদের ছেলেদের হৃদয়ের আগেই শরীর জাগে, না? তুমি যখন আমাকে ছুঁড়ে ফেলে দিয়ে কথা বল, তখন আমার ভয় হয় না, নিজেকে অসহায় লাগে। আমি ভাবি, মানুষ এমনও হয়! আমার প্রতি তোমার শুধুই শরীরী অনুভূতি কাজ করে। ঠিক আছে, মানলাম। তাই বলে আমার জন্য তোমার একটুও মায়া, মানবতাবোধ, মমতা কিছুই থাকবে না? তুমি আমাকে গত একটি বছর ধরে অনেক কাঁদিয়েছ। আমার চোখ থেকে পানি ঝরানোর কোনো অধিকার তোমার নেই, তবে দায়বদ্ধতা আছে! আমাকে কাঁদানোর দায়! বাহ্‌ প্রিয়, বাহ্‌! তুমি যখন আমাকে ফালতু বল, তখন অনেক লজ্জা পাই, ওই সময়টাতে আমার বারবার মনে পড়ে আমি নিজেই আমাকে তোমার সামনে সস্তাভাবে উপস্থাপন করেছি, আমাকে সহজলভ্য করে দিয়েছি তোমার কাছে, আমার জীবনের সব ঐশ্বর্যের খোঁজ তুমি জানো। তোমার সাথে শিরোনামহীন সম্পর্কের আড়াই বছর পূর্ণ হল আজ! দিন কত সহজে চলে যায়, না? আগে ভাবতাম, ভালোবাসা সম্পর্ককে সহজ করে। এখন বুঝি, ভালোবাসা নিজে একটা জটিল জিনিস, ওর কাজই হলো, সবকিছুকে জটিল করে দেয়া। আমার খুব বিশ্বাস করতে ইচ্ছে করে, তুমি এমন ছিলে না, তুমি এখনো এমন নও। সত্যিই কি আমি তোমার কাছে সবসময়ই এমন বিরক্তিকর ছিলাম? তুমি কি আমাকে কাছে টানোনি? আমি তবে কেন এমন পাগলামি করছি? আমি তো এমন নই!

তুমি জানো, মানুষের জীবনে সম্পর্কের স্বীকৃতি যে কতটা প্রয়োজন? সম্পর্কের বৈধতা না থাকাটা কতটা অসম্মানের? আমি তোমার কাছে শুধুই সম্মান চেয়েছি, শুধুই সম্মান। অথচ, তুমি আমাকে দিনের পর দিন অবহেলা করে গেছ, তুচ্ছতাচ্ছিল্য করেছ। আমি ভুলে গিয়েছিলাম, তুমি অন্য ধর্মের। তুমি তো স্রষ্টারই সৃষ্টি। কিন্তু তুমি পৃথিবীতে এসে প্রথমেই তোমার স্রষ্টাকে ভুলে গেছ। তুমি কখনোই তোমার স্রষ্টার ভালোবাসা অনুভব করতে পারোনি। সেখানে তাঁর অন্য সৃষ্টির প্রতি ভালোবাসা কীভাবে অনুভব করবে? সত্যিই আমি ভুলে যাই, আমার প্রতি তোমার শুধুই শরীরের টান কাজ করে। আমি আমার স্রষ্টার নামে শপথ করে বলতে পারি, যদি কখনো তোমার শরীরী মিলনের ক্ষমতা শেষও হয়ে যায়, আমি তোমার পাশে থেকে যাবো। শুধু তুমি পাশে থাকলেই এই ছোট্ট একটা জীবন দিব্যি কেটে যাবে। আর কিছু নয়, স্রেফ তোমার কাছে বসে তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থাকতেও আমার মনে অনেক সুখ জাগে। তোমাকে ভালোবাসি, সত্যিই অনেক ভালোবাসি। রোজ সকালে বিছানা ছাড়ার সময় আমার খুব কষ্ট হয়, খুব কান্না পায়। চোখের পানি যখনতখন গড়িয়ে পড়ে, সেটা তোমার ছবির ওপর। তোমার ছবি বালিশের নিচে রেখে ঘুমাই, তোমাকে চুমু খাই, গালে ছোঁয়াই। আমার রুমের দেয়ালে তোমার ১৮টা ছবি আছে। ড্রয়ারে, বিছানার নিচে, ব্যাগে, সবজায়গাতেই অসংখ্য তুমি ছড়িয়ে আছ। তুমি আমার সবখানেতেই, আবার কোনোখানেই নেই। ব্যাপারটা খুব কষ্ট দেয়! হাতের এতো কাছেই আছ, অথচ হাত বাড়ালেই নেই! প্রিয়, একটা মেয়ে তোমাকে কষ্ট দিল বলে পৃথিবীর সব মেয়েকেই তুমি যা-তা ভাবা শুরু করে দিলে? অনেক কাঁদিয়েছ আমায়, আমাকে ডেকে এনে অপমান করেছ। তুমি যখনই ডেকেছ, তখনই ছুটে গেছি। এর কি কোনো দামই নেই তোমার কাছে? এভাবে করে আমাকে আর কাঁদিয়ো না। আমার হৃদয়ের দাবি তুমি কী সহজেই এড়িয়ে গেছ! তবে জেনে রেখো, আমার চোখের পানির দায় তুমি কখনোই এড়াতে পারবে না। আমার চাইতে বেশি ভালো কোনোদিন না কেউ বেসেছে তোমায়, আর না কেউ বাসবে। আমার মতো করে এতোটা বিশ্বাস কিংবা সম্মান আর কেউই কোনোদিন করতে পারবে না তোমাকে। সত্যিই পারবে না। তুমি আমাকে ভুল বোঝো, অনেক বেশিই ভুল বোঝো। যে মেয়েটা তোমাকে সবচাইতে বেশি ভালোবাসে, তাকে তুমি এতোটা অবিশ্বাস কর! দূরেই যদি আমার জায়গা, তবে কেন টেনেছিলে কাছে? দুঃস্বপ্নেই যদি রাখবে আমায়, তবে কেন স্বপ্ন দেখতে শেখালে? তুমি আমার সাথে যেমন কর, তাতে তো অবিশ্বাস তোমাকে আমার করার কথা। কই, আমি তো কোনোদিনই তোমার সম্পর্কে এতটুকু সন্দেহও মনে জায়গা দিইনি! তোমাকে কোনোদিনই অবিশ্বাস করিনি। তুমি যা-ই কর না কেন, তার একটা গ্রহণযোগ্য ব্যাখ্যা দাঁড় করিয়ে ফেলি সবসময়ই! আমি বুঝতে পারি, আমি ভুল করছি, তবু ওই ভুলেতেই আমার যতো আনন্দ! আমি জানি না, কেন তোমার প্রতি এতো অগাধ বিশ্বাস আমার! তুমি যদি বল, আমার মাথায় শিং গজাচ্ছে, আমি হয়তো চুল সরিয়ে শিং খুঁজতে থাকবো। খুঁজে না পেলে খুব হতাশ হয়ে ভাববো, আমার কোথাও ভুল হচ্ছে! ভালোবাসা মানুষকে অন্ধ করে দেয়, প্রিয়। সেই অন্ধত্বকেই দৃষ্টি ধরে নিয়ে জীবন কাটায় ভালোবাসাগ্রস্ত মানুষ।

জানো, তোমার কাছে নিজেকে প্রকাশ করতে কখনোই এতটুকু ভয়ও মনের মধ্যে কাজ করেনি। একটুও না, প্রিয়, একটুও না! জানি না, কেন! সেদিন তোমার বন্ধুর বাসা থেকে বের হওয়ার পর তুমি যখন আমাকে একা চলে যেতে বলেছিলে, তখন বুকের মধ্যে চরম রক্তক্ষরণ শুরু হয়ে গিয়েছিল। মনে হচ্ছিলো, আমি পৃথিবীর সবচাইতে নোংরা মেয়ে। কতটা যে অসহায় হয়ে তাকিয়েছিলাম তোমার চোখে। অমন নিঃস্পৃহ দৃষ্টিতে কেউ কাউকে চলে যেতে বলতে পারে! আবার এমন কাউকে যাকে কিছুক্ষণ আগেই সে চুমু খেয়েছে! কীভাবে পারলে তুমি! একটু ভাবো তো! অচেনা শহর। পরিবারের বাইরে এটাই প্রথম আমার একলা পথচলা, তাও একজন অচেনা মানুষের সাথে! (‘অচেনা’ বলছি বলে রাগ কোরো না, প্রিয়! সেদিনই তো তোমায় প্রথম দেখলাম, সেই অর্থে বলেছি! অবশ্য, সেদিনের পর থেকে তুমি নিজেই কেন জানি অচেনা হয়ে গেছো!) ভাবতে পারো, তুমি কী করেছ আমার সাথে? যাকে সময়ের চাইতে, আমার সকল সুখের চাইতে বেশি ভালোবসেছি, সেই মানুষটাই কিনা আমাকে রাস্তায় একলা ছেড়ে দিল! অথচ হবে হয়তো, এখন তুমি কাউকে দিনের আলোয় হাত ধরে বাড়ি পৌঁছে দাও। প্রিয়, তুমি ভালোবেসে অনেককেই রাত জাগিয়েছ, সে খোঁজ তোমার কাছে আছে। কষ্ট দিয়ে কতজনকে রাত জাগিয়েছ, সে খোঁজ কোনোদিন নেয়ার চেষ্টা করেছ? ভালোবেসে নয়, শুধু কষ্ট দিয়ে চিনে নাও নিজের আপনজনকে! যে কিনা সত্যিই ত্যাগ করতে জানে, ভালোবাসার জন্য, তোমার শান্তির জন্য, নিজের সুখের জন্য, তাকেই কাঁদাও তুমি! এ তোমার কেমন খেলা? তোমার সাথে আমার অনেক কথা আছে। অনেক অনেক অনেক কথা। যখন বল, “তোমার সাথে আমার কীসের কথা?” তখন আমি পুরোপুরি অনুভূতিশূন্য হয়ে যাই। তোমার সামনে এলে আমি সবকিছুই ভুলে যাই, কথা পর্যন্ত বলতে পারি না। আমি কিছুই বলতে পারি না মানে এই নয় যে, আমার কিছুই বলার নেই। প্রিয়, সেদিন যদি কেউ আমাকে তোমার সাথে তীর দিয়ে গেঁথে দিত, তবে তোমাকে ছাড়া আমার এক মুহূর্তও বেঁচে থাকতে হতো না। যদি পৃথিবীটা স্থির হয়ে যেত, তবে সেদিনটা পালিয়ে যেতে পারতো না। যদি জানতাম, যে হাতটা নাড়িয়ে আমায় বিদায় দিচ্ছ, সে হাত আর কখনোই আমি দেখতে পাবো না, তবে কি আমি তোমার হাতটা ছাড়তাম তখন? কোন হাতধরাটা শেষ হাতধরা, সেটা আগে থেকে বুঝতে পারলে কেউ কি হাত ছাড়ত? প্রেমিকাদের হতে হয় পুলিশের মতো, প্রেমিক কখন চোরের মতো পালাচ্ছে, সে খোঁজ রাখতে হয়। আচ্ছা, ভালোবাসা কি তাহলে জোরজবরদস্তি করে ধরে রাখার জিনিস? তুমি তো কথা দিয়েছ, সারাজীবনই আমার সাথে সম্পর্ক রাখবে, তবে কেন এই কয়দিনেই তোমার সারাজীবনের সমীকরণ মিলিয়ে দিলে? তুমি কেন অন্য মেয়ের কাছে সুখ খুঁজে বেড়াও? এমন তো নয় যে তুমি ওকে বিয়ে করেছ! তবে কি আমি অস্পৃশ্য হয়ে গেছি তোমার কাছে? আমি কি তোমাকে সুখ দিতে পারিনি? নাকি, তুমিই সুখটা খুঁজে নিতে পারোনি? নাকি, সুখের সংজ্ঞাটা নিজের সুবিধা মতো বদলে দিয়েছ? সুখের রঙটা আর আগের মতো নেই তোমার চোখে, তাই না? বল না, আমার অপরাধটা কী!

আচ্ছা প্রিয়, আমাকে বলবে, সেদিন আমার অপরাধটা কী ছিল যেদিন তুমি আমার আইডিটা ব্লক করে দিয়েছিলে? তোমার টাইমলাইনে কত মানুষ কত আলতুফালতু জিনিস লিখে পোস্ট করে। সেগুলির অনেকগুলিই তোমার সম্মান নষ্ট করতে যথেষ্ট। নিরপেক্ষ অনেক মহলেও সেসব নিয়ে আলোচনা সমালোচনা হয়। অথচ আমি মজা করে একটা পোস্ট দিলাম আর ওটা তোমার এতটাই আত্মসম্মানে লাগল যে আমাকে ব্লক করে দিলে? আমার ক্ষেত্রেই তোমার যতো অসহিষ্ণুতা! আর কত মেয়েকে দেখি তোমার ওয়ালে তোমাকে নিয়ে কত বাজে কথা লিখে, এমনকি ফেসবুকের বিভিন্ন জায়গায় তোমাকে নিয়ে নোংরা কথাবার্তাও বলে। ওদেরকে তুমি কত সাদরে গ্রহণ করতে পারো! বাহ্‌ বাহ্‌! প্রিয়, আপনজন চিনতে ভুল করছ। শুধু আপনজনই নয়, তুমি মানুষ চিনতেই পারো না। একদিন বুঝবে, কাঁচকে হীরা ভেবে কাছে টেনে নেয়ার যন্ত্রণা কত! সেদিন সামনে অসীম শূন্যতা ছাড়া আর কিছুই পাবে না হাতড়ে! আচ্ছা, তুমি আমাকে বল না আমার এমন কী অন্যায় ছিল যে আমার প্রতিটি নাম্বারই ব্লক করে দিতে হল তোমার? আমার কণ্ঠ শুনলেই নাম্বার ব্লক করে দাও। আমার সামনে পড়তে চাও না তুমি। তুমি কি এতটাই অপরাধী? তুমি কি এমন কোনো কাজ করে ফেলেছ যে আমার সামনে দাঁড়াতেও লজ্জা পাও? আমার সাথে কথা বলতে তোমার মধ্যে অপরাধবোধ কাজ করে? প্রিয়, আমি কি ধরে নেবো, তুমি আমার সকল বিশ্বাস নষ্ট করে দিয়েছ? আমার সম্মানের স্থানটুকুও নষ্ট করে ফেলেছ? না প্রিয়, প্লিজ এমনকিছু কোরো না। আমাকে যা ইচ্ছা কর, তবু তুমি তোমাকে নষ্ট করে দিও না। আমি চাই না, কোনো মেয়ে তোমার দিকে ইঙ্গিত করে কিছু বলুক। তুমি যেমনই হও, কেউ তোমাকে নিয়ে বাজে কিছু বললে আমি সহ্য করতে পারি না। আমি তোমাকে ভালোবাসি, তোমাকে ঘৃণা করতে চাই না।

আমার খুব ইচ্ছে করে, তোমার সামনে বসে তোমাকে জিজ্ঞেস করি, তুমি কেমন আছ? তবে, মুখে কোনো কথা থাকবে না। কোনোকিছুই না বলে তোমার সাথে আমার রাজ্যের কথোপকথন চলবে অনন্তকাল ধরে। আমরা দুজন পৌঁছে যাবো সেই নক্ষত্রবীথিকায়, যেখানে পৃথিবীর সকল ভাষা স্তব্ধ হয়ে আছে। যেখানে গেলে কেউ তোমাকে আর খুঁজে পাবে না, তুমি শুধুই আমার হয়ে যাবে চিরকালের জন্য। তোমাকে ঘিরে এমন অনেক অদ্ভুত ইচ্ছে আছে আমার। তুমি হয়তো জানো না, একজন সৎ মানুষকে ভালোবাসার মাঝে অনেক তৃপ্তি থাকে। থাকে অনেক প্রশান্তি। বুকে হাত দিয়ে বলতে পারি, তোমাকে ভালোবাসার ক্ষেত্রে আমার সততা ও আন্তরিকতা শতভাগ অকৃত্রিম। আমি গভীর তৃপ্তি পাই যখন তোমাকে অনুভব করি। যখন তোমাকে মন ভরে ভালোবাসতে ইচ্ছে করে, তখন খুব শান্তি লাগে। তোমাকে ভালোবাসায় আমি অনেক শুদ্ধতা অনুভব করি। কেন জানি না, তোমার আদর, প্রতিটি স্পর্শ আমার কাছে অনেক পবিত্র মনে হয়। তোমাকে খুব বিশ্বাস হয়। জানি না কেন এতোটা ভরসা তোমার প্রতি আমার। তুমি যখন আমার সাথে খারাপ ব্যবহার কর, আমাকে ধাক্কা মেরে দূরে সরিয়ে দাও, বল না প্রিয়, স্মৃতিরা একটুও কি নাড়া দেয় না তোমায়? তোমার রুচিতে বাধে না আমার সাথে রাস্তার মেয়েদের মতো আচরণ করতে? আমার তো প্রতি মুহূর্তেই পুরনো দিনগুলির কথা মনে পড়ে। সেসব মনে এলে কী যে ভীষণ পুলকিত হই! কখনো-কখনো লজ্জায় লাল হয়ে যাই, প্রায়ই তোমাকে পাওয়ার জন্য ব্যাকুলতা জাগে। আবার এমনও হয়, অপমানে মাথা নিচু হয়ে যায়। তোমার আদরের একটু ছোঁয়া আমার অনুভূতিগুলোকে কতভাগে ভাগ করে দেয়! প্রতিটি ভাগই আমার বড় প্রিয়! আমি তো সেই মেয়ে যে কিনা জানে, তোমার কোন সময়ে কী দরকার। আর কারো সেটা জানার কথা নয়। সে জায়গাটুকু তুমিই আমাকে দিয়েছ। আমি জানি, কেমন করে যত্ন করলে তুমি ভাল থাকো। তবে কেন তোমার হৃদয়ের গহীনে যার স্থান, তাকে এতটুকু সম্মান দিতে পার না? এতোটা অমানবিক তুমি কেমন করে হলে? একটুও মায়া কি আমি তোমার কাছে আশা করতে পারি না? প্রিয়, মানুষের জীবনে শরীরই কি সব? আমাকে বলবে, মানুষ কি জৈবিক তাড়নায় বেঁচে থাকে, নাকি ভালোবাসায়? শরীরের চাহিদা কি মানুষ সারাজীবনই পূরণ করতে পারে? পারে নাতো! কিন্তু ভালোবাসা তো সারাজীবনই থেকে যায়।

সেদিন তোমাকে ফোন করলে তুমি আমাকে থার্ডক্লাস চিপ স্লাট বলে গালি দিলে। আমি এমন কী করেছিলাম যে আমাকে অমনটা শুনতে হল? আমি এমন অনেককিছুই করতে পেরেছি যা আমি আগে কখনো ভাবতেও পারতাম না। তুমি যখন জাপানে ছিলে, তখন একদিন বলছিলে, দেখি চলে আসো তো! সত্যি বলছি প্রিয়, আমার পাসপোর্ট ভিসা থাকলে আমি একাই চলে যেতে পারতাম! প্রেম মানুষকে বেপরোয়া দুঃসাহসী করে দেয়। আমার মাথায় শুধু এইটুকুই কাজ করে, আমাকে তোমার কাছে যেতে হবে। তোমাকে দেখলে যে কী শান্তি লাগে, প্রিয়! যখন তোমার ছবির দিকে তাকিয়ে থাকি, তখন মনে হয় এই অবস্থাতেই কাটিয়ে দিতে পারবো ঘণ্টার পর ঘণ্টা। তোমাকে ভালোবাসার পর আমার মধ্যে একধরনের সাহস আর শক্তি জন্মেছে। আর তুমি এসব কথা কোনোদিনই বুঝতে পারলে না। এটা পুরোপুরিই তোমার ব্যর্থতা। তোমার এই এক জীবনে হয়তো এতো-এতো মেয়ের পদচারণা হয়েছে যে, কাকে কোথায় স্থান দেবে, কাকে রাস্তার মেয়ে বলবে, কাকে গুরুত্ব দেবে, সে জ্ঞানটুকুও হারিয়ে ফেলেছ। আসলে ভালমন্দের অনেক জ্ঞান আছে তোমার। কিন্তু তুমি তো মানুষ! সব কাজ তো আর ঠিকঠাক করতে পারবে না। তুমি ভাবো, তুমি যা কর, সবই ঠিক কর। আর এমন ভাবনাই তোমার সবচাইতে বড় ভুল। যারা তোমার সব ভাবনাতেই তোমাকে সমর্থন দিয়ে যাবে, নিশ্চিত জেনে রেখো, ওরা হল নির্বোধ। নির্বোধের কাছে ভাল কিছু আশা করা যায় না। কালকে ফোনে তুমি আমার সাথে সত্যিই রাস্তার মেয়ের মতো ব্যবহার করেছো। আমার কেমন লেগেছে, সে অনুভূতিটা আর তোমাকে বলবো না, শুধু এইটুকু বলবো যে, সয়ে গেছে। তুমি যখন খারাপ ব্যবহার কর, তখন তোমার আদর আর ভালোবাসাকে অনেক-অনেক বেশি করে স্মরণ করি। আর অমনিই নিমিষেই কীভাবে যেন তোমার সকল দুর্ব্যবহার হাওয়া হয়ে যায়। তুমি তো সেই ছেলেটাই তাই না, যে কিনা আমাকে বলেছিল আমি সবকিছু ছেড়ে তোমার পাশে চলে আসলেও কখনো আমাকে ছেড়ে যাবে না, দূরে সরিয়ে দেবে না? আমাকে কথা দিয়েছিলে না, আমাকে ছেড়ে কোথাও যাওয়ার প্রশ্নই আসে না? আর আজকে তুমি সেই ছেলেটাই বলছ, আমাকে বিয়ে করার তো প্রশ্নই আসে না! একই মানুষ, অথচ শব্দ প্রয়োগের ধরনে কতো দূরত্ব তৈরি হয়ে গেছে! এমন বৈচিত্র্য আনতে তুমিই পারো, একমাত্র তুমিই অনেককিছু পারো! আমি তো তোমার জন্য সবকিছু ছাড়তে রাজি! তুমি যা করতে বল, আমি তা-ই করতে রাজি। তবে তুমি কেন আমার জন্য কিছুই করতে পারো না?

আচ্ছা, তুমি আমার চিঠিটা পড়ছ তো? নাকি, না পড়েই ফেলে রেখেছ? নাকি, ডাস্টবিনে ছুঁড়ে ফেলেছ? আমার কোনোকিছু দেখলেই তোমার মেজাজ খারাপ হয়ে যায়, আর সাথেসাথেই ছুঁড়ে ফেলে দিতে ইচ্ছে করে, না?

জানো, এই চিঠিটা যখন লিখছি, তখন বাইরে অনেক চাঁদের আলো! ভীষণ সুন্দর করে চাঁদ আলো ছড়ায়। জানো, তোমার ভালোবাসার কাছে চাঁদের আলোও অনেক কম পড়ে যায়। এমন চাঁদনি রাতে যদি আমরা পাশাপাশি থাকতাম! না না, পাশাপাশি নয়, মুখোমুখি। সাগরের অদূরে কোনো কুঁড়েঘরে কিংবা কোনো পাহাড়িয়া রিসোর্টের খোলা বারান্দায় মুখোমুখি তুমি আর আমি! প্রিয়, তোমার ভালোবাসা অনেকবেশি সুন্দর। সুন্দর নয় শুধু, অনেকবেশি মাতালকরা। জানো, তোমার চুম্বনগুলোর শব্দ বজ্রপাতের মতো মনে হয়, একেবারে বুকের মধ্যে গিয়ে তীক্ষ্ণ তীরের মতো বিঁধে। কারো সাথেই মোবাইলে এখন একদমই কথা বলতে পারি না। এটা কেমন যেন একটা মানসিক সমস্যার মতো হয়ে গেছে। দুইতিনদিন অন্তর-অন্তর দুইতিনটার বেশি কল রিসিভ করি না। মোবাইল ফোনটা হাতে নিলেই তোমার সুবচন আর দুর্বচন এই দুইয়ের সাংঘর্ষিক ক্রিয়া-প্রতিক্রিয়া আমার সকল ভারসাম্যকে চোখের কোণায় জমিয়ে দেয়। কারো সাথে কথা বলার সময় তোমার চেহারা চোখের সামনে চলে আসে। আমি অন্যকিছু ভাবতে পারি না। সত্যি প্রিয়, আমার সব আবেগ, অনুভূতি, সব, সবকিছুই কোথায় যেন হারিয়ে গেছে! এক তুমি ছাড়া আর কোনো আবেগ আমাকে স্পর্শ করতে পারে না। যখন তুমি বল, “আমি তোমাকে আদর করবো না, করলে তুমি আমাকে বিয়ে করার জন্য ঝামেলা করবে।” তখন আমার কী মনে হয়, জানো? মনে হয়, তাহলে তুমি নিশ্চয়ই এমন কাউকে আদর করবে, যে কিনা কোনোদিনই তোমাকে বিয়ে করতে চাইবে না। এটা কি আদৌ সম্ভব, প্রিয়? যে তোমার আদরে অভ্যস্ত হয়ে যাবে, সে তোমার আদর ছাড়া বাঁচবে কীকরে? অমনভাবে বাঁচতে পারে কেবল রূপোপজীবিনীরা। ওরা না ভালোবাসা নেয়, না ভালোবাসা দেয়। আর যদি কখনো এমনকিছু হয়েও যায়, তবে ভালোবাসার দায়টুকু কিছু কাগুজে দাবির কাছে মুখ থুবড়ে পড়ে থাকে। যার বাঁচতে ভালোবাসার প্রয়োজন হয় না, সে বড় ভাগ্যবান। প্রিয়, আমি তোমায় করজোড়ে মিনতি করছি, তুমি এমনটা কোরো না। এমন সম্পর্কে ভালোবাসা থাকে না। নিজেকে কখনো নষ্ট করে দিয়ো না। আমি সব কষ্ট হাসিমুখে সহ্য করতে পারবো, শুধু তোমার বিপথে যাওয়াটা সহ্য করতে পারবো না। প্রয়োজনে তোমাকে নিজহাতে খুন করে ফেলবো, এরপর নিজেকেও শেষ করে দেবো, তবুও তোমাকে নষ্ট হতে দেবো না। অসহায় ভেজাচোখে নিজের ভালোবাসাকে নষ্ট হতে দেখা, তাকে বাঁচাতে না পারা—এর মতো ব্যর্থতা জীবনে আর নেই।

এই ভালোবাসার অনুভূতিটা যেকোনো সময়ে যেকোনো মানুষের প্রতি হতে পারে। কখনো সন্তানের প্রতি বাবা-মা’য়ের, কখনো ভাইবোনের পরস্পরের প্রতি, কখনো বা বন্ধুর প্রতি। অন্য যেকোনো ধরনের সম্পর্কের মানুষের প্রতিও এই ভালোবাসাটা কাজ করতে পারে। যার প্রতি একবার ভালোবাসা জন্মে যায়, চোখের সামনে তার নষ্ট হয়ে যাওয়াটা সহ্য করা অসম্ভব। আমি তোমাকে জানি, তোমাকে খুব ভালোভাবে বুঝি। আমি তো সেই মেয়ে, যে তোমায় ছেড়েযাওয়া প্রতিটি নিঃশ্বাসের অর্থও বোঝে। তাই বড় ভয় হয়। ভালোবাসা মানুষকে ভীরু করে, সাহসীও করে। তোমাকে যে ভালোবাসি। সত্যি প্রিয়, অনেকবেশি ভালোবাসি! এতোটা ভালো কেউ তোমায় আর কখনো বাসেনি, বাসবেও না কোনোদিনই। মাঝে-মাঝে স্বপ্ন দেখি, তুমি আমায় আদর করছ। অনেকসময় দেখি, অন্য মেয়েকে আদর করছ। এটা নিয়ে খারাপ লাগা কাজ করে, কিন্তু আবার তা ভুলে যাই। তুমি তো শুধুই আমার, অন্য কেউ তোমাকে কেন পাবে? নিজের সাথে কাউকে কল্পনা করলে ঘুমের ঘোরে অন্য কারো সাথে সেই মানুষটাকে নাকি দেখা যায়, এমনটা শুনেছি। সেদিন দেখলাম, একটা সুন্দর পাহাড়ের ওপর চমৎকার রিসোর্টের বাগানের চারিদিকে তুমি যেন কার হাত ধরে ঘুরে বেড়াচ্ছ। আমি তোমাদের কাছে যেতে চাইছি, কিন্তু ওরা আমায় যেতে দিচ্ছে না। এরপর দেখলাম, তুমি ওকে নিয়ে রুমে ঢুকে গেলে। আমি বাইরে থেকে সজোরে দরোজা-জানালা ধাকাচ্ছি, তুমি খুলছ না, কী কী সব যেন বলে আমাকে খুব বকছ। এরপর আমি কাঁদতে-কাঁদতে পাহাড় থেকে নিচে নেমে এসেছি। তোমার সেই পাহাড়ের পাশে আরেকটা বড় পাহাড় ছিল। ওই পাহাড়টা তোমার পাহাড়ের ওপরে ধসে পড়বে। এটা ভাবতেই ঘুমের মধ্যেই কান্না করতে-করতে ঘুম ভেঙে গেছে। একবার তোমায় নিয়ে একটা ভয়ংকর মাডফ্লাডের স্বপ্ন দেখেছিলাম। সেই রাতের পর পরপর কয়েক রাত ভয়ে ঘুমাতে পারিনি। পুরোই এলোমেলো হয়ে ছিলাম। তোমার জন্য নিজের জীবনের বিনিময়ে প্রার্থনা করেছি। জানো, তোমাকে নিয়ে আমি যা ভাবি, কিংবা যা স্বপ্নে দেখি, তার অনেককিছুই তোমার জীবনে সত্যি হয়। তাই তোমাকে নিয়ে খারাপ কিছু দেখলে নিজেকেই শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। যখন দেখি কিছু স্বপ্ন আর বাস্তবতা একই সরলরেখায় চলছে, তখন অনেক অবাক লাগে। মনে অনেক প্রশ্ন জাগে। ভাবছ, এতো কথা কেন বলছি তোমাকে নিয়ে? তোমাকে নিয়ে আমি সারাদিন বলতে পারবো। আর কিছু নয়, স্রেফ তোমার চোখদুটোর দিকে তাকিয়ে থেকেও এই জীবনটা পার করে দিতে পারবো। আমি এসবের কোনোকিছুই তোমাকে কখনো বলতে পারি না। কেন পারি না? তুমি যে শুনতে চাও না! তুমি কেন আমার কথা শুন না? তুমি কার কথা শোনো তাহলে? অবশ্য, তোমার পৃথিবীটা তো আর আমার পৃথিবীর মতো এতো ছোট নয়। তোমার শোনার আরো অনেককিছু অনেকের কাছেই রয়েছে। আমাকে সময় দেয়ার সময় কোথায় তোমার? দেখো, যেদিন তোমার সময় থাকবে, সেদিন এমন করে বলার কেউ থাকবে না। মানুষ প্রায়ই তার নিজের জীবন সম্পর্কে ভুল সিদ্ধান্ত নেয়। তুমিও নিচ্ছ। তুমি অন্য সবার মতোই ভুল পথে চলছ। আমিও ভুল করেছি। তোমাকে শুধরে দিতে গিয়ে নিজেই অবিরাম ভুলের পেছনে ছুটে যাচ্ছি, ভুল আমায় আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে ফেলেছে। যে সত্য মরীচিকা মাত্র, সে সত্যের পেছনে সবকিছু ভুলে এমন পাগলের মতো করে ছুটে চলা—-ভুল ছাড়া আর কী?

আচ্ছা প্রিয়, তুমি কি কোনোদিনও আমায় স্বপ্নে দেখেছ? আমি তোমাকে রোজই স্বপ্নে দেখি। কয়েক মুহূর্তের জন্য চোখ বন্ধ করলেও তুমি চলে আস চোখের সামনে। খুব জানতে ইচ্ছে করে, আর কেউ তোমাকে আমার মতো করে স্বপ্নে দেখেছে কখনো? ওই মেয়েটা দেখেছিলো কখনো? একদম আমার মতো করে? এতোটা নিবিড়ভাবে তোমাকে অনুভব করেছে সে? বুঝতে পারছ না, আমি কী বলছি? আমি ওই মেয়েটার কথা বলছি, যার ভালোবাসায় তুমি হাজার লোকের ভিড়েও নিজেকে একা ভাবো, যেমন করে আমি একা হয়ে আছি তোমার ভালোবাসার অসহ্য ঘায়ে? তোমার ওই প্রেমিকা বড় ভাগ্যবতী, তাই না? ও তোমাকে তোমার মতো করে, নিজের মতো করে পেয়েছে। সত্যিকারের ভালোবাসার সুবাস অনুভবে ছড়ায়। ও তোমার পাশে নেই, অথচ ওর জন্য তোমার ভালোবাসা সারাবেলা সারাক্ষণ। ও এতো দূরে থেকেও তোমার ভালোবাসা পায়। এমন পবিত্র অনাবিল ভালোবাসা কয়জনের ভাগ্যে জোটে, বলো? তুমি কি কখনো ভাবো, তোমার ওই প্রেমিকার সব সৌন্দর্য শুধুই তোমার জন্য? সে কি ভেবেছিল, তোমার সব ভালোবাসা শুধুই তার জন্য? ভাবেনি। আর ভাবেনি বলেই হয়তো তোমার সব ভালোবাসা আজো ওর জন্যই রয়েছে। আর তুমি অমন করে ভেবেছ বলেই হয়তো তার সৌন্দর্য শুধুই তোমার হয়নি। বিধাতা কখনো-কখনো বড় কৃপণ, নির্দয় আর রহস্যময় হয়ে ওঠেন। যাকিছু আমার নয়, কখনোই আমার হবে না, তাকিছু পাওয়ার নেশায় নিজেকে শেষ করে দিতে ইচ্ছে করে। মেয়েটার কতো ভাগ্য যে কোনো কষ্ট ছাড়াই ও তোমার এমন নিখাদ ভালোবাসা পেয়েছে! তোমার ভালোবাসা এতোটাই নিয়েছে যে তোমাকে ও ছাড়া অন্য সবাইকে ভালোবাসতে ভুলিয়ে দিয়েছে। তাই মনে আসে, আমার জীবনের আজকের এই অবস্থার জন্য তুমি দায়ী নও, ওই মেয়েটাই দায়ী। আমার কাছে তোমার অনেক মর্যাদা। থাকবে না-ই বা কেন, বলো? দেড় বছরের সম্পর্ক যে! হোক তা শিরোনামহীন, তবু তো গভীর! জানি না, এমন গভীরতায় যেতে পারে কতজন! তোমাকে নিয়ে আমার অনুভূতির গভীরতা অনেক। আফসোস, তোমার কাছে আমার অস্তিত্বের ব্যাপ্তি বালু কণামাত্রও নয়। তোমার ওই প্রেমিকার জীবনে তোমার চুমুটা প্রথম চুমু ছিল না, তেমনি আমিও তোমার চুমুর প্রথম গ্রহীতা নই। তাই ও যেমনি ওই চুমুর দুর্নিবার আকর্ষণটা টের পায়নি, তেমনি তোমাকেও আমাদের চুমুর গভীর তৃপ্তি কখনোই স্পর্শ করে না। কিন্তু আমি কী করবো, বলো? তোমার ওই নিবিড় চুম্বন যে আমাকে ততোটাই অসহায় করে রেখেছে, তোমার যতোটা অসহায়ত্ব আজো রয়ে গেছে ওর কাছে। এখনো সেই বিশুদ্ধ শিহরণ আমার শরীরে মনে জাগলে আমি এলোমেলো হয়ে যাই। কেন করলে আমার সাথে অমন? আমার মনে হয়, তোমার ওই প্রেমিকাকে তোমার ক্ষমা করে দেয়া উচিত। তুমি যা অন্যায় করেছো আমার সাথে, তার তিল পরিমাণও ও তোমার সাথে করেনি। ক্ষমা কর দাও ওকে। ক্ষমা যদি ওকে করতেই না পারো, তবে আমার কাছ থেকে ক্ষমা আশা কর কীভাবে?

প্রিয়, আমি তোমাকে এতো ভালোবেসেও তোমার মনে একটুও জায়গা করতে পারিনি। তুমি আমাকে তোমার মাথায়ও জায়গা দাওনি। তোমার কোনো অনুভূতিতে, কোনো সুরে, কোনো লেখায় আমি নেই। যেটুকু সময় তোমার আবেগের সঙ্গী হয়েছিলাম, শুধু সেটুকু সময় আমি তোমার মাঝে ছিলাম। (আদৌ রেখেছিলে কি আমায় সেই সময়টুকুতেও?) এরপর আমায় ভুলে গেছো। দূরে ছুঁড়ে ফেলে দিয়েছ ব্যবহৃত টিস্যুটার মতো করে। অবশ্য, কেনই বা আমায় মনে রাখবে? কতো বড় চাকরি তোমার, কতো বড় মানুষ তুমি, কতো মানুষ তোমার সান্নিধ্য চায়! সেখানে আমাকে রাখার জায়গা কই? কেন আমি তোমাকে চাইবো? কী অধিকার আমার? জানো, একজন নারীর জীবনে সবচেয়ে বড় সম্মান কী? যখন কোনো ছেলে তাকে বিয়ের প্রস্তাব দেয়। নারীর জীবনে বড় পাওয়া কী, জানো? যখন সে তার সঙ্গীর ভালোবাসা পায়। সবচেয়ে বড় অসম্মান কী, জানো? যখন তার প্রতি তার প্রিয় মানুষটির কেবল দৈহিক চাহিদার অনুভূতি কাজ করে আর তাকে একাধিক পুরুষের সামনে বিবস্ত্র হতে হয়। বিশ্বাস কর প্রিয়, এর চাইতে বড় অপমান একজন নারীর জীবনে আর কিছু নেই। যখন একজন নারীকে অন্য একজনও পুরুষের বাহুলগ্না হতে হয়, এর চাইতে বড় লজ্জা তার জন্য আর কিছুই হতে পারে না। নারীরা পেট আর পিঠের কাছে কতো অসহায়, তাই না প্রিয়? জেনে রেখো, আমার মনে তোমার ভালোবাসা সবসময়ই জাগ্রত। প্রতিটি মুহূর্তে তোমার স্মরণ ছাড়া আমার মনে, ধ্যানে, জ্ঞানে, হৃদয়ে, ঠোঁটে সত্যিই আর কিছুই আসে না। তোমার নামটাই আমার ভাবনায় উচ্চারিত হয়ে যায় অহর্নিশ। তোমার ওই প্রেমিকা কি তোমাকে এমন করে ভালোবাসত? আচ্ছা, তোমার বুকে কি সে মাথা রেখেছিলো? প্রিয়, তোমার কাছে কি শরীরই সব? সেটা পাওয়ার জন্য তো আমি অনিবার্য নই, তাই না? তোমার কাছে তো অনেক শরীর আছে, প্রিয়। তোমার ওই মনে কি কখনোই কারো মনকে ধারণ করবে না?

প্রিয়, তোমার বুকের ওই জায়গাটা কিন্তু শুধুই আমার। ভেবে দেখো, তোমার ভালোবাসা আজ সেই মেয়েটার জন্য, যে কিনা অন্য কারো বুকে মাথা রেখে পরম সুখে আছে। তুমি কি তাকেই ভালোবাসবে যে হয়তো অন্য কারো বুকে মাথা রেখে বুক বদলানোর খেলায় মাততে তোমার কাছে আসবে? কিংবা অন্য কারো স্বপ্ন ভেঙে অথবা ভীষণ কষ্ট পেয়ে তোমার কাছে আসবে একবুক নিরুপায় ঘৃণা বহন করে? আর যে তোমার বুকে মাথা রেখেছে, তোমার হৃদকম্পন গুনে নিয়েছে পরম নির্ভরতায়, তার জন্য তুমি কী রেখেছ? তুমি আমায় শিরোনামহীন অসংজ্ঞায়িত সম্পর্কে রেখে দিয়ে দিনের পর দিন ঠাণ্ডা মাথায় খুন করেছ, আর আমি হয়ে গেছি তোমার অবৈধ অভ্যস্ততার দাসী! বাহ্‌ প্রিয়, বাহ্‌! এই তোমার শিক্ষা, এই তোমার বিবেক, এই তোমার আভিজাত্য! না আমায় তুমি ভালোবাসো, না আমি তোমার প্রেমিকা, না আমি তোমার বন্ধু। আমি সারাজীবনই বয়ফ্রেন্ড গার্লফ্রেন্ড এই শব্দ দুটিকে ঘৃণা করে এসেছি। অথচ, কী দুর্ভাগ্য আমার! আমি তোমার তুচ্ছ গার্লফ্রেন্ডও হতে পারলাম না। কোনো স্বীকৃতিই নেই আমার! এতোটাই নিকৃষ্ট সম্পর্কে আমি তোমার সাথে আবদ্ধ! নিজেকে আজ কারো স্রেফ প্রমোদপুতুল ভাবতে হচ্ছে! আমি কিছুতেই এটা সহজভাবে মানতে পারি না। রক্তে এখনো তথাকথিত অত্যাধুনিকতার ছোঁয়া লাগেনি যে, তাই। প্রিয়, তুমি আমায় অসম্পন্ন, অপূর্ণ, অতৃপ্ত করে রেখেছ। আমি ভাবি, তুমি তো সে মানুষ, যে মানুষটা একটা রাতও আমাকে আদর না করে থাকতে পারতে না। সেই তুমি এখন কীকরে রাতের পর তার কাটিয়ে দাও আমায় ছাড়া? আমায় আর তোমার লাগে না বুঝি? অথচ দেখ, আজো শুধুই তোমার ভাবনা ছাড়া আর কিছুই আমার মাথায় আসে না। সত্যিই আর কোনোদিন আসবেও না। বোঝো, মানুষের জীবনে কোনো সম্পর্কের স্বীকৃতি কতটা প্রয়োজন? বিশেষ করে একজন নারীর জীবনে? তুমি বুঝবে না, কোনোদিনই বুঝবে না। মানুষকে যে খেলনা ভাবে, সে মানুষের সম্মান বুঝবে কীভাবে? মানুষ বড় মায়ার ধন, বড় আদরের ধন। তাকে এতো অবহেলা কোরো না। এ বড় পাপ, প্রিয়!

জানো প্রিয়, আমি তোমাকে প্রায় সব পুরুষের মধ্যেই দেখি! কেমন করে? সবার মাঝে তোমার ছায়া খুঁজি। কেউ তোমার মতো হাঁটে, কেউ তোমার মতো কথা বলে, কেউ তোমার মতো হাতটা নাড়ায়, কেউ তোমার মতো তাকায়, কেউ তোমার মতো চুল আঁচড়ায়, কেউ তোমার মতো হাসে। তবু তাদের কাউকেই আমার ভাল লাগে না। তাদের কারো শরীরে যে তোমার ঘ্রাণটা নেই! তাদের কারো মনে যে তোমার রঙটা নেই। তোমার ঘামের অপূর্ব গন্ধটা যে শুধু তোমার কাছে গেলেই পাবো! কেউ আমায় ভালোবাসার মধুর কথা শোনাতে এলে আমার তাকে অসহ্য লাগে। আমাকে মনে-মনে ফালতু বলছ তো? বল বল! কী আর হবে? আমি তো বাজেই! নাহলে কেন এমন বেহায়া হয়ে তোমার জন্যই তিলেতিলে মরছি? আমি আজ তোমার কাছে ফালতু হয়ে গেছি। অথচ, একদিন আমি ছিলাম তোমার হৃদয়ের রাণী। আমার সব ঐশ্বর্য দুইহাতে তোমায় দিয়েছি, তোমার কাছে নিজেকে সমর্পণ করেছি, আমার পুরো পৃথিবী জুড়ে শুধুই তুমি, তোমার জন্য যেকোনো সম্পর্ক ত্যাগ করতে পারি হাসতে-হাসতে। যখন আমার সাথে তুমি স্বার্থের বাঁধনে জড়িয়ে ছিলে, তখন কী প্রেমময় মানুষ হয়ে আমায় সবকিছু ভুলিয়ে শুধুই তোমার করে রাখতে। যা ছিল তোমার কাছে স্বার্থ, তা ছিল আমার কাছে ভালোবাসা, আমার পৃথিবী, আমার জীবন! এই ফালতু বেহায়া মেয়েটা তোমাকে যতোটা ভালোবেসেছে, এর কণামাত্রও ভালো আর কেউ কোনোদিন তোমায় বাসবে না, দেখো। সত্যিকারের প্রেম, ভালোবাসা, আন্তরিকতা অনেক কষ্টে মেলে। একবার তা হারিয়ে ফেললে আর কখনোই পাওয়া যায় না। তুমি যদি ভাবো শরীরই ব্যক্তিজীবনের সবকিছু, তাহলে অবশ্য কিছুই বলার নেই আমার। এটা আগে বুঝিয়ে দিলে, স্পষ্ট করে বলে দিলে তোমার ছায়াটাও মাড়াতাম না আমি। কী করে বুঝব আমি, তুমি যে এমন স্পর্শের ফেরিওয়ালা? কেন মিথ্যে স্বপ্নের বেসাতিতে আমায় এমন করে পাগল করলে? কী ক্ষতি করেছিলাম তোমার?

তুমি বলেছিলে, যে জিনিস মানুষ খুব সহজে পেয়ে যায়, সে জিনিসের কদর মানুষ করতে জানে না। আমি তো তোমাকে সহজে পেয়েছি, চাওয়ার আগেই তুমি ধরা দিয়েছ আমার হৃদয়ে। কই, আমি তো কখনোই তোমার অমর্যাদা করিনি, তোমাকে অনাদরে রাখিনি। তবে কি তুমি আমায় সহজে পেয়েছিলে? মনে তো পড়ে না। নাকি, ধরে নেবো, তুমি সহজলভ্যই? আনন্দ, আনন্দ, আর পৈশাচিক আনন্দ তোমার। তোমার সারা শরীর আর মন জুড়ে কেবল সুখ আর সুখ! কতো হাসি ছড়িয়ে আছে তোমার জীবনে! অমন প্রবল আলোর ছটায় তুমি অন্ধ হয়ে থাকো! আমি যে আঁধারেই বেশ ছিলাম। কেন আমায় আলো চেনালে? চেনালেই যখন, কেন আবার আঁধারেই ছুঁড়ে ফেলে দিলে? আমার কাছে আমার ভালোবাসার মানুষটির মূল্য আমার চোখের চেয়ে, আমার শরীরের চেয়ে অনেক অনেকবেশি। তোমার মতো আকাশচুম্বী সম্পদ আমি চোখে দেখিনি, তাই সম্পদের সাথে ভালোবাসার মানুষের তুলনা কীভাবে করে, তা আমার জানা নেই। আমার কাছে পৃথিবীর সব ঐশ্বর্য একদিকে আর তুমি অন্যদিকে। তোমরা পুরুষরা নারীর ভালোবাসা অনুভব করার ক্ষমতা আর বোধশক্তি তুচ্ছ যৌনতার মাঝে হারিয়ে ফেলেছ। তুমি কখনোই ভালোবাসতে পারবে না। ভালোবাসলে কেমন আনন্দ হয়, সে খোঁজ তুমি কোনোদিনই পাবে না। তুমি ভুলে গেছো, কীকরে ভালোবাসতে হয়। কেউ একজন তোমাকে ভোরের আলো দেখিয়ে চলে গেছে, আর তোমার সারাবেলা অবেলায় কেটে গেছে। তোমার জীবনে গোধূলির রঙ ফ্যাকাসে হয়ে গেছে, চাঁদের আলোর স্নিগ্ধতা তোমায় আর ছোঁয় না, মিষ্টি রোদ্দুর আর তোমার চোখে খেলে না, বৃষ্টির ঝুম্‌ শব্দ তোমায় আর দোলায় না, অজানা আবেগের স্রোতে ভাসিয়ে নিয়ে যায় না। আচ্ছা, বৃষ্টি তোমার সত্যিই আর ভাল লাগে না? বৃষ্টির রঙ এখনো আমায় মাতাল করে দেয়। তোমার সাথে এক বর্ষার সন্ধ্যায় পরিচয়। মনে আছে তোমার? সেদিনটা কেমন করে বিষণ্ণ হয়ে ছিল! তোমার কণ্ঠে বিষণ্ণ প্রকৃতি দুঃখ ভুলে খিলখিল শব্দে হেসে উঠলো! তোমার ভয়ংকর সুন্দর কণ্ঠস্বর আমার পৃথিবীটা আচ্ছন্ন করে রেখেছে সেই সেদিন থেকে। আচ্ছা প্রিয়, তুমি কখনো বৃষ্টিস্নাত সন্ধ্যায় আকাশে চাঁদ উঠতে দেখেছ? শরতে এমনটা দেখা যায়। সেদিন উঠেছিল। ভুলে গেছো তো, না? সেদিনের আগ পর্যন্ত আমি শীতকে ভালোবাসতাম, এখন আমি তোমায় ভালোবাসি, তাই শরতকে ভালোবাসি। শরত আমায় জীবনের সকল সুখ আর যন্ত্রণা একসাথে দিয়েছে। আচ্ছা প্রিয়, আমি যদি তোমায় আকাশের চাঁদটা হাতে এনে দিই, তবে আমায় ভালোবাসবে? আচ্ছা চাঁদ না, জোছনা, জোছনা। যদি তোমার হাতের মুঠোয় জোছনার সব নরোম আলো গলে যায় আমার জন্য, তবে কি আমায় ভালোবাসবে? কী চাও তুমি, বলো? রোদ্দুর? বৃষ্টি? নাকি, বিকেলের শেষ আলোটা? কী পেলে আমায় সত্যি সত্যিই ভালোবাসবে? যদি কোনোদিন ধ্রুবতারা নেমে আসে তোমার ঘরে, সেদিন আমায় পাশে ডাকবে? আমি তোমার চাঁদ হবো না। চাঁদের কলংক আছে, চাঁদ আছে বলেই অমাবস্যা আছে। প্রতিরাতে আকাশে চাঁদের দেখা মেলে না। উঠলেও রোজ-রোজ পূর্ণিমা এসে আমাদের ভাসিয়ে নিয়ে যায় না। চাঁদ উঠুক আর না-ই উঠুক, তাতে তারার কী এসে যায়? সে তার অল্প আলোয় আকাশের বুক ভরিয়ে রাখে। কখনো যদি সাদাকালো মেঘ এসে আকাশ ছেয়ে ফেলে, তখনো কি তারা আকাশ ছেড়ে পালায়, বলো? জেনে রেখো, তোমার ভালোবাসার আকাশে আমি চাঁদ নইগো, ধ্রুবতারা। ধ্রুবতারার মতো আমিও তোমার চলার পথের সাথী হবো। তোমার সুখের নয় শুধু, তোমার দুঃখেরও ভাগটাও নেবো। কোনোদিনই তোমাকে হারাতে দেবো না। আমি জানি, তোমার ভালোবাসা অনেক সুন্দর। অনেক আদর করে ভালোবাসতে পারো তুমি। প্লিজ তোমার এই সুন্দর ভালোবাসাটা নষ্ট করে দিয়ো না।

যাকে তুমি সারাজীবনের সঙ্গী করে নেবে, তাকে অনেক ভালোবাসবে, তাই না? ওকে একটুও কষ্ট দেবে না। অনেক মায়া করবে ওকে, না? প্রায়ই ভাবি, ওই মেয়েটা কতই না ভাগ্যবতী! কোনো কষ্ট ছাড়াই তোমাকে পাবে সারাজীবনের জন্য। ও তোমার সন্তানের মা হবে। কত ভাগ্য নিয়ে পৃথিবীতে এসেছে সে! মেয়েটাও তোমাকে অনেক ভালোবাসবে, খুব আদর করবে, যত্ন করবে। সবসময়ই তোমাকে খুশি রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করবে। কখনোই তোমার অবাধ্য হবে না। তুমি যা যা খেতে পছন্দ কর, তা তা বেশি-বেশি রান্না করবে। তুমি বাইরে থেকে ঘরে ফিরলে তোমার মোজা খুলে দেবে, তোমার শার্টের গন্ধ নেবে বুক ভরে। তোমাকে কফি বানিয়ে দেবে, তোমার কাপড়চোপড় বারান্দায় শুকোতে দেবে। ময়লা কাপড়গুলি অনেক যত্নে ধুয়ে, শুকিয়ে, ইস্ত্রি করে রাখবে। তোমার বইগুলি অনেক যত্ন করে ঝেড়েমুছে পরিষ্কার করে রাখবে। তুমি কোথাও যাওয়ার আগে তোমার ব্যাগ গুছিয়ে দেবে, তোমার সব জিনিস, যখন যা দরকার, তখন তা খুঁজে দেবে। সবসময়ই তোমার পছন্দের পোশাক পরে থাকবে। তোমার পছন্দের রঙের শাড়ি পরবে, কপালে থাকবে লালটিপ। তুমি যাকিছু খুব পছন্দ কর, সেসবকিছুকে সেও অনেক ভালোবাসবে। আমার মা কী বলে, জানো? ফুলগাছকে মানুষ যেমনি যত্ন করে, ভালোবাসার মানুষটিকেও ঠিক তেমনিই যত্নে রাখতে হয়। ভালোবাসার মানুষ আর সবচাইতে প্রিয় জিনিস একইরকম। যত্ন করতে হয়, আদর করে রাখতে হয়। তোমার বউ তোমাকে অনেক যত্নে রাখবে, তাই না? অনেক খেয়াল রাখবে তোমার প্রতি। তোমার শরীরের দিকে সব ধরনের খেয়াল রাখবে। তোমার অসুখ হলে তোমাকে স্নান করিয়ে দেবে, আদর করে খাইয়ে দেবে, ওষুধটা মুখে তুলে দেবে। খুব ভোরে বাসা থেকে বের হতে হলে, ও তোমার আগে উঠে তোমার জন্য নাস্তা বানিয়ে রাখবে, তোমার স্নানের গরম জলটা করে দেবে, তাই না? ও তোমার পরিবারের অনেক খেয়াল রাখবে। শুধু তোমার খুশির জন্য যা যা করতে হয়, শত কষ্ট হলেও তার সবকিছুই করবে। তোমাকে ভালোবেসে হাসিমুখে তোমার সব ভুলকে ফুলের মালা করে গ্রহণ করে নেবে। তোমার ছোটছোট স্বপ্নগুলিকে অনেক ভালোবাসবে। যাকে ভালোবাসা যায়, তার স্বপ্নগুলিকেও অনেক ভালোবাসতে হয়। পুরো পৃথিবীও যখন তোমার স্বপ্নের কথা শুনে বিদ্রূপ করবে, তখনো ও তোমার স্বপ্নেই বাঁচবে। তুমি ওর স্বপ্নের মানুষ হয়ে বাঁচবে। তোমাকে ও কত আদরে রাখবে! এই কথাগুলি লিখতে-লিখতে আমার দুচোখ ঝাপসা হয়ে আসছে, অশ্রুর বড়-বড় ফোঁটা কাগজে লেপটে আছে, হাত কাঁপছে, মাথা ঝিমঝিম করছে, সোহাগিনীর সুখের কথা ভেবে আমার মধ্যে প্রচণ্ড ঈর্ষা জন্মাচ্ছে, তবুও তোমাদের দুজনের জন্য একটুও অশুভকামনা মনে আসছে না। সত্যি বলছি প্রিয়, আমি চাই না, তোমরা খারাপ থাকো।

আচ্ছা, তুমিও তো ওকে অনেক আদর করবে। অনেক মায়া থাকবে ওর জন্য। ওকে অনেক জায়গায় ঘুরতে নিয়ে যাবে। ওর যা দরকার, চাইবার আগেই তা ওর সামনে এনে হাজির করবে। হুট্‌ করে ওর জন্য পছন্দ করে শাড়ি কিনে নিয়ে এসে ওকে সারপ্রাইজ দেবে। শাড়ি পরার সময় ওর শাড়ির ভাঁজ ঠিক করে দেবে। তুমি যেখানেই যাবে, ওকে সঙ্গে নিয়ে যাবে। ও তোমার হাত ধরে ঘুরে বেড়াবে, একসাথে স্নান করবে তোমরা, ওর শরীর পরিষ্কার করে দেবে, ওর গা মুছে দেবে, ওকে পোশাক পরিয়ে দেবে। শীতকালে ও তোমার গায়ে লোশন মেখে দেবে, তুমিও ওকে দেবে। আচ্ছা, তুমি কি ভেজাচুল পছন্দ কর? কখনো ওর চুলের জলটা শুকিয়ে দেবে তোয়ালে দিয়ে, না? ওর চুল আঁচড়ে দেবে। অফিস থেকে ফেরার সময় ওর পছন্দের চকোলেট নিয়ে আসবে। মাঝে-মাঝে সারারাত পাশাপাশি বসে চকোলেট খাবে। আমি হলে তো তোমার মুখের ভেতর থেকে তোমার চিবানো চকোলেট খেয়ে ফেলতাম। ও কি এমন করে খাবে? তুমি যখন লিখবে বা বই পড়বে, ও তখন তোমার পাশে চুপ করে বসে থাকবে। তোমার দিকে অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে থাকবে। তুমি কখনোই ওর চোখে পুরনো হবে না। খুব সকালে যখন তুমি ঘুমিয়ে থাকবে, ও তখন তোমার পবিত্র মুখটি দেখে ওর দিন শুরু করবে। তোমার কথা ভেবে-ভেবে দারুণ খুশিতে কাটবে ওর প্রতিটি মুহূর্ত। বলতে পারো, একজন নারীর জীবনে এর চাইতে বড় প্রাপ্তি আর কী হতে পারে? জানো, কদমফুল আমার অনেক প্রিয়; রজনীগন্ধাও। তোমারও কি কদমফুল ভাল লাগে? বর্ষায় অফিস থেকে ফেরার পথে যদি কদমফুল চোখে পড়ে, ওর জন্য নিয়ে যেয়ো, কেমন? দেখবে, তখন আমার কথা তোমার ঠিক মনে পড়বে। ও অনেক খুশি হবে তোমার এই উপহার পেয়ে। আবার কখনো বকুলফুলের মালা নিয়ে ওর খোঁপায় পরিয়ে দেবে। কত আদর, তাই না? কত মায়া, তাই না? মেয়েরা বেশিকিছু চায় না গো! এই একটুখানিতেই ওদের চোখে খুশি ঝলমল করে। এই অল্প সুখের দাম যে অনেকখানি! ও তোমার সোহাগে সোহাগিনী হবে। যখন ও তোমার সন্তান গর্ভে ধারণ করবে, তখন তুমি ওকে কত যত্ন করবে, তাই না? ওকে খাইয়ে দেবে, ঘুমিয়ে পড়লে ওর মাথার কাছে বসে থাকবে, তোমার প্রিয় গানগুলি গুনগুন করতে-করতে ওর মাথায় হাত বুলিয়ে রোজ সকালে ওর ঘুম ভাঙাবে। কখনো অভিমান করলে শতবার বলবে, ‘ভালোবাসি’, ও ফিক্‌ করে মিষ্টি হেসে তোমার বুকের ভেতর মুখ লুকাবে আর তুমি মুচকি হেসে তোমার ডান কাঁধে ওর মাথাটা রাখবে। তখন ওর চুলের স্রোতে তোমার হাতের আঙুলগুলি হারিয়ে যাবে। ওকে বলবে, আমাদের মেয়েটা যেন ঠিক তোমার মতন সুন্দর হয়! মনে করে বোলো, কেমন? দেখো, ও যে কী খুশি হবে! ও আরো কত-কত আদর পাবে তোমার কাছ থেকে! ওর সাথে গল্প করতে-করতে চট্‌ করে বলে দিয়ো তো, ‘ভালোবাসি!’ দেখবে, হঠাৎ জেগেওঠা সুখের নদী ওকে কেমন করে ভাসিয়ে নিয়ে যায়! তোমার মন, তোমার ভালোবাসা অনেক-অনেক সুন্দর। অনেক সুন্দর করে ওকে ভালোবাসবে। ওই মেয়েটা কতই না ভাগ্যবতী, ও তোমার সন্তানের ‘মা’ ডাক শুনবে! ওর আর কী লাগবে জীবনে, বলো? বিশেষ-বিশেষ দিনগুলিতে সুন্দর করে সেজেগুজে তোমার বাম বাহুতে নিজেকে সঁপে দিয়ে লালপেড়ে সাদা শাড়ি পরে চুলে বেলিফুলের মালা জড়িয়ে তোমার পাশে হাঁটবে। আর তুমি পড়বে গাঢ় মেরুন রঙের পাঞ্জাবি। পহেলা ফাল্গুনে ও পরবে কালোপেড়ে হলুদ শাড়ি আর তুমি কালো পাঞ্জাবি। তোমাদের অদ্ভুত রকমের সুন্দর দেখাবে! সবাই তোমাদের দিকে তাকিয়ে-তাকিয়ে দেখবে আর বলবে, “কী সুন্দর জুটি! কেমন মানিয়েছে দুজনকে! দেখো দেখো!” এক জীবনে একটা মেয়ের আর কী লাগে, বলো? ওর চাইতে সুখী এই পৃথিবীতে আর কে থাকবে? কত সুন্দর হবে তোমাদের জীবন! সারাক্ষণই ঈশ্বরের কৃপা আশীর্বাদ হয়ে ঝরবে তোমাদের জীবনে!