কেউ যদি কিছু বলে!

যারা আপনাকে পছন্দ করে না, তাদের হারিয়ে দিন। তাদের কথাগুলোকে মিথ্যে করে দিন। ওই মিথ্যেটা করতে হলে আপনাকে সফল হতে হবে। ওই জেদটা মনের মধ্যে রাখুন, ওই আগুনটা মনের মধ্যে জ্বালান। তাদের জ্বালিয়ে পুড়িয়ে ছারখার করে দিন। আপনি যত এগিয়ে যাবেন, তারা তত জ্বলবে। জ্বলতে দিন! আপনি যত পিছিয়ে যাবেন, তাদের তত আনন্দ লাগবে। দরকার কী তাদের আনন্দিত করার!




জানেন তো, আমরা বাঙালি জাতটা শেষ হয়ে গেছি 'পাছে লোকে কিছু বলে!' ভেবে ভেবে! আমরা ভাবি আর ভাবতেই থাকি, কে কী বলল, কে কী বলল না! অথচ দেখুন, আপনি কারও খানও না, পরেনও না! কিন্তু আপনি মানুষকে অতিমূল্যায়ন করেন, মানুষের মুখের কথাকে মাথায় রেখে পা ফেলেন। যদি প্রত্যেকের কথাকেই ধরেন, তাহলে জীবনে কখনও কিছু করতে পারবেন না।




এই যে এখন যারা বলছে, মানে প্রতিবেশিরা, বন্ধুবান্ধবরা, আত্মীয়স্বজনরা যে বিভিন্ন উলটাপালটা কথা বলছে, আপনি যখন সাকসেসফুল হবেন, তখন তারাই বলবে, 'হ্যাঁ হ্যাঁ, ওকে তো আমিই এই এই পরামর্শ দিয়েছিলাম। আমার পরামর্শ শুনেই তো সে সাকসেসফুল হয়েছে।' অথচ দেখা যাবে, এরা ভালো কোনও কথাই কখনও বলেনি। 'আমি জানতাম, তাকে দিয়ে হবে। আমি তো সবসময়ই এটা বলতাম, তার বাবাকে বলতাম, তার মাকে বলতাম।' অথচ সে লোকটা কখনও এরকম কিছু বলেনি। আপনাকে নিয়ে নেগেটিভ কথাবার্তা বলেছে, চুপ করে থেকেছে, কিন্তু পজিটিভ কিছু কখনও বলেনি। সফল হয়ে যাবার পর এই টাইপের বন্ধু ও শুভাকাঙ্ক্ষীর অভাব হয় না।




আমি যখন কষ্টে ছিলাম, তখন কারা কারা আমার জন্য দুটো ভালো কথা বলেছে, ওদের চেহারা আমার খুব স্পষ্টভাবে মনে আছে। জানেন‌ই তো, আমরা যখন দুঃখে থাকি, যখন আমরা খুবই বাজে অবস্থার মধ্য দিয়ে যাই, তখন আমাদের জন্য দুটো দয়ার্দ্র কথা খরচ করে, এমন কাউকে আমরা তেমন একটা পাশে পাই না। আমরা কারও কাছেই কিছু চাই না কিন্তু! আমরা কারও কাছে দুইটা পয়সা চাই না, আমরা কারও কাছে কোনও সুবিধা চাই না, কিচ্ছু চাই না! একটা জিনিস চাই শুধু---দুটো ভালো কথা বলুক, আমাকে একটু সম্মান করে কথা বলুক, আমাকে একটু আদর দিয়ে কথা বলুক, একটু স্নেহ-ভালোবাসা দিয়ে কথা বলুক! মানুষ এত‌ই কৃপণ, এইটুকুও কেউ বলে না! দুটো ভালো কথা কেউ কাউকে বলে না! উলটো খারাপ কথা বলে, ঘৃণা ছড়িয়ে দেয়।




এই যে আমি রাস্তায় পড়ে আছি, উঠে দাঁড়ানোর মতো শক্তিটুকুও শরীরে নেই, তবুও কেউ হাতটা বাড়িয়ে বলে না, 'ভাই, ওঠ!' বরং সবাই বলে কী, 'অ্যাই, সর সর সর...! আমি হাঁটব! জায়গা দে, সর...!' তখন আর কেউ হাতটা বাড়াবে না! আমার খারাপ অবস্থায়, কষ্টের দিনগুলোতে আমাকে দুটো ভালো কথা বলেছে যারা, তাদের সংখ্যাটা আমি হাতে গুনে ফেলতে পারব। এক! দুই! তিন! চার! পাঁচ!...না কি আর‌ও কম! আর তো গুনতে পারি না! পাই না তো আর কাউকে! বিপদের দিনে যারা পাশে থাকে, এক তারাই আমাদের প্রিয়জন; বাকিরা সবাই-ই বড়োজোর প্রয়োজন।




অথচ দেখুন, এখন আমার পাশে অনেক মানুষ।‌আমাকে ভালোবাসেন বলে দাবি করেন অনেক মানুষ। আমি তো বুঝি, তাদের তেমন কেউই আমাকে আসলে ভালোবাসে না। ওদের কথা, ভাই, আমি আপনাকে অনেক ভালোবাসি। আমাকে অমুক হেল্পটা করুন। এইসব ধান্দাবাজদের আমি চুপচাপ দেখি আর হাসি। আমি তো বুঝি, আগামীকাল আমার চাকরি না থাকলে তখন কেউই থাকবে না পাশে! আমি তো বুঝি, আগামীকাল আমি অসুস্থ হয়ে পড়ে থাকলে কেউই পাশে আসবে না! আমি কিন্তু খুব ভালো করেই বুঝি এই জিনিসগুলো! বুঝি না যে তা কিন্তু না!




আপনি ভাবছেন, পাছে লোকে কিছু বলে! বিভিন্ন মানুষ বিভিন্ন কথাবার্তা বলছে, সেগুলো আপনার কানে আসছে! তারা কেউই আপনাকে খাওয়াও না, পরায়ও না! আপনি ওদের কারও খানও না, পরেনও না! তাই তাদের কারও কথা শোনার কোনও দরকার নেই। তারা এখন বলছে, আপনি যখন কিছু-একটা হয়ে যাবেন, তখনও বলবে, বলতেই থাকবে! এবং তারা কখনও কিছু করতে পারবে না। মনে রাখবেন, যারা লোকের পিছনে লেগে থাকে, তারা কখনও কিছু করতে পারবে না। তারা আপনার পেছনে লেগেই আছে, তার মানে হচ্ছে, তারা স্বীকার করে নিয়েছে, তারা আপনার সামনে যেতে পারবে না। কারণ ওরা তো আজীবন পেছনেই থাকবে।




ভালোই তো হলো! আপনি সামনে এগিয়ে যান না! কোনও অসুবিধে নেই। আর তাদের কথাগুলোকে যদি গুরুত্ব দেন, তবে আপনি কষ্ট পাবেন এবং যে মন্দ কথাগুলো তারা বলছে, সে মন্দ কথাগুলো সত্য হয়ে যাবে! মনে রাখবেন, তারা যে আজ আপনাকে বলছে, আপনি কিছু করতে পারবেন না, কিছু করতে পারবেন না, আমিও এমন কথা শুনেছি বহুদিন! হ্যাঁ, বহুদিন শুনেছি এই কথাগুলো! তখন আমার কাছে মনে হয়েছে, এই পৃথিবীতে সে কাজটা করে দেখানো সবচেয়ে আনন্দের, যে কাজটা, পুরো পৃথিবী বলে, আপনি করতে পারবেন না। যদি কখনও সে কাজটা করে দেখাতে পারেন, সেদিন আপনার চেয়ে আনন্দিত আর কেউই হবেন না। যদি আপনি করতে না পারেন সে কাজটা, তবে যারা আজকে নানান কথা বলছে; বলছে, আপনি কিছু করতে পারবেন না, তাদের কথা কিন্তু সত্য হয়ে যাবে। ফালতু লোকের কথাকে মিথ্যে করে দিতে পারলে অনেক শান্তি লাগে।