ভুল ঘরে থেকো না!

আমি মনে করি, একটা মানুষের যে সুযোগ রয়েছে, একটা মানুষের যে অপশনগুলো সামনে রয়েছে, সে অপশনগুলোর প্রত্যেকটা সে কখনও অর্জন করতে পারে না। বিভিন্ন কারণে পারে না। পারিবারিক কারণে পারে না, ব্যক্তিগত কারণে পারে না, তার হয়তোবা সুযোগই নেই…সেটার জন্য পারে না, তার হয়তোবা সময় নেই…সেজন্য পারে না। মানে বিভিন্ন কারণে সে চাইলেও সবকিছু অর্জন করতে পারে না।




এখন কেউ যদি পাবলিক সার্ভিস জয়েন করার জন্য চেষ্টা করে, তার উদ্দেশে বলি, বিসিএস পরীক্ষা ছাড়াও অনেকগুলো সরকারি চাকরির পরীক্ষা রয়েছে, যেগুলো খুবই প্রেসটিজিয়াস, ক্যারিয়ার প্রস্পেক্ট অনেক ভালো। এখন একটা চাকরির জন্য চেষ্টা করার সময় তার কখনও মনে হতে পারে, এটার জন্য প্রিপারেশন নেওয়াটা আমার জন্য ডিফিকাল্ট, অথবা আমি আদৌ চাইছি না, অথবা ডিফিকাল্ট নয় কিন্তু আমি চাইছি না; কিংবা এমনও হতে পারে, এই চাকরিটা প্রথমে সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম করব, কিন্তু এখন আমার সিদ্ধান্তটা পরিবর্তন করতে হচ্ছে, আমি চাকরিটা করব না।




আবার এমনও হতে পারে, একটা চাকরির জন্য প্রিপারেশন নেবার সময় তার মাথায় হয়তোবা অন্য কোনও প্ল্যান এসেছে, অন্য কোনও এভিনিউ তার সামনে খুলে গেছে, যেটার কথা সে আগে কখনও ভাবেইনি। তো সেক্ষেত্রে তার প্ল্যানটা সে চেইঞ্জ করতে পারে এবং এটা ভালো। সত্যিই এটা খুব ভালো, কেননা যখন আমি একটা বিষয় সম্পর্কে জানলাম, এবং জানার পর যদি আমার মনে হয় যে এটা আমার জন্য নয়, আমি এখানে যেতে পারছি না, তবে যদি আমার সুযোগ থাকে, সময় থাকে এবং ক্ষমতা বা সামর্থ্য থাকে, তাহলে আমি যদি সেখান থেকে সরে আসি, সে প্ল্যানটা থেকে সরে আসি এবং আমি যদি অন্য কোনও প্ল্যান নিয়ে কাজ করি, তবে আমি আপনাদের বলব, আমার সারাটা লাইফ আফসোসে কাটার যে একটা আশঙ্কা ছিল, সেই আফসোসে কাটার আশঙ্কা থেকে আমি মুক্ত হয়ে গেলাম।




তাই বলছি, আপনার যদি শুরুতেই চেইঞ্জ করার সুযোগ থাকে, তবে শুরুতেই চেইঞ্জ করুন। পরে আপনি আর চেইঞ্জ করতে পারবেন না। ওই সময়টা থাকবে না, সুযোগ থাকবে না, সামর্থ্যও থাকবে না। হ্যাঁ, চেইঞ্জ করার অপশন থাকলে চেইঞ্জ করুন। আমি আমার এক বন্ধুকে চিনি, সে বিসিএস কোচিং-এ ভর্তি হয়েছিল, বিসিএসের জন্য খুব সিরিয়াসও ছিল। হঠাৎ করেই, তার মনে হলো, সে কী করছে! সে যেটা করছে, সে সেটা পছন্দ করছে না। সে যখন জানতে পারল, পাবলিক সার্ভিসে জবটা কেমন, তখন সে বুঝল, পাবলিক সার্ভিসে এলে জবটা তার ভালো লাগবে না! আমরা যখন পাবলিক সার্ভিসে জবের জন্য পড়াশোনা শুরু করি, তখন কিন্তু আমরা ৯৮ শতাংশ মানুষই জানিই না, পাবলিক সার্ভিসটা আসলে কেমন, পাবলিক সার্ভিসে কী কী করতে হয়! আমি যে চাকরিটার জন্য পড়াশোনা করছি, সে চাকরিতে আমার কী কী করতে হয় আর কী কী করতে হয় না---এটা কিন্তু আমরা জানি না। এখন কেউ যদি এটা জানার পর তার মনে হয়, এটা আমাকে দিয়ে হবে না, তাহলে ওতে ভুল কিছু নেই। সবাইকে দিয়ে সবকিছু কিন্তু হয় না, এটা আমাদের মেনে নিতে হবে।




তো আমার সেই বন্ধুটা হঠাৎ করেই বুঝেছিল যে, আমি পাবলিক সার্ভিসে চাকরি করতে পারব না। আমার পক্ষে এটা সম্ভব না। তাই বিসিএস-এর যে প্রিপারেশনটা, যে প্রিপারেশনটা আপাতদৃষ্টিতে কঠিন, সেই কঠিনের পথে আমি হাঁটব কি হাঁটব না, সেটা তো অনেক পরের কথা! শুরুর কথা হচ্ছে, আমি চাকরিটাই করতে চাই না। আমি কী করতে চাই? আমি জিআরই পরীক্ষা দিয়ে দেশের বাইরে চলে যাব। আমেরিকায় চলে যাব জিআরই পরীক্ষা দিয়ে। কিংবা আইইএলটিএস পরীক্ষা দিয়ে অন্য কোনও দেশে চলে যাব আমেরিকা যেতে না পারলেও। এবং সে তা-ই করেছিল। এবং সে এখন একটা নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে রিসার্চ অ্যাসিসট্যান্ট হিসেবে কাজ করে, সেখান থেকে কিছু পয়সা পায়। সে বিয়েও করেছে, এক মেয়ের সুখী পিতা। সে ভালো আছে। কিন্তু সে যদি পাবলিক সার্ভিসে আসত, তবে হয়তোবা এই স্যাটিসফেকশনটা সে পেত না, যেটা সে এখন পাচ্ছে।




ইয়োর স্যাটিসফেকশন ম্যাটারস! দ্য লাইফ ইজ ইয়োরস! দ্য ডিসিশন ইজ ইয়োরস! অল দ্য সাফারিংস অ্যান্ড অল দ্য ব্লেসিংস আর অলসো ইয়োরস! আপনার লাইফ এক আপনারই। আপনি লাইফটাকে কীভাবে কাটাবেন, সেটা আপনার সিদ্ধান্ত। আপনি যদি ভালো থাকেন, আপনি থাকবেন। আপনি যদি খারাপ থাকেন, তা-ও আপনিই থাকবেন! আপনার সিদ্ধান্ত ভুল হলে ওটার জন্য আপনি সাফার করবেন। আপনার সিদ্ধান্ত সঠিক হলে, ওটার জন্য আপনি এনজয় করবেন। পুরোটাই কিন্তু আপনার। সবই আপনার সিদ্ধান্তের উপর নির্ভর করেন। আপনি একটু ভেবে দেখুন, কোন ধরনের লাইফ আপনি কাটাতে চান, কোন ধরনের লাইফে আপনি নিজেকে দেখতে চান! সেটা যদি আপনি বুঝতে পারেন, তাহলে আপনি এখন যা-ই করে থাকুন না কেন, তা থেকে বেরিয়ে এসে আপনি যে লাইফটা চাইছেন, সেখানে যাবার জন্য চেষ্টা করুন। যদি একবার অন্য কোনও লাইফে ঢুকে যান, সেখান থেকে সুইচ করাটা সত্যিই ভেরি ডিফিকাল্ট! হ্যাঁ, ভেরি ভেরি ডিফিকাল্ট! সুইচ করা কিন্তু খুব সহজ কিছু নয়! তার চাইতে, শুরুতেই যদি আপনি সুইচ করেন, তবে আপনার জন্য তেমন একটা সমস্যা হবে না। সময়ও নষ্ট হবে না, সুযোগও থাকবে। এটাই আমি মনে করি।