কাউকে আসতে দিয়ো



চাঁদ ঘুমিয়ে।
ওর গায়ের চাদরটি অপূর্ব এক প্রভায় হলদে হয়ে আছে।
চাঁদের এখন ভেসে চলার সময় নয়।
চাঁদ ঘুমোচ্ছে।


কেন আজও আমার অশ্রুগুলিকে আকাশে ভেসে বেড়াতে দেখি?
কেন কোন এক অচেনা প্রতিধ্বনি আজ আমায় এমন তাচ্ছিল্য করেই চলেছে?
আমি তো কখনও চাঁদের হাত ধরে হাঁটিনি,
তবে ওর কীসের এত দর্প?


ঠিক আছে, আজ নাহয় তোমার নামটা নাই-বা নিলাম,
তাতে কী এসে যাবে!
তোমায় শুনতে পাচ্ছি, তুমি আমায় দূর হতে ডাকছ…
আজ আমি তোমার কাছে যাব!
কিন্তু যাব কী করে? রাস্তাটা কি ওই সিঁদুরে-মেঘের দিকে?


আমাদের সম্পর্কের কিছু কারণ ছিল,
তোমার আমার থেকে যাবার কিছু অজুহাত ছিল।
আজ সেসবের কিছুই আর নেই।
হঠাৎ করেই আগুনের বৃষ্টি নামল,
আর অমনিই আমি তুমি দু-জনই পুড়ে ছারখার হয়ে গেলাম!


মানুষ ভিন্ন হলে আবেগও ভিন্ন হয়,
এই সহজ কথাটি মাথায় না এনে
আমি কিনা নিজের সঙ্গেই যুদ্ধে নামলাম!
আমার মন, আমার স্বার্থগুলি, আমার অহম্‌
…সবই ভেঙে গেল একটা একটা করে।
তবে বাকি আর কী রইল?


আজ আমি অর্ধমৃত,
আজ তুমি পূর্ণমৃত,
আজ সম্পর্ক তবু জীবিত!


তোমায় দূর থেকে ছুঁই।
তোমার শেষ অশ্রুবিন্দু বুকের মধ্যে রাখি।
আজ আমরা এবং আমাদের সব কিছু ঝড়ের মধ্যে পড়ে হারিয়ে গেছে।
পুড়তে পুড়তে আজ দু-জনই দুটো মাটির পুতুল, যা একটু আঘাতেই ভেঙে যাবে!


আবেগের সমস্ত ঢেউ আজ শুকিয়ে গেছে।
ওখানে আর জল নেই, কেবলই কিছু ফাঁপা বাষ্প;
ওরাও উড়ে যাবে খুব শিগ্‌গিরই,
চোখ বন্ধ করলেই! একদিন কিছুই আর থাকে না পড়ে।


মনে রেখো,
নিজেকে ভালো রাখতে হবে।
ঘুমিয়ো ঠিকমতো, খেয়ো ঠিকমতো।
গল্প কোরো কারও সঙ্গে, যাকে ভালো লাগে।
অনেক মানুষই ভালো হয়…আমায় চেয়েও!
কাউকে একটু কাছে আসতে দিয়ো…


একদিন আমায় ভুলে যেয়ো।
বয়স বাড়লে ভুলে যেতে হয়।
পুরনো বয়সে আটকে থেকে কী লাভ, বলো?
তোমাকে আমি আর কোনোদিনই
কিছুই জিজ্ঞেস করব না।
কোনও জেরা নয়, কোনও মনোমালিন্যও নয়।
আমাদের মধ্যে আজ আর কিছুই নেই।
তুমি ভালো থেকো, শান্তিতে থেকো।


কোথায় যাচ্ছ? আবার কবে দেখা হবে? আমাকে একটু সময় দেবে?
ভয় পেয়ো না!…মৃত মানুষ এসব কখনও জানতে চায় না।