একুশটা মৃত্যুর পূর্ণতা

যাপিত জীবনের ক্যালেন্ডার থেকে বছর একুশ আজ খসে পড়ল, তোমাকে দেখি না; বেভুল পথে বছর বাইশের আগমন!
নিভৃতে চিঠি লিখে-যাওয়া ওই দুটো চোখ দেখি না আর, কতকাল হলো বলতে পার? বছর একুশ!




ক্লাসের ফাঁকে বুড়িয়ে-যাওয়া দুপুরে, দু-চুমুকের কাপে আমায় গান শোনাওনি!
কল্কি ফুলের গায়ে জমে থাকা শিশির দু-হাতে মেখে, আমায় ছুঁয়ে দাওনি!
বলে যাওনি চোখে-ঠোঁটে গোপন অভিসারে, আদর নিয়ে যেয়ো; বছর একুশ যে হলো!
তারবিহীন টুকরো টুকরো প্রেম গুঁজে দিইনি তোমার মুঠোতে ভরে, কত কোটি বছর যে পেরিয়ে গেল…




তুমি কি হেসে বলবে, মোটে তো বছর একুশ হলো!
স্বর্ণালি সকালগুলো স্নিগ্ধ সুরে বেজে আর ওঠে না, আকাশটা তাই ভাঁজ করে বুকপকেটেই রেখে দিলাম, আজ বছর একুশ হলো!
জানলার ভেজা শার্সিতে তোমার স্মৃতির আঁকিবুঁকি… যেন জীবনটাই ওখানটায় লেপটে আছে,
এদিকে যে মধুপর্ণী রাতগুলো সব একে একে শুকিয়ে গেছে, পাশ ফিরে দেখি, আহ্, কী নিদারুণ! ঝুলে আছে বনবিছুটির ধারে; একটা সুন্দর অলক্ষ‍্যেই মরে গেছে।




শিউলি যখন যুবতীর খোঁপায়, তখন আমি মরতে চেয়েছি অজস্র বার!
একটা নান্দনিক মৃত্যুর খোঁজে আমি ভবঘুরে পশ্চিম থেকে পুবে… ভাবছ, উলটো সুরেই সূচনা আমার!
অথচ, তোমার কাছে জীবন মানে মেঘরঙা শাড়ির অভিমানে ফিরে যাওয়া;
শিউলি এখন দুঃখফুল, নীলবসন্তেই ঝরে পড়ে সে, বছর একুশ তবে তুমিও মাড়িয়ে গেলে!




বলছিলে, ছিন্নভিন্ন নাগরিক জীবনের গলিপথে তুমি নবীন,
সীমান্তের পশ্চিমে ঘুরেফিরে অন্য এক তুমি; সেই তুমিই চিরসত্য!
মানুষের মোড়কে কৃত্রিম মানুষ ভালোবাসতে পারে ক-জন বলো, আমি পেরেছি; কেননা সপ্তমী জোছনায় তুমি স্নাত হওনি আর! ওদিকে আমি চাঁদের শরীর চিরেছি নিপুণ হাতে।




এই অপরাহ্ণে সূর্যকে ডেকে তবে সব অধিকার ছেড়ে দিলাম;
দায় নেই, দাবি নেই, প্রত্যাশা নেই, নেই শর্ত কিংবা অনুযোগ;
তোমার খাতায় নামহীন হলাম অবশেষে, আমি যে পয়সা তিনেকের মানুষ, ভ্রান্তিবিলাসে কেটে গেছে মোর বছর একুশ!




এখানে পোড়া চাতালের পাশে ঘেসোজমিতে কামজ দিনরাত্রি ঘোরে ফেরে উর্বশী-পূর্ণিমার খোঁজে;
তুমি বলতে, প্রেম প্রণয়জাত শব্দ! স্পর্শের বাইরে বায়বীয় মাত্রিক, তা কেবলই আমার ভাবনা!
যারা কখনোই বলতে পারে না, সখী, চলো বাসরে নিমগ্ন হই,
বলতে পারো, আমি তাদের দলেই ভিড়েছি!
অথচ আমি জেনেছি, ইমনরাগে জীবনের অর্থ জলেশ্বরীতে জোড়া পায়ে ভেজা মাদুলি; আমার কত অসুন্দর কবিতাতেও দোহার ছিলে তুমিই!
জেনেছি, সুখ জীবনের গোপন আলেখ্য, বললে না শুধু, তোমার কলমে আমি কতটা প্রশ্নবোধক, সেই সূত্র!
দু-ফর্মার মানুষ আমি, তবুও মেঘবসন্তে প্রণয়ী হবার দুর্নিবার ইচ্ছে!
বললে, কেয়াফুলে নেশা হয় না! তুহিনে স্নাত বেহিসেবি উন্মাদনায় চুঁইয়ে পড়া কামিনী হলেই বর্তে যাব!
সেই থেকে জলেশ্বরীতে বিকেলের মৃত্যু দেখে এসেছি, বছর একুশ পেরিয়ে গেল।




তোমার মানচিত্রজুড়ে বিক্ষিপ্ত শব্দগুলো একে একে জড়ো করেছি, নগ্ন আহ্বানে প্রণয়ী চুমু আজ বিদ্রোহী!
তুমি, তুমি… তোমাদের সময় হোক, নির্মোহ সুন্দরে দু-চোখ পেতো, আমি জ‍্যোৎস্না ঢেলে দেবো!
উর্বশী বাসনায় তবে ইচ্ছেরা সব হোক না স্বাধীন-বেপরোয়া; আজ শুধুই প্রেম থাক মেঘ ও মাটির মতো করে।
বিরহী মেঘের বুকে শুকতারা কেন একলাই হাঁটে, বলতে পারো?!
বলছিলাম, কীর্তিনাশা পার হব, আমার নিভৃতকোণে তোমার জমে-থাকা কষ্ট একলা পড়ে র’বে।




মনে রেখো, এ প্রেম নয়, এ কেবলই প্রথম শপথ ভাঙার শব্দ!
তুমি হয়তো মানবে না, সব মানতে হয়ও না,
এভাবেই একেকটা জীবন পুড়ে যায় অনিবার!
সত্যি বলতে, কোনোদিন আমি ও-পথ মাড়াইনি; পুরো একটা জনম বিফল পথচলা!




এবার তুমি চাঁদের দোলনায় উদাসীন হতে পারো, কেননা তুমি আর কীর্তিনাশা যে অভিন্ন!
সূর্যাস্তনীড়ে সন্ধের ভাঁজে ভাঁজে তোমার স্পর্শে আমার আমোদিত নিঃশ্বাস গভীর স্বরে বলে ওঠে, ভালোবাসি!
বললে, গভীরে রেখো না, সখী; আমরা বরং শ্যাওলা-সবুজে ভেসেই থাকি... অনিশ্চিত মানুষদের গভীর হতে নেই যে!




হঠাৎ যেন বলা যায়, শোনো, আমি বাসরে যাচ্ছি, ভালো থেকো তুমি।
তারপর, জোছনায় জোছনায় আগুন লাগে, আমি অনুত্তর পুড়ে যাই, তুমি দেখোনি, কেউ দেখে না!




গুনে গুনে একুশটা মৃত্যু আজ পূর্ণতা পেল, আমিও ভালো আছি!