মনে নানা সমস্যাই ওঠে। জ্ঞান সম্বন্ধে সমস্যা, কর্তব্য সম্বন্ধে সমস্যা। তোমাকে ছেড়ে, নানান অহংকারমূলক নিজের চিন্তা দিয়েই তৈরি সে-সকল সমস্যা। যখন সেগুলি সমাধান করতে যাই, তখন একটা সামান্য বিষয় স্থির করতে গিয়ে কত কত বার ভাবি, স্থির করেও কেমন জানি নিশ্চিন্ত হতে পারি না। যা একমুহূর্তে স্থির করি, পরমুহূর্তেই তা অ-স্থির হয়ে যায়, আবার চিন্তা করতে বসি। এই অস্থিরতায় মন তোমার থেকে অনেক দূরে গিয়ে পড়ে। আগেকার শান্তসরল ভাব হারিয়ে আর তোমাকে তেমন উজ্জ্বলরূপে অনুভব করতে পারিনে, মধুরভাবে সম্ভোগ করতে পারিনে।
তুমি আমাকে কত বারই তো বলেছ সব সমস্যা তোমার কাছে আনতে, যদি ভাবনা হয়, তবে তোমার কাছে বসে ভাবতে, তোমার অভিপ্রায় জানার জন্যে চেষ্টা করতে। তোমার এই আদেশ মেনে চললে আর আমার এই দশা হতো না । আমার মন তোমাতেই রইত, হৃদয় তোমাতে মজত। তোমার আদেশ না মেনে আমার এই দশা হয়েছে। এই দেখো, তোমার অবাধ্য সন্তান ঘুরে ফিরে, দুর্দশাগ্রস্ত হয়ে আবার তোমার কাছে এসেছে। এখন থেকে তোমার কথামতোই সে চলতে চায়।
যখন কিছু স্থির করতে হয়, তখন তোমার কাছে রইব। তোমার মুখের দিকে তাকাব, তোমার ইচ্ছে জানতে চাইব, জানতে পারলে তা-ই করব, জানতে না পারলে নিজের কল্পনার বশ হয়ে কিছু করব না। এই তো সঙ্কল্প করছি, তবে সঙ্কল্প কত দূর থাকবে জানিনে। অস্থির চিন্তার অভ্যেস অত হয়ে গেছে যে তার ফলে অনিবার্য দুঃখভোগ করতে হচ্ছে। এই কর্মফল কি সত্যিই অনিবার্য? এ কি চিরস্থায়ী? তাহলে আর জীবনের আশা কী?
তোমার কৃপায় সঞ্চারিত শক্তিতে তো অনেক বাধা দূর হয়। আমার এই কর্মফল কি তাতে নষ্ট হয়ে যাবে না? তোমার কৃপায় তো সবই হতে পারে বলে আশা হয়। আমি ঘোরাফেরা ছেড়ে তোমার ঘরে, তোমার কাছে এসে বসি। আমাকে দিনকয়েক তোমার কাছে স্থির হয়ে বসতে দাও। তোমার প্রেমের আস্বাদন একটু আমাকে দাও। তাহলে আর তোমার কাছছাড়া হতে আমার ইচ্ছে হবে না। যে পথ অবলম্বন করে অত দুঃখ পাই, তার দিকে আর যেতে প্রবৃত্তি হবে না। তোমার যা ইচ্ছা জানব, তার উপর আস্থা হবে, মন স্থিরভাবে তা-ই অনুসরণ করবে। তোমার ইচ্ছে না জানলে নতুন কিছু করতেও প্রবৃত্তি হবে না।
চিন্তার শ্রম তো ফুরিয়ে আসছে। আজই এমন অবস্থা আনতে পারো যাতে চিন্তা একেবারে থামাতে হবে বা থেমেই যাবে। এ পথে চলে আর কেন দুঃখ বাড়াই, মৃত্যু ডেকে আনি---শারীরিক মৃত্যু, আধ্যাত্মিক মৃত্যু? এখানকার বাকি সময়টা শান্তিতে কাটাতে দাও... তোমার মুখের দিকে তাকিয়ে থেকে, তোমার কোলে বসে, তোমার বাহুবেষ্টন অনুভব করে। তোমার শেখানো ধর্ম যে সত্যি, আর সত্যি বলেই প্রেমপ্রদ, শান্তিপ্ৰদ, সুখপ্রদ, বলপ্রদ, তা নিজ জীবনে উপলব্ধি করি, আর পৃথিবীর কাছে প্রমাণ করি। এভাবেই এই জীবন সফল করো, সার্থক করো।
Post Views: 190