কর্তব্য সম্পর্কে গীতা

প্রত্যেকের উচিত নিজ নিজ কর্তব্যকর্ম ঠিকভাবে পালন করা। অন্যে কী করছে না করছে, তা নিয়ে না ভেবে এবং না বলে বরং নিজের কাজটিই ঠিকভাবে করতে হবে। সবাই নিজ নিজ কাজ ঠিকভাবে করলে পৃথিবীর সব কাজই সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়ে যায়।

অন্যের উপর বাক্যের থেকে আচরণের প্রভাব বেশি মাত্রায় পড়ে—যদ্ যদাচরতি শ্রেষ্ঠস্তত্ত দেবেতরো জনঃ (গীতা ৩/২১)—"শ্রেষ্ঠ ব্যক্তি যা যা আচরণ করেন, অন্যান্য সাধারণ ব্যক্তিও তা-ই করে থাকে। তিনি যা-কিছু প্রামাণ্য বলে ধরেন, সাধারণ মানুষেরা সেই অনুযায়ী আচরণ করে থাকে।" তাই মুখে বলে কোনো কাজ হয় না, করে দেখাতে হয়।

নিজের কর্তব্যপালনে বৃষ্টি হওয়া কীভাবে সম্ভব? মানুষ নিজ নিজ কর্তব্য ঠিকমতো পালন করলে দেবতাদের উপরও তার প্রভাব পড়ে, যাতে তাঁরাও তাঁদের কর্তব্যপালন করেন, বৃষ্টিপাত ঘটান (গীতা, ৩/১১)। এই বিষয়ে একটি রূপক গল্প আছে।

চারজন কৃষক ছিল। আষাঢ় মাস এল, কিন্তু বৃষ্টি হলো না দেখে তারা আলোচনা করতে লাগল যে, চাষ করার সময় এসে গেল। “বর্ষা হলো না তো কী করা যাবে, আমরা সময়মতো আমাদের কর্তব্যপালন করতে থাকি।” এই ভেবে তারা ক্ষেতে গিয়ে হাল দিতে শুরু করল। ময়ূরেরা তাদের হাল চালাতে দেখে ভাবতে লাগল, "কী ব্যাপার? এখনও বর্ষা শুরু হয়নি, অথচ এরা হাল দিতে শুরু করেছে?" তারপর তারা জানতে পারল যে, কৃষকরা তাদের কর্তব্যপালন করছে, তখন ময়ূরগুলো ভেবে দেখল, "কৃষকরা যখন তাদের কর্তব্যপালন করছে, তখন আমরাই-বা কেন পিছনে থাকি?" এই ভেবে ময়ূরগুলোও কেকারব করতে লাগল। ময়ূরদের কেকারবে মেঘ ভাবতে লাগল, "আমার গর্জন না শুনেই ময়ূর কেন কেকারব তুলেছে?" সমস্ত ব্যাপার জানতে পেরে মেঘ ভাবতে লাগল, "তাহলে আমিই-বা কেন আমার কর্তব্য থেকে দূরে থাকি?” মেঘও গর্জন শুরু করল। মেঘের গর্জন শুনে ইন্দ্র ভাবলেন, "আরে, ব্যাপার কী?" তিনি যখন জানতে পারলেন যে, এরা সকলেই তাদের নিজ নিজ কর্তব্যপালন করছে, তখন ইন্দ্ৰ ভাবলেন, "আমিই-বা কেন আমার কর্তব্যপালনে পিছিয়ে থাকি?" এই ভেবে তিনিও মেঘকে বৃষ্টি শুরু করার নির্দেশ দিলেন।

আমরা নিজের ধর্মটা ঠিকভাবে পালন করি না, অথচ অন্যকে বলি ধর্মপালন করতে। এর চাইতে নির্বুদ্ধিতা আর কী আছে? কথা নয়, কাজই মানুষ চেনায়।

পড়াশোনা না করে বৃথাই সময় নষ্ট করলে যে-অনুভূতি কাজ করে, তার নাম দুঃখ।
পড়াশোনা না করার ফল হিসেবে পরবর্তীতে যে-দুর্ভোগ পোহাতে হয়, তার নাম শোক।
Content Protection by DMCA.com