ভাবনাদেয়ালের পলেস্তারা: ১৪২

ভাবনা: নয়-শো আটাশি
………………………………………………………………

এক। নিজের বিরাট মহিমা—
এই ভেবে বট ভাবে একমনে,
গোলাপ এসেছে ধরায়
ঠিক কোন সে কারণে?

আহা, মন যেন কোনো নারী—
অসম্ভবেরে ভালোবেসে তার
ফুরোয় না নয়ন-বারি!

সে কেবলই জানে ক্রন্দন—
অহেতুক যত উচ্ছ্বাস;
প্রবীণ বুদ্ধি আড়চোখে চায়…
করে তারে পরিহাস।

দুই। একজন মানুষ উন্নত না হলেও সমস্যা নেই; নিজেকে উন্নত করার ইচ্ছে ও চেষ্টা তার মধ্যে না থাকলেই যত সমস্যা।

তিন। তোমার কাছে আমার দুটো চাওয়া:

আমাদের আর কোনোদিনই দেখা না হোক।
আমাদের কখনোই বিচ্ছেদ না হোক।

মানুষ কাছে এলেই বরং দূরে সরে যায়।

চার। কখন বুঝবেন, আপনি একজন সফল মানুষ?
...যখন দেখবেন, টাকা আপনার, সিদ্ধান্ত সবার।

কখন বুঝবেন, আপনি একজন ব্যর্থ মানুষ?
...যখন দেখবেন, টাকা অন্যের, সিদ্ধান্ত আপনার।

কখন বুঝবেন, আপনি একজন সার্থক মানুষ?
...যখন দেখবেন, জীবন আপনার, সিদ্ধান্ত‌ও আপনার।

পাঁচ। যাদের বাসায় স্বাস্থ্যসম্মত পায়খানা নেই, তারাই ফেইসবুকে বিভিন্ন জায়গায় গিয়ে আজেবাজে কমেন্ট করে। ওদের কোনো দোষ নেই---সবই স্বভাবের দোষ।

ছয়। যার সাথে জিতলে গৌরব বাড়ে না, তার কাছে বিনা লড়াইয়ে হার মেনে নেওয়াই গৌরবের।

হাতে সময় কম; তাই যাদের হাতে সময় অফুরন্ত, তাদের কাছে হেরে যাওয়া শিখতে হবে। শিখতে না পারলে ওদের হবে সময় খরচ, আপনার হবে সময় নষ্ট। পার্থক্যটা অনেক বড়ো, বুঝতে হবে।

সাত। হাতে সময় কম; তাই যাদের হাতে সময় অফুরন্ত, তাদের কাছে হেরে যাওয়া শিখতে হবে। শিখতে না পারলে ওদের হবে সময় খরচ, আপনার হবে সময় নষ্ট। পার্থক্যটা অনেক বড়ো, বুঝতে হবে।

আট। আমরা যেন ভুলে না যাই, যে-ওষুধে রোগ সারে, সেটি খেতে বাজে হলেও ভালো ওষুধ।

নয়। এসো প্রিয়, আমরা দু-জন বেঁচে থাকি শুধু আমি তোমাকে ভালোবাসব, আর তুমি আমাকে ভালোবাসবে বলে।

দশ। আমি মোটা না রে, আসলে আমার খাওয়ার রুচিটা একটু বেশিই---ভালো খাবার খেতে খুব ভালো লাগে।
তোরা চিকন, কারণ তোদের তো খাওয়ার রুচিই নাই---ভালো খাবার তোদের পেটে সহ্য‌ই হয় না।

আমি সুস্থ, তোরা অসুস্থ; তোরা ট্যাবলেট খা।

এগারো। If you always spend time with ordinary people, you can never become extraordinary. So, often spend some time with your soul to become extraordinary.

বারো। Soul, soul and only soul matters. Take care of it.

তেরো। পৃথিবীর আর কেউই তোমাকে ভালো না বাসলেও আমি একাই তোমাকে ভালোবাসব।
পৃথিবীর বাকি সবাই তোমাকে ঘৃণা করলেও আমি একাই তোমাকে ঘৃণা করব না।

চৌদ্দ। চলে যাবার সময় হলেই বোধ হয় মানুষ প্রিয়জনদের আঁকড়ে ধরতে চায়। তাই যখন দেখি, কাছের কেউ খুব যত্ন করছে, খোঁজখবর রাখছে, কাছে কাছে থাকতে চাইছে, তখন খুব ভয় হয়।

পনেরো। অর্থ উপার্জন করা কঠিন, আর ভোগ করা কঠিনতর।

ষোলো। কাঁদছে এপার ওপারকে ভেবে,
কাঁদে ওপার‌ও তাকিয়ে এপারে,
বয় দুয়ের মাঝে এক বিরহ-নদী,
ওতে দু-পার‌ই নিবিড় অন্ধকারে।

এপারে ওপারে ধরে যুগ যুগ,
চলে কানাকানি আলো-আঁধারিতে,
ব‌ইছে নদী, সাড়া না পেলেও,
দীর্ঘরাতের পুরো দাম মিটিয়ে দিতে।

জানি না, কোন মাহেন্দ্রক্ষণে,
মিলবে রাত দিনের আবাহনে,
এপার ওপার হবে একাকার—
লুপ্ত হবে অসীম এই পারাবার।

সতেরো। 'প্রার্থনা' ও 'উপাসনা' শব্দ দুইটি নিয়ে অনেকেই বিভিন্ন মতামত দেন। প্রায় মানুষই এই দুইকে এক ভাবেন। এদের প্রকৃত অর্থের দিকে তাকালে দেখি, কোনো কোনো জায়গায় শব্দ দুইটিতে আকাশপাতাল পার্থক্য, আর কোথাও কোথাও এরা সোপান-প্রাসাদ সম্বন্ধযুক্ত। প্রার্থনার অপর নাম ভিক্ষা বা অভাবজ্ঞান প্রকাশ; এটি অভাব বা অভাবজ্ঞান থেকে উদ্ভূত। উপাসনার অপর নাম সন্তোষ বা নিজের অবস্থা নিয়ে সন্তুষ্টিপ্রকাশ। 'উপাসনা'র অর্থ 'কাছে এসে বসা'। উপাসকেরা মনের দিক থেকে ধনী ও সন্তুষ্ট; তাঁদের যেন চাওয়ার কিছুই নেই---তাঁদের আত্মঘর ও আত্মবিত্ত দুই-ই আছে। প্রার্থনায় মানুষ আত্মগ্লানি মেনে নিয়ে শান্তির খোঁজ করে, আর উপাসনায় চিত্তের বিত্ত নিয়েই শান্তি খোঁজে। তবে যখন গুণ-ভিক্ষা বা শুদ্ধতা-ভিক্ষা অর্থে প্রার্থনা বোঝায়, তখন এটা উপাসনার সোপানস্বরূপ। এক্ষেত্রে প্রার্থনা হচ্ছে নিজেকে শুদ্ধ করার মধ্য দিয়ে উপাসনার জন্য নিজেকে তৈরি করা। দুইয়ের লক্ষ্য একটাই: শান্তির সন্ধান পাওয়া। উপাসনায় ধাপ একটি কমে যায় বিধায় এখানে শান্তির কাছাকাছি পৌঁছে যাওয়া সহজ, তবে প্রার্থনার সাহায্যে নিজেকে উপাসনার জন্য প্রস্তুত করতে হয় তার আগে।

আঠারো। নড়বড়ে দেয়ালের মতো করে ভেঙে পড়তেই পারে আমাদের সম্পর্ক। তখনও ছড়িয়ে থাকবে টুকরো টুকরো ইচ্ছে। চাইলেই নিখুঁত স্তম্ভ হয়ে দাঁড়াবে না আর সম্পর্কটা, কিন্তু ভালোবাসার জমিনটুকু তো স্থির! দেয়াল গুঁড়িয়ে গেলেও জমিনের তলানিতে জমিনই থাকে। আমার দেয়াল না হলেও চলবে গো, তবে জমিনটুকুর ভাগ ছাড়তে আমি রাজি নই।

উনিশ। প্রত্যেকটা বয়সের একটা নিজস্ব সৌন্দর্য আছে। বয়সের সাথে সাথে যে-সব পরিবর্তন আসে, সেগুলো দেখতে বেশ ভালো লাগে। একজন চল্লিশ বছর বয়সের নারীকে শত ঘষামাজার পরও বিশ বছরের বাচ্চা মেয়ের মতো লাগবে না, বরং উদ্‌ভট লাগবে… বিশেষ করে যারা এতশত ডায়েট প্লান করেন একটু শুকনো থাকার জন্য! আমি অবশ্যই হেলদি থাকাটা প্রায়োরিটি দিই, কিন্তু ডায়েটের নামে নিজেকে জীবিত অবস্থায় কঙ্কাল বানিয়ে ফেলা আমার পক্ষে অসম্ভব। অতিরিক্ত ডায়েট করে যারা কাঠি হয়, ওদেরকে দেখতে কেমন লাগে? বাচ্চা বাচ্চা লাগে? বয়সের নিজস্ব একটা খাঁজ আছে। বয়স্ক মানুষের বয়স কখনোই লুকোনো যাবে না, তা যত তামাশাই করা হোক না কেন।

একটা সময় পর সৌন্দর্য নষ্ট হবেই, কিন্তু কাছের মানুষ কখনও সৌন্দর্যে আটকায় না। নিজের মানুষকে কখনও আটকানোর দরকারই পড়ে না। নিজের মানুষের সব কিছুই নিজের থাকে। একটা বাচ্চা যখন বাবা-মা’য়ের চোখের সামনে বড়ো হয়, তখন যে আনন্দ আর বিস্ময়বোধ কাজ করে, নিজের মানুষের সাথে বুড়ো হওয়ার মাঝেও ঠিক একই আনন্দ। নিজের মানুষকে দু-হাতে জাপটে ধরতে সব অবস্থাতেই আনন্দ লাগে, নিজের মানুষের সাথে কাটানো মুহূর্তগুলো সব সৌন্দর্যের ঊর্ধ্বে। সবচেয়ে বড়ো কথা, নিজের মানুষকে কক্ষনো কোনো বাহ্যিক কিছু দিয়ে ধরে রাখার প্রয়োজন পড়ে না।

ভাবনা: নয়-শো উননব্বই
………………………………………………………………

এক। রোজ রোজ জীবন নিয়ে এত অভিযোগ করতে হয় না। অভিযোগ করার জন্যেও মানুষ কেবল একটা জীবনই পায়। সবার কাছে সব প্রত্যাশার দরজা বন্ধ করে দিয়ে যা-কিছু আছে, যা-কিছু করা সম্ভব, সেইসব জিনিসে চুপচাপ ডুব দিয়ে বাঁচতে শিখে নিলে এই জীবনের চেয়ে সুন্দর জীবন আর একটাও নেই। বাস্তবতা অসমীচীন, অসামঞ্জস্যপূর্ণ হলেও এটা সুন্দর এবং বৈচিত্র্যময়। যার জীবন যত বেশি বাস্তবতা দিয়ে মোড়ানো, যার জীবনে যে যত একা স্ট্রাগল করে যায়—সে তত তৃপ্ত।

কাউকে কোনোকিছুর জন্যই বিন্দুমাত্রও ব্লেইম করা যাবে না। নিজেকে প্রত্যেক মুহূর্তে নিজের সব কিছুর জন্য দায়ী করতে হবে। নিজেকে উপরে তুলে আবারও লাইনে দাঁড় করাতে হবে নিজেকেই। প্রতিমুহূর্তে, হ্যাঁ, প্রতিটি মুহূর্তে সবার জন্য বাঁচতে হবে। জানি, অন্যরা নিজের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেবে, কিন্তু অন্যদেরকে তাদের রাস্তায় এগিয়ে দেবার অর্থই হচ্ছে, নিজেকে গতিশীল এবং সক্রিয় রাখা; আর একজন সক্রিয় মানুষ কখনও অসুখী হয় না। নিজের কী কী হলো না, সেগুলোর দিকে দীর্ঘ দৃষ্টি না রেখে এখনও নিজেকে দিয়ে কী কী হতে পারে, সেটা দেখতে পারাটাই আসল।

দুই। তুমি বললে, “ভালোবাসা কী?”

আমি বললাম, "ভালোবাসা যে কী, তা জানলাম আর কই! তবে, অপাপবিদ্ধ একচিলতে হাসি, স্বস্তির একমুঠো নিঃশ্বাস, ভরসার একটা কাঁধ, দৃঢ় মুষ্টি, প্রিয় চেনা গন্ধ, একপৃথিবীসমান ওম-ওম শান্তির বুক, আদুরে কণ্ঠ, আর… আর… আশ্বস্ততায় ঘেরা কয়েক কদম জীবনের নাম বুঝেছি ‘তুমি’!”

তিন। জোৎস্নাভরা ঘোরলাগা কোনো এক সন্ধ্যায় আমি চলে যেতে চাই।
যাবার আগের রাতে মায়ের সাথে বসে এক‌পাতে চ্যাপাশুঁটকির ভর্তা দিয়ে একথাল ধোঁয়াওঠা গরম সাদাভাত খেতে চাই।

গ্রামের কবরস্থানটার দিকে ঘণ্টাখানেক মনভরে তাকিয়ে থাকতে চাই, যেখানটায়… 
ঠিক যেখানটায় দু-যুগের বেশি সময় ধরে চুপচাপ শুয়ে আছে আমার বাপজান।

গলির ওই কোণে কুকুরটা তিনটা ছাও ফুটিয়েছে, ওদের আমি দু-প্যাকেট বিস্কুট কিনে দেবো।
গত বৈশাখে ছেড়ে-যাওয়া প্রিয় মানুষটার ইনবক্সে শেষ বারের মতন লিখতে চাই… আমারে ক্ষমা কইরো না, আমিও করলাম না।

আচ্ছা, জোৎস্নাদের ধরা যায় না কেন? গাছেরা শুনতে পায় না কেন? গলিতে অপেক্ষা-করা কুকুর-বেড়ালগুলো কথা বলতে পারে না কেন? ওদের সাথে আমার যে অনেক কথা বলার ছিল!

জোনাকপোকার মতন খপ করে জোৎস্নাদের ধরে ফেলা যেত যদি, তবে আমি একশিশি জোৎস্না বোতলে ভরে সাথে করে নিয়ে যেতাম সেখানটায়, যেখান থেকে কেউ কখনও ফেরে না, যেখানে কারও কোনো চিৎকার পৌঁছায় না।

বাউন্ডুলে জীবনটাকে একশিশি জোৎস্নাধরা বোতলে ভরা যায় না কেন? আমার যে জোৎস্না ভীষণ প্রিয়!

চার। নিজেকে অমন হারিয়ে যেতে দিচ্ছ কেন? নিজের আবেগটুকু সবার আড়ালে গুটিয়ে নিলে সত্যিই একদিন হারিয়ে যাবে যে!

কে বলে অমন পাথর হতে তোমায়? মৌনতায় স্থির থাকা বুঝি খুব জরুরি! যতটুকু জমিয়েছ কথা বলবে বলে, তা কি তবে এপিটাফে খোদাই হবে আমার? তা হোক, তবুও হোক!

ধরো, যদি বলি, একটা দিন, আচ্ছা… আচ্ছা… অন্তত একটা অলস দুুপুর নিজেকে ছাড়াতে পেঁয়াজের মতন করে, সকল শেকল ভেঙে দিয়ে শরতের পেঁজাতুলোর মতো হালকা হতে, হবে? নাকি তখনও বলবে, তোমার পুষ্যাঞ্চল‌ই ভারি পছন্দের? যদি বলি কলিয়েন্ড্রার নরম ছোঁয়ায় হাসতে, নিশ্চয়ই তখন একেকটা বিচ্ছিন্ন কাশতন্তুর আত্নহননে শুকিয়ে-যাওয়া ন্যাড়ার সাথে নিজেকে মেলাবে না?

তোমাকে ভালোবাসি। তোমাকে ভালোবাসতে আমার খুব ভালো লাগে।

পাঁচ। আমি হয়তো তোমাদের কাউকে কোনোদিনই ক্ষমা করতে পারব না, করতে আমি চাইও না। তোমাদের প্রতি ধীরে ধীরে আমার ভেতরে ঘৃণা জন্মে গেছে। ঘৃণার এই পাহাড় একদিনের নয়, বছরের পর বছর একটু একটু করে জন্মেছে। আমি আমার এই আনাড়ি জীবনের দায়িত্বের বোঝাটা ভুল করে তোমাদের ওপরে দিয়ে রেখেছিলাম, যার মূল্য পদে পদে আমাকে দিতে হচ্ছে। অতিরিক্ত শাসন, বারণ আর নিয়মের বেড়াজালে রোজই তোমরা আমাকে শাসিয়েছ, আমিও তোমাদের চোখরাঙানি দেখে বোকা, নরম আর বাধ্য মেয়ের মতো তোমাদের সব আদেশ আর নির্দেশ অক্ষরে অক্ষরে পালন করে গেছি। সেটা করেও-বা আমি কতটা তোমাদের খুশি করতে পেরেছি কিংবা মন রাখতে পেরেছি, তা নিয়েও বেশ সন্দেহ আছে। বুঝেশুনেই বলছি, অভিভাবক হিসেবে তোমরা সবসময় আমার প্রতি তোমাদের দায়িত্বে অবহেলা করে গেছ।

আমি সত্যিই খুব বদলে গেছি। নিজের অজান্তে, খুব অনিচ্ছায় একটু একটু করে রোজ বদলে গেছি। আমার এই বদলে-যাওয়া আমি-টাকে মেনে নিতে আমার অনেক কষ্ট হয়। আমার জীবনটা এখন আর স্বাভাবিক নেই। মানুষের জীবনে যে-ঘটনাগুলো স্বাভাবিক নিয়মে স্বাভাবিকভাবেই ঘটে, তেমন সব কিছুই আমার জীবনে অস্বাভাবিকভাবে ঘটে চলছে। আমি অনেক চেষ্টা করেও আর কিছুই স্বাভাবিক করতে পারি না। সবচেয়ে বড়ো কথাটা হচ্ছে: আমাকে প্রতিনিয়ত খুব চেষ্টা করে করে বেঁচে থাকতে হচ্ছে। যে-মানুষ রোজই নিজেকে বাঁচিয়ে রাখার চেষ্টা করে যায়, তার কাছে নিজেকে কত বড়ো বোঝা মনে হয়, তা তোমরা কেউ বুঝতে পারবে না। বুঝবে কী করে, এর মধ্য দিয়ে যে তোমাদের কখনও যেতে হয়নি! এখন আমার রোজ নিয়ম করে নিজেকে রিমাইন্ডার দিতে হয় এটা বুঝিয়ে যে—আমাকে এইসব কিছু মেনে নিয়েই বাঁচতে হবে! আর এটাই স্রষ্টার পরীক্ষা।

স্রষ্টার এই পরীক্ষায় পাশ করলে আমাকে পুরস্কৃত করা হবে, কিন্তু কী পুরস্কার দেওয়া হবে, স্রষ্টা তা বলেননি; সেই পুরস্কার আদৌ আমার দরকার কি না, সেটাও আমি জানি না—তবু মনে হয়, হয়তো দরকার। আমি শুধু জানি, এটাই জীবন, এটা এমনই, আমাকেও এভাবেই মেনে নিয়ে বেঁচে থাকতে হবে। সবাইকে দেখিয়ে দিতে হবে, এভাবে এত কিছুর পরও খুব সুন্দরভাবে বেঁচে থাকা যায়! জোরপূর্বক জীবন নিয়ে এত এত চ্যালেঞ্জ আমার দিকে তোমরা ছুড়ে দিয়েছ। আমি এতটা কারও সাথে এমন প্রতিযোগিতা করে, কারও কাছে নিজেকে এভাবে সারাক্ষণ প্রমাণ করে, অন্যদের দেখানোর জন্য কখনও বাঁচতে চাইনি। আমি ছোটো থেকেই একটা সাদাসিধে স্বাধীন একান্ত সাদামাটা একটা জীবন চেয়েছি, আর তোমরা আমাকে সেই ছোটো থেকেই জোর করে শেকলে বেঁধেছ।

এবার নাও…আমি আর উড়তে পারব না; খুশি তো তোমরা? একজন ব্যর্থ মানুষ, একজন পরাজিত দুর্বল মানুষ, একটা ডানাকাটা মানুষ তোমাদের সামনে হাজির। এই দুর্বল মানুষটিকে তোমরা যেভাবে দেখতে চেয়েছ, আজ সে তেমনটাই হয়ে গেছে। হয়ে গেছে অন্ধকার বদ্ধ ঘরের এক ভীতু নারী! কিন্তু আমি আর কখনও কোনোদিনই তোমাদের ক্ষমা করব না। আমি আমৃত্যু তোমাদেরকে ঘৃণা করে তোমাদের কাছ থেকে মানসিকভাবে নিজেকে অনেক অনেক দূরে সরিয়ে রাখব, হয়তোবা কোনো একদিন শারীরিকভাবেও নিজেকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হয়ে যাব। তোমরা শুধু জানবে, তোমাদের একটা মেয়ে ছিল। অবশ্য, ওতে তোমাদের তেমন কিছু এসে যাবে না।

তোমরা হয়তো জানোই না যে, চেষ্টার ঘুম, ক্লান্তির ঘুম, শান্তির ঘুম, শ্রান্তির ঘুম—এই সবগুলোর মাঝে খুব সূক্ষ্ম একটা পার্থক্য আছে। 

তোমরা জানোই না, রোজ মন খারাপের কথা বলতে, মন খারাপ করে চুপচাপ কিছু-একটা করে নিজেকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে রাখতে আমার কতটা কষ্ট হয়।

আমার জীবন কোনোদিনই আর পাঁচটা সাধারণ মানুষের মতো স্বাভাবিক হবে না। জীবনের রেললাইন থেকে একবার ছিটকে পড়ে গেলে সেই রেলগাড়িটা আর আগের মতো থাকে না। অনেক অনেক কিছু তখন বদলে যায়। আর এই সব কিছুর জন্য আমি নিজেই সব থেকে বেশি দায়ী। আমি যে সবসময়ই তোমাদের মন জুগিয়ে চলার চেষ্টা করেছি—নিজেকে কষ্ট দিয়ে হলেও! আমার চাইতে বড়ো পাপী আর কে আছে!

তোমাদের কাছে শুধু এটুকুই চাইব, তোমরা আমাকে আমার ওপর ছেড়ে দাও। আমি একটু নিজের সাথে প্রাণভরে বাঁচি। আমার জীবন থেকে যা-কিছু হারিয়ে গেছে কিংবা যা-কিছু আর কখনোই আমি ফিরে পাবো না, সেগুলোর কোনোটা নিয়েই আমার আর কোনো আক্ষেপ নেই। আমি এখন শুধু নিজের সাথে প্রাণভরে বাঁচতে চাই, আর কিচ্ছু না। আমার সব রোগের ওষুধ আমি নিজেই, আর কেউ না। বাঁচতে আমার আর কাউকেই লাগবে না।

ভাবনা: নয়-শো নব্বই
………………………………………………………………

এক। মেয়েরা তাদের সৌন্দর্য ধরে রাখার পেছনে একজীবনে যত টাকা খরচ করে, সেই টাকা দিয়ে বাড়ি-গাড়ি সব কিছু হয়ে যাবে। আর কিছু নয়, কেবলই দেখতে সুন্দর হবার জন্য, পুরুষদের কাছে আকর্ষণীয় আর গ্রহণযোগ্য হবার জন্য মেয়েরা এত টাকা খরচ করে দেখলে সত্যিই হাসি পায়, সেই সাথে কিছুটা করুণাও হয়।

আমি একটা মেয়ে, আমার নিজেকে প্রেজেন্ট করার জন্য যা-কিছু দরকার ছিল, তার সবই তো স্রষ্টা আমাকে দিয়েই দিয়েছেন; তাহলে তার ওপরে আবার এত ঘষামাজা করে সৃষ্টিকর্তার দেওয়া সৌন্দর্যকে মেকি করার কী দরকার!

আমি আমার খুব কাছের কয়েকজন সুন্দরী বান্ধবীকে চোখের সামনে এসব ঘষামাজা করে উদ্‌ভট হয়ে যেতে দেখেছি। কয়েক বছর আগেও সৌন্দর্য বৃদ্ধি করতে, পার্লারে যাতায়াত—এটুকুই ঠিক ছিল, কিন্তু ইদানীং সৌন্দর্যচর্চার নামে যে-সমস্ত কাটাছেঁড়া, সেলাই, অপারেশন, লেজার, হেয়ারপ্লান্ট, ইত্যাদি ইত্যাদি শুরু হয়েছে, তা দেখলে রীতিমতো ভয় লাগে।

আমার এক বান্ধবী বিয়ের আগে দেখতে অনেক ইনোসেন্ট আর সুন্দর ছিল, গায়ের রংটাও ছিল মায়াবী; সব মিলিয়ে ওকে ভীষণ সুন্দর লাগত। বিয়ের পর যেই-না বরের টাকা হাতে এল, অমনিই সেই সৌন্দর্যকে বান্দর্য করতে সে উঠে-পড়ে লেগে গেল। একটা বাচ্চা হলো, তার ১ বছর যেতে না যেতেই…জামাইকে ধরে রাখতে হবে, তা না হলে অফিসের সুন্দরী মেয়ে কলিগরা তার জামাইকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে কবজা করে নেবে—এই ভয়ে বাচ্চার ব্রেস্টফিডিং অবস্থাতেই গেল বডিশেইপিং করাতে! ভাবা যায়! নিজের বাচ্চাকে ফেলে সৌন্দর্য অধিক প্রয়োজনীয় হয়ে গেল! কেউ নিজেই না ভুললে বা ধরা দিতে না চাইলে তাকে ভুলিয়ে কবজা করা কি আদৌ সম্ভব?

আমার আরেক বান্ধবী বিয়ের আগে তেমন সুন্দর ছিল না, আবার ওদের আর্থিক অবস্থাও খুবই খারাপ ছিল; বিয়ে হলো সচ্ছল একটা ঘরে, আর অমনিই পড়াশোনা সব গুটিয়ে সৌন্দর্য প্রতিযোগিতায় নেমে গেল! এখন আমার ওই বান্ধবীকে কাছ থেকে দেখলে মনে হয়, কেউ যেন ওর দু-গালে প্লাস্টিকের স্কিন লাগিয়ে দিয়েছে—কোরিয়ান সুপারটাইট স্কিন প্রোডাক্ট ইউজ করে করে এমন উদ্‌ভট চেহারা হয়েছে যে, সামনে থেকে দেখলে মনে হয়, কোনো পুতুলের সাথে কথা বলছি—স্কিন আগাগোড়া টানটান, মুখে কোনো দাগ বা কোনো লোম কিচ্ছু নেই, কোনো ন্যাচারাল কিচ্ছু নেই…দেখলেই ভয় করে, কিন্তু এত এত প্রোডাক্ট ব্যবহার করে এমন অবস্থা হয়েছে যে, এগুলি ব্যবহার করা ছেড়ে দিলে বেচারির চেহারা আরও বিকট হয়ে যাবে!

স্বাভাবিক সৌন্দর্য‌ই আসল সৌন্দর্য। আমার স্বাভাবিক সৌন্দর্য মেনে নিয়ে যে আমার কাছে ভিড়বে, একমাত্র সে-ই আমার জন্য সুন্দর মানুষ। যার চোখে সুন্দর হবার জন্য নিজেকে অস্বাভাবিক করতে হয়, ভালোভাবে বেঁচে থাকার জন্য তেমন মানুষের কোনো প্রয়োজন কখনোই হয় না। সুন্দর মানুষের সবচাইতে গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য: নিজের ও অন্যের স্বাভাবিকতার কদর করতে জানা।

দুই। একদিন বুঝে ফেলবেন, ওদের কেউই আপনার নিজের মানুষ নয়। ওদের সাথে কথা বলার সময় আপনি আর স্বস্তি অনুভব করছেন না; সব কথারই কৈফিয়ত দিতে হচ্ছে। হায়, সেদিনের পরও আপনাকে ওদের সাথেই বেঁচে থাকতে হবে!

তিন। মজা বেশি করে ফেললে কষ্টও বেশি পাবা।

চার। যে-জিনিসটা সহজে বুঝে যাবে, সেখান থেকে তেমন কিছু শিখতে পারবে না; যে-জিনিসটা অনেক কঠিন এবং চ্যালেঞ্জিং মনে হবে, সেখান থেকে অনেক কিছু শেখার আছে।

পাঁচ। কার দুঃখ যে কোথায়, তা কেউই বলতে পারে না। তাই কেউ তোমাকে গালি দিলে মন খারাপ কোরো না। হতে পারে, তার রাগটা আসলে ঈশ্বরের উপর। তোমার নীরবতা যদি একজন দুঃখী মানুষের দুঃখ কমায়, তাতে তোমার পুণ্য হবে।

ছয়। রামকৃষ্ণ মিশনের মহারাজদের কেন ভালো লাগে জানেন তো?

১. এঁরা কখনোই বলেন না: এটাই সেরা, তুমি এখানেই আসো, বাকি সব ভুল, ইত্যাদি; আমি ধর্মীয় উদারতার পক্ষে।
২. এঁদের বেশ পড়াশোনা আছে, আমার জানার ও বোঝার পরিধি নিয়ে এঁদের সাথে আনন্দ নিয়ে গল্প করা যায়।
৩. এঁরা কাউকেই কোনো কিছু নিয়ে জোর করা বা চাপিয়ে দেওয়া দূরে থাক, নিজ থেকে নিজেদের সম্পর্কে কিছুই বলেন না।
৪. এঁদের সেবামুখিতা ও সহনশীলতা মুগ্ধ করার মতন। আজ পর্যন্ত কোনো মহারাজ আমাকে শ্রীরামকৃষ্ণের দীক্ষা গ্রহণ করতে বলেননি।
৫. নিজের জ্ঞান নিয়ে এঁরা সবসময়ই নীরব, সারাক্ষণই যেন পরব্রহ্মের কোলে আশ্রয় নিয়ে আছেন।

"যত মত, তত পথ।"

সাত। ধর্ম তো একটাই: মানবধর্ম; যেগুলিকে ধর্ম বলছি, তার সবই তো একেকটা প্রথা বা রাস্তা!

আট। Two types of people are always destined to be lonely:

People with beauty
People with brain

নয়। গাধা যাকে পছন্দ করে, সে বড়ো দুর্ভাগা। কেননা গাধা আশা করে, তার পছন্দের মানুষটাও তার মতন গাধামি করবে। ওরকম না করলে গাধা তখন খুব মেজাজ খারাপ করে এবং তার পছন্দের মানুষের জীবনটা বিষিয়ে তোলে। গাধামি ব্যাপারটা আপনার কাছে বিরক্তিকর হলেও গাধার কাছে ওটাই কিন্তু সহজ-স্বাভাবিক আচরণ। এ কারণেই যে-কোনো মূল্যে গাধাদের এড়িয়ে চলা ভালো। একটা ভালো গাধাও দিনশেষে গাধাই। ভালো গাধার চেয়ে খারাপ সিংহ উত্তম।

আপনাকে যে বা যারা পছন্দ করে, সে বা তারা যদি নির্বোধ এবং বেআক্কেল হয়, তাহলে আপনি নিশ্চিতভাবেই খুবই বিপদে আছেন। নির্বোধ এবং বেআক্কেল লোক নিজের অজান্তেই আপনাকে বিরক্ত ও বিব্রত করবে। সে বুঝতেই পারবে না যে, সে যা করছে, তা করাটা ঠিক নয় কিংবা আপনি তার আচরণে বিরক্ত বা বিব্রত হচ্ছেন। মাঝে মাঝে এমনও হবে, আপনি মুখ ফুটে বলে দিলেও তার বোধোদয় হবে না। সে ভাববে, "আমি আবার কী করলাম!" আর আপনি ভাববেন, "হে ধরণী! দ্বিধা হ‌ও, আমি গাছে উঠি!"

দশ। হঠাৎ করেই আমার কী যেন হয়ে যায়!
আকাশ ভালো লাগে না, চাঁদেও মন বসে না;
জোৎস্নায় প্রাণ হাসে না, অন্ধকারেও মন উদাস হয় না।
বাঁচতে উচ্ছ্বাস জাগে না, মরণেও আনচান লাগে না।
কারও চোখের মায়ায় চোখ ঝলসায় না, কারও কণ্ঠের জাদুতে প্রাণ উচাটন হয় না।

আমার মাঝে মাঝেই কীসব যেন হয়ে যায়!
মায়ের কণ্ঠ, প্রিয়জনের ডাক কিংবা পছন্দের সুর…কিছুই যেন টানে না।
কবিতার প্রাণ, গল্পের উত্তেজনা কিংবা থ্রিলার মুভির সাসপেনশন...কোনো কিছুতেই মনটা নাচে না।

আসলে আমার কী হয়ে গেছে আমি কিছুই বুঝতে পারছি না।
আমি কি তবে ঠিক সেভাবে মারা গেছি…যেভাবে সারাপৃথিবী-জুড়ে লক্ষ-কোটি মৃত মানুষ দিব্যি জ্যান্ত বেঁচে আছে!

ভাবনা: নয়-শো একানব্বই
………………………………………………………………

এক। ঈশ্বর যাকে রূপ দেন, তাকে গুণ দেন না; যাকে গুণ দেন, তাকে রূপ দেন না; যাকে রূপ ও গুণ দুই-ই দেন, তাকে দেখতে ভালো এবং গুণী লাইফ-পার্টনার দেন না।

তবু হাতেগোনা কিছু মানুষকে ঈশ্বর তিনটিই একসাথে দেন। এমনই একজন দ্য গ্রেট বিরাট কোহলি।

সম্প্রতি শচীনকে ছাড়িয়ে যাওয়া কোহলির বায়োপিক নির্মাণ করা নিয়ে কথা চলছে। রণবীরকে প্রশ্ন করা হয়, বিরাটের বায়োপিকে অভিনয় করতে তিনি রাজি কি না। উত্তরে রণবীর বলেন:

"আমার মনে হয়, বিরাটের বায়োপিকে বিরাটের নিজেরই অভিনয় করা উচিত। বিরাট অনেক অভিনেতার থেকে ভালো দেখতে। শুধু তা-ই নয়, ওর ফিটনেসও অনবদ্য!"

একজন গ্রেট আর্টিস্টকে নিয়ে আরেকজন গ্রেট আর্টিস্টের কী আর্টিস্টিক মন্তব্য!

দুই। বয়স ৪০/৪৫, অথচ বিয়ের পাত্রী খোঁজে ২০/২২-এর! কেন?

একজন ম্যাচিউরড মানুষ অবশ্যই আরেকজন ম্যাচিউরড মানুষের সাথেই বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করার কথা, তাই না ? ৪০/৪৫ বছরের একজন পুরুষ কী করে এত অল্পবয়সি একটা মেয়ের সাথে মানিয়ে নেয়? দু-জনের জীবনদেখার দৃষ্টিই তো একদম ভিন্ন রকমের থাকে, তাহলে এমনটা কীজন্য করে?

যদিও তৃপ্ত করতে পারার ক্ষমতার সাথে বয়সের সম্পর্ক তেমন নেই, তবু কেবলই শারীরিক তৃপ্তির আশাতেই বহুসংখ্যক মানুষ এই সিদ্ধান্ত নেয়, না কি আরও কোনো কারণ আছে? আপনার কী মনে হয়?

একজন ম্যাচিউরড মানুষ তো আরেকজন ম্যাচিউরড মানুষের সাথে খুব জলদি মানিয়ে নিতে পারে, একজনকে আরেকজন খুব ভালোভাবে বুঝতেও পারে; সবচাইতে বড়ো কথা, একটা ম্যাচিউরড মেয়ে তো অনেক কিছুতেই ছাড় দিয়ে জীবনের বাস্তবতা বুঝে চলে, তারপরও এমন কেন হয়? বিয়ে করার সিদ্ধান্ত তো এমনিতেই ভীষণ রকমের ঝুঁকিপূর্ণ, অপরিপক্ব মনের একটা মেয়েকে বিয়ে করার সিদ্ধান্ত কি আরও বেশি ঝুঁকিপূর্ণ নয়?

ছোট্ট একটা জীবন...মানুষ কী সহজেই এটাকে বিয়ের খামখেয়ালিপনায় নষ্ট করে দেয়!

তিন। বেশি না, মাত্র একটা সত্যি কথা বলব। তোমাকে না পেয়ে আমি যতটা সুখী, তোমাকে পেয়ে গেলে ততটা সুখী কখনোই হতে পারতাম না। মানুষ সব পেয়ে গেলে সব হারিয়ে ফেলে।

এই পৃথিবীতে বেঁচে থাকতে গেলে সুখের মতো অ-সুখের চেয়ে বরং দুঃখের মতো সুখের অধিক প্রয়োজন হয়। তোমাকে পেয়ে গেলে সেই দুঃখের মতো সুখটুকুই হারিয়ে ফেলতাম সবার আগে। সবাই-ই দুঃখ সহ্য করতে পারে, কিন্তু সুখ সবাই সহ্য করতে পারে না।

আরেকটা কথা। এই যে মাঝে মাঝে আমাকে আমার স্থানটা বুঝিয়ে দিয়ে তোমাকে না পাবার কথাটুকু জানিয়ে দাও—এটা যতটা না আমাকে জানাও, তার থেকে বেশি নিজেকেই রিমাইন্ডার দাও, তা আমি স্পষ্ট করে বুঝি। ভয় পাও, আমি আবার অধিকার চেয়ে বসি কি না! ভয় নেই, চাইব না কোনোদিনই। তুমি আমাকে কোনো বিনিময় ছাড়াই নির্ভয়ে ‘ব্যবহার’ করতে পারো। আমি জানি, তোমার চোখে, আমি ভালোবাসার জন্য তেমন ভালো কিছু না হলেও ব্যবহার করার জন্য বাড়াবাড়ি রকমেরই ভালো। আমার কাছে এখন আর ভালোবাসার বেলায় কোনো অধিকার থাকে না, তুমি নির্ভাবনায় থাকো।

অধিকার লাগবে না, শুধু থাকতে দিয়ো। থাকতে না দিলেও তাড়িয়ে দিয়ো না। তাড়িয়েও যদি দাও, তবু ঠিকই থেকে যাব—শুধু তুমি জানবে না।

চার। আমার জীবনে কেবল একটাই বাঁচার জায়গা, তা হচ্ছ তুমি—যেখানে আমি একটু নিজের মতো করে বাঁচতে পারি। এখানে বারণ করার কেউ নেই, কোনো কিছুরই বাধ্যবাধকতা নেই, এ একেবারে নিজের একটা গণ্ডি, যেখানে নিজেকে চারদেয়ালের ভেতরেও স্বাধীন মনে হয়। কখনো যদি এই জায়গাটাও আমি হারিয়ে ফেলি, তাহলে এই পৃথিবীতে একান্ত নিজের একটা শান্তির জায়গা বলে আমার আর কিছুই থাকবে না। সেদিন আমি কী নিয়ে বেঁচে থাকব জানি না। যদিও এখন সবসময় তোমার কাছে থাকি না, তারপরও আমার ভেতরে এই একটা স্বস্তি আছে যে, আমারও নিজের একটা ভরসার জায়গা আছে, হোক সেটা অতি তুচ্ছ, কিংবা পরিচয়হীন, তবু আছে তো! আমার নিজের দম নেবার একটা জায়গা হচ্ছ তুমি। তোমাকে পেতে আমার তোমাকে লাগে না।

আচ্ছা, আমি কতদিন তোমার জীবনে থাকতে পারব? নিজের আয়ু তো কেউ আগে থেকে জানে না, কিন্তু আমার জানতে ইচ্ছে হয়…খুব ইচ্ছে হয়। আমি কি তোমার বার্ধক্যেও তোমার সাথে থাকতে পারব, যদি বেঁচে থাকি তখন? কিন্তু ততদিনে তো আমার কাছে তোমার আর কোনো চাহিদা থাকবে না, তোমার কাছে আসার কিংবা তোমার সাথে সময় কাটাবার আর কোনো অজুহাত আমি পাবো না। তখন আমি কোন অজুহাতে তোমাকে একটু দেখতে কিংবা তোমার একটুখানি স্পর্শ নিতে আসব? মানুষের সাথে সামাজিক কোনো বন্ধন না থাকলে কি সেই যোগাযোগ বা যাতায়াত থাকে? তুমিই-বা কেন আমাকে আর খুঁজবে? তুমি তো তখন তোমার পরিবার নিয়ে ভীষণ সুখে থাকবে, আমাকে হয়তো আর মনেও পড়বে না। এই যে এতগুলি বছর দেখা-অদেখায় চলে গেল, এর কি তবে আর কোনো মূল্য নেই?

নিজেকে আমি যত বোঝাই, তোমার কাছে চাইবার মতো কিছুই আমার নেই, এসব ভাবনা তত মাথায় আসে। তবে কি প্রতিটি প্রত্যাশাহীনতার শেকড়‌ আদতে প্রত্যাশাতেই প্রোথিত? আজ তুমি আছ বলেই তোমাকে পেতে চাই না; কিন্তু যখন তুমি থাকবে না, সেদিনও কি তোমাকে পেতে চাইব না?

পাঁচ। অবসরে বসে আফসোস করব বলে আমি তোমাকে ভালোবাসিনি; আমি আমার সবটুকু আর সর্বোচ্চটুকু দিয়ে তোমাকে ভালোবেসেছি; তাই আমৃত্যু নিজের কাছে করা সেই কমিটমেন্ট আমি রক্ষা করে যাব—তাতে আমার যত ছোটোই হতে হোক না কেন তোমার কাছে।

আমি জানি, তুমি ভালোবাসা জিনিসটা সিরিয়াসলি নাও না, শুধু ভালোবাসার অভিনয় করো। আমি যখন এমন ভেঙেচুরে ভালোবাসার কথা বলি, আমাকে ন্যাকা আর আমার ভালোবাসাকেও সস্তা মনে করো। তবু আমি আমার সর্বোচ্চটা দিয়ে হলেও প্রমাণ করে ছাড়ব, আমি নিজের চেয়েও বেশি তোমাকেই ভালোবাসি। তোমাকে পেতে চাই না, শুধুই ভালোবাসতে চাই।

তুমি হ‌ও যেমন‌ই, আমি ঠিক এভাবেই ভালোবেসে যাব তোমাকে। তুমি তোমার মতো, আমি আমার মতো; আমার ভালোবাসা এই আমাদের মতো।

ভাবনা: নয়-শো বিরানব্বই
………………………………………………………………

এক। কুলফি না খাওয়াইলে, বন্ধু,
সেলফি তু‌ইলো না!

কুষ্টিয়ার কুলফি খেলাম। অতি উপাদেয়!

দুই। কালীপূজা নিশিপূজা। আজ বহুবছর পর রাত জেগে কুষ্টিয়ার কিছু মণ্ডপ ঘুরে বেড়াচ্ছি। শিশুদের ছোটাছুটি, আতশবাজি, হ‌ইহুল্লোড়, প্রসাদ-আস্বাদন, আলোকসজ্জা, রাত জেগে আড্ডা। বেশ কঠিন এক আরাধনার মহা-আয়োজন। উপবাসব্রত পালন করছেন যাঁরা, তাঁদের অপেক্ষা...কখন মায়ের পুজো সমাপন হবে। দৈহিক কষ্টের পরেই মানসিক স্বস্তি।

শক্তিপূজা সহজ কাজ নয়...ইতিহাস সাক্ষ্য দেয়, মনপ্রাণ সঁপে করতে জানলে তা সমস্ত চৈতন্যকে জাগিয়ে দেয়।

(আগ্রহীরা আমার লেখা 'কালীচৈতন্য' পড়তে পারেন।)

তিন। মেয়ে, তুমি হয়তো নিজেকে ভুল বোঝাচ্ছ। দেখো, একটা সম্পর্ক তৈরি করতে নিজেকেও অনেক অনেক কিছু ছাড় দিতে হয়। অনেক কিছু দেখেও দেখিনি, বুঝেও বুঝিনি ধরে এগিয়ে যেতে হয়। সবসময় সব কিছুতে অন্যের দোষ যে ধরো, তোমার নিজের কি কখনো ভুল হয় না?

তুমি একেবারেই মানুষ ছাড়া একা বাঁচাতে পারবে? সমাজ ছাড়া? যদি অন্য সবার দোষগুলোকে পাশ কাটিয়ে না দেখে হলেও সম্পর্কে থাকা যায়, তাহলে ভালোবাসার মানুষ কি আর পাঁচটা মানুষের মতো মানুষ না? কেবল তার ক্ষেত্রেই কেন তুমি তাকে ফেরেশতা আশা করে বসে থাকো? সে-ও উঠতে বসতে ভুল করে করে শিখবে, কিন্তু একজন মানুষের কাছে অতিআশায় সবগুলো দরজাই যদি বন্ধ করে দাও, তাহলে সে তোমাকে বুঝতে পারবে? শোনো, একটা রিলেশনশিপ বিল্ডআপ করতে হয়, বছরের পর বছর ধরে গাছ লাগানোর মতো করে বিল্ডআপ করতে হয়; শুরুতেই যে তুমি সব কিছু আশা করে বসে থাকো, এটা কিন্তু অস্বাভাবিক।

আর শোনো, মেয়ে, এত পুরুষবিদ্বেষী হতে নেই। ভেবে দেখো, একটা মেয়ে যে কিনা পুরুষদের দেখতেই পারে না, আই মিন, কোনো পুরুষকে সে বিয়ের জন্য ভরসাই পায় না, অথচ একই সময় সে একটার পর একটা পুরুষের সাথে রিলেশন করেই যাচ্ছে! এর মানেটা তাহলে কী? সে পুরুষবিদ্বেষী, অথচ পুরুষ ছাড়া সে চলতেও পারে না। তাহলে কেমন হলো ব্যাপারটা?!

চার। এত কেঁদে লাভ নেই; বরং কান্নার কারণ থেকে নিজেকে সরিয়ে আনতে হয়। এ পৃথিবী অশ্রুওয়ালাদের জন্য নয়, হাসিওয়ালাদের জন্য‌ও নয়, কেবলই চেষ্টাওয়ালাদের জন্য। সারাক্ষণই কাঁদলে চেষ্টা কখন করবেন? আর চেষ্টা না করলে অবস্থান বদলাবে কেন? আপনি যে-কারণেই কাঁদুন না কেন, তাতে কারও কিছুই এসে যায় না। যার জন্য কাঁদছেন, সে যা করে ভালো আছে, সেই কাজটির কাছে আপনার অশ্রুর সত্যিই কোনো দাম নেই। যে একবার চলে গেছে, সে চলে যেতে শিখে গেছে, তাই সে ফিরে আসতে চাইলেও তাকে আর আসতে দেবেন না। তার কথা ভেবে এমন পাগলের মতন কাঁদছেন, যে আপনাকে সারাদিনে এক বারও মনে করে না! একতরফা ভালোবাসা সুন্দর, তবে একতরফা পাগলামি কুৎসিত। নিজের ব্যর্থতা বা দুর্বলতার কথা ভাবলে যদি কান্না পায়, তাহলে বরং নিজেকে তৈরি করতে নির্ঘুম রাত কাটান---কান্নাকাটি মানেই অহেতুক সময় নষ্ট করা।

নিজেকে ব্যস্ত রাখুন, নিজেকে ব্যস্ত রাখতে শিখুন। আজাইরা অবসর আজাইরা মানুষের জন্ম দেয়।

পাঁচ। আমার দুঃখ যত বাড়ে, অন্যের সুখ সহ্য করার ক্ষমতা ততোধিক বাড়ে।

ছয়। ধরো, তুমি উঁচু বেতনের একটা জবের অফার পেলে; সেই সাথে গাড়ি আর বাড়িও—অন্যান্য সকল সুযোগ-সুবিধাও আছে; কিন্তু শর্ত হচ্ছে, তুমি সেই চাকরির টাকা নিজের ইচ্ছেমতো খরচ করতে পারবে না, নিজের পছন্দের জিনিস কিনতে ও খেতে পারবে না, আবার সেই গাড়ি আর বাড়ি কেবল তুমিই ব্যবহার কর‍তে পারবে—তোমার পরিবারের অন্য কেউ বাড়িতে থাকতে এবং গাড়িতে চড়তে পারবে না; তাহলে এই টাকা আর এত সুযোগ-সুবিধা দিয়ে আসলে তুমি কী করবে?

ধরো, তুমি এমন একটা মেয়েকে বিয়ে করলে, যে তোমাকে প্রচুর ভালোবাসে, সে দেখতেও ভীষণ সুন্দর, চালচলনে স্মার্ট; কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, বিয়ের পর সে তোমাকে রান্না করে খাওয়াতে পারবে না, তোমার সাথে সেক্স করতে পারবে না এবং তোমাকে কোনো সন্তান দিতে পারবে না। এখন এই মেয়েকে কি তুমি বিয়ে করবে, শুধু এ কারণে যে, সে তোমাকে অনেক ভালোবাসে এবং দেখতেও বেশ সুন্দরী?

ধরো, তোমার বরের অনেক অনেক টাকা-পয়সা; কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, সেই টাকায় তোমাকে তার পছন্দসই জিনিস কিনতে এবং পরতে হবে; শুধু তা-ই নয়, বিপদে-আপদে, প্রয়োজন বা অপ্রয়োজন কিংবা নিতান্ত শখের পেছনেও তুমি খরচ করতে পারবে না! তাহলে এমন পয়সাওয়ালা কোটিপতি বর দিয়ে আসলে তোমার হলোটা কী?

মানুষ জীবনে কীজন্য এমন বিয়ে করে, যেখানে সে একটা বিয়ের সাইনবোর্ড ছাড়া আর কিচ্ছু পায় না? আমি জানি না এমন জীবনের আদৌ কোনো মূল্য আছে কি না!

কোটি টাকার মালিককে বিয়ে করে তার পছন্দসই জীবনে বাঁচা আর সামর্থ্যের অভাবে ডালভাত খেয়ে বাঁচা—দুটোই কেন জানি আমার সেইম মনে হয়, বরং দ্বিতীয়টিতেই আত্মসম্মানবোধ বজায় থাকে। এমন কোনো সম্পর্কে নিজেকে বেঁধে ফেলে যদি নিজের পছন্দসই সামান্য একটা পোশাকও পরতে না পারি, তাহলে এমন বিয়ে করে আমি আসলে কাকে স্যাটিসফাই করব?

আমি জানি, বাংলাদেশের অজস্র মেয়ে রোজই নিজেকে মেরে ফেলে হলেও এভাবেই সংসার করে যাচ্ছে, সম্পর্ক টিকিয়ে রাখছে, কিন্তু আমি হয়তো ততটা স্যাক্রিফাইসিং মানসিকতার মেয়ে এখনও হতে পারিনি, আর এজন্যই আমাকে কেউ পছন্দ করে না। এদিকে আবার জোর করে নিজেকে বদলে ফেলতেও পারছি না। নিজের স্বাধীন জীবনটাকে বিয়ের মতো এমন অপরিপক্ব একটা বাঁধন—যেখানে টিকে থাকতে গেলে প্রতিমুহূর্তে নিজের পছন্দ, খুশি এবং সুখের সাথে কম্প্রোমাইজ করতে হয়—কেন জানি সেই জীবনটা আমার কাছে একটা বদ্ধ খাঁচা ছাড়া আর কিচ্ছু মনে হয় না।

জানি, আমি একটু বেশিই বাড়াবাড়ি করে ফেলছি, কিন্তু অন্যের পয়সায় এমন বিলাসিতা কোনোভাবেই আমাকে টানে না। হয়তো এসব কারণেই জীবনে কোনোদিনই একজন সঙ্গী আমি পাবো না।

ভাবনা: নয়- শো তিরানব্বই
………………………………………………………………

এক। আপনি আমাকে আইডল মানেন।
নিজের ইচ্ছাতেই মানেন, আমি মানতে বলি নাই কিন্তু!

ঠিক আছে, বুঝলাম, আইডল মানেন।
এখন আপনার কথা হলো, আমার এইটা আপনার পছন্দ না, ওইটা আপনার পছন্দ না; আমি কেন এমন করব, আমি কেন তেমন করব, ব্লা ব্লা ব্লা...

ফাজিলের বাদশাহ!

আপনি আমাকে আইডল মেনেছিলেন কেন? আমি বলেছি মানতে? আপনার এই আইডল মানা না মানায় আমার কিছু এসে যায়? সবচাইতে বড়ো কথা, আমার যা-কিছুর জন্য আপনি আমাকে আইডল মেনেছিলেন, সেগুলির ধারেকাছেও আপনি যেতে পেরেছেন কিংবা যেতে পারবেন আদৌ?

শাহরুখ খানকে আইডল মানলে একটা 'জাওয়ান' পয়দা করে দেখান অথবা আপনার নিজের সেক্টরে সেই লেভেলের কিছু-একটা করে দেখান; "শাহরুখ কেন সিগারেট খায়? ধূমপান তো স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর।"-মার্কা ডায়লগ পয়দা করতে আসবেন না। শাহরুখ খানের একগাল ধোঁয়ার দাম আপনার পুরো জীবনের দামের চাইতেও অনেক অনেক বেশি। এই সামান্য বুদ্ধিও মাথায় নাই যার, তার জ্ঞান জাতির কোনো কাজে আসে না।

আমি আপনার বাসায় তো ভাই পুলিশ পাঠাই নাই আমাকে আইডল মানার জন্য! কিংবা আপনি আমাকে আইডল মানার কারণে আমার আয়, মেধা বা রতিক্ষমতা তো বাড়ে নাই, তাই না?

আপনি আমার লেখা পড়েন নিজের ধান্দায়, আমার স্পিচ শোনেন নিজের ধান্দায়, আমাকে আইডল মানেন‌ও নিজের ধান্দায়। বাই দ্য ওয়ে, আমি যা করি, তা-ও করি নিজের ধান্দায়---ভালো লাগে বলেই করি, আপনার উপকারের জন্য কিছু করি না। বলতে পারেন, আমাকে আপনার ভালো লাগে। কাউকে ভালো লাগানোটা বিশাল একটা গুণ হলেও, কাউকে ভালো লাগাটা একধরনের মেন্টাল প্রবলেম।
যে কুত্তাটাকে পালেন, সেটাও তো আপনার মনের মতন চলে না। আর যে আপনাকে চেনেই না, আপনি আশা করেন যে, সে আপনার মনের মতন হবে! আই মিন, সিরিয়াসলি?! জাজমেন্টাল মোরন!

আপনাকে ধন্যবাদ। আপনার জন্য‌ই ছাগল উৎপাদনে আমাদের অবস্থান বিশ্বে চতুর্থ।

দুই। বেশিরভাগ স্ত্রীই সেই বাজে বসের মতন, যিনি তাঁর কর্তৃত্ব কায়েম করেন স্রেফ গলার জোরে। চুপচাপ মেনে নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার থাকে না, কেননা ওঁরা যুক্তির পরোয়া করেন না।

তিন। হে প্রেমিকপুরুষ! তুমি মেয়েদের মন এত বোঝো, আর বিসিএস প্রিলি পাশ করতে পারো না, তাই না? মিয়া, এবিসিডি শিখাও আমারে? মশকরা করো আমার লগে?

যে অন্তত একটা মেয়ের সাথে সফলভাবে প্রেম করতে পারে, তার পক্ষে রকেট বানানোও সম্ভব, বিসিএস তো তুচ্ছ জিনিস! তবে হ্যাঁ, যে হাজার ছেলের সাথে সফলভাবে প্রেম করতে পারে, তার পক্ষে মুখ ভ্যাটকানো বা দাঁত খিঁচানো বাদে আর কিছুই করা সম্ভব না-ও হতে পারে, কেননা ছেলেরা অনেক সহজসরল, মেয়ে দেখলেই প্রেমে পড়ে যায়; এমনকি ওদের মেইনটেইন করা একটা কুত্তা পালার চাইতেও সহজ—কুত্তাকেও মাঝে মাঝে তেলাইতে হয়, একটা ছেলেকে তা-ও করা লাগে না, তুমি খালি মেয়ে হলেই এনাফ!

ছেলেরা কত্ত ভালো—তাকিয়ে একটুখানি হাসলেই হুড়মুড় করে প্রেমে পড়ে যায়! এমনকি তাকাতেও হয় না, নিজেরাই তাকিয়ে থাকে আর হাসে। এতটা অহংকারশূন্য সারল্য এক শিশু ছাড়া আর কারও মধ্যেই আপনি কখনও পাবেন না।

বাংলাদেশের মেয়েরা তাই দুনিয়ায় ল্যান্ড করার পর থেকেই মহাক্ষমতাধর। যার কেউ নাই, তার ঈশ্বর আছেন; আর যদি সে হয় মেয়ে, তাহলে ঈশ্বরের পাশাপাশি সব ছেলেও তার পাশে আছে!

জীবন সুন্দর; আসেন, সবাই মিলে কুষ্টিয়ার খাজা খাই, তার সাথে কুলফি-মালাই!

চার। Sometimes, I hate to be honoured.

পাঁচ। আমার এক বন্ধু শান্তির আশায় বাংলাদেশ ছেড়ে কানাডায় গিয়েছিল। কিন্তু বেচারা খেয়ালই করেনি যে, সে তার বউকে সঙ্গে করে নিয়ে যাচ্ছে! এখন আমার বন্ধুটি আফসোসে মরে এই ভেবে যে, যার সঙ্গে ব‌উ আছে, তার কিবা দেশ‌, কিবা বিদেশ! এর চাইতে দেশে থাকাই তো তার জন্য বেশি শান্তির ছিল! বিদেশি অশান্তির চাইতে দেশি অশান্তিই বরং দামে কম, মানে ভালো। ব‌উ সঙ্গে থাকলে কানাডার বরফেও সারাক্ষণ আগুন জ্বলে!

(এই পোস্টের সাথে কারও জীবন মিলে গেলে তা নিতান্তই অভিপ্রেত ও মোটেই কাকতালীয় নয়!)

ছয়। যে-মেয়েটা যাকেই দেখে, দুমদাম তার প্রেমে পড়ে যায়, সে-ও সামান্য একটা চুলের ক্লিপ‌ দশদোকান ঘুরে ঘুরে কেনে!

সাত। ছ্যাঁকা না চাইলে...বন্ধু . . . প্রেম করিয়ো না!

আট। পরধর্মবিদ্বেষ‌ই অধার্মিকতার প্রধান লক্ষণ।

নয়। সম্পর্ক সময়ের সন্তান।
বিচ্ছেদ সময়ের জননী।

দশ। ঘুমাই না; ঘুম আসছে না, তা নয়; আমি এমনিই ঘুমাই না। জেগে থাকি আর হাবিজাবি খাই। চানাচুর, বাড়তি বাদাম, গুঁড়ো দুধ, গোলমরিচের গুঁড়া, কফি, বিস্কুট আর চিপসের গুঁড়া একসাথে মিশিয়ে খাই; সাথে আরেকটা জিনিস আছে।

শ্রীরাধাতত্ত্ব বোঝার চেষ্টা করি। ভেরি ইন্টারেস্টিং টপিক এটা!

রাত বাড়ে, ওজন বাড়ে।

এগারো। ছেলেমেয়েরা কখনো বৃদ্ধাশ্রমে পাঠিয়ে দিতে চাইলে আমায় একটা ফোন কোরো, আমি সঙ্গে যাব।

ওখানে একলা থাকতে তোমার কষ্ট হবে।

বারো। আমি খোদার কাছে শান্তি চেয়েছিলাম,
খোদা তোমাকে মিলিয়ে দিলেন।

আমি খোদার কাছে তোমাকে চাইলাম,
আমার শান্তি মিলিয়ে গেল।

তেরো। ঝুলিয়ে রাখার চাইতে যেমন ছেড়ে যাওয়া ভালো, ঝুলে থাকার চাইতে তেমনি ছেড়ে আসাও ভালো। এতে সম্পর্ক না থাকলেও সম্মান থাকে।

চৌদ্দ। আমি প্রতিক্ষণ বাঁচতে চাই। বাঁচতে হলে কিছু দুঃখ লাগে।
মনে করো, আমি যা চাই, তা-ই আছে বা পাচ্ছি…কোনো অপূর্ণতা নেই; তেমন জীবন কেমন একঘেয়ে না, বলো?
তারচে' বরং ভালো যে, তুমি নেই!
এটুকু অপূর্ণতাই জীবন, তোমাকে না পাওয়ার নামই জীবন।

তোমাকে পেয়ে গেলে সমস্ত আকাঙ্ক্ষার শেষ হতো।
দুঃখ ছাড়া সত্যিই বাঁচা যায় না। দুঃখকে মাথার মুকুট করে বাঁচতে জানার নামই জীবন।
তুমিই আমার সেই মুকুট...হৃদয়রাজ্যে।


ভাবনা: নয়- শো চুরানব্বই
………………………………………………………………

এক। পরের মায়ের মুখে গালি খাওয়ার চাইতে নিজের মায়ের হাতে থাপ্পড় খাওয়াও ভালো।

দুই। দুঃখ হচ্ছে বুদ্ধিমত্তার জাকাত।

তিন। যে তোমাকে ভালোবাসে, তার আবেগের দাম দিতে শেখো। তাহলে দেখবে, বাজেভাবে হেরে গিয়েও শেষমেশ দারুণভাবে জিতে গেছ।

চার। পাত্তা দিলে অনেক কিছু, পাত্তা না দিলে কিচ্ছু না! ভয়কে পাত্তা না দিলে ভয় চলে যায়। এটা যে-কোনো ভয়ের বেলাতেই সত্য।

পাঁচ। অনেকেই আমাকে পেইজের হোয়াটসঅ্যাপে নক করে জিজ্ঞেস করেছেন: আপনি শ্রীরামকৃষ্ণ ঘরানার দর্শনের প্রতি এতটা অনুরক্ত কেন?

উত্তরটা ভিন্নভাবে দিই। বৌদ্ধ-জৈন-খ্রিষ্ট-সুফি-শিখ দর্শন ছাড়াও আমি শ্রীঅরবিন্দ এবং স্বামী নিগমানন্দ ঘরানার দর্শনের প্রতিও গভীরভাবে অনুরক্ত। আরও বেশ কিছু আছে; সময়ে সময়ে লিখব।

বোধ হয়, আমার অবস্থানটা বোঝাতে পেরেছি।

ছয়। যোগ-ব্যায়াম শেখার জন্য 'আয়রন ম্যান'-খ্যাত শ্রীনীলমণি দাশের চাইতে ভালো বই বাংলাভাষায় আজ পর্যন্ত আর কেউ লেখেননি। আজ থেকে ৬৬ বছর আগে বের-হ‌ওয়া এই বইটি বহু আগেই ক্লাসিকের মর্যাদা পেয়েছে। ভদ্রলোক সারাজীবনই স্বামী বিবেকানন্দের আদর্শে চলেছেন, সবাইকে চলতে অনুপ্রাণিত করেছেন।

আজ চট্টগ্রাম রামকৃষ্ণ মিশনের বুকস্টল থেকে বইটি আবারও কিনলাম। মজার ব্যাপার, এই বইয়ের সাহিত্যমূল্যও উঁচুমানের—পড়লেই বুঝবেন। বইয়ের লেখক ছিলেন একজন সাধক এবং নামকরা গবেষক। তৎকালীন বাঙালি বিদ্বৎসমাজ শ্রীনীলমণি দাশকে বিশেষ সম্ভ্রমের চোখে দেখতেন।

সাত। সবসময় নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন না। আপনি যত‌ই স্বচ্ছতা বা সারল্য নিয়ে কাজটি করুন না কেন, লোকে প্রায় সময়ই এটাকে দুর্বলতা ভাবে।

একটা সহজ বুদ্ধি শিখিয়ে দিই: নিতান্তই বাধ্য না হলে কখনও কারও কাছে নিজের অবস্থান ব্যাখ্যা করবেন না।

আট। আপনাকে কেউ বিরক্ত না করলে আপনিও তাকে বিরক্ত করবেন না।

এই সহজ কথাটা বুঝতে রকেট-সায়েন্টিস্ট হ‌ওয়া দূরে থাক, পড়াশোনাও জানা লাগে না, কেবল কমনসেন্স থাকলেই চলে।

ডেসটিনি'র লোকজন মানুষকে বিরক্ত করত, কারণ ওখানে জয়েন করলে ওরা কমিশন পেত। কিন্তু লোকজনকে স্বর্গের লোভ দেখিয়ে বিরক্ত করলেও কি কমিশন পাওয়া যায়?

ডেসটিনি'র লোকজন বলত, চলো, একসাথে ধনী হ‌ই।
আর নব্য-ডেসটিনিওয়ালারা বলে, চলো, একসাথে মরে যাই। (আই মিন, না মরলে তো ওদের কল্পিত স্বর্গে যাবার আর কোনো পথ নেই!)

আমি নরকেই যাব, আপনার কোনো সমস্যা? আমি না সত্যিই কনফিউজড!
প্রতিটি ধর্মই সুন্দর ও মূল্যবান। ধার্মিকতা অনেক উঁচু স্তরের বিষয়। একে বেহায়াপনার স্তরে নামিয়ে আনবেন না। আপনাদের এসব দেখলে যে-কোনো সভ্য লোকই হাসাহাসি করে।

আমি স্বর্গের লোভে যেমন 'চাপিয়ে-দেওয়া ধর্ম' পালন করি না, তেমনি নরকের ভয়েও 'চাপিয়ে-দেওয়া অধর্ম' থেকে সরে আসি না।

কাউকে বিরক্ত করা যাবে না, কারও ক্ষতি করা যাবে না। ধর্ম পালন করতে যদি এই দুইয়ের বাইরে আরও বেশি কিছু বুঝতে হয়, তাহলে আমার সেই ধর্মের দরকার নেই।

স্বর্গওয়ালা থেকে সাবধান!

নয়। পর যখন শত্রু হয়, তখন যতটা ক্ষতি হয়, তার চাইতে অনেক বেশি ক্ষতি হয়—ঘর যখন পর হয়, তখন।

দশ। যখন কারও কাছে বন্ধুত্বের চাইতে পেশাগত পরিচয় বড়ো হয়ে যায়, তখনও তার সাথে বন্ধুত্ব রাখা খুব কঠিন। যত কষ্টই হোক, কিছু বন্ধুত্বের মৃত্যুদৃশ্য প্রত্যক্ষ করতেই হয়।

এগারো। দানের পুণ্য প্রচারে খায়।

বারো। একাধিক মহিলা যখন পারস্পরিক শান্তি নষ্ট না করেই দীর্ঘদিন একসাথে থাকতে সক্ষম হন, তখন সেটা পৃথিবীর অন্যতম বিরল ঘটনা।

মেয়েরা ভালোবাসে এবং ভালোবাসার নামে শান্তি নষ্ট করে। ছেলেরা শান্তি চায় এবং শান্তির প্রয়োজনে ভালোবাসা নষ্ট করে।

তেরো। যত পরিচয়, তত অপচয়।

চৌদ্দ। নিজের প্রশংসা শুনলে বিরক্ত হতে শেখো। ওরা ওসব সিরিয়াসলি বলে না।

নিজের নিন্দা শুনলে উপেক্ষা করতে শেখো। ওরা ওসব জেনেবুঝে বলে না।

তুমি জানো, তুমি কী। এর বেশি বা কম যে যা-ই বলুক, তা তোমার জন্য প্রযোজ্য নয়।

পনেরো। অকর্মণ্য পুরুষ ধীরে ধীরে অমানুষ হয়ে ওঠে। তাই অকর্মণ্য পুরুষ থেকে সাবধান!

ষোলো। যার পেছনে লাগবেন, আজীবন তার পেছনেই থাকবেন।

মিলিয়ে নেবেন।

সতেরো। আদর করে আগুনের পাশে বসিয়ে রাখলেও ভালো লাগে, কিন্তু ভুল বুঝে মাথায় করে রাখলেও অস্বস্তি লাগে।

আঠারো। কিছু মানুষ ফুটবলের মতো---ওদের দেখলেই লাথি মারতে ইচ্ছে করে, লাথি মারতে না পারলেই বরং একধরনের অপরাধবোধ কাজ করে। যারা ওদের লাথি মারে এবং মেরেই চলে, তারা কি এক বারও ভাবে, এমনি করে নিরীহ ফুটবলের মতো লাথি খেয়ে খেয়ে জীবন কাটাতে হলে তাদের কেমন লাগত! ভাবে না; কেননা বিনা কারণে লাথি খাওয়ার কষ্ট যে কতটা বেশি, তা তো ওরা বুঝতে পারে না। ধর্ম ওদের বিশ্বাসে, কাজে নয়।

এ জগতে মাত্র তিন ধরনের মানুষ আছে: ফুটবল, ফুটবলার, দর্শক।

উনিশ। ছ্যাঁকা খাও পেট ভরে,
কাঁদো দাঁত বের করে।

বিশ। পৃথিবীতে মানুষের কত কষ্ট! যখন কেউ কষ্টে থাকে, তখন তার কাছে গোটা পৃথিবীটাই কষ্টের লাগে। কষ্ট মানুষের পৃথিবীকে ছোটো করে দেয়। আর আনন্দ পৃথিবীটাকে অনেক বড়ো করে তোলে। এ কারণেই সুখী মানুষের পৃথিবীটা বড়ো।

যখন কষ্ট হয়, মানুষের সেই কষ্টের পৃথিবীতে সে একা। সে চাইলেও কাউকে সেই কষ্টের ভাগ দিতে পারে না, কেউ তা নিতেও পারে না। কিন্তু আনন্দের ভাগ সহজেই দেওয়া যায়। নিজের কষ্টের কিছু ভাগ অন্যকে দেওয়া গেলে কবরের অনেক মানুষ আজও বেঁচে থাকত।

কষ্ট মানুষকে পোড়ায়---কেউ পুড়ে সোনা হয়, কেউবা ছাই।

একুশ। আপনি বুকে টানতে পারেন, কিন্তু পায়ে ঠাঁই দিতে পারেন না।
. . . ভয়ে!
যদি আশীর্বাদ করতে হয়, তাই।

বাইশ। ভোলে না কেউই, শুধু প্রয়োজন ফুরিয়ে যায়।

তেইশ। : কষ্ট কী?
: যা থেকে শেখা যায়।
: তাহলে যা কাঁদায়, তা কী?
: দুর্বলতা।

চব্বিশ। হেসে জীবন কাটিয়ে দিলে কিছু শেখা যায় না।
কেঁদে জীবন কাটিয়ে দিলেও কিছু শেখা যায় না।
জীবনে কিছু শিখতে চাইলে গুরুর পায়ের কাছে মাথা নত করে বসতে হয়।

সর্বশ্রেষ্ঠ গুরু কে?
দুঃখ।

সর্বনিকৃষ্ট গুরু কে?
সুখ।

পঁচিশ। গরিব হ‌ওয়ার দুঃখের চাইতে ধনী থেকে গরিব হ‌ওয়ার দুঃখ অনেক বেশি।

ছাব্বিশ। বয়ফ্রেন্ড বিসিএস ক্যাডার হবার পর ব্রেকআপ করে ফেলতে চাইছে?
গার্লফ্রেন্ড বিসিএস ক্যাডার হবার পর ব্রেকআপ করে ফেলতে চাইছে?

অতিদ্রুত রাজি হয়ে যান! এমন সুবর্ণ সুযোগ হেলায় হারাবেন না! ঈশ্বর আপনাকে ভালোবাসেন বলেই, এক বিশ্ববাটপারের হাত থেকে আপনাকে সারাজীবনের জন্য বাঁচিয়ে দিতে তাঁকে কৌশলে বিসিএস ক্যাডার বানিয়ে দিয়েছেন। ব্যাবসা এক জিনিস, ভালোবাসা আরেক জিনিস।

(Thank me later.)

সাতাশ। সৃষ্টিশীল মানুষের সবচাইতে বড়ো শত্রু নিঃসঙ্গতার অভাব।