সুখের অভিনয়

চেস্টার বেনিংটন। লিংকিন পার্কের কালজয়ী এই ভোকালিস্ট একদিন নিজের বেডরুমে ঢুকে গলায় দড়ি পেঁচিয়ে হঠাৎ ফ্যানের সাথে ঝুলে পড়েন। মুহূর্তেই চিরস্তিমিত হয়ে গেল কোটি মানুষের প্রিয় কণ্ঠস্বরটি।

মেরিলিন মনরো, যাকে এক বার দেখার জন্য মরিয়া হয়ে উঠত অগণিত মানুষ, এক বিষণ্ণ সুন্দর রাতে ওষুধের ওভারডোজ গ্রহণ করে চিরতরে ঘুমিয়ে পড়লেন। পেছনে রেখে গেলেন মিলিয়ন ডলারের সম্পত্তি আর কোটি কোটি অশ্রুস্নাত চোখ।

এভিলিন ম্যাকহোল। সামনের মাসেই বিয়ে হবে প্রেমিকের সাথে। মৃদু হাসতে হাসতে ৮৬ তলায় উঠে দপ্ করে লাফিয়ে পড়লেন নিচে, যার মৃত্যুকে বলা হয় "পৃথিবীর সুন্দরতম আত্মহত্যা"।

উপরের তিন জনের প্রত্যেকেই স্ব স্ব ক্ষেত্রে অতিসফল। কেউ খ্যাতির শীর্ষে, কেউবা রূপে অনন্যা, আবার কেউ ভালোবাসার মানুষটিকে পাবার প্রাপ্তিতে পরিপূর্ণ। তবুও সোনার মুকুটের কোথায় যেন খাদ থেকে যায়। ঝিনুকের খোলসে থাকা মুক্তোর মতোই কার দুঃখ কোথায় যেন লুকিয়ে থাকে।

একজনের কাছে যা জীবনের সবচেয়ে মূল্যবান বস্তু, অন্যজনের কাছে তা নিতান্তই ফেলনা ছাই, ভাঙাকুলা মাত্র। একজনের কাছে যা বহুল আকাঙ্ক্ষিত বিষয়, অন্যজনের কাছে তা চরম বিরক্তির ব্যাপার।

কেউ চরম আর্থিক অনটনে ক্ষুধার জ্বালা সইতে না পেরে আত্মহত্যা করে, অন্য কেউ মিলিয়ন মিলিয়ন ডলারের ধনসম্পদ পেছনে ছুড়ে ফেলে আত্মহননের পথে হাঁটে। কার সুখ যে কোথায়, কার জীবনের অর্থ যে কীসে, কার ব্যথা যে কোথায় লুকিয়ে থাকে, সেটা আমরা কেউই অনুমান করতে পারি না।

জীবন এমনই। একেকজনের কাছে জীবনের অর্থটা একেকরকম। একেকজনের কাছে সফলতার মানেও ভিন্ন ভিন্ন।

যাকে দেখে আপনি সফল ভাবছেন, সফলতার মানে তার কাছে হয়তো অন্য কিছু। যাকে দেখে ভীষণ সুখী ভাবছেন, মুদ্রার ওপিঠে তার সুখ হয়তোবা অন্য কোথাও।
আপনার কাছে সফলতার মানে হলো দামি একজোড়া জুতো পায়ে পিচঢালা রাস্তায় হাঁটা, অন্যদিকে দামি জুতোপরা কারুর কাছে সফলতা মানে খালিপায়ে ঘাসের উপর হাঁটা। আবার দুই-পা-পঙ্গু কার‌ও কাছে সফলতার একটাই মানে: নিজের ভাঙা দু-পায়ের উপর ভর দিয়ে আলতো করে এক বার হলেও দাঁড়াতে পারা।

এ পৃথিবীর বেশিরভাগ মানুষই অসুখী, কেননা মানুষকে অন্যের ব্যাকরণ মেনে সুখী হবার অভিনয় করতে হয়। করতে হয়... ঝামেলা এড়াতে, প্রিয় মানুষকে হাসিখুশি দেখতে। এই অভিনয় করতে করতে একসময় মানুষ ক্লান্ত হয়ে পালিয়ে যাবার সিদ্ধান্ত নেয়। তখন দেখা যায়, তার প্রস্থানে ওরাই সবচাইতে বেশি কাঁদে, যাদের মনের মতো করে চলতে গিয়ে সে ক্রমশ ক্লান্ত ও নিস্তেজ হয়ে পড়েছিল। আহা রে জীবন! কী প্রহসন!