সিলেবাস

শোনো, আমার গায়ের রং চাপা, আমার চোখের নিচটা কালি-পড়া। আমার কোমর পর্যন্ত বিস্তৃত একরাশ রেশমি চুল নেই। ও, ভালো কথা, আমি কিন্তু ছেলেদের সাথে কথা বলি, এমনকী ওদের পাশে বসে দরকারি কোনও কিছু নিয়ে নির্দ্বিধায় ডিসকাস করি। ওই যে সবসময়‌ই টিপটপ থাকা মেয়েরা, ওদের মতন আমি দশমিনিটের মধ্যে সুন্দর করে একা একা শাড়ি পরতে পারি না, শাড়ির কুঁচি ধরতে আমার কাউকে লাগে অবশ্যই। শুধু তা-ই না, আমার কাজল দেওয়া বেশিরভাগ সময়ই সুন্দর হয় না, লেপটে থাকে, আর আইলাইনার তো জীবনেও দু-চোখে সমান করে দিতে পারব না, বাজি ধরে বলছি। হা হা হা

আমি হুট করে ফ্রেন্ডদের সাথে ভরাসন্ধ্যায় বেরিয়ে পড়ি। যেহেতু চুল ছোটো আমার, বেলিফুল লাগাতে পারি না চুলে।

আমি তোমার তুলনায় বেশ খাটো এবং বেশ ভারী-টারী, মানে সোজা বাংলায় আমি মোটা। ফিরিস্তি দেওয়া শেষ হলো ভেবেছ? আরে, লিস্ট তো অনেক দীর্ঘ, কেবল শুরু করলাম মাত্র! আমি অত্যন্ত অস্থির টাইপের আর মাঝে মাঝে ঝগড়াটেও। ঝগড়াটে না বলে ঠোঁটকাটাও বলতে পারো, আরও ভালো হয় যদি স্ট্রেইটফরোয়ার্ড বলো।

আমি পড়াশোনায় তো ভালো নই-ই, আবার রান্নাবান্নায়ও যাচ্ছেতাই। একজন বাঙালি স্থূলদেহী নারী, যে কিনা পড়ায়ও ভালো না, রান্নায়ও ভালো না, তার সমাজে আর বিয়ের বাজারে কী অবস্থা, ভাবতে পারো?

আমি লেখাটা শেষ করি, তুমি সময় নিয়ে ভেবো, কেমন?

আমার বানানো রুটি কখনোই গোল হয় না, হবেও না এজন্মে, বুঝে গেছি।

বিয়ের পর বাচ্চাদের পড়াতে পারব, ওরকম ধৈর্য কিংবা ম্যানেজ করার ক্ষমতা আমার মধ্যে নেই। না, তোমার মতো এত ধীরস্থির, পরিশ্রমী আমি নই।
এবার তাহলে বোঝো, আমি কী জিনিস!

এখন মূলকথায় আসি। কেন তোমাকে এত কিছু বলছি, বুঝতে পেরেছ? তোমার মতন পড়ুয়া, বইয়ে মুখ-গুঁজে-থাকা আঁতেল যে এটা বুঝবে না, সেটা আমি জানি।
শোনো, আমি তোমাকে ভালোবাসি। 'আমাকে কি তুমি বিয়ে করবে?' বলতে এই চিঠি আমি লিখছি না। 'আমাকেই তোমার বিয়ে করতে হবে', এটা বলতে এই চিঠি লিখছি।

হ্যাঁ, আমাকে বিয়ে করলে হয়তো আমাদের বাচ্চা-কাচ্চারা লম্বা হবে না, কিউট হবে না, আবার অতটা মাথাওয়ালাও হবে না। আরে, সেজন্যই তো তোমাকে আমি বিয়ে করব। বাবার ছয় ফুট হাইট, ফরসা চামড়া আর দুইমিনিটে ফটাফট ডিফারেন্সিয়েশন করে ফেলতে পারার যোগ্যতা তাহলে কী কাজে লাগবে?

বিয়ের আগেই আমি বলে নিচ্ছি, তোমাকে ভালোবাসি, এটাই আমার একমাত্র যোগ্যতা।

তুমি কীসব স্ট্যাটাস দাও, 'আলহামদুলিল্লাহ, সিজিপিএ ফোর আউট অব ফোর!' 'আজ মাত্র সোয়া বারো ঘণ্টা পড়তে পেরেছি, কারণ অসুস্থ।' 'যাদের রেজাল্ট খারাপ, তাদের একমাত্র যোগ্যতা হচ্ছে ভালোবাসতে পারা।'

এসব স্ট্যাটাস আমি পড়েও দেখি না। তবে তুমি ক্লাসে ফার্স্ট হও যেহেতু, এইটুকুন বোকা বোকা স্ট্যাটাস দেবার অধিকার আমি তোমাকে দিচ্ছি।

আর একটা কথা, তোমার ফ্যামিলির রেওয়াজগুলো এত অদ্ভুত কেন, বলো তো? 'স্বামীর নাম ধরে ডাকা যাবে না, অমুকের বাবা বলে ডাকতে হবে।' 'বিয়ের সময় নাকি মেয়েদের সহজে কবুল বলতে হয় না।'... আরও কত-কী!

আমি স্বামীর নাম ধরে ডাকব না তো কি স্বামীর বন্ধুর নাম ধরে ডাকব? 'অমুকের বাবা' বলে ডাকলে অমুক'টা জন্মাবে কোথা থেকে? (লজ্জা পেয়ো না, ফার্স্ট বয়!)
আর যাকে বিয়ে করব বলে বিয়ের আসরে কনে সেজে গেছি, তাকেই কবুল বলার সময় অমন অজ্ঞান হয়ে যেতে হবে হবে কেন? বিয়েতে কেউ এত অভিনয় কীভাবে করে!?

আমি পারব না এসব করতে, আগেই বলে দিচ্ছি। তুমিও বাসায় বলে দিয়ো। আর নিজেকে স্পষ্টভাবে বলে দিয়ো, শুধু তোমাকে ভালোবাসা ছাড়া আর কিছুই করতে পারব না আমি। শুধু এই ভালোবাসতে পারার জন্যই আমাকে তোমার বিয়ে করতে হবে। যেগুলো পারি না, তুমি শিখিয়ে দিয়ো, অনেক চেষ্টাতেও যদি না পারি, তবে ওগুলো ওভাবেই পড়ে থাকবে, শেখা লাগবে না। ভালোভাবে বাঁচতে গেলে সব কিছুই শিখতে হয় না।

শোনো, তোমাকে আমি খুব ভালোবাসি। ফেইসবুক বা মেসেঞ্জারের ভালোবাসা না, আশির দশকের কবরীর মতন, "বরফি" সিনেমার প্রিয়াঙ্কা চোপড়ার মতন, আর "হাজার বছর ধরে"র টুনির মতন। ভালোবাসি মানে শুধুই ভালোবাসি। আমার এই ভালোবাসা 'আই লাভ ইউ'-ওয়ালা ভালোবাসার মতন না, 'আমি তোমাকে ভালোবাসি'-র মতন ভালোবাসা।

ফার্স্টবয়কে কি সিলেবাসটা বোঝাতে পেরেছি? হি হি হি…