সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার টেকনিক

মাত্র দশ মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখা যে কতটা কাজের, সিদ্ধান্ত নেবার ক্ষেত্রে, তা আপনি ভাবতেই পারবেন না! তো যখন আমরা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করি, ভাই রে, কারও কারও ক্ষেত্রে, দশ মিনিট কেন, দশ বছর‌ও সে যদি চোখ বন্ধ করে রাখে, তার পরেও কোনও সিদ্ধান্তে আসতে পারবে না---এইরকম মানুষকেও আমি চিনি।




আপনি যখন কোনও একটা সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে যান, তখন আপনাকে আপনার চিন্তাভাবনা এবং আপনার কাজগুলো সেই সিদ্ধান্তকেন্দ্রিক করে ফেলতে হবে। আপনি যত বেশি অপ্রয়োজনীয় কাজ করবেন, আপনি যত বেশি ফালতু কাজ করবেন, আপনি যত বেশি অদরকারি কাজগুলোকে আপনার লাইফে জায়গা দেবেন, তত বেশি আপনি আপনার সিদ্ধান্ত থেকে দূরে সরে যাবেন। এর জন্য আপনি নিজেই দায়ী।




এই যে আপনারা বিভিন্ন জায়গায় হেইট কমেন্ট করেন, হেইট স্পিচ দেন, আপনি একটু বলুন তো ভাই, আপনার লাইফে এইগুলোর ভূমিকা কী? আপনি লাইফে কিছু করতে পারছেন না। আপনি যে সমস্ত ফালতু কাজ করে বেড়ান, ওতেই তো আপনার সবটা সময় নষ্ট হয়ে যায়। আপনি লাইফে কিছু করতে পারবেন কোথা থেকে?! ঠিকই তো আছে। আপনার তো কিছুই করতে পারার কথা না। যারা লাইফে বড়ো কিছু করে, যারা লাইফে ভালো কিছু করে, তারা কিন্তু কখনও অপ্রয়োজনীয় কাজ, অদরকারি কাজকে লাইফে জায়গা দেয় না। অপ্রয়োজনীয় ভাবনাগুলোকেও তাদের মাথায় রাখে না।




আপনি যত বেশি আপনার মাথার মধ্যে অপ্রয়োজনীয় ভাবনা রাখবেন, তত বেশি প্রয়োজনীয় ভাবনা থেকে আপনি দূরে সরে যাবেন, তত বেশি আপনার লাইফে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে অসুবিধা হবে। তাই প্রথম কাজই হচ্ছে, আপনার লাইফে যা দরকার নেই, সেটাকে বাদ দিয়ে দিন, একদমই বাদ দিয়ে দিন। কে কী করল না করল, সেটা নিয়ে আপনার কী এসে যায়? সুশান্ত পাল কী লিখল না লিখল, সুশান্ত পাল কী করল না করল---এসব কি আপনাকে ভাত দেবে, না কি দেয়? এসব জানাটা কি আপনার লাইফে কোনও ভূমিকা রাখবে, না কি রাখে? পুরাই আজাইরা!




আমাকে আনফলো করে দিন, ভাই! নিজের লাইফ নিয়ে ভাবুন। আমাকে ফলো করে আপনার কী লাভ হবে? কিছুই হবে না। আর আপনি ফলো করলেও আমার কিছু এসে যায় না, না করলেও কিছু এসে যায় না। একদমই কিছু এসে যায় না। আমার লিখতে ভালো লাগে, আমি লিখব। আমার বলতে ভালো লাগে, আমি বলব। এটাই আমার লাইফ। আমি এভাবেই থাকব। আপনি আমাকে নিয়ে গবেষণা করে কী পাবেন? আপনি একটা অপ্রয়োজনীয় মানুষকে নিয়ে গবেষণা করে কী পাবেন?




আপনি অনেকগুলো কাজ করেন, যে কাজগুলো করার কোনও দরকার নেই। আপনি ঘোরাঘুরি করেন, মজা করেন! ভাই, সব মজা তো একসঙ্গে পাবেন না। আপনি কিছুতেই সব মজা একসঙ্গে পাবেন না। একটা মজা পাবার মানে হচ্ছে, আরেকটা মজাকে লাইফ থেকে বাদ দিতে হবে। যদি আপনি লাইফে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে না পারেন, তার জন্য সব থেকে বড়ো দোষী মানুষটা হচ্ছে আপনি নিজে। কারণ আপনি আপনার লাইফবুকে কিছু আননেসেসারি চ্যাপ্টারকে জায়গা দিয়েছেন, এইজন্য আপনার জন্য যেগুলো নেসেসারি চ্যাপ্টার, সেগুলোকে আপনি জায়গা দিতে পারছেন না। তাই এখানে সব থেকে বড়ো দোষী মানুষটা আপনি নিজে।




প্রথম কথা হচ্ছে, লাইফে যেগুলোর দরকার নেই, সেগুলোকে লাইফ থেকে বাদ দিয়ে ফেলুন। এরপর আপনি যেটা নিয়ে কাজ করতে চান…আপনি যা-কিছু নিয়েই কাজ করতে চান না কেন---চাকরি, ব্যাবসা, পড়াশোনা, বিদেশে যাওয়া অথবা ফ্যামিলির কোনও সিদ্ধান্ত…তা নিয়ে পড়ে থাকুন। ওটার উপর আপনাকে সময় দিতে হবে, ওটা নিয়ে ভাবতে হবে। ওটার প্রস অ্যান্ড কনস নিয়ে কাজ করতে হবে, সকল প্রস অ্যান্ড কনস নিয়ে ভাবতে হবে। ভাবার পর, আপনি যদি একটু অগুরুত্বপূর্ণ সব কিছু মাথা থেকে ডিলিট করে ফেলেন, তবেই আপনি সামনের দিকে এগোতে পারবেন।




মনে রাখবেন, লাইফে কোনও কিছু পেতে হলে আপনার যা-কিছু আছে, সবগুলোকে প্রথমে হারাতে হবে। আমি কথাটা আবারও বলি, একটু ভেঙে। লাইফে যদি ভালো কিছু পেতে চান, এই মুহূর্তে আপনার লাইফে যা-কিছু অজরুরি ও কম জরুরি আছে, তার সবগুলোকেই বাদ দিতে হবে। বাদ দেবার পর আপনি একটা বড়ো কিছু পাবেন। ছোটখাটো জিনিস সহজেই পাওয়া যায়, এটা কোনও বিষয়‌ই না।




আপনারা ছোটোখাটো যেসব বিষয় নিয়ে লাফান, সেগুলো নিয়ে লাফানোর কোনও কিছু নেই। লাইফে আপনি কী নিয়ে লাফাচ্ছেন, সেটা একটা গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার। যেটা নিয়ে লাফানোর কোনও কিছু নাই, যদি আপনি সেটা নিয়ে লাফান, তাহলে যেটা নিয়ে লাফানোর কোনও কিছু আছে, সেটা আপনি লাইফে কখনও পাবেন‌ই না। তাই আপনার প্রথম কাজ হচ্ছে, যেটা নিয়ে লাফানোর কোনও কিছু নাই, সেটার ব্যাপারে আপনি একদম চুপচাপ বসে থাকুন। ওটা নিয়ে আপনি কোনও কথাই বলবেন না। সম্ভব হলে সেটাকে লাইফ থেকে বিদায় করে দিন। বিদায় করার পর আপনি যে সিদ্ধান্তটা গ্রহণ করতে চান, ওটা নিয়ে একটু ভাবুন, ওটা নিয়ে কাজ করুন। প্রাসঙ্গিক সবার সঙ্গে কথা বলুন; যারা অভিজ্ঞ, তাদের সাথে আলাপ করুন। এরপর আপনি সে সিদ্ধান্তটা সহজে গ্রহণ করতে পারবেন।




তবে প্রথম কথা হলো, আমি যেটা বলেছি, দশ মিনিট চোখ বন্ধ করে রাখা—যা একটা প্রতীকী কথা…চোখ বন্ধ করে রাখার মানে সত্যি সত্যি চোখ বন্ধ করে রাখা নয়। এর অর্থ হলো, আপনার যা যা দরকার নেই, সেগুলোকে লাইফ থেকে বিদায় করা, ঝেঁটিয়ে বিদায় করা। যদি সে কাজটা করতে না পারেন, তবে আপনার লাইফে যা দরকার, তা আপনি পাবেন না।




মনে রাখবেন, আপনি লাইফে যা-কিছু এতদিন ধরে করে এসেছেন, যদি সেটাই করেই যান, তাহলে আপনি কখনও এমন কিছু পাবেন না, যেটা আপনার লাইফে ছিল না। লাইফে নতুন কিছু পেতে হলে পুরোনো অকেজো জিনিসগুলোকে বিদায় করতে হয়, এটা হচ্ছে প্রথম কাজ। পুরোনো জিনিসগুলোকে বিদায় করার ব্যাপারটাকে আমি প্রতীকী অর্থে এভাবে বোঝাচ্ছি যে, দশ মিনিট চোখ বন্ধ করে বসে থাকুন, একটু ভাবুন, কী করতে হবে, কী করা বন্ধ করতে হবে! পুরোনো ধারণাগুলোকে মাথা থেকে বের করে দিন। যেগুলোর দরকার নেই, সেগুলোকে বের করে দিন। যত বেশি ফালতু জিনিসকে মাথায় জায়গায় দেবেন, তত বেশি ভালো জিনিস মাথা থেকে দূরে সরে যাবে। এই বাজে কাজগুলো করবেন না।




লাগতে হলে নিজের পেছনে লাগুন, অন্যের পেছনে নয়। যদি এই ছোট্ট কাজটা করতে পারেন, তবে আপনি একটা ভালো সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারবেন।