আপনার ব‌উ কি এগুলো দেখে না?

আমার যে লেখাগুলো, অনেকে ওগুলোর সাথে আমাকে মিলিয়ে ফেলে। অনেকেই আমাকে জিজ্ঞেস করে, আপনার বউ কি এগুলো দেখে না? আপনার বউ কেন আপনাকে কিছু বলে না?




ছাগলের বাচ্চা! তুই লেখা-টেখা পড়েছিস কখনও? জীবনে কখনও গল্প-টল্প পড়েছিস? জীবনে কখনও উপন্যাস পড়েছিস? কেন বলেন এগুলো? লেখকের লেখায় লেখক কেন থাকবেন? এটা তো একটা গল্প, কাউকে-না-কাউকে নিয়ে লিখেছি কিংবা কেউ না থাকলেও আমি ওখানে একটা চরিত্র দাঁড় করিয়ে লিখেছি। সেখানে আমাকে পান কোথা থেকে আপনারা? জীবনে গল্প-টল্প পড়েন নাই?! পাঠ্যও তো ছিল কয়েকটা, ছিল না পাঠ্য?




মনে করুন, "হৈমন্তী" পড়েছেন। তো সেই গল্পটা নিয়েই বলি। হৈমন্তী'তে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে কেন থাকবেন, বলুন তো? উনি কি মেয়ে যে, উনি হৈমন্তী? বা হৈমন্তীর বাপ গৌরীশংকর; এখন গৌরীশংকর কি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর নিজে? কেন? তাকে হতে হবে কেন সেটা? হ্যাঁ?! কিংবা আপনারা যে অন্যান্য গল্প পড়েন বা উপন্যাস পড়েন, সেখানে লেখকের জীবনের কিছু বিশ্বাস থাকতে পারে, তাঁর জীবনের কিছু আবহ থাকতে পারে, তাঁর জীবনের কিছু চ্যাপ্টার থাকতে পারে, কিন্তু পুরোটাই তাঁর নিজের কাহিনি, আপনার কাছে কেন মনে হচ্ছে এটা?




আরে ভাই, আপনার কেন মনে হয়, আমি প্রাক্তনকে নিয়ে লিখি? লিখি না। আমি আপনার কথা লিখি। আপনি আমার পাঠক, আমি আপনার কথা লিখি। আপনাকে আমি রেসপেক্ট করি, স্যালুট করি। আমি আপনার কথা লিখি, আমি আমার কথা লিখি না, সেখানে আমি নেই। আমি জানি, আপনি কীভাবে ভাবেন; আপনি জানেন না অন্যের মনের কথা, কারণ আপনি লিখতে পারেন না। আমি  লিখতে পারি বিধায় আমি আপনাকে নিয়ে লিখি। আমি আপনার জায়গায় নিজেকে বসিয়ে আপনার অনুভূতিগুলো নিয়ে লিখি।




সেখানে আমি নাই রে, ভাই! সেখানে আমার বউ নাই, সেখানে আমার ফ্যমিলি নাই, সেখানে আমার প্রাক্তন নাই, সেখানে আমার চাকরি নাই, সেখানে আমার কিছুই নাই। সেখানে আপনি আছেন! হ্যাঁ, সেখানে আপনি না থাকলে তো আমার লেখার সঙ্গে আপনার লাইফের মিল পেতেন না। পেতেন? পেতেন না। আমার লেখার সঙ্গে আপনার লাইফের মিল পাচ্ছেন, এই কথাটার মানে হল, আমি আপনাকে ভেবে লিখি, আমি আমার সম্মানিত পাঠকদের ভেবে লিখি। সেখানে তো আমি নিজে নাই।




আপনারা এই ধরনের পেইন দেন কেন? আমার লেখা পড়বেন না। এই সামান্য বিদ্যেবুদ্ধি নিয়ে আপনাকে আমার লেখা পড়তে কে বলেছে? আমি দাওয়াত করেছি আপনাকে? ট্যাগ করেছি আপনাকে লেখা পড়ার জন্য? পড়বেন না! আমাকে ভালো না লাগলে আমার দিকে তাকাবেন না। আপনি আমার দিকে তাকাবেন, প্রতিদিন তাকাবেন, এসে বিভিন্ন কথা বলবেন, তাড়িয়ে দিলেও যাবেন না। কেন? আপনার কাজ নাই? ভালো লাগে না এসব!




আপনাকে কে বলছে সুশান্ত পালের দিকে তাকাতে? তাকাবেন না! দূর হোন, দূরে যান। অহংকারী মনে হচ্ছে আমাকে? আমি অহংকারী না, ভাই; আমি খুব বেশি শান্তিপ্রিয় মানুষ। আমার কথাগুলো অহংকারের কথা নয়, শান্তিপ্রার্থনার কথা। পৃথিবীতে সবচেয়ে বড়ো প্রাপ্তি হচ্ছে শান্তি, এর উপরে কোনও কিছু নাই। পৃথিবীতে শেষকথাই হচ্ছে শান্তি। শান্তির উপর কোনও কিছু নাই। ভালোবাসা, প্রেম, সম্মান, খ্যাতি আর যা যা হাবিজাবি আছে, তার সব কিছুই তুচ্ছ এর কাছে। ওসব ছাড়াও বাঁচা যায়, কিন্তু শান্তি ছাড়া বাঁচা যায় না।




আপনি আমাকে অনেক ভালবাসেন এবং অনেক পেইন দেন! আপনার ভালোবাসার দরকার আমার নাই। পছন্দ না হলে দূরে যান, প্লিজ। পেইন দিতে আসবেন না। আমার যে বন্ধু আমাকে অনেক ভালোবাসে এবং একইসঙ্গে অনেক পেইন দেয়, তার ফোনটাও আমি ধরি না। কারণ আমার ভালোবাসার দরকার নাই। আমার শান্তির দরকার। ভালোবাসা পেতে পেতে আমি অস্থির হয়ে গেছি। এত ভালোবাসা পেতে আর ভালো লাগছে না। আমার শুধুই শান্তির দরকার। 




আপনাকে বলি, আমার লেখায় আপনারা আমাকে পাবেন না, আমার লেখায় আমার পরিবারকেও পাবেন না। আমার লেখায় আপনি আপনাকে পাবেন। যদি আপনাকে পান, তবে সে লেখাটা এনজয় করুন; যদি না পান, অ্যাভয়েড করুন। আমাকে জাজ করতে আসবেন না। আপনি তো আমাকে চেনেন না, ভাই। আপনি আমার ক্যারিয়ার আড্ডা শোনেন, আমার লেখা-টেখা পড়েন। কিন্তু সত্যি সত্যি আপনি আমাকে চেনেন না। আপনি সুশান্ত পালকে চেনেন না। এই সহজ কথাটা মেনে নিন।




আপনি আমার সঙ্গে বসে একটাও সন্ধ্যা কখনও কাটান নাই, আপনি আমার সঙ্গে বসে এককাপ চা-ও কখনও খান নাই। আপনি আমাকে চেনেন না; আপনি জানেন না, আমি কীভাবে কথা বলি; আপনি জানেন না, আমি কী কী বিশ্বাস করি, আপনি জানেন না, আমি কীরকম আচরণ করি। কিছুই জানেন না। আপনি আমার লেখা পড়েন, আমার ক্যারিয়ার আড্ডা শোনেন, ওখানেই থাকুন। প্লিজ, আমাকে জাজ করতে আসবেন না। আপনি আমাকে চেনেন না।




পৃথিবীতে বেঁচে থাকার সবচাইতে সহজ নিয়মটা হচ্ছে, আমরা যেন ধরে নিই, আমরা কাউকেই চিনি না। কারও সঙ্গে আপনার যতটুকু ইন্টারঅ্যাকশন, তার সঙ্গে আপনার যতটুকু যোগাযোগ, ততটুকু জায়গা পর্যন্তই থাকুন। এর ভেতরে গিয়ে যদি আপনি ভাবতে যান, কথা বলতে যান, তাহলে আপনি ভুল করবেন। বাড়তি কিছু পেইন আপনার মাথায় চলে আসবে। আমি পার্সোনালি কেমন, আপনি জানেন না। আমি কেমন বিছানায় শুই, তা আপনি জানেন না। আমি কী খাই, আপনি জানেন না। আপনি আমাকে বিভিন্ন কিছু বলতে পারেন। এই যেমন, ভাই, আপনি এমন, আপনি তেমন!




ভুল হবে সবগুলোই। আমি চ্যালেঞ্জ করে বলতে পারি, ভুল হবে। যারা আমাকে শুনেছে বা পড়েছে, তাদের মধ্যে যারা আমার সংস্পর্শে এসেছে, তারা কিছুটা জানে, আমি কেমন বা আমি যতটুকু দেখিয়েছি, ততটুকুর মধ্যেই জানে, আমি কেমন! কিন্তু যারা একদমই এগুলোর মধ্যে নাই, তারা আমাকে কী করে করে জাজ করে?! তারা কী করে একটা মানুষকে জাজ করে তাকে না চিনেই, এটা তো আমার বুদ্ধিতে আসে না। আমার লেখা পড়তে হলে একজন পাঠক হিসেবে পড়বেন। সুশান্ত পালের পরিচিত কেউ না আপনি। সুশান্ত পালকে আপনি চেনেন না। সুশান্ত পাল আপনাকে চেনে না। তাই তাকে সেখানে জাজ করবেন না।




শুধু আমার বেলায় নয়, যে-কোনও লেখকের লেখা পড়তে গেলে কখনও তাঁকে নিয়ে মন্তব্য করবেন না। তিনি আপনার কথা মাথায় রেখে লেখেন। আরও একটু ভালো করে, আরও একটু সহজ করে বলি। পাঠক কী খায়, অনেকসময় লেখক সেটা মাথায় রেখে লেখেন। লেখক তাঁর বিশ্বাস বা অবিশ্বাস বা অভিজ্ঞতা থেকে যা-কিছু লেখেন, তা কিন্তু তাঁর নিজের জীবনের কাহিনি না-ও হতে পারে। তাই আপনি সেখানে আমাকে বসাবেন না। এটা আমাকে খুব বিরক্ত করে।




খুবই বিনয়ের সঙ্গে বলি, যেহেতু আপনি লেখালেখি করতে পারেন না, সেহেতু আপনার পক্ষে এই জাদুটা বোঝা সম্ভব‌ই নয়। আপনার বোঝার দরকারও নাই। আপনি পাঠক আছেন, পাঠকই থাকুন। আপনি একটু ওভাবে করেই পড়ুন। ওটা নিয়ে আমাকে পেইন দেবেন না। এসব আমার কাছে খুবই বিরক্ত লাগে।