নতুন কিছু পেতে চাইলে

আমরা যারা দরকারি কাজগুলো করতে পারি না বা করার সময় পাই না, তারা যদি একটু আন্তরিকভাবে ভাবি, নিজের মনকে প্রশ্ন করি...সেই দরকারি কাজগুলো যখন করার কথা ছিল, তখন কি আমরা সেগুলোর কথা মাথায় রেখেছিলাম? তখন কি আমরা সেই দরকারি কাজগুলোর পেছনে সময় দিয়েছিলাম? উত্তর হবে, না। বরং আমরা তখন সেই কাজগুলো নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, যে কাজগুলো করতে আমরা অভ্যস্ত, যে কাজগুলো আমরা অনেক দিন ধরে করি, যে কাজগুলো আমাদের আনন্দ দেয়, যে কাজগুলো আমাদের ফাঁকি দিতে সাহায্য করে এবং যে কাজগুলো করতে ব্রেইনে কোনও ধরনের বাড়তি চাপ পড়ে না। তা-ই তো?




আপনি আপনার প্রাত্যাহিক জীবনে দরকারি কাজগুলোকে যত বেশি জীবন থেকে দূরে সরিয়ে রাখবেন, আপনি তত বেশি সাফার করবেন। যখন আপনার শেষমুহূর্ত এসে উপস্থিত হবে, যখন আপনাকে ওই কাজগুলো শেষ করতেই হবে, না করলে আপনি হয়তোবা কোনও একটা লক্ষ্যে পৌঁছোতে পারবেন না, কোনও একটা বড়ো কাজ করতে পারবেন না, কোনও একটা পরীক্ষায় বসতে পারবেন না, তখন আপনার মধ্যে অনেক প্রেশার তৈরি হবে। অগত্যা আপনি নিজেকে বাঁচানোর জন্য অনেকগুলো অজুহাত তৈরি করবেন। বলবেন, আমি সময় পাইনি, আমি সময় পাই না, আমার শুধুই দেরি হয়ে যায়, আমার শুধুই সময় ফুরিয়ে যায় ইত্যাদি ইত্যাদি!




তাই প্রতিদিনের জীবনযাপনে আপনাকে খুব ভালো করে লক্ষ্য করতে হবে, আপনি যা করছেন, তা আপনার লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জন্য কতটুকু দরকার! একটা লক্ষ্যে পৌঁছে যাবার পর অনেক কাজ করা সম্ভব, যা হয়তো আনন্দের জন্য করা যায়। কিন্তু যখন লক্ষ্যে পৌঁছোনোর জার্নিতে আপনি থাকেন, একধরনের যাত্রায় আপনি থাকেন, সেই যাত্রাটা কিন্তু অনেক বড়ো প্রার্থনা বা ইবাদত। সেখানে আপনাকে অনেকগুলো কাজ করতে হবে, যে কাজগুলো করতে আপনার ভালো লাগে না, কিন্তু সেই কাজগুলো করা আপনার দরকার।




যে মানুষটা সময়ের কাজ সময়ে করে এবং লক্ষ্যে পৌঁছোনোর প্রস্তুতিপর্বে তার লাইফ থেকে অদরকারি কাজ, ভুল মানুষকে সময় দেওয়া, বন্ধুবান্ধবের সঙ্গে আড্ডা দেওয়া, সিনেমা দেখা, ফেইসবুকিং করা, অপ্রয়োজনে ঘুরে বেড়ানো, পছন্দের মানুষটাকে নিয়ে ঘণ্টার পর ঘণ্টা সময় কাটানো ইত্যাদি ইত্যাদি---এই কাজগুলো থেকে নিজেকে বিরত রাখতে পারে, সেই মানুষটা কখনও অনুভব করে না...আমার হাতে সময় নেই, আমার দেরি হয়ে গিয়েছে, আমি যথেষ্ট প্রস্তুতি গ্রহণ করতে পারিনি, আমার হাতে এখন আর সময় নেই...পরীক্ষা চলে আসছে, আমার লক্ষ্যে পৌঁছোনোর সময় চলে আসছে...কিন্তু আমার হাতে একটুও সময় নেই! এই বিষয়গুলো সে অনুভব করতে পারে না বা এই বিষয়গুলো তাকে ফেইস করতে হয় না।




ধরুন, একটা মানুষ…এই মানুষটা যখন আনন্দ করছিল, সময় নষ্ট করছিল, নিজের মতো করে ফুর্তিতে ছিল, তখন আরেকটা মানুষ নিজেকে প্রস্তুত করছিল এবং তার দরকারি কাজগুলো গুছিয়ে করছিল। অতএব, যখন পরীক্ষা সামনে আসবে বা লক্ষ্যে পৌঁছোনোর সময়টা সামনে আসবে, তখন কিন্তু দ্বিতীয় মানুষটা যতটা আনন্দে থাকবে, যতটা নির্ভার থাকবে, যতটা স্বস্তি নিয়ে থাকবে, যতটা আত্মবিশ্বাসী থাকবে, প্রথম মানুষটা কোনোভাবেই ততটা থাকবে না।




এবং, এখানে কোনও অবিচার হয় না। সৃষ্টিকর্তা অবশ্যই সুবিচারক। এখানে যা-কিছু হচ্ছে, তা-কিছু প্রথম মানুষটা ডিজার্ভ করে। প্রথম মানুষটা নিশ্চয়‌ই দ্বিতীয় মানুষের মতো অতটা নির্ভার হয়ে থাকতে পারবে না। এটাই স্বাভাবিক। তাই আমাদের হাতে সময় নেই, আমাদের দেরি হয়ে যাচ্ছে, এটা তখনই মনে হবে, যখন আমরা সময়টাকে নষ্ট করব, যখন আমরা আগে যা করে আসছিলাম, তা-ই করে যাব। মনে রাখবেন, আপনি যা করে যাচ্ছেন, যদি তা-ই করে যান, তবে আপনি কখনও এমন কিছু করতে পারবেন না, যা আপনি করতে চাইছেন।




'করতে চাইছেন' কথাটার মধ্যেই কিন্তু সব উত্তর লুকিয়ে আছে। আপনি করতে চাইছেন, এই কথাটার অর্থ হচ্ছে, সামনে থাকা কাজটা এমন কোনও একটা কাজ, যে কাজটা আপনি এখনও করতে পারেননি বা করছেন না। তাই সেটা করতে হলে আপনাকে এমন কোনও সিদ্ধান্ত নিতে হবে, এমন কোনও অভ্যাস গঠন করতে হবে, যেগুলো আপনার কখনোই ছিল না। এবং, সেই সাথে আপনার পুরোনো কিছু অভ্যাসকে অবশ্যই বাদ দিতে হবে।




সবার দিনই তো চব্বিশ ঘণ্টায়। তাই চব্বিশ ঘণ্টা থেকে আপনার দরকারি সময়কে বের করতে হবে। সময় কখনও আপনার নিয়মে চলবে না। আপনাকে সময়ের নিয়মে নিজেকে বেঁধে ফেলতে হবে। যদি এই কাজগুলো করতে পারেন একটু সতর্কতার সাথে, বুঝে-শুনে, তাহলে দেখবেন, আপনার মধ্যে কখনও এই ধরনের আফসোস, এই ধরনের অভিযোগ, এই ধরনের কষ্ট, এই ধরনের অনুযোগ তৈরি হবে না। জীবনটাকে নিজের নিয়ন্ত্রণে আনতে এই বন্ধনের চাইতে বড়ো ঐশ্বর্য আর নেই।