নক্ষত্রের জ্বলে ওঠা

যে দীপিকা পাড়ুকোনকে আমরা নিখুঁতভাবে সফল ও দীপ্তিময় দেখতে পাই, সে দীপিকা একসময় ভুগতেন অ্যাকিউট ডিপ্রেশনে। ব্লকবাস্টার হিট ছবি, অনন্যসাধারণ অভিনয় দিয়ে পর্দা-কাঁপানো এই মানুষটিই পর্দার আড়ালে ছিলেন একজন ভয়াবহ রকমের ভঙ্গুর মানুষ।

যে সময়টাতে পর্দায় তাঁর চমৎকার অভিনয় দেখে আমরা উচ্ছ্বসিত হতাম, সেই সময়টাতে পর্দার আড়ালে তিনি ঘুমোতেন ঘুমের বড়ি, পাওয়ারফুল অ্যান্টিডিপ্রেশন ওষুধ খেয়ে। থাকতেন সাইকিয়াট্রিস্টের আন্ডারে নিয়মিত চেকাপে। ছিলেন প্রচণ্ড রকমের সুইসাইডাল প্রকৃতির। নিজেকে খুন করার চিন্তা করেছিলেন অগণিত বার!

বিখ্যাত স্টিফেন হকিং! অসীম মেধাবী এই মানুষটি দুরারোগ্য রোগে আক্রান্ত হয়ে হারিয়ে ফেলেন হাঁটাচলার শক্তি। একটা হুইলচেয়ারে বন্দি হয়ে গেল তাঁর গোটাশরীর ও গোটাজীবন। সবাই ছেড়েই দিলেন তাঁর জীবনের আশা, বাঁচার আশা।

কে বলে, তারারা নেভে না? কে বলে, জোনাকির দম ফুরোয় না? যে প্রদীপ সারারাত জ্বলে আলো দেয়, কেরোসিন ফুরোলে সে প্রদীপও নিভে যেতে চায়।

যে দীপ সারারাত জ্বলে আলো দেয়, নিভে যাবার পর সে দীপেরও আলোর দরকার হয়। যে নৌকো অনেক মানুষকে জলে ডুবে যাওয়া থেকে বাঁচায়, সে নৌকো ডুবে গেলে তাকেও বাঁচাতে অন্য নৌকোর প্রয়োজন পড়ে।

মানুষও ঠিক প্রদীপের মতন, নৌকোর মতন। নিভু-নিভু হলে জ্বালিয়ে দেবার মতো কেরোসিন দিতে হয়, ডুবো-ডুবো হলে অন্য কাউকে ধরে তুলে আনতে হয়।

তারপর আলো আসে, জোয়ার নামে ঘাটে। প্রদীপ জ্বলে, নৌকো ছোটে।

একদিন সেই আলোর মিছিল নিয়ে দীপিকার জীবনে আসেন রণবীর। স্টিফেনের জীবনে আসেন তাঁর স্ত্রী জেন ছায়াসঙ্গী হয়ে। যে স্টিফেন বাঁচারই কথা ছিল না, সে মৃতপ্রায় মানুষটি স্ত্রীর সহযোগিতায় গোটাবিশ্বের মনীষীজগতকে তাক লাগিয়ে দিলেন। এক আঙুলের ইশারায় বদলে দিলেন অনেক কিছু, হুইলচেয়ারে বসেই আবিষ্কার করে ফেললেন কত যুগান্তকারী থিয়োরি, কত জরুরি সূত্র। যে দীপিকা একসময় লুকিয়ে কাঁদতেন যন্ত্রণায়, সে দীপিকা এখন প্রকাশ্যে কেঁদে ফেলেন আনন্দে।
জীবন তো এমনই!

পড়ে গেলে উঠে দাঁড়ানোর জন্য একটা হাত পেলে কেউ কেউ আগের চেয়ে দ্বিগুণ শক্তিতে জ্বলে ওঠে। ডুবে-যাওয়া কেউ জলের উপরে ওঠার একটা অবলম্বন পেলে দ্বিগুণ গতিতে ছোটার শক্তি পায়।

জীবন একটা ক্যামেরার মতন। যে ক্যামেরার পর্দায় সুন্দর ছবি উঠে, সেই ক্যামেরার পেছনে কেউ একজন থাকে। যে প্রদীপ দাউ-দাউ করে জ্বলে, সে প্রদীপের আলোর পেছনেও অন্য কারও হাত থাকে। 

এভাবেই গল্প তৈরি হয়---কেউ ডুবে যায় পাথরের মতন, কেউবা জ্বলে ওঠে নক্ষত্রের মতন।