শ্রাবণসন্ধ্যা

একদিন তোমার সাথে দেখা করে ফেরার সময় খিলক্ষেতে না নেমে বনানীতে নেমে গিয়েছিলাম। আবহাওয়াটা ঠিক এরকম ছিল, তবে মাসটা ছিল শ্রাবণ। বনানী স্টার-এ চা খেতে আমি প্রায়ই যাই। একা একা খেতে যাওয়া আমার পুরোনো অভ্যেস।

যখন ভালো লাগে না, পালিয়ে যেতে মন চায় খুব। তখন একা উদ্দেশ্যহীনভাবে কোথাও-একটা চলে যাই। কোথাও-একটা নেমে পড়ি। কফি খাই, চা খাই। বসে বসে মানুষ দেখি। ওদের গল্প শুনি, এক্সপ্রেশন দেখি। ওদের দেখে হাসি আর কফি খাই। একা থাকার নিজস্ব কিছু সুখ আছে।

যা-ই হোক, স্টার-এ চা খাওয়াশেষে বের হবার পর দেখি, আকাশটা কেঁদেই চলেছে। ভাবলাম, গাড়ি করে ফিরব না আজ, রিকশায় ফিরব। প্রিয় আকাশি রঙের ছাতাটা মাথায় দিয়ে রিকশা খুঁজতে খুঁজতে কাকলি বাসস্ট্যান্ডে চলে এলাম।

পায়ে সাদা রঙের স্যান্ডেল আর হাতে সমরেশের "সাতকাহন" নিয়ে হেঁটেই চলেছি। হুশহাশ দু-চারটে গাড়ি ছুটে যাচ্ছিল। তোমাকে ভাবতে ভাবতে কাকলি থেকে কখন যে শ্যাওড়া চলে এসেছি, খেয়ালই করিনি।

শ্যাওড়া পৌঁছে দেখি, বৃষ্টিতে পায়ের পাতাগুলি ভিজে কী সুন্দর শুচিশুভ্র লাগছে! বৃষ্টিতে ভিজলে আমার ভীষণ শীত করে, মাথা ধরে। ঠান্ডার ধাত তো! শ্যাওড়া ধরে হাঁটছি, তখন কোত্থেকে যেন দেবদূতের মতো এক রিকশাওয়ালা এসে নিজেই বললেন, 'যাবেন নাকি, আপা?'

আমি উঠে পড়লাম। মাথায় তখনও তুমি জড়িয়ে আছ। আমরা দু-জন জড়াজড়ি করে রিকশার হুড তুলে আর অর্ধেকটা ভিজে চলতে থাকলাম। শহরের পিচঢালা ভেজা রাস্তায়, ভেজা ল্যাম্পপোস্টের ঘোলাটে হলুদ আলোয় সব কিছু মায়ায় আবর্তিত হচ্ছিল বার বার। কী যে মায়া! কী যে মায়া!

আমার একটুও খারাপ লাগছিল না; মনেই হচ্ছিল না, আমি আসলে একা একা চলছিলাম। তোমার মায়া আমাকে নিবিড়ভাবে জড়িয়ে রেখেছিল প্রতিটা ক্ষণ! সেদিন অভিমান করে লিখেছিলাম,


আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি...
কাউকেই দেবো না!
শ্রাবণসন্ধ্যাটুকু শুধুই আমার!

এরপর খুব ঠান্ডা লেগেছিল, তবে জ্বর হয়নি। আমার কেন জানি জ্বর আসে না। অসহ্য রকমের মাথাব্যথা হয়েছিল। বৃষ্টির পানি মাথায় পড়লেই মাথায় যন্ত্রণা করে ভীষণ। সেদিনের যন্ত্রণাটাও কীরকম জানি সুখ সুখ অনুভূতি দিচ্ছিল!

আজও শ্রাবণসন্ধ্যা এলে আমি সেদিনটায় চলে যাই বার বার...বার বার...গুনগুন করতে থাকি...শ্রাবণসন্ধ্যাটুকু তোমার কাছে চেয়ে নিলাম!