লতা মঙ্গেশকরকে এক ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করা হয়, আপনি পরের জন্মে কী হতে চান?
উত্তরে দ্ব্যর্থহীন কণ্ঠে লতা বললেন, পরের জন্ম না থাকলে তো খুব ভালো; যদি থাকে, তবে ওই জন্মে কখনোই লতা মঙ্গেশকর হতে চাই না। একজন লতার যন্ত্রণা এক লতাই জানে!
কথাটা বলার সময় এবং বলার পর লতাজি স্মিত মেজাজে হেসেছিলেন। এই হাসিটা হাসার আগে একজন মানুষকে মুখ বুজে অসীম কান্না সহ্য করতে হয়। এত যুদ্ধ একজীবনে করাটা সত্যিই খুব কষ্টের!
শাহরুখ খান এক ইন্টারভিউতে বলেছিলেন, আমার সবকিছুই আছে, তবুও আমার ভয়ানক একা লাগে, নিজেকে নিঃস্ব লাগে।
যে লতার সুরে মজে কোটি কোটি মানুষ জীবনকে ভালোবাসতে শিখেছে, যে সুর অগণিত মানুষের জীবনে প্রেম জাগিয়েছে, সেই লতাই কিনা নিজের জীবনকে তৈরি করতে গিয়ে যে অসীম যন্ত্রণা পোহাতে হয়েছে, তার কথা ভেবে আরেক বার লতা হয়ে জন্মাতে চান না! যে লতাজির সুর অসংখ্য মানুষের বেঁচে থাকার অনুপ্রেরণা হয়ে পাশে থেকেছে, সেই লতাজিই কিনা পরের বার একজন লতা মঙ্গেশকর হতেই চান না!
লতা মঙ্গেশকরের মতন অমন একটা মানবজন্ম শত সাধনাতেও কি মেলে! তেমন একটি জন্ম পেতে যে হাজারো মৃত্যু নতমস্তকে মেনে নিতে হয়!
যে শাহরুখের অভিনয় ও সংলাপ আমাদের একাকিত্ব ঘোচায়, সেই শাহরুখই কিনা ব্যক্তিজীবনে অমন নিদারুণ নিঃসঙ্গতায় ভোগেন। আশ্চর্য না?
আসলে বড়ো বড়ো চোখের অশ্রুফোঁটাগুলোও বোধ করি বড়ো বড়ো হয়। বড়ো বড়ো মানুষের দুঃখগুলোও বড়ো বড়ো হয়।
মানুষের জীবনটাই আসলে অদ্ভুত। বাইরে থেকে আমরা যা দেখি, তা-ই সবকিছু নয়; ভেতরের রংটা হয়তো অন্যকিছু বলে। বাইরে থেকে যাদের যেভাবে দেখি, ভেতরে ভেতরে হয়তো তারা অন্যকেউ।
সুখী হতে যা যা লাগে, তার সবই থাকার পরও মানুষ কখনো-সখনো ভয়ানক রকমের অসুখী। আবার কারও কারও বেলায়, সুখী হতে যা যা লাগে, তার কিছুই নেই বলেই সে অসুখী।
একজন মানুষের সাথে আরেকজনের বিন্দুপরিমাণও মিল নেই। নিজের মাপে অন্য কাউকে মাপতে চায় ও যায় যারা, তাদের চাইতে অপদার্থ ও নির্বোধ আর হয় না।
তবু...তবুও পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের একটা জায়গায় খুব গভীর মিল আছে; সেটা হলো, দিনশেষে আমরা সবাই একা। কি বড়ো বড়ো মানুষ, কি ছোটো ছোটো মানুষ---শতকোটি তারার মাঝে থেকেও ওই শুকতারাটির মতোই---আমরা প্রত্যেকেই একা।
কারও সবকিছু আছে বলেই সে একা, কারওবা কোনোকিছুই নেই বলেই সে একা।