এখন যেমন আছি

শান্তির খোঁজে, শুক্রবার এলে, আমি শুকনো পথে হাঁটি;
ধুলোবালি নেই, কোলাহল নেই, ভিড়বাট্টা নেই ঠিকই,
কিন্তু হায়, শান্তিও তো সেখানে নেই!
এখনকার শুক্রবারগুলো আগের মতন মিষ্টি আর লাগে না।
আগে যখন সারা সপ্তাহজুড়ে অপেক্ষার পরে একটা শুক্রবার আসত, কী আনন্দ, কী উচ্ছ্বাস যে হতো মনের মধ্যে, আজকাল আর তা ঠিকঠাক গুছিয়ে বলতেও পারি না।
বিটিভিতে সালমান শাহর সিনেমা কিংবা রাত দশটার সংবাদের পরে ছায়াছন্দ, কড়াদুপুরে পাড়ার আচারের দোকানে ভিড়, সবাই মিলে বরফপানি খেলা কিংবা দুপুরের ঘুম ফাঁকি দিয়ে চুপি চুপি বেড়াতে যাবার কিছুই যেন আর নেই। আমারও নেই, আমার বন্ধুদেরও নেই, প্রতিবেশীদেরও নেই, কারুরই নেই।
আমার শুক্রবারগুলো বুড়িয়ে গেল, না কি আমিই বুড়িয়ে গেলাম, ঠিক বুঝতে পারছি না!




এই যে আমার বুকের ভেতরে কী যেন একটা কথা আটকে আছে, আমি বলতে পারি না কিছুতেই, এর দোষ আমি কাকে দেবো?
সব পেয়ে রোজই তো শুকরিয়া করি, কিন্তু কিছু একটা পাইনি, সেটা যে কী জিনিস, তা নিজেই বুঝি না। কেন বাড়ি ফিরে নিজেকে এত একা একা লাগে? আমি আগের চেয়েও গোছানো হয়েছি ভীষণ, কিন্তু মনটা যেন ক্রমেই আরও বেশি অগোছালো হয়ে যাচ্ছে...!
যা যেভাবে চেয়েছিলাম, তা সেভাবে ঘটার পরও কেন মনের মধ্যে কোথাও একটা খচখচ করে? এই যে কী যেন নেই, কী যেন নেই-য়ের মতন বুক-খা-খা-করা একটা ব্যাপার, এটা কেন দিন দিন বেড়েই চলেছে?




আগে তো রাত গভীর হলে ভয় ভয় করত, মনের জটলা খুলে কী যেন বেরিয়ে পড়বে সেই ভয়! কিন্তু আজকাল তো সকালে ঘুম ভাঙার পর থেকেই এমন লাগে! সারাদিন সামলে চলি ঠিকই, কিন্তু মনটাকে ঠিক গোছাতে পারি না। অগত্যা বাড়িঘর গুছিয়ে রাখি মনকে এলোমেলো করে দিয়ে।
এইসবকেই কি "অকারণ হতাশা" বলে? আমি জানি না। যে মানুষ একটা নির্দিষ্ট কিছুর পেছনে ছোটে, সে বলতে পারে, আমি অমুকটা পেলাম না, ওটা পাবার জন্য আমাকে তমুক রাস্তায় হাঁটতে হবে, কিন্তু যে মানুষ জানেই না, সে কীসের পেছনে ছুটে চলেছে, বুকের মধ্যে কীসের অমন অভাব, সেই মানুষটা কোন রাস্তায় হাঁটবে?




যখন প্রচণ্ড ক্লান্তিবোধ আমাকে ছেয়ে ফেলে, আমি তখন লিখতে বসি।
আবার লিখতে লিখতে ক্লান্ত হই, আর সেই ক্লান্তি নিয়ে আবার লিখতে বসি।
কী করব বলো?! এর চেয়ে বেশি কী-ইবা আমি করতে পারি!?
মাঝেমধ্যে চায়ের তৃষ্ণায় মরে যাই, তবুও লেখা ফেলে চা বানানোর জন্য উঠতে পারি না।




এই মাঝরাতে কড়া এক কাপ ধোঁয়া-ওঠা চা নিয়ে বসেছি, আয়েশ করে খাব। খেতে খেতে এক এক করে ভাবব তোমার আমার শুরুর কিংবা বিচ্ছেদের গল্প।
আচ্ছা, তোমার আমার বিচ্ছেদটা কি সত্যি করেই হয়েছে? না কি আমরা শুরুই করতে পারিনি কখনও?
আহহ্...এজন্যই আমি যখন-তখন এসব ভাবতে বসি না। ভাবতে গেলেই নিজেকে পাগল পাগল লাগে।




আমি তোমাকে বুঝিনি কখনও, আর তুমি সবসময়‌ই আমাকে ভুল বুঝেছ। এই ঘটনাই পালাক্রমে চলেছে। তুমি কিংবা আমি, আমরা কেউই নিজেদেরকে দেওয়া প্রতিশ্রুতিগুলো রাখতে পারিনি।
জানো, এখন খুব ইচ্ছে করে অতীতে ফিরে যেতে! কী ভীষণ সুন্দর ছিল সে দিনগুলো, ভাবলেও কেমন শিহরন জাগে!
মাঝরাতে সত্যিই খুব এলোমেলো লাগে এসব ভাবলে। তোমাকে কখনও বলা হবে না, তোমাকে প্রথম ও শেষ একটা বার ছুঁয়ে দেবার প্রতীক্ষায় কষ্ট পেয়ে মরে মরেই আমি বেঁচে থাকব, কিন্তু ঠিক মরব না।
আমি আজকাল অপেক্ষা করে ছেড়ে দিয়েছি। এখন আর তোমার পথ চেয়ে বসে থাকি না। অবশ্য আমাদের সম্পর্কটাই তো ছিল ভার্চুয়াল। কেউ কাউকে দেখিনি, কখনও কথাও হয়নি। শুধু মেসেজেই যা টুকটাক কথা হতো।




তুমি বোধ হয় ঠিক বুঝতে পারবে না, এই লেখাটা লেখার সময় কী কারণে আমার চশমার কাচ ঝাপসা হয়ে আসছে। আমি বলতে পারছি না কিছু গুছিয়ে। কাঁদতে পারছি না, কারণ পাশে মা আছেন।
তুমি আজকাল অফিস থেকে ফিরে আমার কাছে আর ফেরো না কেন? "বাড়ি ফিরলাম।"... এই দুটো শব্দ সারাদিনের ক্লান্তির পর আমাকে কতটা যে শান্তি দিত, তুমি ভাবতেও পারবে না। শুধু ওইটুকুতে যাকে শান্ত করা যায়, তাকে অশান্তিতে রাখতে তোমার কেমন লাগে?




বলতে পারো, আর কতটা নিশ্চুপ হলে আমি বোবা হয়ে যাব?
কিংবা আর কতটা সইলে পরে সহ্য করার ক্ষমতা অবশিষ্ট থাকবে না, জানি না।




তবে আজকাল আমার শরীর অবশ লাগে; মনেই হয় না, বেঁচে আছি। এ যেন শুধু বাঁচার জন্যই বেঁচে থাকা।
আমি কাঁদতে কাঁদতে চোখের জল ফুরিয়ে ফেলেছি, আর কাঁদতেও পারি না।
অপেক্ষা করতে করতে, অপেক্ষার প্রতি যে দুর্নিবার আকর্ষণ ছিল, সেসবের কিছুই এখন আর কাজ করে না।




ঠিক করেছি, পৃথিবী পুরোপুরি সুস্থ হলে, আমি সবার আগে এই অপেক্ষার অবসান ঘটানোর আন্দোলনে নামব।
তোমার প্রেমিকার বেশ ছেড়ে আমি বিপ্লবীর বেশ নেব।




জানোই তো, মানুষ সেই সময়েই বিপ্লবী হয়, যখন আর কিছুই ফিরে পাবার সময় তার থাকে না!
আমারও তো এই অসাড় শরীরটুকু ছাড়া আর কিছুই অবশিষ্ট নেই আজ।




ধুর, কীসব বলছি!
যাই, গোসল সেরে নিই।
আমাকে তো আন্দোলনের জন্য প্রস্তুত হতে হবে!