২৮। 'সার্বজনীন' ও 'সর্বজনীন' অতিপাণ্ডিত্যের বশে বা গুজবে চালিত হয়ে 'সার্বজনীন' শব্দটিকে ভুল বলতে চান, এমন বাঙালির সংখ্যা নেহায়েত কম নয়। জেনে রাখা ভালো যে, এই 'সার্বজনীন' শব্দ পাণিনি’তেই আছে। (সূত্রসংখ্যা ৪|৪|৯৯) 'সর্বজনে সাধুঃ' তার অর্থ। এখানে 'সাধুঃ' অর্থ উপযুক্ত। প্রত্যয়টি হল পাণিনি-মতে 'খঞ্'। তদ্ধিতপ্রকরণের অন্যান্য সূত্র জানাচ্ছে যে, 'খ্' বোঝাবে 'ঈন্'। 'ঞ্' নির্দেশ করবে যে প্রত্যয়যোগে শব্দের আদ্যস্বরের বৃদ্ধি হবে। 'খ্' ও 'ঞ্' ইৎ অর্থাৎ লোপ হবে; পড়ে রইল 'অ'। সুতরাং 'খ্' স্থানে 'ঈন্' + 'অ', প্রত্যয়টি হল 'ঈন'। অতএব, সর্বজন + খঞ্ > সার্বজনীন। আরও স্পষ্ট করেও লেখার রীতি আছে: সর্বজন + ঈন (খঞ্) > সার্বজনীন। এবার 'সর্বজনীন' শব্দটি। এখানে 'খ' প্রত্যয়। অনুবন্ধে 'ঞ্' নেই, তাই আদ্যস্বরের বৃদ্ধির কোনো প্রশ্ন নেই। 'খ্' ইৎ হল, থাকল 'অ'। 'খ্' স্থলে এল 'ঈন্', 'অ'-যোগে হলো 'ঈন'। সর্বজন + খ > সর্বজনীন। অন্যভাবে লিখলে সর্বজন + ঈন (খ) > সর্বজনীন। মোদ্দা কথা এ-ই, ঈন (খঞ্) প্রত্যয়ে আদ্যস্বরের বৃদ্ধি হবে (সার্বজনীন, বৈশ্বজনীন ইত্যাদি), ঈন (খ) প্রত্যয়ে আদ্যস্বরের বৃদ্ধি হবে না (সর্বজনীন, বিশ্বজনীন ইত্যাদি)।
২৯। বাংলায় 'বশত' কি অনুসর্গ? 'বশত' শব্দটির কিছু বিশিষ্টতা আছে। সেগুলি এ-ই: (১) বাক্যের পদ রূপে 'বশত'-র স্বতন্ত্র অস্তিত্ব নেই। যেভাবে 'প্রসঙ্গত', 'মূলত' স্বতন্ত্র রূপে বিদ্যমান, 'বশত' তা নয়। (২) বাংলায় 'বশত' সাধারণত সমাসবদ্ধ শব্দের উত্তরপদ রূপে বর্তমান। যথা, অক্ষমতাবশত, অভাববশত, অসুস্থতাবশত, অসূয়াবশত, আলস্যবশত, ঈর্ষাবশত, উচ্ছ্বাসবশত, ঔদার্যবশত, ক্রোধবশত, কামবশত, কারণবশত, চাপল্যবশত, দুর্ভাগ্যবশত, পক্ষপাতবশত, বিদ্বেষবশত, ভ্রমবশত, ভ্রান্তিবশত, ভারবশত, ভুলবশত, মোহবশত, স্নেহবশত, সৌজন্যবশত, সৌভাগ্যবশত, হিংসাবশত, ইত্যাদি। 'দৈববশত'-ও হতে পারত, কিন্তু সাধারণত লেখা হয় 'দৈবের বশে'। (৩) 'বশত'-র তসিল্ প্রত্যয় 'বশ' শব্দের অপাদান কারক বোঝাচ্ছে। অর্থাৎ, বাংলা করলে, দুর্ভাগ্যবশত --- দুর্ভাগ্যের বশে/ফলে/কারণে, দুর্ভাগ্য হতে, ইত্যাদি। (৪) তসিল্ প্রত্যয় ছেঁটে ফেললে শব্দগুলি হওয়া উচিত 'অসুস্থতাবশ', 'দুর্ভাগ্যবশ' ইত্যাদি। এরকম শব্দ সিদ্ধ হলেও বাংলায় তার কোনো প্রয়োগ নেই। (৫) তাহলে 'বশত' কী জাতীয় পদ? লক্ষণীয় যে, 'অসুস্থতাবশত' ইত্যাদি যে যে সমাসবদ্ধ শব্দে 'বশত' উত্তরপদ, তারা প্রত্যেকেই ক্রিয়াবিশেষণের কাজ করছে; যেমন, 'সে দুর্ভাগ্যবশত আসতে পারেনি'। অথচ 'বশত' নিজে ক্রিয়াবিশেষণ নয়, অন্য একটি বিশেষ্যের সঙ্গে সমাসবদ্ধ হয়ে দুই পদে মিলে ক্রিয়াবিশেষণের জন্ম দিচ্ছে। এই কাজটি করে অনুসর্গ। সমাস ভেঙে বাংলা বিভক্তি-সহ ব্যাসবাক্য তৈরি করলেই আমরা যেন একটি অনুসর্গ হাতে পেয়ে যাই। 'বশত' কি তাহলে বাংলায় অনুসর্গের কাজ করছে বলা যায়? প্রসঙ্গত, সংসদ বাংলা অভিধান 'বশত'-কে অব্যয় বলে চিহ্নিত করেছে। প্রথমত, সংস্কৃত প্রাতিপদিক + সংস্কৃত প্রত্যয়, কিন্তু সংস্কৃতে 'বশত' বলে কোনো অব্যয় আছে কি? দ্বিতীয়ত, যদি বাংলা অব্যয় হিসেবে নিই, তাহলে সমাসের উত্তরপদে তার একমাত্র অবস্থান। তবে এটা কি -ই, -ও-এর মতো পদাশ্রিত অব্যয়? কিন্তু তাতে 'বশত' শব্দের ভূমিকা কী বোঝা যায় না।
৩০। যা-তা ও যেমন-তেমন বামনদেব চক্রবর্তী তাঁর ব্যাকরণপুস্তকে 'অমুক'-কে সর্বনামের মধ্যে ধরেই রেখেছেন কতকাল আগে। অমুক-এর অনুকার শব্দ 'তমুক' ধরেননি, ইয়ে-ও ধরেননি সর্বনামের দলে। কিন্তু 'অমুক' ধরার মধ্যে তাঁর খোলা মন ও তীক্ষ্ণ নজরের পরিচয় পাওয়া যাচ্ছে। আজ নিজের মনেই প্রশ্ন ছিল যে 'অন্য' ও 'অপর' সর্বনামের মধ্যে ধরা হয় কি না (অন্যকে/অপরকে বলার আগে, ইত্যাদি)। সে ব্যাপারেও দেখলাম বামনদেব পিছিয়ে নেই। 'অন্য' ও 'অপর' আছে তাঁর সর্বনামের মধ্যে। এখন প্রশ্ন: 'যা-তা' শব্দটিকে সর্বনামের মধ্যে ধরা যাবে কি? এবং সেই সঙ্গে 'যেমন-তেমন'? প্রয়োগ: সে আমার সঙ্গে সেদিন যা-তা করেছিল। আমাকে যেমন-তেমন বলে বিদেয় করে দিল। কথ্য যা-তা এসেছে সাধু যাহা-তাহা থেকে। যাহা-তাহা আমার ধারণায় অনির্দেশক সর্বনাম। রোজ কত-কী ঘটে যাহা-তাহা,/এমন কেন সত্যি হয় না, আহা! কিন্তু কথ্য ভাষায় যা-তা কথাটির অর্থ লোকব্যবহারে পালটে গেছে। শব্দটি এখন তুচ্ছার্থে বা অবজ্ঞার্থে বা নিন্দার্থে প্রযুক্ত হয়। এমন একটা যা-তা শাড়ি পরে বিয়েবাড়ি যাবে? অরুণের কথা বোলো না তো, যা-তা ছেলে একটা। সকলের সামনে তুমি এমন একটা যা-তা কাণ্ড ঘটাবে, আমি তা কল্পনাও করতে পারিনি। আমার বিবেচনায় এগুলি সবই সর্বনামীয় বিশেষণের উদাহরণ। উপরে যে-কটা দৃষ্টান্ত দিয়েছি, তাতে 'যা-তা' কোনো-না-কোনো বিশেষ্যকে বিশেষিত করেছে। শব্দটি নিজেই যদি সরাসরি (সমাপিকা বা অসমাপিকা) ক্রিয়ার কর্তা বা কর্ম হয়, তবে বিশেষ্য হতে পারে। তবে তেমন প্রয়োগ কম। 'বাবা এখন এসে পড়লে যা-তা হবে' (কর্তা)। 'যা-তা বললেই তো হলো না, প্রমাণ চাই' (কর্ম)। তবে এই 'যা-তা'-কে আমি so and so ধরনের বিশেষ্য না বলে অনির্দেশক সর্বনাম বলতেই পছন্দ করব। So and so অনামা লোকটির বিকল্প নামই হয়ে ওঠে। 'যা-তা'-র পেছনে কিন্তু একটা অনুক্ত বিশেষ্য থাকে। উপরের দুটি উদাহরণেও আছে।
৩১। কার্তিক/কার্ত্তিক কার্ত্তিক - প্রচলিত ব্যুৎপত্তি, কৃত্তিকার পুত্র, তাই অপত্যার্থে কৃত্তিকা + অ -> কার্ত্তিক। এই ত্ত দিয়ে বানানের পক্ষে আছেন মনিয়র উইলিয়ামস, জ্ঞানেন্দ্রমোহন, হরিচরণ। পাণিনি ব্যাকরণের উপর লেখা লাহিড়ী-শাস্ত্রীর 'পাণিনীয়ম্' গ্রন্থটিও বলছে, ত-এর দ্বিত্ব বর্জন করলে কার্ত্তিকের মাতৃপরিচয় বদলে যাবে। 'কার্তিক' শব্দে রেফে ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব বর্জন করে একটি ত দিয়ে বানানের পক্ষে আছেন যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি, রাজশেখর বসু, এবং সম্ভবত তাঁদের অনুসরণ করে, সংসদ বাংলা অভিধান ও আকাদেমি বানান অভিধান। রাজশেখর ও সংসদ কৃত্তিকা ব্যুৎপত্তির উল্লেখও করছেন, কিন্তু কার্তিক-এ দিচ্ছেন একটা ত। আবার, সুধীরচন্দ্র সরকার সংকলিত 'পৌরাণিক অভিধান'-এও উল্লেখ আছে কার্তিকেয়-র, সেখানেও একটা ত। তাহলে কি ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব বর্জন করতে গিয়ে ব্যুৎপত্তি থেকে সরে আসাটাও বৈধ? ত্ত নিয়ে কোনো সমস্যা নেই, যেহেতু শব্দটা কৃত্তিকা থেকে আসছে। সমস্যা কার্তিক-এর একটা ত নিয়ে। অথচ সেই দিকে আছেন যোগেশচন্দ্র রায় বিদ্যানিধি ও রাজশেখর বসুর মতো সংস্কৃতজ্ঞ ব্যক্তি। তাহলে কি এই দ্বিতীয় পক্ষের হাতে অন্য কোনো ব্যুৎপত্তির যুক্তি রয়েছে? শব্দটা এসেছে 'কৃত্তিকা' শব্দের সঙ্গে 'ষ্ণ' প্রত্যয় যোগ করে। প্রত্যয়যোগে 'কৃত্তিকা' শব্দটির আদ্যবর্ণ 'কৃ' বৃদ্ধি পেয়ে 'কার্' হয়েছে, কিন্তু সেজন্য মধ্যবর্ণ 'ত্তি' থেকে একটি 'ত' লোপ পাবার কোনো ব্যাকরণসংগত কারণ নেই। বানানটা 'কার্ত্তিক' হওয়াই উচিত। কিন্তু বিষয়টা কিঞ্চিৎ জটিল। রবীন্দ্রনাথের উৎসাহে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় বাংলা বানান সংস্কারের জন্য একটি সমিতি গঠন করেছিলেন। সমিতির প্রথম পুস্তিকা প্রকাশিত হয় ১৯৩৬ সালের মে মাসে। সেখানে একটি নিয়মে বলা হলো: রেফ-এর পর ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব বর্জিত হবে। যেমন সর্ব্ব, কর্ম্ম, নির্দ্দয়, সূর্য্য না লিখে লিখতে হবে সর্ব, কর্ম, নির্দয়, সূর্য। কিন্তু ব্যুৎপত্তি বোঝার অসুবিধে হলে দ্বিত্ব যেমন আছে তেমনই থাকবে। উদাহরণ হিসেবে 'কার্ত্তিক' শব্দটি উল্লিখিত হল। ওই বছরের অক্টোবরে প্রকাশিত পুস্তিকাটির দ্বিতীয় সংস্করণে এই ব্যতিক্রমটি আর থাকল না। বলা হলো, রেফ-এর পর কোনও ব্যঞ্জনের দ্বিত্ব হবে না। 'কার্ত্তিক'-কেও 'কার্তিক' লিখতে হবে। এরপর একদিন মণীন্দ্রকুমার ঘোষ রাজশেখর বসুর সঙ্গে দেখা করতে গেলেন। 'কার্ত্তিক/কার্তিক' প্রসঙ্গ উঠল। মণীন্দ্রবাবু সংশোধনটির ব্যাকরণগত অসংগতির দিকে রাজশেখরের দৃষ্টি আকর্ষণ করলে তিনি ঈষৎ উষ্মার সঙ্গে বললেন, 'মশাই, সংস্কারই করলাম একটা। আপনারা ইস্কুলমাস্টাররা কিছুই করতে দেবেন না!' শুধু তা-ই নয়, ছাত্রেরা পরীক্ষার খাতায় 'কার্ত্তিক' বানান লিখলে কেটে গোল্লা দেওয়ার কথাও বললেন। বলা বাহুল্য, তাঁর 'চলন্তিকা'-য় 'কার্ত্তিক' শব্দটি স্থান পায়নি। 'সংসদ' অভিধানেও কেবল 'কার্তিক' আছে। আনন্দবাজারের অভিধানে দুটি বানানই আছে, কিন্তু দ্বিত্ব-বর্জিত বানানটিকে বেশি প্রচলিত বলা হয়েছে। তাহলে ব্যাপারটা ঠিক দাঁড়িয়ে আছে কোথায়? যাঁর যেমন ইচ্ছে তেমন লিখবেন? কার্ত্তিক/কার্তিক নিয়ে যা বুঝলাম: ১। এমন কোনও গুপ্ত বিধান নেই, যাতে কার্ত্তিক/কার্ত্তিকিক/কার্ত্তিকেয়-এদের একটা করে ‘ত’ বাদ দেওয়া যায়। ভট্টোজী দীক্ষিত-র সিদ্ধান্তকৌমুদীর একটা ছাত্রপাঠ্য ব্যাখ্যা প্রণয়নের জন্য বিদ্যাসাগরকে প্রস্তাব দেওয়া হয়, বা বিদ্যাসাগর প্রস্তাব দেন। রাজেন্দ্রলাল মিত্র উৎসাহী ছিলেন, কিন্তু বিদ্যাসাগর তাঁকে নাকচ করে দেন, তাঁর সংস্কৃতজ্ঞান নির্ভরযোগ্য নয় বলে। ভার দেন ছাত্র তারানাথ তর্কবাচস্পতিকে। তারানাথ সেটা করেন ‘সরলা’ নামে ব্যাখ্যা জুড়ে। এঁর দু-টি অভিধান আছে, শব্দকৌস্তুভ আর একটা মহাগ্রন্থ বাচস্পত্যম্-৫ খণ্ডে। সেখানে, কাত্তিক/কার্ত্তিকিক/কার্ত্তিকেয়, এগুলি অবিকল্প। ২। বন্দ্যঘটীয় সর্বানন্দ বা রায়মুকুট বৃহস্পতি কেউ একটা করে ‘ত’ বাদ দেননি। কৃত্তিকা থেকে টেনে কার্ত্তিক ইত্যাদি করেছেন। ৩। আর একটা মজা দেখলাম, ভানুজী দীক্ষিতর কথায় ‘হৈম’ নামটি এসেছিল (হৈম=হেমচন্দ্র)। তাঁর ‘অভিধানচিন্তামণি’-তে /ঊর্জ/ শব্দকে ‘কার্তিক’-এর প্রতিশব্দ ধরা হয়েছে। দুটি সম্পাদনা পেয়েছি, (ক) চৌখাম্বা বিদ্যাভবন-এর হিন্দী অনুবাদে করেছেন আরা-স্থ পণ্ডিত হরগোবিন্দ শাস্ত্রী। (খ) আর-একটা ভাবনগর থেকে প্রকাশিত জৈনাচার্য বিজয়ধর্ম সূরি-র করা। অথচ এর একটা অতি পুরাতন সংস্করণ আছে, জার্মান ভাষায় করা, Otto Boehtlingk und Charles Rieu [1847] সেখানে, p.27 sl.155 /কার্ত্তিক/। বোধ হয় ৩টি পাণ্ডুলিপি থেকে করেছেন, পাঠান্তর বলেননি। ৪। অনুমান করতে পারি, রাজশেখর মারাঠি আপটে-র মাতৃভাষার বানানে আচ্ছন্ন থাকার idiosyncracy দ্বারা প্রভাবিত হয়েছেন। ৫। কী হওয়া উচিত, তা পণ্ডিতদের বিবেচ্য। আমাদের মতো কৌতূহলী পাঠক এর বেশি আর খুঁজে পাবে না, তৈরি চোখ নেই।
৩২। 'সন্ধ্যে'!! য-ফলার জন্যে বুক ফাটছে। তাই 'সন্ধে'-তেও য-ফলা দিয়ে 'সন্ধ্যে'। মূল 'সন্ধ্যা' শব্দের য-ফলা আ-কার অর্থাৎ ই-আ ধ্বনি অভিশ্রুত হয়ে এ-ধ্বনি হল, তা-ও নাকি য-ফলা রয়ে গেল সগৌরবে! তার উপর ওই শব্দে যুক্তব্যঞ্জন ন্ধ থাকার ফলে উচ্চারণে ব্যঞ্জনের কোনো দ্বিত্ব ছিল না যে উচ্চারণের খাতিরে য-ফলা ধরে রাখতে হবে (যেমন, মিথ্যে)। তবু য-ফলার নিস্তার নেই। বোঝো ঠেলা!
৩৩। সঙ্গে/সংগে আর কত যে 'সংগে'-রূপী অদ্ভুত বানানটা দেখতে হবে - সাহিত্যিকের কলমে, অধ্যাপকের কলমে, এবং অবশ্যই সাধারণ নাগরিকদের কলমে! ঙ-র বদলে যে কোথাও কোথাও অযোগবাহ অনুস্বার হতে পারে, এমন একটা কথা শোনা গিয়েছিল। ব্যস, আর যায় কোথা, সেটা যে ক্ষেত্রবিশেষে তা তো আর মাথায় রাখার প্রয়োজন নেই, বাঙালি উদোর পিণ্ডি বুধোর ঘাড়ে চাপাতে দেরি করেনি। বাঙালি বিদ্বজ্জন যে কবে 'সংগে'-র সঙ্গ ত্যাগ করবেন! কতকগুলো একই রকম ভুল আছে। 'অংক', 'সংগে', 'অংগ'। সবগুলোতে ‘ঙ্ক’/'ঙ্গ' হবে। চ-বর্গ থেকে প-বর্গ পর্যন্ত কুড়িটি স্পর্শবর্ণের যে-কোনও একটি পরে থাকলে পূর্বপদের অন্তস্থিত ম্-এর জায়গায় সেই বর্গের পঞ্চম বর্ণের আগম হয়। যেমন সঞ্চয়, কিন্নর, বসুন্ধরা, সম্বল। ক-বর্গের ক্ষেত্রেও তা হবে, তবে বিকল্পে অনুস্বারের বিধান আছে। তাই অহঙ্কার বা অহংকার, সঙ্গীত বা সংগীত, সঙ্ঘাত বা সংঘাত দুরকম বানানই লেখা যেতে পারে। আধুনিক বাংলায় ঙ্-এর বদলে অনুস্বার লেখা প্রচলিত রেওয়াজ হয়ে দাঁড়িয়েছে। যে-কথাটা অনেকেই খেয়াল রাখেন না, সেটা হলো, এই যে মৌলিক শব্দের ক্ষেত্রে এবং যৌগিক শব্দের ক্ষেত্রেও যেখানে পূর্বপদের শেষ বর্ণটি ম্ নয়, সেখানে ঙ্-এর বদলে অনুস্বার লেখা চলবে না। এইরকম কিছু শব্দ হলো: কঙ্কাল, শঙ্খ, শৃঙ্গার, সঙ্গ, তরঙ্গ, ভঙ্গুর প্রভৃতি। শৃঙ্গার শব্দটি শৃম্+গার থেকে আসেনি, এসেছে শৃঙ্গ+√ঋ+অ (ভাববাচ্যে) থেকে। ‘শঙ্খ’ সম্ভবত একটি মৌলিক শব্দ। আর ‘সঙ্গ’ শব্দটির মূলে আছে √সঞ্জ্+অ (ভাববাচ্যে)। কোথাও ম্ নেই। ব্যঞ্জনসন্ধি ছাড়া অন্যত্রও অনুস্বার হয়, সেটি আলাদা প্রসঙ্গ।
৩৪। যে বন্ধুরা জানতে চান, 'খুঁজে ও খোঁজে-র তফাত কী' অথবা 'উঠে ও ওঠে-র তফাত কী' তাঁদের জন্য সহজ উত্তর: খুঁজে অসমাপিকা ক্রিয়ায় হয়, খোঁজে হবে সমাপিকা ক্রিয়ায়। আপনার ভাষায় আপনি যেখানে বলেন 'খুঁইজ্যা' বা তার সদৃশ কিছু, প্রমিত বাংলায় সেখানে বলুন/লিখুন 'খুঁজে'। যেমন, আপনার ভাষায় আপনি যদি বলেন 'তারে খুঁইজ্যা পাইলাম না', প্রমিত বাংলায় সেটাকেই বলতে/লিখতে হবে 'তাকে খুঁজে পেলাম না'। অন্যান্য উ-কারযুক্ত ধাতুর ক্ষেত্রেও, যেমন √খুল্, √বুঝ্, একই নিয়ম চলবে। অর্থাৎ, (আঞ্চলিক) খুঁজে = (প্রমিত) খোঁজে। (আঞ্চলিক) খুঁইজ্যা = (প্রমিত) খুঁজে। একই জাতীয় সমস্যা ই-কারযুক্ত ধাতু নিয়েও হতে পারে, যেমন, √চিন্, √লিখ্। এখানে সমস্যার উদ্ভব এ-স্বরকে ই বলার প্রবণতা থেকে। আপনার ভাষায় যেখানে আপনি 'লিখে' বলেন, সেখানে আপনাকে প্রমিত বাংলায় বলতে/লিখতে হবে 'লেখে' — 'সে ভালোই লেখে', 'লিখে' নয়। আর যেখানে বলেন 'লিখ্যা' বা তজ্জাতীয় কিছু, সেখানে প্রমিত বাংলায় বলুন/লিখুন 'লিখে'। যেমন, 'চিঠিটা লিখে তারপর আসছি' ইত্যাদি। অর্থাৎ, (আঞ্চলিক) লিখে = (প্রমিত) লেখে। (আঞ্চলিক) লিখ্যা = (প্রমিত) লিখে।
৩৫। (১) সাধিত ধাতু যেখানে বিস্তার বিভক্তি 'আ' আছে, যেমন √করা, √লাফা, সেখানে প্রকার বিভক্তি 'ইয়া' যুক্ত হলে আমরা পাই 'করাইয়াছে', 'করাইয়াছিল', 'করাইয়া'। এই রূপগুলো বিবর্তিত হয়ে চলিতে পাই 'করিয়েছে', 'করিয়েছিল', 'করিয়ে'। কিন্তু হওয়ার তো কথা করাইয়াছে > করাই্য়েছে (স্বরোচ্চতাসাম্য + অর্ধস্বরীভবন) > করায়েছে (অর্ধস্বর ই্ লোপ)। (কোনো কোনো আঞ্চলিক ভাষায় সে রূপ আছেও।) তাহলে, 'করিয়েছে' রূপটা এল কীভাবে, কী করে আ-কার (রা) ই-কারে (রি) পরিণত হলো? (২) একই রকমে, 'করাইয়ো' থেকে 'করিয়ো' কীভাবে আসছে? (৩) বর্তমান অনুজ্ঞায় মান্য-পক্ষে বিভক্তি 'উন' হয়ে থাকে। উন-বিভক্তি যোগে √করা-ধাতু থেকে সাধু রূপ 'করাউন' হতে পারত। অথচ সাধু চলিত দুইয়েই দেখি 'করান' রূপ। তাহলে উন-বিভক্তি কোথায় গেল? যদি 'উ' লুপ্ত হয়ে থাকে, তা কি আগে অর্ধস্বরীভূত হয়েছিল? দেখা যাক। করাইয়ো থেকে 'করিয়ো' এসেছে ওই আ-লোপের নিয়মটি প্রয়োগের ফলে। করাউন থেকে করান-ও হয়েছে ক্রিয়াপদে আ-এর পরে অন্য স্বরধ্বনি লোপের নিয়মে… যাউন > যান, যা-এন > যান, গাউন > গান, গা-এন > গান, যাউক > যাক, যাইস (জাইশ) > যাস (জাশ্)। আমার মনে হয়, যে স্বরধ্বনিগুলো লোপ হয়, সেগুলো আগে অর্ধস্বর হয়ে যায়, অর্থাৎ একটা gliding rule আগে আসে, তার পরে glide deletion নিয়মের প্রয়োগ হয়। বিশেষ্যেও কখনো এই নিয়মটি ঐতিহাসিক চেহারায় দেখা দেয়—চাউল > চাল। প্রশ্ন হলো, এগোয়, পিছোয়, কিলোয়, নিংড়োয়, বিকোয়, বিলোয় ইত্যাদি চলিত রূপে ও-ধ্বনিটা কী করে আসছে? শুধায় > শুধোয় নাহয় স্বরোচ্চতা দিয়ে বোঝা গেল, কিন্তু বিলায় > বিলোয় বিবর্তনের পথটা কী? তাহলে কি এসব ক্রিয়াপদের চলিত রূপের ক্ষেত্রে ধাতুমূলটাকে √বিলো, √বিকো বলে ধরব? (অর্থাৎ, এককালিক, synchronic, বিশ্লেষণ প্রয়োগ করব?)
৩৬। চাচ্ছেন/চাইছেন আদি ধাতু চাহ্। তা থেকে চাইছেন। সেটাই প্রমিত। ধাতু যদি চা হয়, কোনো কোনো উপভাষায়, তাহলে চাচ্ছেন। রবীন্দ্রনাথও দু-এক জায়গায় চাচ্ছেন লিখেছেন। এখন প্রমিত ‘চাইছেন’। একইভাবে, 'গাইছেন' লিখব, 'গাচ্ছেন' নয়। আদি ধাতু বিবেচনায় খাইছেন, পাইছেন ইত্যাদি না লিখে লিখব খাচ্ছেন, পাচ্ছেন ইত্যাদি।
৩৭। এই যে যত্র-তত্র 'খাবনা' 'যাবনা' দেখা যাচ্ছে। 'পাবনা' (পাব না) দেখলে পাবনা জেলার কথা মনে আসে। যা-ই হোক, একসাথে না লিখে আলাদা করে ‘খাব না’, ‘যাব না’, ‘পাবো না’ লিখতে হবে।
৩৮। আপনি কি কেবল বিদেশি (মূলত ইংরেজি) শব্দের বাংলা প্রতিবর্ণীকরণের বেলায় 'অ্যা' না-লিখে 'এ্যা' লেখার কথা ভাবছেন মাঝে মাঝে? যেমন অ্যান্ড না-লিখে এ্যান্ড? কিন্তু ওইভাবে তো ল্যান্ড লিখতে পারবেন না। যদি পারেনও, ওটা দেখাবে ল্যোন্ড-এর মতো। তা ছাড়া বাংলায় (তথা সংস্কৃতে) 'অ্যা' চিহ্নের ব্যবহার তো যথেষ্ট আছে। ন্যায়, ন্যাস, শ্যাম, ব্যাপ্ত, ব্যাবহারিক, অরণ্যানী, শ্যালক, ত্যাজ্য। বরং এ্যা (্যো) চিহ্নের ব্যবহার এই মুহূর্তে মনে পড়ছে না। শ্যেন শব্দটা মনে পড়ল, আ-কার নেই। বাংলায় শ্যেন-এর উচ্চারণ একেবারেই অ্যা-এর দিকে যায় না। তবে সব অ্যা-কে এ-র বিকৃতি বলা যায় না। বাংলা অ্যা-র একাধিক উৎস আছে। বিদেশি শব্দ ছাড়াও, বাংলা ভাষায় ই + আ > অ্যা হয়, যেমন শিয়াল > শেয়াল > শ্যাল। একে শুধু 'এ'-র বিকৃতি বলব কেন? পেচক > প্যাঁচা হতেই পারে। কিন্তু চ্যাঁচামেচি? পাক > বঙ্গালি প্যাক। টাকা > উপভাষার ট্যাকা? ধ্বন্যাত্মকের ঘ্যানঘ্যান প্যানপ্যান স্যাঁতস্যাঁত ক্যাঁচক্যাঁচ এ-র বিকৃতি বলে আমার মনে হয় না। শুধু অ্যা চিহ্নটা যদি ধরি, তাহলে তা বিদেশি শব্দের জন্য, তা কি বলা যায় না? আর, /অ্যা/ স্বনিমটা যদি ধরি, তাহলে তার চার রকম উৎস --- (১) মৌলিক, যেমন ওই ধ্বন্যাত্মকগুলো, (২) /এ/-এর বিকৃতি; শেয়াল > শ্যাল-কেও কি এর দ্বিতীয় স্তর বলা যায় না? (৩) সংস্কৃত য-ফলা ও য+আ-এর উচ্চারণবিশেষ, (৪) বিদেশি শব্দ। চ্যাঁচামেচি লিখব কেন? চেঁচা-ধাতু যখন আছে, তখন কি চেঁচামেচি লিখতে পারি না? সংস্কৃত য-ফলাকে তুমি এ-র উচ্চারণ বিশেষ বলবে ? 'চেঁচা-' ধাতু তো কারও লিখিত রূপ। আসল ধাতুটা তো চ্যাঁচা- হওয়া উচিত। অ্যান্ট বা অ্যান্ড-এর মধ্যে অ+য+আ নেই, সেটা জানি। কিন্তু এ+য+আ-ও তো নেই। তবে বাংলা অ একটি নিউট্রাল স্বর, হিন্দির মতো হ্রস্ব আ নয়। কাজেই য-ফলা+আ-কার লাগাতে হলে এ-র বদলে অ-তে লাগানো অধিক যুক্তিযুক্ত বলে মনে হয়। বাকি সব শব্দ যদি এ-স্বরের সাহায্য ছাড়াই উচ্চারিত হতে পারে (প্যাঁচা, হ্যান্ডেল, ব্যালান্স, ঘ্যানঘ্যান, ব্যাহত ইত্যাদি), তবে অ্যান্টিবায়োটিক বা অ্যানালগ লিখতে 'এ' লাগবে কেন? কেন এ্যান্টিবায়োটিক বা এ্যানালগ লিখব? যদি বলি, একা-র উচ্চারণ অ্যাকা, তবে শুধু এ অথবা এ-কারই দেওয়া উচিত, এ্যা কেন? য-ফলা আসবেই না। অ্যা বোঝাতে পেটকাটা এ বা এ-কার লেখা হোক। হিন্দিতে ঐ বা ঐ-কার দিয়ে এই সমস্যা মেটানোর চেষ্টা হয়েছে। যেহেতু ওরা বলে 'হ্যায়', লেখে 'হৈ'; তাই আমাদের 'ব্যাঙ্ক'-কে ওরা 'বৈঙ্ক' লেখে। বাংলায় একটা লিখনরীতি চালু হয়ে গেছে, অল্প কয়েকটি ইংরেজি শব্দের প্রতিবর্ণীকরণ করতে তাকে বিঘ্নিত করা হয়তো ঠিক হবে না। অ্যা আসলে একটি স্বরচিহ্ন, ব্যঞ্জনবর্ণ অন্তঃস্থ য-এর সাহায্য ছাড়াই সেটির উচ্চারণসাধ্য হওয়া উচিত ছিল। আমাদের তেমন স্বরচিহ্ন নেই বলেই এত ঝামেলা।
৩৯। (১) হাট-বাজার প্রভৃতি ব্যঞ্জনান্ত শব্দে অধিকরণে এ-বিভক্তি হবে। ঔপভাষিক ও কাব্যিক প্রয়োগে এ-তে একসঙ্গেও হতে পারে, যেমন, ওকে আমাদের দলেতে নিইনি, ঘরেতে ভ্রমর এল গুনগুনিয়ে। (২) য় অন্তঃস্থ বর্ণ, হ উষ্ম বর্ণ, এখানেও এ-বিভক্তি হবে। হৃদয়ে, শিলাইদহে। (৩) যুক্ত ব্যঞ্জন ক্র, স্ত, ত্ন, ষ্ণ, র্ম, র্ণ ইত্যাদি বাংলা উচ্চারণে অ-অন্ত হলেও এ-বিভক্তি হবে। চক্রে, অস্তে, যত্নে, কৃষ্ণে, মর্মে, বর্ণে। (৪) কিন্তু যুক্তব্যঞ্জনবর্জিত স্বরান্ত হলে তে-বিভক্তি। (ই-কার, অর্থাৎ একমাত্র গাড়ি, বাড়ি প্রভৃতির সঙ্গেই তে-বিভক্তির সম্পর্ক, এমনটা কিন্তু নয়।) কোলকাতাতে গাড়িতে মধুতে বাঁশবেড়েতে আলোতে, এরকম সব ক্ষেত্রেই তে। (৫) স্বরান্ত শব্দে তে-বিভক্তি বিকল্পে এ-বিভক্তি হতে পারে (ই-কার উ-কারের পরে ছাড়া), কিন্তু স্বরের পরে বলে তা 'য়'-এর রূপ নেবে, লেখায় ও উচ্চারণে। যেমন, কোলকাতায়, আলোয়। ই-কার উ-কারান্তে এই বিকল্প সম্ভব নয় - গাড়িতে সাগুতে ইত্যাদিতে নির্বিকল্প 'তে'।
৪০। -ই আর -ও এ দুটি morpheme শব্দের শেষে বসে, এবং সেই শব্দটির ওপর কিছুটা গুরুত্ব (emphasis) আরোপ করে। অর্থাৎ, এদের গুরুত্ববাচক রূপমূল বলা চলে। এবং গুরুত্ব আরোপ করতে গিয়ে অনেকসময় শব্দের অর্থও এরা কিছুটা পালটে ফেলে। যেমন, 'আজও'-র অর্থ 'অদ্যাবধি' হয়ে ওঠে। প্রশ্ন হলো, এই -ই -ও জাতীয় রূপমূলগুলিকে আমরা কোন শ্রেণিভুক্ত করব? এদের কি প্রত্যয় বলব, না বিভক্তি বলব? না কি -টা, -টি-এর মতো পদাশ্রিত নির্দেশক বলব? না কি নতুন কোনো পারিভাষিক নাম তৈরি করব? যদি কোনো ব্যাকরণ বইয়ে এ নিয়ে আলোচনা প্রত্যাশা করি তাহলে সেটা কোন অধ্যায়ের অন্তর্ভুক্ত হবে? আমার বক্তব্য, 'অনিল-ই যাবে' ইত্যাদি লেখা না-লেখা নিয়ে, সেই/সে-ই তাই/তা-ই নিয়ে নয়। সাধারণভাবে হাইফেন (ও ঊর্ধ্বকমা) বাড়ানোর পক্ষে আমি নই। 'দুঃখের তিমিরে যদি জ্বলে তব মঙ্গল-আলোক / তবে তাই হোক' (তা-ই) ও "তাই তোমার আনন্দ আমার 'পর" (তাই) এই দুই তাই-এ সূক্ষ্ম প্রভেদটা বুঝে নেওয়ার দায়িত্ব বাঙালির ওপরই ছেড়ে দিতে হবে বলে মনে করি। যে-এর ক্ষেত্রটা সত্যিই অনেক গোলমেলে, তবে প্রসঙ্গবিশেষে নিতান্ত দায়ে না পড়লে আমি হাইফেন বসাতে চাই না। অনিল-ই যাবে আর অনিলই যাবে-র মধ্যে অর্থের কোনও প্রভেদ ঘটছে না, তাই অপ্রয়োজনে হাইফেন দিই না আমি। তবে প্রয়োজনবোধে সে-ই, তা-ই লিখি। যে-বাঙালি ‘তাইজন্য’ বলে ও লেখে, সে কি তা-ই তাই-এর সূক্ষ্ম প্রভেদ বুঝবে? তবে বিরামচিহ্ন যত কম ব্যবহার করে বক্তব্য বোঝানো যায়, ততই ভালো। এটা আমি মানি। এই যে তা-ই লিখি, কিন্তু যাচ্ছেতাই-কে কি যাচ্ছেতা-ই লিখব? তাইরে-নাইরে-না কী হবে? বুঝতে পারছি। ফলে ওই ধরনটাও অপ্রমিত। তা-ই তো? এই তা-ই কি ভুল হলো? সহজ করে দিই। So/therefore শুধু তাই। তাহাই অর্থে তা-ই। ঝড় হচ্ছে, আমি তাই বললাম, আজকে আর এসো না। যা রান্না হয়েছে, আমি তা-ই খেয়েছি। একইভাবে, যাহাই অর্থে যা-ই, যাই নয়। আমি আর ওখানে যাই না। যা-ই বলো, আমি কাজটা করছি না।
(চলবে . . . )