- চলো না ব্যালকনিতে, আকাশে আজ চাঁদ নেই; আমরা একটু... - প্রেম করবে বুঝি চাঁদের অনুপস্থিতিতে! - না গো, তোমাকে অমাবস্যার রাত চেনাব। - কীভাবে? - সে এক কষ্ট-মানুষের গল্প, একদিন ভালোবাসা তাকে... - কী? - পূর্ণিমার শেষ তিথিতে অপেক্ষায় রেখে যায়... - তারপর? - অবুঝ প্রেম অপেক্ষা করতে করতে প্রতীক্ষায় গিয়ে দাঁড়ায়, তবু ভালোবাসা কথা রাখে না... - তার কি ভীষণ কষ্ট হয়? আহা, বলো না সবটা! - হুঁ, তার কষ্টে সেই পূর্ণিমার ভীষণ কষ্ট হয়; অবুঝ প্রেমের কষ্টে সেই পূর্ণিমার চাঁদের এক পক্ষ হারিয়ে যায়; প্রেমের শেষ ফোঁটা আলো খু্ঁজতে খুঁজতে...আজও খুঁজছে সে...অবুঝ প্রেমের ভালোবাসা কোথায়! তাই এক পক্ষে পূর্ণিমা থাকলেও অন্য পক্ষ হারিয়ে যায় ভালোবাসার খোঁজে, আর যখন এক পক্ষে চাঁদ নিখোঁজ থাকে, ঠিক তখনই অমাবস্যার জন্ম হয়। - একটা অমাবস্যা কতটা নান্দনিক? - যতটা কলাশাস্ত্র তোমার আঁখিপল্লবে থাকে! - ভাবছি, গোছানো জীবনটা বেচে দেবো তোমার কাছে; তারপর ছন্নছাড়া হব, যেমন খুশি ডিগবাজি দিয়ে জীবনটাকে দেখব! তুমি দেখো...দরিদ্র দুঃখগুলোকে কেমন অবহেলা করি আমি। - আমি তোমাকে অনেকখানি বুঝি গো! তুমি আমার স্বপ্রেম ভালোবাসা। - আমাদের প্রেম জোছনার শহরে হেঁটে যাক তবে, বরষা-কদমে বিমোহিত হোক আমাদের একান্ত সময়গুলো! - এই, ওটা যে অনু আর কৃষ্ণের গো! - তাই, তবে ছেড়ে দিলাম, আমরা পলাশের বনে বনে আনন্দকূজন করে বাঁচব বাকিটা জনম! - পলাশবন আমি কখনও দেখিনি যে! - একসঙ্গে দেখব, আমরা তো যৌথ খামারি...নাকি! - অনু ভাগ্যবতী, তাই না? কতটা বরষা কতটা বসন্ত পেল...সঙ্গী তার কৃষ্ণজীবন! - হুঁ, তোমার চেয়েও...বলতে চাও তবে? - না-ইবা কেন! আমি কোনও বরষা পাইনি তোমার সঙ্গে...না, একখণ্ড বসন্তও না! জং ধরেছে গো ভাগ্যে। - যা বললে, এই বরষায় তুমি শীতলক্ষ্যায়, আমি পদ্মায়। এই দূরত্ব ঘুচবে না, সোমু? - তবে কষ্টের কেনা-বেচা হবে কী করে, বলো! বিধাতার আঁকা ছকে আমরা যে নিছক বোড়ে! - সব জীবনে সুখের গল্প জন্মায় না, তাই না সোমু! - জানি গো, এক অনির্ণেয় গন্তব্যে হাঁটছি, তবু হাঁটছি ভেবেই এতটুকু সুখ, বুঝলে! - সময় যত ফুরিয়ে আসছে, তত মনে হচ্ছে, এক তুমি ছাড়া ভাবার মতো বুঝি আমার আর কিছুই রইল না! - কবি, আমি যে তোমার কবিতার নারী! তবে বড়ো যে বলো...তোমার কোনও গল্প নেই! - নেই তো কোনও গল্প! বরং তোমার গল্পটা একদিন লিখব। - সেই গল্পে আমায় পাবে না, হয়তো কেউ থাকবে, হয়তো আমিই থাকব, কিন্তু সেই গল্পে আমায় পাবে না। শব্দ ছাড়া গল্প হয় না, জানলে না, কবি! - ফিরিয়ে দিচ্ছ, মেয়ে; তবে এই শহরে সূর্যটাও দারুণ দুঃখী। হয়তো তুমি বোধের অতীত, তবুও যবনিকাতেই গল্পটা লিখতে হয়! কষ্টপাড়ে হেঁটে দেখতে পারো, মন্দ কী! - তোমার কোনও গল্প নেই, নেই সে...গল্পের মানুষ যেমন হয়। একটা গল্প লিখবে, সেই গল্পে আমিও "নেই" হয়ে যাই। সূর্যটাকে দুঃখী বলতে পারো, সূর্য ঠিকই হেসে অবহেলায় ভুলে যাবে। কষ্টের আলপথে হেঁটে যেতে চাই, হয়তো...চাইতাম! নেই-গল্পের মানুষের গল্পে আমিও "নেই" হয়ে যাই...তাই হাঁটা হয় না আর! - বিপন্নতা সব আমারই থাক, মেয়ে! আমার ভেতরে জন্মেছে অমাবস্যা, তাই সমৃদ্ধি খুঁজি তোমার গহীনে! আমাকে সমৃদ্ধ করো, নারী! বিশুদ্ধ পাড়ায় যে আমার ঘরবাড়ি নেই গো! - বিপন্নতা! সে আমার মজ্জাগত; অমাবস্যা যেমন ছিল! ছায়াকে আঁধার চেনাতে হয় না...বুঝলে? সমৃদ্ধির খোঁজে বেরিয়েছিলাম, বুনোলতা যেমন; কৃষ্ণচূড়ার নিচে তোমাকে পেলাম, একলা নিমগ্ন! দূর থেকেই বললে, বুনোলতায় সমৃদ্ধি হয় না! তবে ও-পাড়ায় তোমার ঘরবাড়ি নেই, হয়তো ছিল, তুমি যাওনি...নিমগ্ন বৃক্ষ যেমন উদাসীন! শুদ্ধতায় বিশ্বাসী কখনও বুনোলতা মাড়ায় না। - কয়েক মুঠো বিশ্বাস শাড়ির খুঁটে বাঁধা থাক; দেউলিয়া মানুষ আমি, ভেবো, গচ্ছিত রেখেছি! কৃষ্ণচূড়ার নিচে বসে শব্দ গুনি, কীসের যেন উৎসব; বিবর্ণ কবি, তাই ঠাঁই পাইনি; অবশেষে আমি পরবাসী বনে যাই! - বলছিলে, মানুষ নিজেকে সবটা দেখতে পায় না...ঘোলাটে আয়না যেমন! তবে বিশ্বাস রাখতে পেরেছি, বহুবছরের বাতিল দু-চোখে শেষে মরচে ধরেছে! দেউলিয়া হওয়াটা শিল্প; অমাবস্যা যেমন গভীরতায় নিখাদ--- আমি আড়চোখে দেখি, কৃষ্ণচূড়ায় রঙের আগুন; তুমি যেমন কবিতায়... গৃহহীন জোছনার মতো ঐশ্বর্যে সূর্যেরও তেষ্টা মেটে; আমি তো কোন ছার, অযত্নে বেড়ে-ওঠা এক পঙ্কিল অবহেলা! - জোছনার কথা বললে, কারণ রাতটা তোমার চেনা; ভোরটাও সেখানে আত্মীয়! সূর্যের সঙ্গে পরিচয় নেই, চাঁদটাও আমায় ডাকে না! অবহেলার শহরটা তবে আমার কাছে বেচে দাও, মেয়ে! - বলছিলে, সূর্যচিতায় হলুদ বিকেলগুলো পোড়ে--- বিরহে যেমন আকাশটাও হঠাৎ ভেঙে ভেঙে পড়ে! তবে ঠিকই বললে, আমার কোনও ঐশ্বর্য নেই, যা আছে, তা দগ্ধ হবার আয়োজন মাত্র! চাঁদের বাড়ি গিয়েছিলাম; দেখি, জলসায় তুমি সুর তুললে! ভাবলাম, আমায় ডেকে নেবে; গৃহবাসী যেমন আগন্তুক মানে! বললে, ফিরে যাও, সূর্যকে আমি চিনি না! অবহেলার শহরটা নিলামে তুলিনি; বলতে পারো, আমার ঐশ্বর্য বলতে ওটুকুই! - মেয়ে, বড্ড প্রেম শিখলে তবে! এত গভীরতা তোমার নিজস্ব...আমি যে ডাঙা পাই না খুঁজে! - তা-ই, কবি? আমি যে নিমিত্ত মাত্র! জ্ঞানের দর্শন সাধকের সঙ্গেই ঘটে। নইলে তোমার দর্শন আমার হতো না। তাই আমি সাধক হতেই পারি! - সাধক, তোমায় গুরু মানলাম, হিমালয়টা পেরুবে তো এবার একসঙ্গে? - চলো, ব্যালকনিটা অপেক্ষায় আছে!