অন্যকে বিরক্ত করা

 আপনি কারও সম্পর্কে ঠিক ততটুকুই জানেন, যতটুকু সে জানায়। এর বাইরে যা জানেন, তার পুরোটাই আপনার অনুমান কিংবা শোনাকথা। কেউ তার নিজের কতটুকু অন্যদের জানাবে কিংবা জানাবে না, তা সে-ই ঠিক করবে। এটা নিয়ে আপনার কৌতূহল থাকতেই পারে, সেই কৌতূহল নিবৃত্ত করার জন্য আপনি আপনার মতো করে নানান ভাবনা মাথায় আনতেই পারেন। তবে ওসবের একটাও সে নয়। সে যা, সে তা-ই।
  
 কাউকে নিয়ে অহেতুক আগ্রহ দেখাবেন না। আপনার কাছে এই আগ্রহটা স্বাভাবিক হতে পারে, কিন্তু সেই লোকটার কাছে এটাই হতে পারে বিরক্তিকর। সে কি আপনাকে চেনে? যদি না চেনে, তবে তার ব্যক্তিগত বিষয়ে আপনার আগ্রহকে সে ভালোভাবে নেবে কেন? কে কীসে বিরক্ত হয় বা হয় না, কে কী ভালোভাবে নেয় বা নেয় না, এসবও কি আপনি ঠিক করে দেবেন নাকি? যার জীবন, তার ঝামেলা, তাই তার নিয়ম।
  
 যে আমাকে চেনেই না, তাকে আমার নিজের সম্পর্কে জানিয়েই-বা আমি কী করব? আমাকে বোঝার দায় বা দরকার নেই যার, কিংবা যার কাছে আমার নিজেকে ব্যাখ্যা করার কোনও দায় বা দরকার নেই, তার সামনে নিজেকে ব্যাখ্যা করার কী মানে? যেখানে আপনার নিজেকে ব্যাখ্যা করার কোনও দরকারই নেই, সেখানে ব্যাখ্যা দিতে যাওয়া মানেই, নিজের হাতে ধরে জীবনে অহেতুক কিছু ঝামেলা নিয়ে আসা। ঝামেলা এলে তখন কিন্তু তা আপনাকে সামলাতে হবে, ওরা কেউ আসবে না সামলাতে। লোকে অনেকসময় না বুঝেই অন্যকে ঝামেলায় ফেলে দেয়। খুব সহজ একটা বুদ্ধি মেনে চললে ভালো থাকবেন। যার বা যাদের কাছে নিজেকে ব্যাখ্যা করার দরকার নেই, তার বা তাদের কাছে নিজের কোনও কিছুই ব্যাখ্যা করবেন না। ওরকম কেউ ব্যাখ্যা জানতে চাইলে তাকে আপনার সামনে থেকে সরিয়ে দিন, কিংবা নিজেই তার সামনে থেকে সরে আসুন, কিংবা পুরোপুরি চুপ করে থাকুন। যে যা ইচ্ছে ভেবে নিক আপনার সম্পর্কে। আপনাকে যা ভাবলে ওদের মনে শান্তি হয়, তা-ই ভাবতে দিন। নিজেকে এত ব্যাখ্যা করার কিছু নেই। আপনি যেমন, তেমনই তো আছেন, থাকবেনও। ওরা যা ইচ্ছে ভাবুক, ওদের ভাবতে দিন। ওদের অন্যকে নিয়ে গবেষণা করার সময় আছে।
  
 যারা আমার মতো নয়, যারা আমার মতো করে ভাবে না, যারা আমার মতো বাঁচে না, তাদের ধরো ও তোমার নিজের পথে নিয়ে আসো। এর নাম মূর্খতা বা অন্ধ আনুগত্য। আনুগত্য ভালো জিনিস, তবে আপনার আনুগত্য দিয়ে কারও কিছুই এসে যায় না, সেই আনুগত্য যা-কিছুর প্রতিই হোক না কেন। আপনার ডিম খেতে ভালো লাগে; আপনার ধারণা, মেন্যুতে ডিম না থাকলে ভাত খেয়েই-বা কী লাভ? অথচ আরেকজনের ডিম দেখলেও বমি আসে! হতেই তো পারে এমন, তাই না? তার সামনে গিয়ে মহাউৎসাহে ডিমকাব্য রচনা করার আদৌ কি কোনও মানে আছে?
  
 কাউকে যখন আপনি বার বার নানাভাবে বিরক্ত করবেন, তখন সে স্বাভাবিকভাবেই একদিন আপনার উপর চড়াও হবে। যদি সে বুদ্ধিমান হয় এবং একইসঙ্গে সুযোগ থাকে, তবে সে আপনাকে তার জীবন থেকে দূরে ছুড়ে ফেলে দেবে। চড়াও হবার চাইতে সম্ভব হলে ছুড়ে ফেলে দেওয়া ভালো। এতে সময় বাঁচে, নিজের মেজাজটাও খারাপ করতে হয় না। যারা বিরক্ত করে, তাদের হাতে সময় অফুরন্ত হলেও যাকে বিরক্তটা করা হয়, তার হাতে সময় সীমিত। সীমিত সময় জরুরি কাজে দেওয়াই ভালো।
  
 যে যা-ই বলুক, যদি আপনি নিজে জানেন যে আপনি ঠিক পথে আছেন, তবে ওদের কথাকে পাত্তা দেবেন না। বেশি বিরক্ত লাগলে ওদের আপনার জীবন থেকে ছুড়ে ফেলে দিন, কিংবা নিজদায়িত্বেই দূরে সরে আসুন। জীবনটাকে সহজ রাখতে চাইলে নিজের কাছাকাছি মানুষ খুব অল্প রাখতে হয়। মাথায় রাখবেন, আপনি অন্যদের চেয়ে আলাদা হতে পারেন, কিন্তু কারও চেয়ে আপনার দাম কম কিছুতেই নয়। নিজের দামতে কমতে ও কমাতে দেবেন না কখনওই। এর জন্য যা যা করতে হয়, দেরি হয়ে যাবার আগেই সেগুলি করুন।
  
 ব্যস্ত লোকজনের হাতে অন্যকে বিরক্ত করার সময় থাকে না। বুঝতেই পারছেন, যেহেতু ওদের হাতে সময়ই কম, সেহেতু বেঁচে-যাওয়া সময়টা ওরা কখনওই এমন কাউকে দেবে না, যে ওদের ওরকম কথায় বিরক্ত হয়। বেকার ও ফালতু লোক বাদে কেউই গায়ে পড়ে অন্যকে বিরক্ত করতে যায় না। পথ চলতে ওরকম লোকের সঙ্গে দেখা আপনার হবেই! ওরা সংখ্যায় বেশি তো, তাই। নিজেকে ভালো রাখতে ওদের কাছে ঘেঁষতে দেবেন না। ওরা ঘেঁষতে চাইলে নিজেই ওদের সঙ্গে দূরত্ব তৈরি করুন কোনও-না-কোনও উপায়ে।
  
 আছে কিছু শালা, কর্মী হবার আগেই যারা নেতা হয়ে যায়! 
Content Protection by DMCA.com