৩৬তম বিসিএস প্রিলির প্রস্তুতিকৌশল: বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী / সাধারণ জ্ঞান (কালের কণ্ঠ)

বাংলাদেশ এবং আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী কিংবা সাধারণ জ্ঞানের প্রস্তুতির জন্য আগের বিসিএস পরীক্ষাগুলোর প্রশ্ন, অন্তত ২টা জব সল্যুশন, পেপার, ইন্টারনেট, অন্তত ৩-৪টা গাইড বই আর কিছু রেফারেন্স বইয়ের দরকার হবে। কিছু টিপস দিচ্ছি। এগুলো পড়ে নিজের মত করে কাজে লাগাবেন।

# প্রিলির জন্য কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, কারেন্ট ওয়ার্ল্ড, আজকের বিশ্ব, অর্থনৈতিক সমীক্ষা টাইপের বইপত্র পড়া বাদ দিন৷ একেবারেই সাম্প্রতিক বিষয় থেকে প্রিলিতে প্রশ্ন আসবে বড়জোর ৭-৮টা, যেগুলো শুধু ওই বইগুলোতেই পাওয়া যায়৷ এরমধ্যে অন্তত ২-৩টা পেপারটেপার পড়ে আনসার করা যায়৷ বাকি ৪-৫টাকে মাফ করে দিলে কী হয়?! এই ৪-৫ মার্কসের জন্য অ্যাতো পেইন কোন দুঃখে পাব্লিক নেয়, আমার মাথায় আসে না৷ আসলে, ওই যন্ত্রণাদায়ক বইগুলো পড়লে নিজের কাছে কেমন জানি পড়ছি পড়ছি মনে হয়৷ এটা অতি উচ্চমার্গীয় ফাঁকিবাজির পর্যায়ে পড়ে৷

# গাইড বইয়ের পাশাপাশি বিভিন্ন রেফারেন্স বই, যেমন মোজাম্মেল হকের উচ্চমাধ্যমিক পৌরনীতি ২য় পত্র, বাংলাদেশের সংবিধান নিয়ে বই (যেমন, আরিফ খানের সহজ ভাষায় বাংলাদেশের সংবিধান), মুক্তিযুদ্ধের উপর বই (যেমন, মঈদুল হাসানের মূলধারা: ’৭১), নীহারকুমার সরকারের ছোটোদের রাজনীতি, ছোটদের অর্থনীতি, মুহাম্মদ হাবিবুর রহমানের নাগরিকদের জানা ভালো, আকবর আলী খানের পরার্থপরতার অর্থনীতি, আজব ও জবর-আজব অর্থনীতি, আব্দুল হাইয়ের বাংলাদেশ ও আন্তর্জাতিক বিষয়াবলী সংক্রান্ত বই দুটো ইত্যাদি বই পড়ে ফেলুন। বিসিএস পরীক্ষার জন্য যে কোনও বিষয়ের রেফারেন্স পড়ার একটা ভাল টেকনিক হচ্ছে, জ্ঞান অর্জনের জন্য না পড়ে, মার্কস্ অর্জনের জন্য পড়া৷ এটা করার জন্য প্রচুর প্রশ্ন স্টাডি করে খুব ভালভাবে জেনে নেবেন, কোন-কোন ধরনের প্রশ্ন পরীক্ষায় আসে না। প্রশ্নগুলো ভালভাবে দেখে, এরপর রেফারেন্স বই ‘বাদ দিয়ে বাদ দিয়ে’ পড়ুন৷ এতে অল্প সময়ে বেশি পড়তে পারবেন।

# ৪ ঘণ্টা না বুঝে স্টাডি করার চাইতে ১ ঘণ্টা প্রশ্ন স্টাডি করা অনেক ভালো। তাহলে ৪ ঘণ্টার পড়া ২ ঘণ্টায় পড়া সম্ভব। বেশি-বেশি প্রশ্নের প্যাটার্ন স্টাডি করলে, কীভাবে অপ্রয়োজনীয় টপিক বাদ দিয়ে পড়া যায়, সেটা শিখতে পারবেন। এটা প্রস্তুতি শুরু করার প্রাথমিক ধাপ। এর জন্যে যথেষ্ট সময় দিন। অন্যরা যা যা পড়ছে, আমাকেও তা-ই তা-ই পড়তে হবে—এই ধারণা ঝেড়ে ফেলুন। সবকিছু পড়ার সহজাত লোভ সামলান। একটি অপ্রয়োজনীয় টপিক একবার পড়ার চেয়ে প্রয়োজনীয় টপিকগুলো বারবার পড়ুন৷

# অনলাইনে ৪-৫টা পেপার পড়বেন। পেপার পড়ার সময় খুব দ্রুত পড়বেন। পুরো পেপার না পড়ে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় টপিকের আর্টিকেলগুলোই শুধু পড়বেন। একটা পেপারে এ ধরনের দরকারি লেখা থাকে খুব বেশি হলে ২-৩টা। প্রয়োজনে সেগুলোকে ওয়ার্ড ফাইলে সেভ করে রাখুন, পরে পড়ে ফেলুন।

# সাল-তারিখ মনে থাকে না? থাকতেই হবে কেন? কারোরই থাকে না। এটা বারবার পড়তে হয়। অনেক-অনেক সেট প্রশ্ন পড়ার সময় ওরকম সাল-তারিখ বারবার আসবে। বিভিন্ন তথ্য মনে না থাকলে বারবার রিভিশন দিন। মুখস্থ না করে প্রশ্নের একটা ছবি মনে গেঁথে নিন। ফেসবুকে সাম্প্রতিক নানান তথ্যসম্বলিত পোস্টগুলি বেশি-বেশি পড়ুন।

# আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর কিছু-কিছু প্রশ্ন সময়ের সাথে-সাথে প্রাসঙ্গিকতা হারায়। সেগুলো বাদ দিন। সবচাইতে ভাল হয় যদি বিভিন্ন টপিক ধরে-ধরে গুগলে সার্চ করে করে পড়েন। প্রয়োজনে টপিকের নাম বাংলায় টাইপ করে সার্চ করুন। গুগলে আন্তর্জাতিক বিষয়াবলীর মোটামুটি সব প্রশ্নের উত্তরই পাবেন।

# বিভিন্ন পেপারের আন্তর্জাতিক পাতাটা নিয়মিত দেখবেন। সাম্প্রতিক সময়ের বিভিন্ন ঘটনা, চুক্তি, বিভিন্ন পুরস্কার, নানান আন্তর্জাতিক এনটিটির নাম, সদরদপ্তর, বিভিন্ন স্থানের নাম, আন্তর্জাতিক যুদ্ধ ও চুক্তি ইত্যাদি সম্পর্কে ভালভাবে জেনে নিন।

# ম্যাপ মুখস্থ করতে বসবেন না যেন! ওটা করতে যে সময়টা নষ্ট হবে, ওই সময়ে পড়ার জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয় আছে। ছড়া-গান-কবিতা সহ অদ্ভুত সব জিনিস দিয়ে অদ্ভুত সব জিনিস মুখস্থ করার তেমন কোনও প্রয়োজন আমি এখনও পর্যন্ত দেখিনি। এটা স্রেফ সময় নষ্ট করা ছাড়া কিছুই না। ব্যাপারটা এমনভাবে সময় নষ্ট করা, যেটা পরীক্ষা দেয়ার আগ পর্যন্ত সময় নষ্ট করা বলে বোঝাই যায় না।

# চমকপ্রদ প্রশ্ন দেখে দেখে চমকে যাওয়ার অভ্যেস ত্যাগ করুন। গ্রুপ স্টাডির একটা বাজে দিক হচ্ছে, যে যা-ই বলে, সেটাকে প্রয়োজনীয় বলে মনে হয়। এই যেমন, “সংবিধান মুখস্থ করতে না পারলে বিসিএস ক্যাডার হওয়া যাবে না।” এরকম কিছু ভুল কথাকেও বিশ্বাস করতে ইচ্ছে হয়। পাবলিক লাইব্রেরিতে কিংবা এর সামনে সকাল থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত বসে থাকলেও কোনও কাজ হবে না, যদি নিজে প্রচুর ঘাঁটাঘাঁটি করে পড়াশোনা না করেন।

# একটা জিনিস মনে রাখতে না পারলে আবারও পড়ুন। এরপরেও মনে রাখতে না পারলে আরও একবার পড়ুন। যদি এরপরেও মনে না থাকে, তবে সেটা মনে রাখার চেষ্টা বাদ দিন। একটা কঠিন প্রশ্ন মনে রাখার চেষ্টা পাঁচটি সহজ প্রশ্নকে মাথা থেকে বের করে দেয়। কী লাভ? কঠিন প্রশ্নেও ১ নম্বর, সহজ প্রশ্নেও ১ নম্বর।

অংক-ইংরেজি ভাল জানলে অংক-ইংরেজিতে ভাল মার্কস পাওয়া যাবেই, এটা বলা যায়। কিন্তু সাধারণ জ্ঞানে খুব দক্ষ হলেই যে সাধারণ জ্ঞানে ভাল মার্কস পাওয়া যাবে, এমনটা নাও হতে পারে। তাই সাধারণ জ্ঞান পড়ার সময় আবেগ নয়, বুদ্ধিমত্তা দিয়ে পড়ুন। সাধারণ জ্ঞানে অতি-পরিশ্রম নয়, হিসেবি-পরিশ্রম করুন। আর একটা ব্যাপার মাথায় রাখবেন, সাধারণ জ্ঞানে আপনার চাইতে অনেক ভাল জানেন, এমন কারোর সাথে যত কম আলোচনা করবেন, আপনার প্রস্তুতি ততই ভাল হবে। সাধারণ জ্ঞান এমন একটা বিষয়, যেটাতে আপনার জানার পরিধি একেবারে জিরো লেভেলে থাকলেও আপনি সেটাকে পরিশ্রম করে বিসিএস পরীক্ষার জন্য প্রয়োজনীয় লেভেলে উন্নীত করতে পারবেন। ২-৩ সেট মডেল টেস্টের গাইড থেকে প্রতিদিনই অন্তত ২-৩টা টেস্ট দিয়ে দিয়ে নিজেকে যাচাই করুন।

সবকথার শেষকথা: বিসিএস মানেই সাধারণ জ্ঞান — এই ভুল আপ্তবাক্যটি মাথায় না রেখে সাধারণ জ্ঞানের জন্য প্রস্তুতি নিন।

এ লেখাটি গত ৭ অক্টোবর বুধবার কালের কণ্ঠের ‘চাকরি আছে’ পাতায় ছাপা হয়েছিল।

লেখাটির লিংক নিচে দিচ্ছি:

http://www.kalerkantho.com/print-edition/chakriache/2015/10/07/276165