হান্‌থাম

আসুন, একটি চমৎকার জায়গা থেকে ঘুরে আসি।

"হান্‌থাম"

রাগী দুপুর গড়িয়ে মিষ্টি বিকেল। পাহাড়ি গোধূলিতে নির্ভয়ে হেলান দিয়ে নির্ভার বিকেল পিছলে পিছলে ক্রমেই নিবিড় সন্ধে।

শেরপুরের বারোমারি মিশন ঘুরে দেখতে গিয়েছিলাম পানিহাটা মিশন। পোশাকি নামটা অবশ্য ভিন্ন: সাধু আন্দ্রিয়ের মিশন, চার্চ অব বাংলাদেশ পরিচালিত। পাহাড়ের উপর ছোট্ট ছিমছাম একটি মিশন। বড়ো শান্তসমাহিত পরিবেশ। ভীষণ শান্তি লাগে এই‌ মিশনসংলগ্ন পাহাড়ের গায়ে গায়ে হাঁটতে। আমাদের উষ্ণ অভ্যর্থনা জানালেন মিশনের দায়িত্বে থাকা পাদ্রী ডেভিড মৃধা। তাঁর আচরণ ও হাসি ভারি আন্তরিক। পুরো জায়গাটি আমাদের ঘুরে দেখালেন চার্চের সেবক যিহিস্কেল। খুব চমৎকার সহজ নিরীহ গোছের একজন ভদ্রলোক। কথা বললেই মনে হয়, এঁর মনে কোনও পাপ নেই।

এই মিশনটি যে পাহাড়ে, তার পাদদেশে প্রবাহিত শান্ত বুগাই নদী। নদীটি আন্তর্জাতিক; বাংলাদেশেরও, ভারতের‌ও। আমার অভিজ্ঞতা বলে, সীমান্তবর্তী নদীর সৌন্দর্য সবসময়ই অসীম মুগ্ধতা ছড়ায়। নদীর চারপাশে পাহাড় আর পাহাড়, সবুজের এক অবারিত মহোৎসব যেন! আজ নদীর তীর এবং তীরঘেঁষা পাহাড়ের কোল ধরে হাঁটতে হাঁটতে এগারো রকমের সবুজ রঙ গুনলাম। রৌদ্র যখন এক জায়গা ছেড়ে আরেক জায়গায় সরে যায়, তখন সবুজের রঙ ও ঢঙ দুই-ই বদলায়। এই আলো ছোঁয়া যায়, এই রঙ ছোঁয়া যায়। সূর্যের সোনালি হলুদ রঙের ছটায় মন মুহূর্তেই ভালো হয়ে যায়।

বৃষ্টির স্থানবদল যেমনি চোখের সামনে স্পষ্ট দেখা যায়, ঠিক তেমনি রৌদ্রের স্থানবদল‌ও খুব স্পষ্টভাবে ধরা পড়ে; বিশেষ করে সীমান্তবর্তী পাহাড়ি এলাকায়। নদীটি অগভীর। তাই ও-পাড়ে এ-পাড়ে গরু এবং মানুষ খুব সহজেই পার হয়ে যায়। এ ভীষণ চমৎকার একটি দৃশ্য! বর্ডারের ওপাশটা দেখা যায়; ওখানকার পাহাড়, খেত, গাড়ি, প্রান্তর এখানকার সব কিছুর সাথে মিলেমিশে একাকার হয়ে যায় যেন! দেশের সীমানা হয়, কিন্তু মনের তো কোনও সীমানা হয় না!

নদীর জলে জলে, পাহাড়ের গায়ে গায়ে, গরুর পালে পালে, মাঠের ঘাসে ঘাসে, খেতের ফসলে ফসলে, মেঠোপথের ধুলোতে ধুলোতে, ঢেউয়ের ছন্দে ছন্দে, হাওয়ার গুঞ্জনে গুঞ্জনে, আলোছায়ার খেলায় খেলায়, মানুষের চোখে চোখে কী যে আলতোভাবে স্তিমিত দুপুর বিকেলে নামে, গোধূলিতে গড়ায়, সন্ধেতে ডোবে... একসময় থামে...আজ বুগাই নদীর পাড়ে এবং পাহাড়ের গায়ে ঘুরতে ঘুরতে এই চমৎকার অভিজ্ঞতা হলো। নদীর আলোর সঙ্গে পাহাড়ের ছায়ার এ কী অপূর্ব খুনসুটি!

সাধু আন্দ্রিয়ের মিশনের পাদদেশের এই পাহাড়ি নদীতীরটির একটি নাম দিতে খুব ইচ্ছে করছে। জায়গাটি গারো আদিবাসী অধ্যুষিত। গারো ভাষায় বিকেলকে বলা হয় "হান্‌থাম"।



নদীতীরটির নাম দিলাম: হান্‌থাম।

আসুন, হান্‌থাম থেকে ঘুরে যান। হলফ করে বলতে পারি, আপনার জীবনের সেরা বিকেলগুলির একটি আপনি এখানে পেয়ে যাবেন। ধন্যবাদটা নাহয় তখন দেবেন!

হান্‌থাম। নামটা পছন্দ হলে ছড়িয়ে দিন সবখানে।