হওয়াতে জানা

মস্তিষ্ক আর মন বরাবরই একে অপরের উলটোপন্থি! তবে যাদের মস্তিষ্ক মনের চাইতে বেশি গতিময় এবং মনের অপারগতা অপেক্ষাকৃত বেশি, কিংবা যাদের দুর্লভ ভাগ্যোদয়ে মস্তিষ্ক আর মনের মিশেলটা হয়েই গেছে, তাদের কাছে অবশ্য এই উলটোপন্থিতার ব্যাপারটা ঠিক বোধগম্য কোনও বিষয়ই নয়!


আমরা প্রায় সময়ই মস্তিষ্কের হিসেবে চলতে গিয়ে নিজেরই মনের খোঁজটা আর পাই না। অন্যের মন বুঝতে হলে আগে নিজের মনটাকে বোঝা দরকার। ‘নিজেকে জানো!’ এ উক্তিটি অকারণে এতটা প্রাধান্য বিস্তার করেনি।


যে তার নিজের সাথে সারাক্ষণ কাটাবার পরেও, নিজের একান্ত ঘরটায় ঢুকে পড়তে জানে না, নিজেকে বোঝার ক্ষমতা রাখে না, সে সম্পূর্ণ ভিন্ন একজন মানুষকেও বোঝার ক্ষমতা রাখে না। ওই খানিকটা…নিজেকে ভালো না বাসলে অন্য কাউকেও ভালোবাসা যায় না।…এরকমই ব্যাপারটা!


তবে বাস্তবতা কিন্তু শুধুই মনের ঘরে হাঁটাচলায় বিশ্বাসী নয়। এখানে মস্তিষ্কের খেলা প্রকট, তার চুলচেরা হিসেবেই চলে গোটা জীবনটা! তবে এখানেও কথা আছে…মনের তাড়া না-থাকলে মস্তিষ্কজীবীরা জীবনরহস্য খোঁজার কোনও স্পৃহাই পেত না, ফলে ওই আগ্রহটাও ঠিক জন্মাত না।


তবে আমরা তো ভেতো বাঙালি, তাই এই যান্ত্রিকতা আর মস্তিষ্কের খেলা, কিংবা এই দুইয়ের চুলচেরা হিসেব, এর কোনওটাতেই আমাদের আগ্রহ খুব বেশি একটা লক্ষ করা না-গেলেও আন্তরিকতা-প্রদর্শন বা সম্পূর্ণ অপরিচিতকেও ‘হে সখা!’ বলে তার বিপদে যথাসাধ্য পাশে দাঁড়াবার বেলাতে কিন্তু আমরা বেশ আগ্রহী!


এজন্যই এখনও এত অতিদ্রুত সাফল্যে আমরা নাম লেখাতে না-পারলেও, অতিথিপরায়ণতায় বা আবেগপরায়ণতায় আমরা যথেষ্ট নামডাক অর্জন করতে পেরেছি। তবে এ নিয়ে আমাদের মধ্যে তেমন কিছু অনুশোচনা অবশ্য নেই, বরং কিছুটা বেশিই গর্ব আছে!


মানবধর্ম পালন করে মনুষ্যত্বকে লালন করতে, দিনশেষে, এই ভেতো বাঙালিই কিন্তু বড্ড যত্নবান! সবটা প্রাধান্য মস্তিষ্কেই দিলে তো যন্ত্র আর মানুষ, এই দুই আলাদা কিছু হতো না! তবে হ্যাঁ, আবারও বলছি, বাস্তববাদী না হয়ে জীবনযুদ্ধে টিকে থাকা বড়ো দায়! তাই শুধুই মনের ঘুলঘুলিতে উঁকিঝুঁকি মেরে কিংবা মনের আবদারের অথই সমুদ্রে ডুবে থেকে থেকে মস্তিষ্ককে একেবারে অকেজোপ্রায় রেখে দিয়ে সুখের বিলাসভবনে বেঁচে থাকাটা রীতিমতো অসম্ভব!


সব কিছুর পরও, মনের সাথে মস্তিষ্কের নিবিড় সখ্যই গড়ে তুলতে পারে অমূল্য মানবিকতা। তখন বাস্তবতায় টিকে থাকা যেমনি হয়, তেমনি হয় সাফল্যে ভেসে ভেসে বিলাসিতার চর্চাটাও! হ্যাঁ, হওয়াতে জানলে সবটাই হয়, শুধু সঠিক সময়ে সঠিক পথে সঠিক সমন্বয়টা প্রয়োজন!