অনুভূতির পরিবর্তনে

একটা সময় আমি তোমাকে খুব করে চাইতাম। খুব মানে খুব! তুমি পাত্তা দিতে না, কিংবা আমার মতন কাউকে পাত্তা দিতে হয়তো তোমার ইচ্ছেই করত না! আমি সবই মেনে নিতে শিখে নিয়েছিলাম।


তুমি সবসময়ই ভাবতে, এবং তোমার ওই ভাবনাটা আচার-আচরণে বুঝিয়ে দিতে যে তোমার আরও ভালো কাউকে চাই; সেই ‘আরও ভালো’ কেউ হতে যা যা লাগে, তার একটা কিছুও আমার মাঝে নেই। আমি তখন ঠিক বুঝতে পারতাম না, আর কতটা হলে পরে তোমার মনের মতন হওয়া যায়! ভালোবাসি তো, তাই সব বুঝেও চুপ করে থাকতাম।


কিছুদিন যাবার পরে দেখলাম, তুমিও, হ্যাঁ, তুমিও…কী কারণে যেন আমাকে একটু একটু করে চাইতে শুরু করেছ! এটা দেখে সত্যিই ভীষণ অবাক হচ্ছিলাম। ভয়ও পাচ্ছিলাম! এমনও হতে পারে? তুমিও আমাকে চাইতে পারো! এটাও আমাকে বিশ্বাস করতে হবে! মাথায় কিছুই আসছিল না! আমি যে তোমার অবহেলায় অভ্যস্ত হয়ে পড়েছিলাম!


অনেক খুঁজে খুঁজে বের করলাম, হয়তো তোমার আবেগ বেড়েছে হুট করেই, তাই অমন করছ। নিজেকে বোঝালাম, ‘আরে বোকা মেয়ে, আবেগে তো কত কিছুই হয়! এর নাম আবেগ, বুঝলি, আবেগ!’ তাই আমি আবারও চুপ করেই রইলাম।


হুট করেই আসা আবেগ হুট করেই চলে যায়…আবেগ জিনিসটা এরকমই। আবেগের হিসেব আর জীবনের হিসেব এক নয়। আমি এটা ভেবেই বসে রইলাম একদম চুপটি করে।


ও আচ্ছা, ভালো কথা, আমার আবেগগুলো কিন্তু এখন আর আগের মতন নেই। ব্যাপারটা কীরকম? মানে আবেগ আমার আছে ঠিকই, কিন্তু ওরা আর আগের মতন বেপরোয়া হতে চায় না, ওদের সাবধানে সামলে রাখি, যেমনি করে শাড়ি সামলাই, ঠিক তেমনি।


এর আরও কিছুদিন পরে, তুমি খুব কাকুতিমিনতি করে দেখা করতে চাইলে। বললে, খুব জরুরি কথা আছে!


তোমাকে ‘না’ বলাটা আমার জন্য কঠিন। আমি গেলাম। গিয়ে দেখি, তোমাকে কেমন জানি অপরিচিত মনে হচ্ছে, একদমই অস্থির লাগছে।


তবে সেদিন তুমি এতটাই মাথা নিচু করে দাঁড়িয়ে ছিলে, মনে হচ্ছিল যেন তুমি ভৃত্য আর আমি মনিব! কী যে অস্বস্তিতে পড়ে গিয়েছিলাম আমরা দুজনই!


তুমি চোখের জল লুকোতে গিয়ে আমার চোখে চোখ রাখতে পারছিলে না। এদিকে আমিও বার বার ব্যস্ত হয়ে পড়ছিলাম আমার অনুভূতিহীনতা আড়ালে রাখতে। আহা, মানুষ কত অদ্ভুত অদ্ভুত কারণে চোখে চোখ রাখতে পারে না!


তোমার কী হয়েছিল, তা আমি জানি না, তবে এবার তুমিই বললে, আমাকে নাকি তোমার চাই-ই চাই! আমার মতন আর একজনকেও নাকি তুমি তোমার জীবনে কখনও পাওইনি! আমি নাকি একদমই অন্যরকম!


শুনলাম সবই। তোমাকে শুনতে আমার বরাবরই ভালো লাগে। সেদিন তোমাকে কিছুই না বলে ফিরে এসেছিলাম। আজ বলি, শোনো। তুমি কী বলতে চাইছ, তার সবটাই বুঝেছি আমি। কিন্তু কী করব, বলো! আমার কাছে সময় আর অন্যান্য সবকিছু থাকলেও, তোমার প্রতি সেই অনুভূতিটাই যে আর নেই!


মানুষ কখন মরে যায়, জানো? যখন তার অনুভূতি মরে যায়। কার শ্বাসটা কবে বন্ধ হচ্ছে, সে খোঁজটা তোমরা রাখলে, অথচ জীবিতাবস্থাতেই কত মানুষ যে মরে চলেছে প্রতিনিয়তই, সে খোঁজ রাখবার কথা তোমাদের কারুর মাথায়ই এল না কখনও! তুমি আমাকে চাইছ, কিন্তু এই আমিটা যে ওই আমিটা আর নই, যেই আমিটাকে তুমি চাইছ। এটা বুঝেই আমি সিদ্ধান্তটা নিয়েছি।


জেনে রেখো, তোমাকে আমি সত্যিই খুব ভালোবাসি। আর ভালোবাসি বলেই তোমাকে পেতে এখন আর চাই না। ভালোবাসার অনুভূতি আর পেতে চাওয়ার অনুভূতি এক নয় গো! কারও সাথে থাকতে গেলে তাকে ভালোবাসতে হয় যতটা, তার চাইতে অনেক বেশি...তাকে পেতে চাইতে হয়।