ভাবনার বনসাই: বিরানব্বই

১. সাগরের তীরে ঝাউয়ের সারি,
সাগরের এপাড়ে নুড়ির সাগর,
সাগরের মাঝে আমার হৃদয়,
সাগরের ওপাড়ে তোমার বসত।


২. আমাদের দেখাটা হয়েছিল মাত্র ক্ষণিকের জন্য,
এবং আমি দুর্ভাগাই রয়ে গেলাম ঠিক আগের মতোই।
বরাবরই, ভাগ্য আমার বাঁধা ভাটাতেই;
এখন, জীবন আমার বাঁধা তোমাতেই।


৩. সারারাত্রি চাঁদের আলোয়, স্নানে স্নানে…
অবশেষে আসে হেমন্তের ভোর।
তোমার পদচিহ্ন দেখে আজও থাকি অপেক্ষায়,
তুমি বলেছিলে, ঠিক ফিরবে একদিন।


৪. পাহাড়ের গায়ে গায়ে হাওয়ার রাজ্য,
তোমরা যাকে ঝড় বলো,
সেই হাওয়ায়, কিছু পুরনো পরিত্যক্ত পত্র-শাখা,
আবারও, সমতলে পড়ে ছড়িয়ে।


৫. হেমন্তের বিষাদী চাঁদের রাত
এই মনের মধ্যে বাঁচে-বাড়ে,
কেবলই আমার নয়,
এইসব বিষণ্ণতা ও দুঃখ ওদেরও কিছু আছে।


৬. দামি জায়নামাজে বসে নামাজ পড়ি,
খুঁজি তাঁকে মসজিদের দামি পাথরের গায়ে,
মনটাকে দামি করতে ভুলে গিয়ে
মসজিদটা আর মন হলো না।


৭. পাহাড়ের গায়ে গায়ে হাঁটার সময়
পা-দুটোকে সামলে ফেলো, সেই বুনোফুলগুলিকে
বাঁচিয়ে রেখো---যেগুলি তোমাকে, তোমার পিতামহকে
টেনেছে পাহাড়ে---তোমার সন্তানের কথা ভেবে।


৮. রাজা কবে যে আসবেন পাহাড়ে কিংবা বনে,
তাঁকে মুগ্ধ করার জন্য হলেও থাকুক পাতা ও ফুল---
এই বোধটা আদৌ রাখে কি
মাঘ-পৌষের সারি সারি গাছ?


৯. আহা, নদীতে জলের ভাঙন
আমার হৃদয়ে এসে বাজে,
এমন সময়েও, কেন প্রেম এসেও
কিছুতেই পায় না খুঁজে তোমায়?


১০. গ্রামটা পাহাড়ে ঘেরা; শান্ত।
শীত এলে ভয় করে, বৃষ্টি খুঁজি।
মনে হয়, বন্ধুরা কোথায় যেন হারিয়ে গেছে!
কোথাও মানুষ নেই, সবুজও নেই।


১১. কিছু গোলাপ লাল, কিছু-বা সাদা।
বাগানে এসে, কোনটা যে নিই, ভাবতে থাকি।
একসময়, ভয় পেয়ে যাই, যদি ঝরে যায়!
ঘরে ফিরি শূন্যহাতে, মনে নিয়ে দ্বিধা।


১২. শীতল চাঁদের সঙ্গে বন্ধুত্ব কীসের?
সময় হবার আগেই যে আলো জ্বলে,
তার চাইতে ধূসর আলো কোথায়ই-বা আছে!
দিনশেষে, রাতের আগেই ভোর এসে যায়…একলা ঘরে।


১৩. ভোররাতের চাঁদটা, সত্যিই ভেবেছিলাম,
সারারাত ধরে সমস্ত পাহাড়কে আলোয় ধুয়ে দেয়।
কিন্তু না, এখন দেখি,
পাহাড় স্নান সেরে নেয়, মূলত চোখের জলে।


১৪. গতকালের ঝড়ো হাওয়া,
কিছু গাছের উপড়ে-যাওয়া;
আর পাতাদের স্তূপ আটকে রাখে
পাহাড়ের নিচে বয়ে-চলা নদী।


১৫. বসন্ত এসেছে, আকাশে আবারও সূর্যপ্রভা,
স্বর্গের হাসি আলোয় ভাসে…
ফুলের ঝরে-যাওয়া দেখি,
আর খুব করে কাঁদি।


১৬. পুরনো বন্ধুরা সবাই চলে গেছে
এক এক করে, যাদের আমি চিনতাম।
তবু আজও, সমুদ্রের তীর ঘেঁষে
ঝাউয়ের দল বাড়ে, যাদের আমি চিনি না।


১৭. শৈশবের গ্রামটা আজ আর নেই।
নতুন কিছু মুখ এসে পড়ে চোখের উপর।
তবু তোমার পথের ধারে, বিশ্বস্ত সেই ঘ্রাণ
শৈশবের কথা বার বারই মনে করায়।


১৮. সুন্দরতম গ্রীষ্মের রাতগুলি খুব ছোটো।
ওরা দূরে চলে যায়, পলক ফেলার আগেই!
ঠিক কোন মেঘের পেছনটাতে চাঁদটা লুকোয়,
তা খুঁজতে গিয়ে…হঠাৎ করেই ভোর এসে যায়!


১৯. আহা, সুন্দর সকাল! শিশিরেরা হাসে!
যেন ঘাসের উপর হিরের কণা!
হঠাৎ করেই…হেমন্ত-হাওয়া
আসে এবং ওদের খুন করে দেয়!


২০. ভেঙেছে হৃদয়, কাঁদি না তবু,
অদৃষ্টকে জানাই কুর্নিশ।
একইসঙ্গে, যে শপথগুলি ভেঙেছ তুমি,
তার প্রায়শ্চিত্তে যেন শাস্তি না পাও, প্রার্থনা এটুকই।