ভাবনার বনসাই: উনচল্লিশ

১. সেই আয়না কোথায় পাবো,
যে-আয়নায় তাকালে চেহারা নয়,
নিজের ভেতরটা দেখতে পাবো?


তোমায় অমন আয়না ভেবেছি বলেই,
আজ আমি নিজেকেই ভুল বুঝি!


২. ঈশ্বর একজনও মানুষকে বদলাতে পারলেন না,
অথচ মানুষ আজ হাজার হাজার ঈশ্বরকে বদলে ফেলছে!


৩. পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ ঐশ্বর্য তো অগোচরেই থেকে যায়!
আমরা তো কেবল এদের কথাই জানি:
যারা বেঁচে আছে, যারা বেঁচে নেই,
আর…সময় নয়, ঘড়ি!


৪. আমি একা থাকতে পারি, তুমি চলে যাও!
ওসব মিথ্যের পসরা তোমার আয়নার সামনে সাজাও,
কেনার লোক পেয়ে যাবে!


৫. আজকাল যে ম্যহফিলেই যাই,
সেখানে এক নিজেকে বাদে আর কাউকেই খুঁজে পাই না।


৬. মায়ের সব প্রার্থনায় বাবার সব সত্যের ছায়া থাকে না।
নইলে মা হবার দিনটা থেকে বাবা হবার রাতটা আলাদা কেন!?


৭.  হাওয়াকে বলে দাও, বাইরের সব আলো নেভাতে পারলেও
ভেতরের আলোটা নেভানোর ক্ষমতাই ওর নেই!
যার কথায় আমার চুল উড়িয়ে আমাকে পাগল সাজাচ্ছে,
তার যে ভেতরের আলোটাই নেই!
হাওয়া এতটা আত্মসম্মানবোধহীন কবে হলো!?


৮. ভাই, তুমি গীতা পড়ছ, আমি পড়ছি কোরআন।
আমাদের জন্মের ঠিক পরেই ঘরটা বদলাত যদি,
আমিই হতাম হিন্দু, তুমি মুসলমান!


৯. আমার গল্পটা এখনই জানতে চেয়ো না,
আগে আমাকে জানো, তারপর নাহয় গল্প জেনো!


১০. আমাদের সম্পর্কটা কী অদ্ভুত!
দু-জনই দু-জনের অপেক্ষায় সারাদিন বসে আছি,
অথচ কেউ কাউকে দেখার সময়ই পাচ্ছি না!


১১. আমাদের দেখা হয় না, কথাও হয় না,
অথচ সম্পর্কটা ঠিকই টিকে আছে!
এগারো বছর ধরে ওরা একছাদের নিচেই থাকে,
অথচ ওরা কেউ কাউকে আজ অবধি দেখেইনি!


১২. সেই রক্তের সম্পর্কের কী দাম,
যা কিনা রক্তেরই দাম দেয় না!?
যে-সম্পর্ক সম্পর্কের খাতিরে রক্তও ঝরিয়ে দিতে পারে,
একমাত্র তার নামই তো রক্তের সম্পর্ক!


১৩. তোমার পাঠানো সব কবিতাই সে পুড়িয়ে ফেলেছে।
ভেবো না, আমার প্রাক্তনকে সহ্য করতে পারেনি বলেই সে অমন করেছে।
তার ক্রোধের জায়গাটা আসলে কবিতা লিখতে না পারার অসহায়ত্ব!


১৪. আমার সারল্য তো আর হঠাৎ করে উধাও হয়নি,
অনেক দাম মেটাতে মেটাতে একদিন আমি তা হারিয়েছি।
যখন সরল ছিলাম, তখন আমায় ডাকতে বেকুব;
আর এখন ডাকছ চতুর!
তোমাদের বিচারকে লম্বা সেলাম!


১৫. সময়, আমার ধৈর্যের এত পরীক্ষা নিয়ো না।
আমি ভুল করেও ঘুরে দাঁড়াই যদি,
তোমাকে সবার সামনে একদম নগ্ন করে ফেলব!


১৬. সব কিছুই বদলে যাবে,
তবু আমি বদলাবই না!
তখন তুমি মুখটা দেখাবে কী করে, শুনি?


১৭. আমার মায়ের দোয়া সঙ্গে আছে বলেই,
আজ এতগুলি সন্তানের মায়ের দোয়া পাচ্ছি!


১৮. আমি যখন ঘর থেকে বেরোই,
তখন সব কিছুই ফেলেও আসি যদি,
মায়ের দোয়াটা আমার সঙ্গে সঙ্গেই ঘোরে!


১৯. ঈশ্বরের সামনে মাথা নত করি
ঈশ্বরকে খুশি করতে নয়, নিজেকে তৃপ্ত রাখতে।
মায়ের পায়ের ধূলিটা মাথায় রাখি
মাকে সুখী করতে নয়, নিজেকে বাঁচিয়ে রাখতে।


২০. যত বারই তুমি আমাকে বলেছ,
তোমাকে আমি ভালোবাসি বলেই তো
তোমার জন্য এটা করেছি, ওটা করেছি…
তত বারই আমার চোখে মায়ের মুখটা ভেসে উঠেছে।
বেচারি আজ অবধি কোনও হিসেবই তো রাখল না!
এখন আমার কাছে ভালোবাসার প্রমাণটা সে করবে কী করে!?