শতবর্ষী ফাউনটেইন


- এই যে মানুষ, দিনটা কেমন যাচ্ছে?
- শুরু করব সময় হাতে নিয়ে।
- আচ্ছা।
- হঠাৎ বৃষ্টি!
- রোদ আসে না কেন হঠাৎ করে?
- সব রোদবিশিষ্ট মানুষের জন্যই হয়তো।
‘রোদ কেন আসে না হঠাৎ করে?’...হয়তো বেভুল মানুষের সঙ্গ ভালো লাগে না।
- সঠিক মানুষগুলো দেখতে কেমন হয়? ওঁদের কি ছায়া থাকে না?
- শুনেছি, পৃথিবীতে একজন বিশুদ্ধ মানুষ এসেছিলেন, যাঁর ছায়া ছিল না। আমআদমি মানুষ তো অভেদ্য, ছায়া থাকবে না, এটা কী করে হয়!
- আমার সব প্রশ্নের বিশুদ্ধ উত্তর আপনার কাছে পাবো, আমার তা-ই মনে হয়।
- নীলা, "গোধূলির সাথে গল্প" হয়তো তোমাদের সময় ধারণ করতে পারবে না, তবে প্রজন্মকে হয়তো কিছুটা ছু্ঁয়ে দেখা হবে। বিশুদ্ধ মানুষ আমার কাছে অতি আপেক্ষিক একটা বিষয় মনে হয়।
- মানুষ বিশুদ্ধ হলে সৃষ্টিকর্তা বোধ হয় তাঁদের পৃথিবীতে পাঠাতেন না, সেটার প্রয়োজনই হতো না! বিশুদ্ধ যা, তা শুদ্ধ জায়গায় শুরু থেকেই থাকতে পারত, তাই না?
- অভিমতে সহমত রাখা যায়।
- আপনার নিজস্ব মতামত কী?
- আমি নিজেই নিজেকে নির্জলা শুভ্রতার কাছাকাছি কখনও দেখিনি, বেশিরভাগ সময়ই মধ্যম মানুষের মতো মনে হতো; এখন মনে হয়, আসলে আমি নিরেট অন্ধকার, পৃথিবীর মানুষ কত সুন্দর!
- তবুও একজন সুন্দর মানুষ তো দেখলাম, যে সত্যটা সত্যমতেই প্রকাশ করেছে। অনেক মানুষ দেখলাম, যারা বিশ্বাস করে, তারা নিরেট! অন্য যারা আছে, তারা ভুলে-ভরা ব্যাকরণ মানে!
- আত্মতুষ্ট মানুষ ! হ্যাঁ নীলা, থাকতেই পারে, তবে অন্য মানুষ যদি ভুল ব্যাকরণ দেখে থাকে, সেটাও তার স্বাধিকার।
- হতে পারে, তবে এই ধারণার উপর দাঁড়িয়ে নিজে পরিবর্তনে বিশ্বাস না করে অন্য কাউকে তার নিজের সত্তা থেকে পরিবর্তিত করতে চাওয়াটা আমার মনে হয় না তার স্বাধিকারের মধ্যে পড়ে।
- দর্শনের সেই কথাই শেষ কথা মনে হয়…নিজেকে জানো। আর তাই নিজেকে খুঁজতে ডুব দিলে মনে হয় হাতে সময় বেশি থাকে না!
- বেশ বলেছেন, মনে রাখব।
- প্রতিটি মানুষই, আমার মনে হয়, এক-একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপ।
- আর সেটা পরিযায়ী পাখিদের অতিথিশালা, কিছুদিন সবুজে ভরিয়ে রাখে, আবার ফিরে যায়, আবার নতুনদের আসার সময় হয়।
- চমৎকার ব্যাখ্যা দিলে। প্রতিটি মানুষের ইকোলজি ভিন্ন। তাই তো পৃথিবীর সবচেয়ে দুষ্পাঠ্য বইটার নাম মানুষ।
- একদম তা-ই। তবে কিছু কিছু বই দুষ্পাঠ্য হলেও আবার এবং আবার পড়তে চাইবার ইচ্ছে হয়।
- মানুষকে মনে হয়, এই তো আমি তার অনুবাদ করে ফেলেছি, পরক্ষণেই মনে হয়, ঠিক হলো তো! একটা দোদুল সময় সামনে এসে দাঁড়িয়ে যায়!
- হ্যাঁ, আবার দেখা যায়, তরজমায় ভুল না হলেও গভীরে অর্থ ভিন্ন দাঁড়ায়।
- একসময় সুরা আর ধূমা খুব প্রিয় ছিল। মনে হয়, সময়টা তাৎপর্যহীন ছিল না, অথবা দারুণ অসুন্দরের প্রেমিক ছিলাম। তুমি যেন ভুল করেও ভুল সুন্দরকে সুন্দর মনে না করো, তাই স্বীয় অন্ধকার জানালায় উঁকি দেওয়া।
- আমি একটা কথায় বিশ্বাস করি, এই অনিশ্চয়তার জীবনে ভালো থাকাটাই শেষ কথা…সেটা যে যেভাবে থাকতে পারে। এ নিয়ে কারও কথায় বা রায়ে কিছুই এসে যায় না।
- বেশ চমৎকার উপমিতিবোধ। আমার খুব প্রিয় একটা সময় ছিল…গভীর রাতে ঝিরঝির বৃষ্টিতে ভিজে অন্ধকার গলিপথে একা একা ঘরে ফেরা…
- চমৎকার আখ্যান, বেশ উপভোগ্য! আমি অভিজ্ঞতাহীন, তবে শুনেই বেশ ভালো লেগেছে।
- নীলের সাথে গল্পে জীবন কেমন কাটতে পারে বলো! ভাবছি, তোমার সময়গুলো ভীষণ সুন্দরে আমোদিত।
- কেন এমন মনে হলো?
- আসলে কিছু মানুষ বিকশিত সুন্দর না হলে জীবনকাব্যে জটিল অসুন্দর অপেক্ষায় থাকে।
- বেশ বললেন, আমি অবশ্য শত অসুন্দরেও সুন্দর খুঁজে পাই।
- বলতে হয় অনাবিষ্কৃত একজন!
- গোপন সুন্দরই আসল সুন্দর!
- আজ আমি শুনি, তুমি বলো।
- আজ সকালে সিডনি সেলডনের তৃতীয় বইটা পড়লাম। এক বইতে বেশ কয়েক ধরনের অনুভূতি পেলাম।
- যেমন?
- শুরুটা একই সঙ্গে দুঃখের এবং ঘেন্নার উদ্রেক করে। মধ‍্যবর্তী পর্যায় ভীষণভাবে অনুপ্রাণিত করে। শেষ অংশটা পরাজয়ের জয় এবং একইসঙ্গে ভালোবাসার বহুমাত্রিকতার গল্প শোনায়।
- দুঃখ এবং ঘৃণা সমগোত্রীয়। মানুষ বেশ সহজেই বশীভূত হয়, যদিও তা প্রকারান্তরে অস্বীকার করে। মানুষ বেঁচে থাকে এজন্যই যে, পরাজয়ের শেষ মাত্রাটা হয়তো বিজয় দিয়ে লেখা হবে, এটাই তার দৈন্যদশা! ভালোবাসা বহুমাত্রিক কারণ, তার অনেক নষ্টদুয়ার থাকে।
- কিছু মানুষ জন্মেই বহুমাত্রিকতা নিয়ে জন্মায়, আর কিছু মানুষ বাধ্য হয়ে বহুমাত্রিক হয়, আমার তা-ই মনে হয়…সেটাও আবার ভিন্ন ভিন্ন মাত্রায়!
- হুঁ, এটাও ভাবনার একটা মাত্রা।
- কেমন কাটছে প্রজন্ম-মানুষের সময়!
- অনিয়মের আনন্দে।
- এটাও জীবন।
- তবে মা বলে, জীবন এভাবে নাকি যাবে না!
- জীবন আসলে কারও মতো চলে না, দারুণ খেয়ালি সে! নিজের মতোই তার পথচলা।
- মাঝে মাঝে চেষ্টা করি জীবনটাকে একটু মায়ের নিয়মে চালাতে, কিন্তু না, সে তার নিজের মতোই চলে! মা তখন বলে, আমি আর বড়ো হলাম না।
-  বড়ো না হওয়া লাগলেই ভালো হতো। একজন দুঃখবাদী মানুষ আজন্ম সুখে থাকে, তুমি কি মানবে এটা!?
- দুঃখবাদী মানুষ সুখ চেনে; যে মানুষটা বলে, সে সুখী, তাকে যদি জিগ্যেস করি, ‘সুখ কী?’, সে কিছুই বলতে পারবে না।
- বেশ চটজলদি ভারী একটা কথা বলে ফেললে!
- আপনি নিশ্চয়ই তা বইতে পারবেন।
- তুমি কি মানবে আদতে যে আমি একজন মূর্খ প্রজাতির মানুষ!
- কবিতা তা বলে না, আমি মানি কী করে!
- তুমিও বললে, আমি কবিতা লিখি! কী করে বোঝাই, আমি নেহায়েত কিছু শব্দ নিয়ে বালখিল্য আচরণ করি, এর বেশি কিছু নয়।
- আপনি আসলে কবিতার আদলে জীবন আঁকেন, যা অনেককিছু বলে দেয়!
- কী করছ?
- একটু আঁকাঝোঁকা।
- আঁকতে পছন্দ করো বুঝি? অ‍্যাবস্ট্রাক্ট? না কি ন্যাচারাল?
- এখন অবধি ন্যাচারালই…উমম্‌…পাঁচমিশালিও বলা যায়।
- এটা কিন্তু নিঃসঙ্গতায় দারুণ সঙ্গ দেয়।
- ভীষণভাবে! আমি একটু সময় পেলেই বসে যাই।
- তাহলে তুমি দারুণ স্বচ্ছল গো! ছবির গল্পটা বলো।
- শতবর্ষী ফাউনটেইন।
- অনেক জীবনের বিপন্ন গল্প।
- ইস্! আমি কেবল বিপন্নতার গল্প বলি! আজ এক বৃদ্ধাকে দেখেছি, তাঁর চোখ দেখেছি...বাসায় ফিরেই ইচ্ছে হলো…আঁকি!
- তুমি বুঝি মানুষকে পাঠ করতে চাও?
- বুঝতে চেষ্টা করি।
- দেখো তো…বাল্যশিক্ষা হাতে এক প্রৌঢ় হাঁটছে নীরবে…কী দেখলে, বলো?
- কী বলব! প্রৌঢ়া হলে আমি নিজেকেই দেখতে পেতাম। এখন আপনাকে দেখতে পাচ্ছি…
- মন্দ বলোনি। আমি অবশ্য দেখছি অপ্রাপ্তি ডিঙানোর অদম্য আকাঙ্ক্ষা।
- অপ্রাপ্তির শেষ বলে কিছু মানুষের জীবনে নেই; সব থেকে দুঃখী মানুষটাও এইক্ষেত্রে যেমন অনুভব করে, সব থেকে সুখী মানুষটাও তা-ই অনুভব করে। এই বিষয়টা নিয়ে আমি কখনও ভাবিই না।
- তোমার দর্শনটা ভালো।
- আপনি ফুল ভালোবাসেন?
- আমি ‘না’ বলব না। তবে তা কতটা সত্য হবে, সেটা গবেষণার সাবজেক্ট হবে।
- জানেন, একবার আমার একজন শিক্ষক বা গুরু যা-ই বলি, তিনি বলেছিলেন, ‘আমাকে কখনও ফুল দিয়ো না, তাতে রক্তক্ষরণ হয়।’
- সাউন্ডস ফিলোসফিক্যাল! তাত্ত্বিক আড্ডায় এর একটা ব্যবচ্ছেদ হতে পারে। কথাটা মনে রেখেছ যখন, এর একটা অর্থ তুমি নিজেই একসময় খুঁজে পাবে।
- খুঁজছি প্রায়ই…
- তুমি নদী ভালোবাসো?
- নদীর খুব কাছে খুব একটা যাওয়া হয়নি, তবে ভালোবাসি না, তা ঠিক নয়। এখনও প্রায়ই নদীর পাড়ে বসতে ইচ্ছে করে। আমার কিন্তু সত্যিই কখনও বসা হয়নি। নদী দেখলেই আমার কেন জানি মনে হয়, নদী এক বিসর্জিত আত্মা!
- শুধু আত্মা নয়, আমি বলি, নদী হলো ধ্রুপদী সুন্দর...যে কিনা সব অপবিত্রতা ধারণ করে, কিন্তু নিজে অপবিত্র হয় না। নদীর মতন যদি মানুষ পাওয়া যেত!
- নদীর সঙ্গে একদিন গোধূলিযাপন করতে হয় তাহলে। আমাদের এখানকার নদীটিকে একান্তে পাওয়া যায় না, মানুষে ঠাসাঠাসি।
- তবে একটা বিষয়…নীলা, তুমি ‘বয়সের চেয়ে বেশ বড়ো একজন!’ এটা অনেকসময় সংকট তৈরি করে।
- আমি কিন্তু বেশ আড়ালে থাকতে পারি!
- তুমি কি নাগরিকযন্ত্রণা বুঝতে পারো?
- নাগরিকযন্ত্রণাটা কেমন?
- এটা বললে তুমি আবার বলবে…নগরজীবন তো আমি উপভোগ করিনি।
- আমার গণ্ডিটা খুব ছোটো, মাকে দেখলে কিছুটা বোঝা যায়। তাঁর নাগরিক জীবনযাপন দেখলে মাঝে মাঝে মনে হয়, আমি নিজে কখনও ওরকম একটা জীবনে যেতে চাই না। আবার মনে হয়, সে ভীষণ সুখী…নাগরিকজীবনটা যাপন করতে পেরে!
আমার বরাবরই মনে হয়েছে, এই জীবনে যন্ত্রণার মাত্রাটাই বেশি। নিজের একটা জীবন আছে, এই কথাটার কোনও স্থানই নেই। অনেকটা খাবারের মতো, নিজের জীবনটাকে সমানভাবে ভাগ করে অন্যদের দিয়ে দিতে হয়।
- তোমার চোখদুটো তো পড়তে পারছি না, নীলা! এতটুকু মানুষ তুমি, তবুও যন্ত্রণার কথা বলো!
- আমি দেখি মানুষ, তার যাপিত জীবন, তার চোখ, তার কপালের ভাঁজ।
- হ্যাঁ, এসবেই মানুষের বাস। তবে তারপরও কিছু আড়ালের জীবন থাকে, সেখানেও কিছু গল্প থাকে, নীলা।
- আড়ালের সে-ই গল্পগুলো না থাকলে মানুষের বেঁচে থাকতে ভীষণ কষ্ট হতো, আমার তা-ই মনে হয়! সান্ত্বনা, অন্তত শুধুই আমার বলে কিছু আছে…এমনটাই কি ভাবে সবাই?
- হ্যাঁ, এগুলো গল্পের জীবনে থাকে, তবে জীবনের গল্পগুলো একান্ত হয় না।
- তুমি শীর্ষেন্দু পড়েছ?
- না তো, পড়িনি।
- "পার্থিব" পড়ে দেখতে পারো! সেখানে তোমাকে পেলেও পেতে পারো। আমার কেন জানি মনে হচ্ছে, শীর্ষেন্দু বাবু তোমাকে দেখেছিলেন।
- আপনার নিজের সম্পর্কে কিছু বলুন।
- অদ্ভুত শূন্যতা।
- চারপাশটা শূন্য? না ভেতরটা?
- জীবনটা আশ্চর্য রকমের দুর্বোধ্য।
- নদীর সঙ্গে সময় কাটালাম আজকে।
- নদীর নামটি?
- শীতলক্ষ‍্যা। আগে বেশ ছিল, এখন মরে যাচ্ছে!
- এখন এ সময় কি যৌবনা?
- কালচে যৌবনা বলা যেতে পারে।
- তোমার মতো গোপন দুঃখী না তো!
- আমার নিজস্ব কোনও দুঃখ নেই, যা আছে, তার সবটাই অন্যদের। আমি নীরবে দুঃখ ধারণ করতে পারি। হ্যাঁ, তবে আমি ভীত। পথ চলতে চলতে ক্লান্ত।
- দুঃখবোধটা একটা অনুভূতি, তা অন্যের জন্য হতেই পারে; তবে জীবনের একটা নিজস্ব দুঃখের চিলেকোঠা থাকে।
- "পার্থিব" কবে পড়বে?
- কালকেই বইটা আনিয়ে পড়ব।
- সপ্তাহ লাগতে পারে পড়তে, তারপর আমি হয়তো ভিন্ন নীলার সাথে কথা বলব!!
- ভিন্ন নীলাকে কি আপনার ভালো লাগবে?
- আচ্ছা, তুমি পড়লে নিজেই বুঝবে, তবে "নীলা" নামটা, আবারও বলছি, যন্ত্রণাকাতর!
- তাহলে, অন্য কোনও নামে ডাকতে পারেন।
- না, যন্ত্রণার কষ্টটাই থাক। বলছিলে না, আড়াল-দুঃখ না থাকলে জীবন পানসে হয়ে যায়। তাহলে থাক একটা নতুন নীলা, যদিও নীলা সবার জন্য নয়।
- কী বলব! আপনি চমৎকার একজন মানুষ!
- না, নীলা! আমার অনেক অন্ধকার আছে, কিন্তু যা এখন নেই, তা হলো নিজস্ব সময়। আমি জনসমুদ্রে একান্ত হয়ে থাকি…বেশি বলে ফেললাম!
- যাদের জীবনে শুধুই আলো, তারা শুধুই মানুষ, চমৎকার মানুষ নয়।
- জীবনের নির্মোহ উচ্চারণ হতে পারে…বেঁচে আছি।
- অন্তত নিজের জন্য তা-ই হোক!
- আচ্ছা নীলা, একটা গানের কথা এমন মনে হয় ‘নদীও নারীর মতো’। তবে নারীও কি জীবন পবিত্র করতে পারে?
- বেশ কঠিন কথা! আমার মনে হয়, পৃথিবীতে কিছু বিশুদ্ধ নারী হয়তো আছে, যারা সত্যিই পারে!
- নির্মোহ জীবনের সংগীত কেমন হতে পারে? তোমার অভিমত প্রকাশ করতে পারো।
- আমি নিজের ক্ষেত্রে যেটা করি বা বিশ্বাস করি, তা হচ্ছে, সব থেকে করুণ পরিণতির মুহূর্তেও, আমি সুখী হই, এমন একটা কারণ খুঁজে নেওয়া, সেটা যে-কোনও উপায়েই হোক।
এই যেমন, আমার আম্মু ভীষণ অসুস্থ ছিল, আশা ছেড়ে দেওয়া যেটাকে বলে, তখন আমি ক্লাস টেনে। সেদিন আমার বাগানে প্রথম কাঁঠালচাঁপা ফুটেছিল, ব্যস্! এই একটা কারণই যথেষ্ট ছিল আমার ভালো থাকার।
- আমাকে তোমার অনুজ বলতে পারো!!
- কীসব বলেন না আপনি! বড়ো মানুষগুলো তাহলে এমনই হয়! এত বিশাল একটা মন যদি আমার হয় কখনও!
- নীল, বয়সে বড়ো হলেই কি আর বড়ো হওয়া যায়! বোধে যে বড়ো, সে-ই তো প্রকৃত অগ্রজ। আচ্ছা যাও, আমরা সমসাময়িক, কী বলো?!
- সমসাময়িক! এতটাও স্পর্ধা আমার হবে না!
- আচ্ছা, আমরা আজীবন অদেখা মানুষ থেকে যাব, আমরা কথা-বন্ধুত্বে আবদ্ধ হতে পারি।
- অবশ্যই বন্ধু হতে পারি। আমার সৌভাগ্য। হ্যাঁ, তবে অদেখাই-বা কেন থেকে যাব?
- কারণ শীতলক্ষ্যার তীরে আমরা কখনও মুখোমুখি বসতে পারব না।
- পৃথিবীর সব সুন্দর মুহূর্ত কেন এত নিষিদ্ধ হয়!
- আজকের তরল মুহূর্তগুলো আমরা একদিন ভুলে যাব।
- রাখব তবে কী?
- আপনার ইচ্ছে।
- ইচ্ছের দায়টা আমাকে যে দিচ্ছ, বেখেয়ালি মানুষ আমি, জীবনের চৌরাস্তায় ঠিকই পথ হারিয়ে যাব।
- আচ্ছা, আমি বলি তবে। আপনার জন্য আমার কোনও সময়-অসময় নেই, রাখা না-রাখা নেই। আপনাকে আজ থেকে অনন্তকালের জন্য স্বাগত জানিয়ে রাখলাম!
- এত দাও নীলা, তবুও দারুণ নিঃস্ব হয়ে ঘরে ফেরা, কারণ সেই কথা…’পৃথিবীর সব সুন্দর মুহূর্ত কেন যে নিষিদ্ধ হয়!’
এখন আমি একটু একটু করে নিঃস্ব হব। ভালো থেকো, নীল!
- এরপর আর বলা যায় না, ভালো থাকবেন!
- এবার একটা পূর্ণিমার মৃত্যু-উৎসব হোক।
- আমি পূর্ণিমাদের বাঁচতে দেখতে চাই!
- “পার্থিব” পড়ে নিয়ো, অনেক প্রশ্নের উত্তর হয়তো পাবে।
- হ্যাঁ, পড়ব।
- আজকের ছোটো গল্প এখানেই…!
- আচ্ছা…!