লিপি ধূসরিত: চার

৪৬।
আমায় রেখো মনে, যাবে যখন চলে,
ওই দূরদেশে, ওই অচেনা প্রবাসে,
বাঁধবে না আর আমার মাথা কোলে,
সেদিন তুমি থামবে কোথায় এসে?




৪৭।
তোমার সমাধি পাশে ব্যথাহত মনে বসে,
যখন ভাসি আমি এ দু-নয়নের জলে,
অনন্ত আঁধার ফুঁড়ে কে যেন বলে শেষে,
হারায়নি কিছুই, শুধু গেছে আগে চলে।




৪৮।
ঘুমাও, প্রিয়তমা! ঘুমাও তুমি; দ্বিধা ভুলে নাও গো বিশ্রাম,
ছায়া যাক সরে, দূরে যাক যম; আঁধার ঘুমোক মুড়ে খাম।




৪৯।
তোমার জন্য শোক আমার ঠিক তেমনই সুগভীর,
তোমায় যেমন দিলেন বিধি অনন্ত নিদ্রা সুনিবিড়।




৫০।
ফোটার আগেই যে ফুল ছুঁলো ধুলার পৃথিবীকে,
ওতে যে কত লুকোনো ব্যথা, জানে তা বলো কে?




৫১।
পারে অচেনা মানুষ‌ই বলতে কথা, নিজের কথা দিয়ে;
চেনা মানুষ বললে কথা, চলে কেই-বা তা সাথে নিয়ে?




৫২।
ওহে পথিক, শোনো! যাও, গিয়ে বলো, আমার খুনির কানের পাশে,
তার ইচ্ছেমতোই, আমি নতুন ঘর গড়েছি পোকাদের সাথে ঘাসে।




৫৩।
দুঃখ হতে পালাবে যত‌ই,
হারাবে স্বস্তি রাশি রাশি।
বরং গুরুর আসনে রেখো তাকে,
দুঃখের ঐশ্বর্য তবে হবে চিরবাসী।




৫৪।
মৃত্যুবেদনা কত যে গভীর, বলতে সে-ই পারে,
অকালে হারায় যে তার অতি প্রিয়জনে।
হারায় না যার, স্বজনমৃত্যু দহন করে না যারে,
মৃত্যুচিন্তা আসে কি তার নিরুদ্‌বিগ্ন মনে?




৫৫।
চেনে না যাদের তেমন কেউই, তাদের জীবনে
যখন হঠাৎ মরণ আসে নেমে,
কবরের গায়ে শুইয়ে দিতে যারা হয় সমবেত,
ওরা আসে জীবন গেলে থেমে।
জীবনে যারে চেনে না নিজের ঘর,
তারে চেনে পর‌ও, লাশ হবার পর।




৫৬।
শুধু প্রেম বেঁচে থাকে,
শুকোয় যদিও কবর, পৃথিবী, ফুল ও শিশির,
তবু বিশ্বাস বাঁধে যাকে,
হৃদয়ের ফ্রেমে পড়ে সে বাঁধা, বন্ধন সুনিবিড়।




৫৭।
মানুষ কি আর ধরে রাখা যায়
হৃদয় শত বাধ যদিও সাধে?
সময় হলে নেয় ছায়াও বিদায়,
মানুষ তবু মায়ায় পড়ে কাঁদে।




৫৮।
সে-ঘর কি আর ঘর থাকে,
যে-ঘরে মা হন সদ্যোমৃতা!
পৃথিবীতে আর জীবন‌ই-বা কী?
শুধু পড়ে থাকে অসীম শূন্যতা!




৫৯।
বহুদিন ধরে কত বেদনার ঝড়, নিরাশার ব্যথা সয়েছি, ভাই!
মৃত্যু আমায় মুক্তি দিল, বড়ো আরামেতে আজ ঘুমোই তাই।




৬০।
প্রিয় সন্তান! শোকের ভারে বাঁচছ কেন অমন যাতনা গেঁথে?
আজ ভগবান আমায় মুক্তি দিয়েছেন অসীম বেদনা থেকে।