যেখানে আকাশ নেই

এই শহরে কোথাও আকাশ নেই।
মানুষ এখানে কংক্রিটের কঙ্কাল।
গ্রামে, জানলার পাশে ছোট্ট যে-খাল,
সেখানেও মাটি নেই।
পাথরের প্রবঞ্চনা সবখানে ঝরনা হয়ে ঝরে।




অমাবস্যা-জোছনার তফাৎ কোথায়?
চোখে আলো, বুকে অন্ধকার!
তুমি কি এ নদীর হেতু খুঁজছ,
যার জলে কাজল মুছে যায়?




প্রেমিকের জন্য কাঁদার জন্য
জন্ম হয়নি আমার।
এক চিত্তবান রাজার জন্য আমার মন খারাপ, 
যে আমায় কখনো খুকি, কখনোবা রাজকন্যা বলে ডাকে।




সমস্ত ঐশ্বর্য ফেলে এসেছি
এক ছোট্ট ঘরে,
জানলায় উঁকি-দেওয়া 
নারকেল পাতার ফাঁকে ফাঁকে সেই চাঁদ,
ঝিঁ-ঝিঁ পোকার অশান্ত চিৎকারে সে কী অনাবিল শান্তি!
সেই যে ডুমুরগাছ, যদিও আর নেই এখন;
রাত ভোর হয়ে এলেও পড়ার টেবিলে মুখ গুঁজে থাকা…




সেই কৈশোর—
রাতের বেলায় ঝিলে শাপলা ফোটা দেখা,
সেই ডুমুর গাছের শালিক পাখিটা,
আমার বাথরুমের সামনে অপেক্ষারত বেড়ালটার জন্য
মন খারাপ হয়ে থাকা।
আমার সব‌ই কি সত্যি হারিয়ে গেছে?




সবুজ ধানখেতে বাতাসে বাতাসে কচি পাতার নাচন,
বৃষ্টিতে কাদা-জল মেখে রাস্তায় রাস্তায় ছুটে বেড়ানো…
সেইসব সুখের জন্য আজ বড্ড মন খারাপ।




গভীর রাতে টিনের চালে বৃষ্টির যে মায়াময় শব্দ আর মমতা,
এই শহরের প্রাসাদে কোথাও তা নেই।




এখানে মানুষ রৌদ্রে-ফেটে-যাওয়া পিচের রাস্তার মতো—
যত‌ই জল ঢালো, মাটির গন্ধ পাবে না।